আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুই দলের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য নেই

বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারণ করছে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো। বন্ধুর ভান করে কথা বললেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রভৃতি রাষ্ট্রের মুখপাত্রদের কথাবার্তায় মনে হয় যেন তারাই ঠিক করে দেবে কী হবে বাংলাদেশে। এখন পর্যন্ত মুখ না খুললেও বাংলাদেশ নিয়ে খেলায় আরও আছে পাকিস্তান এবং সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। এসব দেখেশুনে ইতিহাসের এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের ঘটনা।

চেকোস্লোভাকিয়ার ভাগ্য নির্ধারণ করেছিল সে দেশের সরকারও নয়, জনগণও নয়_ করেছিল চারটি শক্তিশালী রাষ্ট্র_ জার্মানি, ইতালি, ব্রিটেন ও ফ্রান্স। চার রাষ্ট্রের চার কর্ণধার হিটলার (জার্মানি), মুসোলিনি (ইতালি), চেম্বার লিন (ব্রিটেন) এবং ডাল ডিয়ার (ফ্রান্স) মিউনিক শহরে আলোচনায় বসলেন। ১৯৩৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। চেকোস্লোভাকিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা। কিন্তু চেক সরকারের কোনো প্রতিনিধি নেই।

চার বিশ্বনেতা প্রাথমিক আলোচনার পর ডেকে পাঠালেন চেক সরকারের দুজন প্রতিনিধিকে। কিন্তু তাদের ঘরের ভেতর ঢুকতে দেওয়া হলো না। সম্মেলন শেষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চেম্বার লিনের প্রতিনিধি চেক সরকারের প্রতিনিধিকে ডেকে জানিয়ে দিলেন, চেকোস্লোভাকিয়ার ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চেক রিপাবলিকের একটা অংশ গেল জার্মানিতে, সামান্য কিছু অংশ পেল পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি। অসহায় চেক প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করে দেশত্যাগও করলেন।

সেদিন অন্য দেশের ভাগ্য নিয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের এমন ছিনিমিনি খেলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক, স্তালিন_ দুনিয়ার স্বাধীনতাকামি ও নিপীড়িত মানুষের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু।

আজকের পৃথিবীতে সেই সমাজতান্ত্রিক শিবিরও নেই আর তেমন রাষ্ট্রনায়কও নেই। তাই দুর্বল দেশের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে বড় শক্তিগুলো। বাংলাদেশে কী ধরনের নির্বাচন হবে, কোন ধরনের সরকার থাকবে, গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে খেলাধুলা শুরু হয়ে গেছে বাইরের পৃথিবীতে। সেখানে খেলোয়াড় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সবাই।

তাদের প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূতরা কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে যেভাবে কথাবার্তা বলছেন, তাতে মনে হয় বাংলাদেশের যেন সার্বভৌমত্ব বলে কিছু নেই। সন্দেহ নেই যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। কিন্তু বিদেশি মাতব্বররা যখন বেশি বেশি করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, তখন আমাদের উদ্বেগ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। ভাবতে থাকি, কি জানি কী মতলব আছে তাদের। বাংলাদেশের কী করা উচিত সে সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দফাওয়ারি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।

অন্য দেশ নিয়ে ঠিক এই ধরনের মাতব্বরি গোছের প্রস্তাব নিতে পারে কিনা সেটাও বিবেচ্য বিষয়। ভারতের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণ খোলাখুলি বলেছেন, 'বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় এমন অনেক দেশের সঙ্গে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করছি। এর অংশ হিসেবে আমরা আমেরিকার সরকারের সঙ্গেও কথা বলছি। ' (কালের কণ্ঠ, ১৭ নভেম্বর ২০১৩)

এ ধরনের কথা বলার এখতিয়ার কি আছে অন্য কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত বা প্রশাসনের কোনো কর্তাব্যক্তির? তা কি কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহিভর্ূত নয়? আর আমাদের সরকার এসব কথা নীরবে হজম করে যাচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বাংলাদেশ নিয়ে খুশিমতো মন্তব্য করে চলেছেন।

