ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে তেহরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তি অন্তর্বর্তী সমঝোতায় পৌঁছেছে। এর আওতায় ইরান একটি নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ না করার ব্যাপারে রাজি হয়েছে। বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কিছু অংশ প্রত্যাহার করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান অন্তর্বর্তী সমঝোতার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে তেহরান বলছে, তারা ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার ছেড়ে দেয়নি।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার বিষয়টিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
গত বুধবার জেনেভায় দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। এতে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয় জার্মানি ও নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্যরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন। নির্ধারিত দিনের বৈঠক শেষে আলোচনা চতুর্থ দিনে গড়ায়। শেষ দিন গতকাল রোববার দুই পক্ষের মধ্যে অন্তর্বর্তী সমঝোতা হয়।
সমঝোতা অনুযায়ী ইরান পাঁচ শতাংশের বেশি মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না, নতুন করে কোনো সেন্ট্রিফিউজ চালু বা পরবর্তী প্রজন্মের সেন্ট্রিফিউজ ব্যবহার করতে পারবে না এবং আর্ক পারমাণবিক চুল্লির নকশা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) কাছে সরবরাহ করতে হবে। বিনিময়ে আগামী ছয় মাস তেহরানের ওপর ছয় বিশ্বশক্তি পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কিত কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না, সোনা ও মূল্যবান ধাতুসহ বেশ কিছু খাতে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে—যাতে তেহরানের প্রায় ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার রাজস্ব আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া ইরান বর্তমানে যে পরিমাণ তেল রপ্তানি করছে, তা অব্যাহত থাকবে।
সমঝোতাকে স্বাগত জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ‘ইরানকে পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন থেকে বিরত রাখতে এটা গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ। তবে এই সমঝোতায় কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ইরান সমঝোতার শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, ‘আশা করি, আমাদের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হারিয়ে যাওয়া আস্থা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। ’ তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকারে ছাড় দেয়নি। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এই সমঝোতাকে ‘নতুন দিগন্তের সূচনা’ বলে অভিহিত করেন।
উদারপন্থী বলে পরিচিত রুহানি ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই তেহরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই সমঝোতা হলো।
জেনেভা আলোচনায় ছয় জাতির পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাশটন। বৈঠকের শেষ দিনে আলোচনায় যোগ দেন ছয় বিশ্বশক্তির পরররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। অ্যাশটন বলেন, ‘আমি উচ্ছ্বসিত। অবশেষে আমরা সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছি। এখন আমরা দীর্ঘমেয়াদি সমঝোতার ব্যাপারেও আত্মবিশ্বাসী।
সমন্বিত একটি চুক্তিতে পৌঁছার পথে এটা গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ। ’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, এই সমঝোতার ফলে ইসরায়েলসহ মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন মিত্র দেশগুলো নিরাপদ হলো। তবে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েল বলেছে, তারা নিরাপদ বোধ করছে না। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এটা খুব বাজে এক সমঝোতা। এখানে ইরান যা চেয়েছে, তাই দেওয়া হয়েছে।
’
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ এই সমঝোতাকে ‘পুরো বিশ্বের জন্যই ভালো সংবাদ’ বলে উল্লেখ করেন।
ফরাসি পররাষ্ট্ররমন্ত্রী লঁরা ফ্যাবিয়াস বলেন, এই সমঝোতার মাধ্যমে ইরানের বেসামরিক পারমাণবিক জ্বালানিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
ইউরেনিয়াম ধাতুকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় সমৃদ্ধ" করতে পারলে তা পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে কাজে লাগানো সম্ভব। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অভিযোগ ছিল, ইরান তার কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে।
তবে দেশটি বরাবরই বলে আসছিল, তাদের এ কর্মসূচির লক্ষ্য একান্তই বেসামরিক। বিষয়টি নিয়ে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা অচলবস্থার পর এই অন্তর্বর্তী সমঝোতা সম্ভব হলো। এএফপি, বিবিসি ও আল-জাজিরা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।