বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ইলেকট্রনিক অর্থ স্থানান্তর বা ইএমটিএস সেবা থেকে গত বছর ৩৬ কোটি টাকা আয় করে। চলতি বছর তা কমে ১৭ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। পোস্টাল ক্যাশকার্ডের সেবাটিও খুঁড়িয়ে চলছে, গ্রাহক বাড়ছে না। গত তিন মাসে যুক্ত হয়েছেন মাত্র দুই হাজার গ্রাহক।
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে তাল মেলাতে দ্রুত, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী আর্থিক লেনদেন—এই স্লোগান নিয়ে ইএমটিএস ও পোস্টাল ক্যাশকার্ড সেবা চালু করে ডাক বিভাগ।
প্রায় তিন বছর আগে সেবা দুটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতে বেশ ভালোই সাড়া মেলে। প্রথম বছরে ইএমটিএস থেকে নয় কোটি ও ক্যাশকার্ড থেকে ১৭ লাখ টাকা আয় করে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটি।
জানা যায়, বেসরকারি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কম মাশুলে ইএমটিএসের মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্তে টাকা পাঠানো যায়। তবে নির্দিষ্ট ডাকঘর ছাড়া সেবাটি না পাওয়ায় অনেকেই হতাশ।
অন্যদিকে টাকা জমা, উত্তোলন ও স্থানান্তরের মধ্যেই আটকে থাকায় পোস্টাল ক্যাশকার্ডের নতুন গ্রাহক হচ্ছে না।
অবশ্য গত বছর ডাক বিভাগের মহাপরিচালক নায়েব দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, সারা দেশে নয় হাজার ৮৬৬টি ডাকঘর আছে। লোকবলের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সহজে এত বড় নেটওয়ার্ক তৈরি করা সম্ভব নয়। তাই এটিকে কাজে লাগিয়ে ইএমটিএস ও পোস্টাল ক্যাশকার্ডে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
ডাক অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে গত সপ্তাহে কথা বলে জানা গেছে, তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে ইএমটিএস। সেবাটি গ্রাহকের হাতের নাগালে পৌঁছাতে সারা দেশে এজেন্সি নিয়োগ-প্রক্রিয়া আটকে আছে। প্রচার-প্রচারণা না থাকায় পোস্টাল ক্যাশকার্ডের অগ্রযাত্রা একটি পর্যায়ে গিয়ে থেমে আছে। বেশিসংখ্যক মানুষ এ বিষয়ে জানছে না।
ইএমটিএসে আগ্রহ কমছে: বর্তমানে দেশের দুই হাজার ৭৫০টি ডাকঘর থেকে ইএমটিএস সেবাটি দেওয়া হচ্ছে।
তবে গত এক বছরেও সেবার আওতা বাড়াতে পারেনি ডাক বিভাগ। ফলে লেনদেন বাড়ছে না। উল্টো মুনাফা কমছে।
ডাক বিভাগ জানায়, ২০১১ সালে ইএমটিএস থেকে ২০ কোটি টাকা আয় হয়। গত বছর তা বেড়ে হয়েছিল ৩৬ কোটি টাকা।
তবে চলতি বছর (অক্টোবর পর্যন্ত) তা কমে ১৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ব্যবহারকারীর সংখ্যাও কমেছে। গত বছর ৫৩ লাখ মানুষ সেবাটি নিলেও চলতি বছর এখন পর্যন্ত নিয়েছে মাত্র ২১ লাখ। ২০১১ সালে সেবাটি নিয়েছিল ৩২ লাখ মানুষ।
গত বুধবার সকালে জিপিওতে গিয়ে দেখা যায়, অল্প কয়েকজন গ্রাহক ইএমটিএসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর জন্য ফরম পূরণ করছেন।
তাঁদের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোখলেস মিয়া বললেন, ‘বেশি টাকা হলে ইএমটিএসে পাঠাই। তবে কম টাকার জন্য মালিবাগ থেকে কষ্ট করে আর আসি না। বিকাশের মাধ্যমেই পাঠাই। ’