আর সে সব কর্তাব্যক্তি যখন ঢাকা আসেন তখন আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা কি সরকারি দলের, কি বিরোধী দলের, সবাই যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েন। আমরা দেখেছি, ঢাকা ঘুরে গেছেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান স্টিভ শ্যাবট। আরও এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। তারা মন্তব্য করেছেন, নসিহত করেছেন বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। ২০ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির এক উপকমিটিতে বাংলাদেশ বিষয়ে এক শুনানি হয়ে গেল।

এক দেশ সম্পর্কে আরেক দেশের এই ধরনের সরকারি পর্যায়ে প্রকাশ্য আলোচনা কতটা গ্রহণযোগ্য সেটাও দেখার বিষয়। যা হোক, যুক্তরাষ্ট্রের যেন অধিকার আছে পৃথিবীর অন্য যে কোনো দেশ সম্পর্কে যা খুশি মন্তব্য করার, এমনকি হস্তক্ষেপ করারও। ২০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশবিষয়ক শুনানিতে সভাপতিত্ব করেছিলেন সেই স্টিভ শ্যাবট। দেখেশুনে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারণ করতে বসেছেন সেই সব ভাগ্যবিধাতা, যারা অবস্থান করেন বাংলাদেশের বাইরে।

বাংলাদেশে দুটি বুর্জোয়া দল পালাবদল করে ক্ষমতায় আসছে।

কোনো দলই দুইবার একসঙ্গে ক্ষমতায় থাকতে পারে না। কারণ প্রত্যেকবারই শাসকদল তার অপকর্মের জন্য নির্বাচনে পরাজিত হয়। সে কথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভালো করে জানেন। উপরন্তু বহু অপকর্মের কারণে তাদের জনপ্রিয়তায় যে বিরাট ধস নেমেছে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে সাম্প্রতিক সিটি করপোরেশন ও পৌর নির্বাচনে। শেখ হাসিনা তাই পরবর্তী নির্বাচনে নিজের বিজয়কে সুনিশ্চিত করতে গিয়ে সংবিধানে ১৫তম সংশোধনী এনেছেন, বাতিল করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান।

শেখ হাসিনা সম্ভবত এটাও জানেন যে, এটুকু যথেষ্ট নয়। ক্ষমতায় থাকতে হলে অথবা যেতে হলে বিদেশি প্রভুদের আশীর্বাদ চাই। প্রধান বিরোধী দলও তা জানে। তাই উভয় দলই প্রতিযোগিতা শুরু করেছে বিদেশি খেলোয়াড়দের মন জয় করার জন্য, পক্ষে রাখার জন্য। বিদেশিরা যে আমাদের দেশে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে পারে, তার কারণ আমরাই তাদের সেই সুযোগ করে দিচ্ছি।

২০০১ সালে নির্বাচনে পরাজয়ের পর শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তাকে জোর করে হারানো হয়েছে। তিনি গ্যাস সম্পদ রপ্তানি করতে রাজি হননি বলেই আমেরিকা তাকে হারিয়ে দিয়েছে। আমরা যদি শেখ হাসিনার কথাকে সত্য বলে মেনে নিই, তাহলে এটা ধরে নিতে হবে যে, নির্বাচনে জনগণ ছাড়াও আরও বড় বড় ফ্যাক্টর আছে। তা হলো বিদেশি ফ্যাক্টর। শেখ হাসিনা সেটা জানেন বলে এবার আর ভুল করবেন না।

শক্তিমান বিদেশি প্রশাসনকে তুষ্ট করার জন্য যা যা দরকার তাই-ই তিনি করবেন। ভারতকে তুষ্ট করার জন্য তিনি এক ভারতীয় কোম্পানিকে সুন্দরবনের গা ঘেঁষে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুমতি দিয়েছেন। কী হতো যদি প্রকল্পটি সুন্দরবন থেকে দূরে অন্য কোথাও স্থাপন করা হতো? হয়তো সেই ভারতীয় কোম্পানির জন্য পরিবহন ব্যয় একটু বাড়ত! কিন্তু কী এসে যায় যদি সুন্দরবন ধ্বংস হয়! তবু তো কোম্পানির উৎপাদন খরচ কমল? এভাবেই ভারতকে তুষ্ট করবে বর্তমান সরকার। মার্কিন সরকারকেও তুষ্ট করতে হবে। সে জন্য এর আগেই মার্কিন কোম্পানি কনোকো-ফিলিপসকে বঙ্গোপসাগরের গ্যাস সম্পদ লুণ্ঠনের সুযোগ করে দিয়েছে।

