আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আব্বা-আম্মা, তোমাদের অনেক ভালোবাসি।

আগ্রহ মোর অধীর অতি— কোথা সে রমণী বীর্যবতী । কোষবিমুক্ত কৃপাণলতা — দারুণ সে , সুন্দর সে উদ্যত বজ্রের রুদ্ররসে , নহে সে ভোগীর লোচনলোভা , ক্ষত্রিয়বাহুর ভীষণ শোভা।

বাবা, তুমি আছো বলেই হয়তো পায়ের তলার শক্ত মাটিটার উপর পা পড়া মাত্রই সেটা নরম মোমের মতো গলে যায়। মাথার উপর ঝাঝা করা রোদ ছড়ানো সূর্যটা অনেক বেশি পরিশ্রম করেও মাত্র কয়েক ফোঁটা ঘাম ঝরিয়েই দমে যায়। আমার শরীর দুর্বল করে দেয়ার ক্ষমতা তাঁর নাই।

বাব, তুমি আছো বলেই হয়তো বুক ফুলিয়ে কাউকে বলতে পারি- " ওই তুই জানিস না, এটা আমার বাবার"? বাবা, তুমি আছো বলেই হয়তো......... এই বিশাল শহরে স্বাধীনতার সুখ যখন একঘেয়ে হয়ে ওঠে, বুয়ার হাতের রান্না যখন বিষের মতো লাগে, প্রিয় বন্ধুদের আড্ডায় যখন আর মন বসেনা, ছোট বোনটার আদুরে আবদার যখন কানে ভাসতে থাকে, আর দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার জন্য অথবা সময় মতো না খাবার জন্য আম্মার বকা গুলো যখন খুব মিস করি, তখন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনা আমি। ঘরের সব লাইট অফ করে দিয়ে বিছানায় শুয়ে কান্না করি তখন। ইচ্ছে হলেই যেতে পারিনা প্রিয় মানুষ গুলোর কাছে। কিভাবে যাই বল, যেতে যে আটশ টাকা লাগে। আমার শিক্ষক বাবার কষ্টের কামানো আটশ টাকার যে কি মূল্য, তা তো আমি জানি।

সেমিস্টার শেষে, অথবা ঈদ এর ছুটিতে যখন বাসা যাব বলে ফোনে বলি, বাসায় তখন একটা উৎসব উৎসব আমেজ চলে আসে। আমি কোন বাসে করে যাচ্ছি, সেটা নিয়ে আব্বা আম্মার কি চিন্তা! আম্মা ফোন দিয়ে বলে-" বাবু আব্বা, SR গাড়ির টিকিট পান্নাই"? আব্বা তখন আম্মাকে ঝাড়ি দিয়ে বলে-" প্যাঁচাল না পাড়লে হয়না? অই কি কম বোঝে নাকি "? আব্বার ঝাড়ি খেয়ে আম্মা আর কিছু বলার সাহস পায়না। আমি গাড়িতে উঠি, পছন্দের TR গাড়ি ছুটে চলে আমার প্রাণের শহর "রংপুরে"। যখন যমুনা সেতু পার হয় আমার গাড়ি, তখন থেকেই মনটার মাঝে একটা উড়ু উড়ু ভাব চলে আসে। আমি রংপুরের মাটির ঘ্রাণ পেতে শুরু করি।

আহা, কি সুখ সেই ঘ্রাণে। আমি আরামে চোখ বুজেই দেখতে পারি, আম্মা বাসা ছেড়ে অনেক দূরে এগিয়ে এসেছে। আব্বার হয়তো লজ্জা লাগে, ছেলের জন্য একটু আগিয়ে আসতে। তাই হয়তো বাসায় ফোনটা হাতে নিয়ে অস্থির হয়ে আমার ফোনের জন্য অপেক্ষা করে। কখন ফোন দিয়ে বলবো-"আব্বা, আমি চলে এসেছি"।

আম্মা এগিয়ে এসে পলকহীন দৃষ্টিতে আমার পথে চেয়ে থাকে। আমার দেরি দেখে তাঁর চোখ ক্ষণে ক্ষণে অশ্রু সিক্ত হয়ে ওঠে। মা আমার আঁচল দিয়ে সে পানি মুছে ফেলে। যখন দেখে আমি এসেছি, বাচ্চা মেয়ের মতো খিল খিল করে হেসে ওঠে। মায়ের সেই ভালোবাসা আমি দেখতে পারলেও বাসায় অপেক্ষমাণ বাবার ব্যাকুলতা কোনোদিনও অনুভব করতে পারিনা।

মাঝে মাঝে বাবাও হয়তো একটু বেশি অবুঝ হয়ে ওঠে। আমি কাছাকাছি গিয়ে ফোন দিয়ে যখন বলি-"আমার এর এক ঘণ্টা লাগবে", আব্বা তখন আর বাসায় থাকতে পারেনা। আম্মাকে বলে-" বাবুর সাথে অনেক মালপত্র আছে, একা আসতে পারবেনা। আমি একটু বাস স্ট্যান্ডে এগুলাম "। আমি বাস থেকে নেমে দেখি বাবা আমার হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে।

আমি আবেগ আপ্লুত হয়ে উঠি, কিন্তু প্রতিদানে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারিনা-" আব্বা, আমি এসে গেছি। " বাসায় যখন ফিরি, রিক্সা থেকে নামার আগেই আম্মা বলে-" দিনে দিনে তোর আব্বাটা ছেলে মানুষ হয়ে যাচ্ছেরে বাবু। মিছে মিছি অজুহাতে সেই এক ঘণ্টা আগে বাস স্ট্যান্ডে যেয়ে বসে আছে "। আব্বা আম্মার উপর রাগ করে বলে-" হ্যাঁ, কইচে তোমাক "। আমি ওদের ঝগড়া শুনি আর মিটি মিটি হাসি।

কতো মধুর সেই ঝগড়া। বাসের সিটে এসব ভাবতে ভাবতে আমি অনেক ইমোশনাল হয়ে পড়ি বোধয়। চোখ খচ খচ করে। আমি চোখ খুলে রাখতে পারিনা। বন্ধ চোখের পাতা ভেদ করে নোনতা পানি বের হয়ে আসে।

আমি সে পানি মুছিনা। আনন্দ অশ্রু মুছতে নেই। এই আনন্দ অশ্রু যদি আমার আব্বা-আম্মার পায়ে ফেলতে পারতাম, কি যে সুখ পেতাম। তা বলে বোঝানো যাবেনা কোনোদিনও। কিন্তু আফসোস, আমি পারিনা।

কিভাবে পারি বল, আমার দুই চোখের পানি মুছে দেয়ার জন্য যে আমার আব্বা-আম্মার চারটা হাত সব সময় প্রস্তুত থাকে। আমরা সন্তানেরা কোন দিনও হয়তো একটু মন খুলে কান্নাও করতে পারবোনা। " আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে " আব্বা-আম্মার এমন চাওয়াকে উপেক্ষা করে আল্লাহ্‌ আমাদের চোখে পানি দিবেন কোন পাষাণ হৃদয় নিয়ে। আব্বা, আম্মা, তোমরা এতো কিছু বল আমার মঙ্গলের জন্য। কতো দোয়া, কতো কান্না কাটি।

কিন্তু আমি একটা বার কেন তোমাদের জড়িয়ে ধরে বলতে পারিনা-" আমিও তোমাদের অনেক অনেক ভালোবাসি "।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।