আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৫০ হাজার গাছ কেটে বনের জমি দখল

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরলাঠিমারা ও বাদুরতলা সংরক্ষিত বনের প্রায় ৫০ হাজার শ্বাসমূলীয় গাছ কেটে বনভূমি দখল করা হয়েছে। এতে বন্য প্রাণীর অস্তিত্ব ও পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মধ্যে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় বনরক্ষীরা হামলার ভয়ে দখল-প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার সাহস পাচ্ছেন না।
পাথরঘাটা বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বলেশ্বর নদের তীরবর্তী চরলাঠিমারা ও বাদুরতলা মৌজার তিন হাজার ১৯ একর আয়তনের এই বন দুটিকে ১৯৮৬ সালে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কেওড়া, গেওয়া, বাইনসহ বিভিন্ন শ্বাসমূলীয় ও অন্যান্য প্রজাতির বৃক্ষের পাশাপাশি কাঁকড়া, কচ্ছপ, মেছোবাঘ, বানর, শূকর প্রভৃতি বন্য প্রাণীসহ প্রায় ৩০ প্রজাতির পাখির অভয়ারণ্য এই বনাঞ্চল।


১৯৮৯-৯০ সালে এই বনাঞ্চলের ৪০ একর জমি চর দেখিয়ে বন্দোবস্ত নেয় স্থানীয় ৫৩টি কথিত ভূমিহীন পরিবার। এই ব্যক্তিরা চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় প্রায় ৪০ হাজার গাছ কেটে ১৯ একর জমি দখলে নিয়ে ঘর তোলেন। সে সময় বন বিভাগ দখল-প্রক্রিয়ায় বাধা দিলে দখলদারেরা তাদের ওপর হামলা চালান। এ ঘটনায় গত ২৪ আগস্ট ৫৩ জন দখলদারকে বিবাদী করে বরগুনার সহকারী জেলা জজ আদালতে একটি দেওয়ানি মামলা করা হয়। ২৬ আগস্ট আদালত স্থিতাবস্থা জারি করেন।

এরপর দখল-প্রক্রিয়া কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আদালতের আদেশ অমান্য করে চলতি মাসের প্রথম দিকে পুনরায় সংরক্ষিত বনের গাছ কেটে জমি দখল শুরু হয়। এ সময় বনের প্রায় ৫০ হাজার গাছ কেটে সাবাড় করা হয়।
দখলদারদের দাবি, ১৯৮৯-৯০ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক হরেন্দ্রনাথ হাওলাদার পদ্মা গ্রামের ৫৩ জন ভূমিহীনের মধ্যে ৪০ একর জমির ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ দেন। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় ১৯ একর জমি দখলে নিয়ে তাঁরা বসবাস করছেন। এখন বাকি ২১ একর জমির গাছপালা কেটে দখলে নিয়েছেন।


গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, নারী ও শিশুরা কেওড়া ও গেওয়াগাছের ডালপালা কেটে আঁটি বেঁধে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। বনের মধ্যে ঢুকে চোখে পড়ে বিশাল আয়তনের ধানখেত। কেওড়া ও গেওয়াগাছ কেটে এ বছরই এই জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে। একটু এগোতেই দেখা গেল, ডালপালা ছাঁটাই করা গাছগুলো কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ২০-২৫ জন লোক। তা ছাড়া বনভূমির মাটি কেটে সীমানা বাঁধও নির্মাণ করা হচ্ছে।


পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের ডিন আ ক ম মোস্তফা জামান বলেন, শ্বাসমূলীয় বন ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসের গতিরোধক হিসেবে জানমালের সুরক্ষা দেয়। এমনিতেই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চল দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে; তার ওপর বিপুলসংখ্যক গাছ কেটে ফেলায় সংরক্ষিত বনের অস্তিত্ব মারাত্মক হুমকিতে পড়বে।
চরলাঠিমারা বনের বিট কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানান, ২৫ নভেম্বর সংরক্ষিত বনে বন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা টহলে গেলে স্থানীয় ৪০-৫০ জন নারী-পুরুষ দা, কুড়াল ও লাঠি নিয়ে ধাওয়া করেন।
বন বিভাগের পাথরঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সোলায়মান হাওলাদার বলেন, ‘আমরা কারও সহযোগিতা পাচ্ছি না বলে এই দখল-প্রক্রিয়া রোধ করা যাচ্ছে না। ২৫ নভেম্বর বনরক্ষীরা সেখানে গেলে দখলদারেরা তাঁদের দা, কুড়াল নিয়ে ধাওয়া করেন।

ওই দিনই বিষয়টি আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। ’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাখাওয়াত হোসেন সরকার বলেন, ‘বন বিভাগের পক্ষ থেকে বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি। লিখিতভাবে জানানো হলে দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।