এবার টিকফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশকে অসম্মানজনক বন্ধনে আটকে দিল। তবু যদি আমেরিকার মন পাওয়া যায়। জনপ্রিয়তা হারিয়েও ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে সেটা যে খুবই প্রয়োজন।

যে টিকফা চুক্তি ১১ বছর ধরে ঝুলে আছে, সরকারের মেয়াদকালের শেষ বেলায় এসে তড়িঘড়ি করে তা স্বাক্ষর করার কি প্রয়োজন ছিল? তিনটি কারণে টিকফা চুক্তির ব্যাপারে দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক মানুষের তীব্র আপত্তি রয়েছে। প্রথমত, এটি অনৈতিক।

দ্বিতীয়ত, এটি অবৈধ। তৃতীয়ত, এটি জাতীয় স্বার্থবিরোধী। এই ধরনের যে কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর করার আগে উচিত জনগণের মধ্যে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের ব্যবস্থা করা। অন্ততপক্ষে পার্লামেন্টে উত্থাপন করা। অন্যথায় তা হবে অনৈতিক।

পার্লামেন্টকে এড়িয়ে শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে এরকম আত্দঘাতী চুক্তি করার প্রক্রিয়াটাই অনৈতিক। তা ছাড়া বর্তমান সরকার হচ্ছে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যা কেবল রুটিন কাজ করে যাবে। এ ধরনের চুক্তি করার অধিকার তার নেই। তাই চুক্তিটি অবৈধ বলে বিবেচনা করা উচিত। আর জাতীয় স্বার্থবিরোধী তো বটেই।

টিকফা, টিফা বা এই ধরনের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি মার্কিনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে করতে চায় তার স্বার্থ পাকাপোক্ত করার জন্য। মার্কিনের চাপের কাছে কিন্তু ভারত, চীন প্রভৃতি দেশ নতিস্বীকার করেনি এবং এরকম কোনো চুক্তিতে সই করেনি। টিকফা ধরনের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, মধ্য এশিয়ার সৌদি আরব, বাহরাইন, মিসর, কুয়েত, ওমান এবং কতিপয় আফ্রিকান দেশ। অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ দেখিয়েছেন, যে দশটি দেশের সঙ্গে মার্কিনের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য তার মধ্যে একমাত্র রাজতন্ত্রী ও প্রতিক্রিয়াশীল সৌদি আরব ছাড়া কারোর সঙ্গেই এই চুক্তি নেই। অতএব, যে সব তথাকথিত বুদ্ধিজীবী টিকফাকে সমর্থন করে বলছেন যে, এর দ্বারা মার্কিনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে, তারা ভুল তথ্যের ভিত্তিতে কথা বলছেন।

একটা বড় যুক্তি দেখানো হয়, এর দ্বারা নাকি যুক্তরাষ্ট্রে আমরা গার্মেন্ট পণ্যের জন্য জিএসপি সুবিধা পাব। এটাও একটা বাজে কথা। কারণ আমাদের গার্মেন্ট শিল্প কখনই জিএসপি সুবিধা পায়নি। যা নেই তা হারানোর কথা ওঠে কি করে? যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমরা বৈষম্যের শিকার হয়ে এসেছি। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ দেখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে গড় আমদানি শুল্কহার যেখানে এক শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের গার্মেন্টের জন্য শুল্কহার ১৫ শতাংশ।

টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে এক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসবে এ কথা টিকফার সমর্থক বুদ্ধিজীবীর দল পেলেন কোথা থেকে?