ডাক বিভাগের মুঠোফোনভিত্তিক এই সেবার মাধ্যমে মিনিটের মধ্যে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে টাকা পাঠানো যায়। এ জন্য প্রথম এক হাজার টাকায় ২৭ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি হাজারে ১০ টাকা করে মাশুল নেওয়া হয়।
এটি এখনো সাশ্রয়ী।
জানতে চাইলে ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল মো. জাকির হাসান নূর প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্য সব ডাকঘরে সেবাটি পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই সারা দেশে এজেন্সি নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এটি হয়ে গেলে গ্রাহকেরা হাতের নাগালে ইএমটিএস সেবা পাবেন। ’ এ জন্য বাংলালিংকের সঙ্গে চুক্তির বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে বলেও জানালেন তিনি।
পোস্টাল ক্যাশকার্ড: মাত্র ৪৫ টাকা খরচ করে সহজেই একটি ক্যাশকার্ডের গ্রাহক হওয়া যায়। প্রথম দুই বছরে গ্রাহকসংখ্যা ৪০ হাজারে গিয়ে দাঁড়ায়। মুনাফাও ভালো আসে। প্রথম বছর ১৭ লাখ ও দ্বিতীয় বছরে ২০ লাখ টাকা মুনাফাও করে ডাক বিভাগ।
এটিএম বুথে পোস্টাল ক্যাশকার্ড ব্যবহারের সেবাও চালু হয়েছে।
এখন পর্যন্ত কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটা করার সুবিধাটি চালু হয়নি। এ ছাড়া মুঠোফোনে টাকা রিচার্জ, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধের সুবিধাগুলোরও কোনো খবর নেই।
বর্তমানে এর মোট গ্রাহকসংখ্যা ৬২ হাজার। আর সেবাটি চালু আছে মাত্র এক হাজার ৩৩৩ ডাকঘরে। তা ছাড়া কিউ ক্যাশ নেটওয়ার্কের ২৬টি বিভিন্ন ব্যাংকের তিন হাজার এটিএম বুথ থেকে এই কার্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডাক বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রচার-প্রচারণা নেই। তার ওপর নতুন সুবিধাও চালু হচ্ছে না। ফলে গ্রাহক তো বাড়ছেই না। উল্টো যাঁরা কার্ড নিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই সেটি ব্যবহার করছেন না। ’
গ্রাহক বাড়ছে না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে জাকির হাসান বলেন, ‘প্রচারের জন্য বাজেট বরাদ্দ নেই।
নিজস্ব মাকেটিং টিম নেই। ফলে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও গ্রাহক বাড়ছে না। তাই সরকার ও বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পই ভরসা। ’ টাকা জমা, উত্তোলন ও স্থানান্তর ছাড়া অন্য সেবাগুলো ধাপে ধাপে চালু করা হবে বলে আশ্বাস দিলেন তিনি।
পোস্টাল ক্যাশ কার্ডের গ্রাহক বাড়ছে না
গত ১৩ মাসে গ্রাহক বেড়েছে মাত্র ২২ হাজার
টাকা জমা-উত্তোলন, হস্তান্তর ছাড়া বাকি সেবাগুলো চালু হয়নি
সরকার ও বিশ্বব্যাংকের কিছু প্রকল্পই এখন ভরসা
ইএমটিএসে কমছে আয়
২০১২ ২,৬২৬ কোটি টাকার লেনদেনের
বিপরীতে আয় ৩৬ কোটি টাকা
২০১৩ ১,৪১৬ কোটি টাকার লেনদেনের
বিপরীতে আয় ১৭ কোটি টাকা
কারন
গ্রাহকের হাতের কাছে সেবা নেই,
যেমনটি আছে বেসরকারি খাতের
এজেন্সি নিয়োগপ্রক্রিয়া ঝুলে আছে
বাজেট বরাদ্দ নেই, তাই প্রচার-প্রচারণাও নেই
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।