ফ্রীল্যান্সার নতুন শতাব্দীর আদর্শ পেশা । যেমন ছিল শিল্পীরা নবজাগরণ এ, ইঞ্জিনিয়াররা যান্ত্রিক বিপ্লব এ, তেমনি এ শতাব্দীর কারিগরি বিপ্লবের সামনে অগ্রসর হওয়া ফ্রীল্যান্সারদের উপর নির্ভরশীল । কারিগরি বিপ্লবে অংশগ্রহণ করছে বিশ্বের সকল ফ্রীল্যান্সাররা । আর তাদের অবদানেই এই বিপ্লব সামনে অগ্রসর হচ্ছে ।
Apple এবং Microsoft এর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ার, মার্কেটার এর মত দক্ষ ফুল টাইম কর্মচারী আছে ।
কিন্তু ইন্টারনেট এবং কারগরি শিল্পের ক্ষেত্রে, এর অধিকাংশ নতুন বিষয়বস্তু এবং কোডিং উৎসাহী ফ্রীল্যান্সার দের সৃষ্টি । মূলত অনলাইন এর সিংহভাগ ডিজাইন, লেখা, কোডিং ফ্রীল্যান্সাররা করে । অনলাইনের অধিকাংশ সৃজনশীল সৃষ্টি ফ্রীল্যান্সারদের ।
আমরা মোবাইল এর ক্ষেত্রেও একই দেখি । অধিকাংশ অ্যাপ্লিকেশান কোম্পানির সৃষ্টি হয়েছে উদ্যোক্তাদের দ্বারা, যাদের শুরুটা ছিলো ফ্রীল্যান্সিং দিয়ে ।
আদতে ফ্রীল্যান্সিং কে তরুন উদ্যোক্তা, যাদের ছোট খাট ব্যবসা শুরু করার মত নুন্যতম মূলধনের ঘাটতি রয়েছে তাদের "নিজেকে তৈরি করার যন্ত্র" বলা যায় । অবশেষে যখন সেসব ব্যবসা শুরু হয়, অফিসের জায়গা, পরিশ্রম, খরচ ইত্যাদি বাচানোর জন্য তাদের লক্ষ যায় আউটসোরসিং এর দিকে ।
ইন্টারনেট এ যাই বলেন না কেন, ফ্রীল্যান্সিং ই সেই সব কিছুর মেরুদন্ড । ডিজাইন, কোডিং, লেখালেখি থেকে শুরু করে ইন্টারনেট এর প্রায় সব ধরণের কাজই ফ্রীল্যান্সারদের দ্বারা হয়ে থাকে । ছোট, মাঝারি যেকোনো ব্যবসাই বলুন না কেন, ফ্রীল্যান্সাররাই সেই ব্যবসার মেরুদন্ড ।
Elance এর CEO, Fabio Rosati বলেছেন তারা ২০১২ সালে ১০ লক্ষ জব লিস্টিং অতিক্রান্ত করেছেন, যা ২০১১ তে ৬৫০,০০০ ছিল ।
কারিগরি, কোডিং, সৃজনশীল, লেখেলাখি, ডিজাইন এর কাজ এর পরিমান সবচেয়ে বেশি । তিনি বলেছেন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশান ডেভেলপমেন্ট এর কাজও বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
এবার আপনাকে একটি প্রশ্ন করিঃ সকল ফ্রীল্যান্সাররা কাজ বন্ধ করে দিলে কি হবে?
চলুন এক মুহূর্তের জন্য ধরে নেই পৃথিবীর সকল ফ্রীল্যান্সার তাদের ফ্রীলান্সিং এর সব কাজ ছেড়ে নিরাপদ, স্থায়ী চাকরী করতে চাইলো । তখন সবচেয়ে খারাপ কি ঘটতে পারে?