বলা হয়, এই চুক্তির আওতায় আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাদা করে আলাপ-আলোচনার সুযোগ পাব। এ-ও এক অদ্ভুত যুক্তি। যেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক বিষয় নিয়ে আলোচনার আর কোনো পথ নেই। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মতো বহু জায়গা আছে, যেখানে দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী মিলিত হন। সেখানে কথা বলতে বাধা কোথায়? বরং টিকফা চুক্তি আমাদের হাত-পা বেঁধে দিচ্ছে।

উন্নয়নশীল ও সবচেয়ে কম উন্নত দেশগুলো যে জোটবদ্ধভাবে দরকষাকষি করার সুযোগ পেত বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা ও অন্যান্য সংস্থায়, সেখান থেকে বাংলাদেশকে এবং একই রকম চুক্তি স্বাক্ষরকারী বিভিন্ন দেশকে সরিয়ে এনে মার্কিনের পছন্দমতো কাঠামোর মধ্যে বেঁধে ফেলে তাদের শর্ত চাপিয়ে দেওয়াই হচ্ছে টিকফা ধরনের চুক্তির আসল উদ্দেশ্য। বস্তুত আমাদের সরকার স্বীয় সংকীর্ণ স্বার্থে দাসত্বের বন্ধনে বাংলাদেশকে আটকে দিল।

টিকফার আরেকটি বড় বিপদ হলো এই যে, এখন থেকে মার্কিন কোম্পানিগুলো বহু পণ্যের জন্য পেটেন্ট অধিকার দাবি করে বসতে পারে। আমাদের জানা নেই, কোনো মার্কিন কোম্পানি কোন ওষুধ, কোন শস্যবীজ, কোন উদ্ভিদের জন্য পেটেন্ট করে বসে আছে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার বিধান অনুযায়ী আমরা ২০২১ সাল পর্যন্ত যে ছাড় পাওয়ার কথা, তখন সেটা আর থাকবে না।

চেপে বসবে মেধাস্বত্বাধিকারের ব্যাপারটি। দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের ওষুধ শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প এবং আরও কি কি তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। এককথায় এমন চুক্তি আমাদের জন্য চরমভাবে জাতীয় স্বার্থবিরোধী। কিন্তু সরকার সাম্রাজ্যবাদকে তুষ্ট করার জন্য শেষ বেলায় তড়িঘড়ি করে এমন সর্বনাশা চুক্তি করে বসল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই, প্রধান বিরোধী দল কিন্তু এই চুক্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

কারণ তারাও চান মার্কিন প্রশাসনকে তুষ্ট করতে। মনে পড়ে গেল ঠিক এমনই চিত্র দেখেছিলাম ১৯৯৪ সালে, যখন তৃতীয় বিশ্বের জনমতকে উপেক্ষা করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বাধ্য করেছিল সবাইকে গ্যাটের ডাঙ্কেল প্রস্তাব জোর করে গিলিয়ে দিতে এবং সদ্য গঠিত বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার শর্ত বিধি-বিধান মেনে নিতে। মারাকাসে এই ভয়াবহ দলিলটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিএনপি সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী স্বাক্ষর করেছিলেন। (শোনা যায় তিনি বা বাংলাদেশের অন্য কেউ বিশাল দলিলটি পড়ে দেখেননি)।

ঠিক সেই সময় তদানীন্তন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা টোকিও সফররত ছিলেন। সেখান থেকেই তিনি এই বহুপাক্ষিক চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বাক্ষরদানকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তিনিও দেখেননি কী ছিল সেই চুক্তিতে।

এবার উল্টা ঘটনা। চরমভাবে জাতীয় স্বার্থবিরোধী টিকফা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।

সাধুবাদ জানাচ্ছে বিএনপি।

তার মানে এই দুই দলের মধ্যে মৌলিক কোনো বিরোধ নেই। উভয় দলই একই শ্রেণীস্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে। উভয়ের মধ্যে আরেকটি বড় মিল হলো, তারা উভয়ই দুর্নীতিবাজ এবং সাম্রাজ্যবাদের দেশীয় এজেন্ট মাত্র। তবু উভয়ের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চরম।

এই দ্বন্দ্বের সমাধান তারা গণতান্ত্রিক পথে করতেও পারেন না। তাই ঘুরে ঘুরে রাজনৈতিক সংকট দেখা যায়। সংকট থেকে স্থায়ীভাবে পরিত্রাণ পেতে হলে দুটি দলকেই বিদায় দিতে হবে এবং জনগণই পারবে সেই কাজটা করতে। -লেখক : রাজনীতিক

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।