সদ্যই ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছেন আধুনিক কালের ব্র্যাডম্যান। ‘ছেলেটি আমার মতোই খেলে’, টিভি পর্দায় শচীন টেন্ডুলকারের মোহনীয় শর্টগুলোয় মোহিত হয়ে ডন ব্র্যাডম্যান স্ত্রী জেসিকে এমনটিই বলেছিলেন। দুই কালের দুই ব্র্যাডম্যানের মধ্যে অনেক সময়ই মিল খোঁজা হয়েছে। একটা বড় মিল, ব্র্যাডম্যান আর টেন্ডুলকার—দুজনেরই অভিষেক হয়েছিল নভেম্বরেই।
দুজনই অভিষেক টেস্টটা স্মরণীয় করে রাখতে পারেননি কোনো ব্যাটিং কীর্তি দিয়ে।
টেন্ডুলকার একমাত্র ইনিংসে করেছিলেন ১৫ রান। ১৯২৮ সালের ৩০ নভেম্বর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল ব্র্যাডম্যানের। ব্রিসবেনের সেই ম্যাচটিতে ব্র্যাডম্যান করেছিলেন ১৮ ও ১!
মাত্র নয়টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেই ২০ বছর বয়সী ব্র্যাডম্যান জায়গা করে নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া দলে। কিন্তু ক্যারিয়ারটিকে রূপকথা বানিয়ে ফেলা ব্র্যাডম্যানের অভিষেকটা সুখকর ছিল না। নিজে শুধু ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলেই নয়, দলও হেরেছিল ৬৭৫ রানের বিশাল ব্যবধানে! যা কিনা এখনো রান হিসেবে সর্বোচ্চ ব্যবধানে পরাজয়ের রেকর্ড।
ফলাফল? পরের টেস্টেই বাদ পড়েন! সেবারের অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টেই অবশ্য আবার ফিরেছিলেন। এবার ফিরেই সেঞ্চুরি। মেলবোর্ন টেস্টে দুই ইনিংসে ব্র্যাডম্যান করেছিলেন ৭৯ ও ১১২। অবশ্য তার পরও হেরেছিল দল। ৩ উইকেটের সেই পরাজয় ৫ ম্যাচের অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়াকে পিছিয়ে দিয়েছিল ৩-০ ব্যবধানে।
শুধু তা-ই নয়, অস্ট্রেলিয়া উত্তেজনাপূর্ণ চতুর্থ টেস্টে মাত্র ১২ রানে হেরে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল হোয়াইটওয়াশের লজ্জার সামনে। সেই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৮ করা ব্র্যাডম্যান দলকে কিন্তু জয়ের আশাই দেখাচ্ছিলেন। ৭ উইকেটে ৩২০ রান তুলে ফেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল আর ২৯ রান। কিন্তু অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্র্যাডম্যানের বিদায়ের পর আর বেশিক্ষণ টেকেনি অস্ট্রেলিয়া।
পঞ্চম ও শেষ টেস্টে অবশ্য ধবলধোলাই এড়াতে পেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। আবারও মেলবোর্নে সেঞ্চুরি করেন ব্র্যাডম্যান। প্রথম ইনিংসে ১২৩ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৩৭ রানের ইনিংস খেলে দলকে জয়ের বন্দরে ভিড়িয়েই সাজঘরে ফিরেছিলেন। তরুণ ব্র্যাডম্যানে সওয়ার হয়েই সেবার অ্যাশেজে ধবলধোলাইয়েল লজ্জায় পড়তে হয়নি অস্ট্রেলিয়াকে।
১৯০৮ সালের ২৭ আগস্ট নিউ সাউথওয়েলসে জন্ম নেওয়া ব্র্যাডম্যানের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার শুরু শৈশব থেকেই।
কিশোর ব্র্যাডম্যান ক্রিকেট অনুশীলন করতেন ক্রিকেট স্ট্যাম্প আর গলফ বল দিয়ে। ১১ বছর বয়সে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন। ১২ বছর বয়সে হাঁকান সেঞ্চুরিও।
১৯২১ সালে সিডনিতে বাবার সঙ্গে শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচ দেখতে গিয়ে বলে ছিলেন, ‘আমি সন্তুষ্ট না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি এই মাঠে না খেলছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমি শান্তি পাব না। ’
ঈশ্বর প্রদত্ত প্রতিভা নিয়ে জন্মানো ব্র্যাডম্যান ঠিকই খুঁজে পেয়েছিলেন সেই ‘শান্তি’।
১৯৩০ সালে শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচে কুইন্সল্যান্ডের হয়ে করে ছিলেন অপরাজিত ৪৫২ রান। যা ছিল ওই সময়ের সর্বোচ্চ। ১৯৩১ সালেই উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটারের খেতাবও জেতেন।
শুরুর এই ধারাবাহিকতা ২০ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে ধরে রেখেছিলেন। তাই তো তাঁর ব্যাটিং গড় ৯৯.৯৪, যা ক্রিকেটীয় কিংবদন্তি হয়ে আছে।
এমনকি কিংবদন্তি হয়ে আছে তাঁর শেষ টেস্টে করা শূন্যটিও!
৫২ টেস্টে ২৯টি সেঞ্চুরি আর ১৩ ফিফটিসহ ৬৯৯৬ রান করেছিলেন। ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৩৩৪ রান করেছিলেন ১৯৩০ সালে লিডসে। একই মাঠে চার বছর পর আরও একটি ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। আছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৯৯ রানের অপরাজিত একটি ইনিংসও।
আজকের এই দিনে অভিষেক হয়েছিল ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানটির।
ক্রিকেট ইতিহাসে ৩০ নভেম্বর দিনটাও যেন তাই অন্য রকম!
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।