জনপ্রিয় যত ব্লগ আছে যেমন Mashable, NYTime.com, Business Insider ইত্যাদি অচল হয়ে পরবে ।
কারন এসব ব্লগ গুলো ফ্রীল্যান্সারদের লেখাতেই চলে । এসব ব্লগে দারুন দারুন যত পোস্ট আপনি পড়েন তার অধিকাংশই ফ্রীল্যান্সারদের লেখা । বড় বড় অনলাইন পত্রিকা গুলোতে ফুল টাইম কর্মচারী আছে, যারা ওই নিউজ ওয়েবসাইট এর জন্য নিউজ লিখে থাকে । কিন্তু পুরো ইন্টারনেটে আপনি যে লেখা গুলো পড়েন তার মাত্র কয়েক শতাংশ ফুল টাইম ব্লগার বা কর্মচারী দিয়ে লেখা, সিংহভাগই লেখে ফ্রিল্যান্সাররা । ব্লগ গুলোর ক্ষেত্রে ফুল টাইম কর্মচারী নিয়োগ সম্ভব নয়, এ কারণেই তারা ফ্রীল্যান্সারদের উপর নির্ভর করে।
মূলত অনলাইন এ অধিকাংশ লেখালেখির কাজ ফ্রীল্যান্সারাই করে থাকে । সুতরাং বুঝতেই পারছেন, ফ্রীল্যান্সারদের ছাড়া এসব ব্লগ এবং এই ধরণের ফ্রীল্যান্সার নির্ভর ওয়েবসাইট গুলো অচল হয়ে পরবে ।
অনলাইন এ অনেক বড় বড় ডিজাইন এজেন্সি আছে । তারা আপনাকে খুব ভাল দামে ডিজাইন করে দিবে চার্জ ও করবে সেরকম। কিন্তু তারাই যথেষ্ট নয় ।
এছাড়া এসব এজেন্সির ডিজাইন আপনার মনের মতও হবে না! আর সবচেয়ে বড় কথা হলো ফ্যিল্যান্সারা একই বা এজেন্সির চেয়ে বহু গুণে ভালো আর মানসম্মত ডিজাইন করে দিবে তাও আবার কয়েকগুণ কম খরচে!
বেশির ভাগ ডিজাইন এর কাজ করে থাকে ফ্রীল্যান্সার রা । এমনকি অনেক ডিজাইন এজেন্সি ও আপনার থেকে কাজ নিয়ে তা কম মুল্যে ফ্রীল্যান্সার দের দিয়ে করিয়ে নেয় । 99Designs এর মত বড় বড় কোম্পানির মাধ্যমে ফ্রীল্যান্সারদের দিয়ে ডিজাইন করানো হয় । আর 99Designs.com এ গেলেই তার পরিমান আচ করা যায় । এছাড়াও অন্যান্য মার্কেটপ্লেসে অসংখ্য ফ্রীল্যান্স ডিজাইনার আছে, যাদের ডিজাইন দিয়েই এই ইন্টারনেট এর সব কিছু চলছে ।
আর এসব ফ্রীল্যান্সার এর ডিজাইন ছাড়া আমরা ডিজাইন এর দিক থেকে ঠিক '৯৫ এ পিছিয়ে যাবো!
অধিকাংশ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশানই ফ্রীল্যান্সারদের বা ছোট ছোট কোম্পানি যারা ফ্রীল্যান্স আউটসোরসিং এ নির্ভরশীল তাদের তৈরি করা । হ্যা, আমি মানি কিছু কিছু মোবাইল অ্যাপ্লিকেশান এ অতিরিক্ত এডভারটাইজমেন্ট থাকে যা প্রচন্ড বিরক্তিকর । কিন্তু তা সব মোবাইল অ্যাপ্লিকেশান এর ক্ষেত্রে না । আর অনেক গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ আছে যেগুলো ছাড়া চলাও আমাদের পক্ষে মুশকিল যা এই সব ফ্রিল্যান্সারদেরই তৈরি!
