শ্রমিক নিহত হওয়ার গুজবের জের ধরে একদল ক্ষুব্ধ শ্রমিক মাইকে ঘোষণা দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরের কোনাবাড়ী জরুন স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের পোশাক কারখানায় আগুন দিয়েছেন। অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। একই সময়ে শ্রমিকেরা আগুন দেন কারখানার এইচআর ভবনের নিচতলায় ও ভেতরে ২১টি কাভার্ড ভ্যানে। বিকেল পাঁচটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করে যাচ্ছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সময় কারখানা বন্ধ থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ঘটনা তদন্তে গাজীপুর জেলা প্রশাসন সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো. আবদুল বাতেন প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, শ্রমিকেরা মাইকে শ্রমিক নিহত হয়েছেন বলে গুজব ছড়িয়ে দেওয়ায় শত শত শ্রমিক উত্তেজিত হয়েই কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেন।
এলাকাবাসী, শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সদর উপজেলার কোনাবাড়ী জরুন এলাকায় তিতাস সোয়েটার লিমিটেড, আসিফ সোয়েটার, বেসটন ও ওয়াইকে সোয়েটার কারখানার শ্রমিকেরা গতকাল বিকেলে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেন। ওই সব কারখানার শ্রমিকেরা বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে স্ট্যান্ডার্ড কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিতে বলেন।
কিন্তু ওই কারখানার শ্রমিকেরা বের হয়ে না আসায় তাঁরা ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। রাত আটটায় ছুটি হয় স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের। এরপর রাত সাড়ে নয়টার দিকে বেশ কিছু শ্রমিক সঙ্গবদ্ধ হয়ে ওই কারখানায় প্রধান ফটকে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ সময় কারখানার ভেতরে থাকা শিল্প পুলিশ শ্রমিকদের ধাওয়া করে।
একপর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি ছুড়ে। এতে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের অপারেটর রাশেদুল ইসলাম (২৫) গুরুতর আহত হন। তাঁকে প্রথমে কারখানার মেডিকেলে চিকিত্সা দেওয়া হয় পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে উত্তেজিত কিছু শ্রমিক কারখানার পাশে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেন, ‘পুলিশের গুলিতে দুজন শ্রমিক মারা গেছেন, শ্রমিক ভাইরা সবাই এগিয়ে আসেন। ’ বেশ কয়েকবার এমন ঘোষণা দেওয়ার পর আশপাশের প্রায় দুই থেকে তিন হাজার শ্রমিক বের হয়ে আসেন।
এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে শ্রমিকেরা স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের কারখানায় ভেতরে ঢুকে পড়েন। তাঁরা প্রথমে কারখানা এইচআর ভবনের নিচতলায় আগুন ধরিয়ে দেন। পরে ওই ভবনের পাশেই নবমতলা বিল্ডিংয়ের প্রতিটি ফ্লোরে একসঙ্গে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। কারখানার নিরাপত্তারক্ষীদের কক্ষ, ভেতরে থাকা ২১টি ছোট-বড় কাভার্ড ভ্যানে আগুন দেয়। কাভার্ড ভ্যানে রপ্তানিযোগ্য পণ্য ছিল।
শ্রমিকদের তাণ্ডব থেকে বাদ যায়নি বিভিন্ন গাছপালাও। সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য রাখা গাছগুলোও ভাঙেন তাঁরা।
মসজিদের ইমাম সাকুর আহমেদ জানান, বেশ কিছু লোক মসজিদের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে শ্রমিক নিহতের খবর ঘোষণা দেন। তবে এসব শ্রমিকদের তিনি চিনেন না।
স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক মো. নূর-ই আলম বলেন, পরিকল্পিতভাবে এ প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করতে দুষ্কৃতকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়।
কারখানায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হয়তো ভবনটিও বাতিল হয়ে যেতে পারে।
ফায়ার ব্রিগেডের পরিচালক (অপারেশন) মেজর মো. মাহবুব বলেন, এ আগুনের প্রকৃতি দেখে মনে হয়েছে প্রতিটি ফ্লোরে একসঙ্গে আগুন দেওয়া হয়েছে। আগুনের তাপে পুরো ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনের দক্ষিণ পাশের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।