খুব অল্প পরিমান কোম্পানি আছে যাদের নিজস্ব ফুল টাইম অ্যাপ্লিকেশান ডেভেলপার আছে । আর তারা খুব অল্প সংখ্যক হয়ত বড় বড় মোবাইল অ্যাপ আমাদের তৈরি করে দিবে ।
কিন্তু প্রথমত তা ফ্রী না আর দ্বিতীয়ত এই অল্প কিছু বড় অ্যাপ আমাদের চাহিদা পূরণ করতে পারবে না ।
ফ্রীল্যান্সাররাই আমাদের জন্য ফ্রী দারুন সব প্রয়োজনীয় অ্যাপ তৈরি করে । যা বড় বড় কোম্পানি গুলো আমাদের জন্য করবে না তারা হয়ত কোন বড় অ্যাপস বাণিজিক ভাবে তৈরি করবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ধরি, বাংলাদেশে প্রতি বছর ফ্রীল্যান্সার রা লক্ষ লক্ষ ডলার নিয়ে আসছে আউটসোরসিং এ ফ্রীল্যান্স করে । আর এ অর্থ আমাদের জন্য কতটা উপকারি তা হয়তো আর নির্দিষ্ট করে বলা লাগবে না ।
বিশ্বে বড় বড় কোম্পানি আউটসোরস করে প্রচুর পরিমান অর্থ বাচাচ্ছে, যা অন্য প্রয়োজনীয় কাজে লাগাতে পারছে ।
বাংলাদেশে প্রায় ১০ লক্ষ ছেলে-মেয়ে আত্মনির্ভরশীল ফ্রীল্যান্সিং করে । তারা ফ্রীল্যান্সিং করে তাদের পরার খরচ, নিজদের পকেট খরচ ছাড়াও পরিবার এর প্রয়োজনীয় খরচ চালাচ্ছে । অনেকে ফ্রীল্যান্সিং এর টাকা দিয়েই তার পরিবার চালাচ্ছে । ২০১২ এর অক্টোবর এ Bureau of Labor Statistics এর দেয়া এক তথ্যে বলা হয় ১৪.৯ মিলিওন ইউএস নাগরিক ফ্রীল্যান্সিং এর মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল ।
এই বিশাল পরিমান ফ্রীল্যান্সার যদি ফ্রীল্যান্সিং না করে চাকরী করার কথা চিন্তা করতো তাহলে...
সারা বিশ্বে প্রচুর ফ্রীল্যান্সার আছে । বাংলাদেশে প্রায় ১০ লক্ষ ফ্রীল্যান্সার আছে, ইউএস এ এর সংখ্যা বর্তমানে ১৫-২০ মিলিওন তা তার চেয়ে বেশি! আর এই বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান ব্যবস্থা করা অসম্ভব!
খুবই খারাপ মানের ডিজাইন আর অল্প সংখ্যক বড় মোবাইল অ্যাপ্লিকেশান আমাদের চাহিদার তুলনায় কিছুই না । যেখানে কোন ব্লগ পোস্ট থাকবে না, ভালো কোন মিডিয়া থাকবে না তখন মানুষ অনলাইন এ আসার আগ্রহই হারিয়ে ফেলবে । এতে করে জ্ঞান কমবে, যোগাযোগ কমবে এবং সবমিলিয়ে বিশ্বের অবস্থা এমন হবে যা অকল্পনীয় । এবং আমরা অনেক সময় পিছিয়ে যাবো ।
আবার '৯৫ সালে ফিরে যাওয়া! না আমি এটা চাই না... আমি আমার Iphone 5 (এই শতাব্দীর সৃষ্টি) ভালবাসি ।
সুতরাং আপনি যদি একজন ফ্রীল্যান্সার হন, আপনি আপনার অবদানে জন্য গর্ব করুন । আপনিও ভবিষ্যতের একজন সেরা মানুষ!
আমি তো বকবক করলাম, এবার আপনার কথা শুনে নেয়া যাক? আপনার মতামত গুলো টিউমেন্ট (টেকটিউনস কমেন্ট) এর মাধ্যমে জানান
কম্পিউটার লাভার (রাকিবুল হাসান)
ফেসবুক ~ টুইটার ~ গুগল প্লাস
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।