আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আছো তুমি নিভৃতে, অন্তরালে



তিনি লিখেছিলেন, “ নিউট্রন বোমা বোঝ, মানুষ বোঝ না। ” । এটি সম্ভবত বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে ছোট কবিতা। আশ্চর্য প্রতিভাধর নিভৃতচারী এই কবির নাম হেলাল হাফিজ। জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত সয়ে তিনি লিখতে পেরেছেন, “ দুঃখের আরেক নাম হেলাল হাফিজ।

” বাংলা কবিতার বিশাল আকাশে হঠাৎ ধূমকেতুর মত উদয় হওয়া এই কবি ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায় জন্মগ্রহন করেন। অল্পবয়েসে মা কে হারানোর বেদনাই তাকে কবি হিসেবে তৈরি করেছে বলে হেলাল হাফিজ মনে করেন। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কবিতা সংকলন যে নাম নিয়ে মলাটবন্দি হয়েছিল কবিতাপ্রেমীরা বোধকরি আগে কখনো এমন সম্মোহনী নাম পাননি। অদ্ভুত মাদকতার নির্যাসে ভরা “ যে জলে আগুন জ্বলে ” কবিতা সংকলনটিতে কবি তাঁর ১৭ বছর ধরে লেখা বিভিন্ন কবিতার খেরো খাতা থেকে পছন্দের ৫৬ টি কবিতার সন্নিবেশ ঘটিয়েছিলেন। স্বৈরাচারবিরোধী কবিতা ,ঘরোয়া রাজনীতির কবিতা , যোদ্ধাহত যুবকের প্রেমিকা হারানোর ব্যথা কি নেই এতে।

সময়কে কবিতার জালে বন্দি করতে পারায় ছিলো কবি হেলাল হাফিজ এর অমিতপ্রতিভা। তিনি যৌবনের ধর্মকে মেনে নিয়ে ১৯৬৯ সালের উত্থাল সময়ে লিখা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’-তে স্বদর্পে বলতে পেরেছেন, “ এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময় তার। ” আজও যখন যুবকসমাজ তাঁর এই কবিতাটিকে স্লোগান বানিয়ে ব্যবহার করে তখন নতুন করে ভাবতে হয় কবি সেইদিন কবিতা লিখতে গিয়ে স্লোগান লিখেছেন নাকি স্লোগান লিখতে গিয়ে কবিতা লিখে ফেলেছেন। হেলাল হাফিজের কবিতাগুলি সমসাময়িক গতানুগিক ঢং এর বাইরে থেকেও তৎকালীন সমসাময়িকতাকে ফুটিয়ে তুলেছে মায়াবী মুগ্ধতায়। তাঁর কবিতায় একদিকে ছিলো যেমন দ্রোহের দর্প অন্যদিকে ছিলো বেদনায় নীল হয়ে থাকার স্বেচ্ছাচারিতা।

অপচয় ও আত্মপীড়ন কবির দুটি প্রিয় বিষয় তাই তাঁর কবিতায় কবি নিজের জীবনকে নিয়ে প্রায় কবিতায় খেলেছেন। কবি ‘ফেরিওয়ালা’ কবিতায় কষ্ট বিক্রি করেছেন এই বলে, “আমার মত ক’জনের আর সব হয়েছে নষ্ট, আর কে দেবে আমার মতো হৃষ্টপুষ্ট কষ্ট” কখনো সাংবাদিকতা, কখনো জুয়ারী হিসেবে , কখনো বা ধনী মহিলাদের সংগদান করে জীবিকা নির্বাহ করা হেলাল হাফিজ যখন কবিতা লিখে খ্যাতির শিখরে তখন হঠাৎ করে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন কবিতার জগত থেকে। যে কারনে তার এই স্বেচ্ছানির্বাসন তা হলো কবির তুমুল জনপ্রিয়তা। এটি তাঁর মনে একপ্রকার ভীতি সৃষ্টি করে দিলো। তাঁর লেখা নতুন কবিতা যদি 'যে জলে আগুন জ্বলে'র কবিতার কাছাকাছি না যেতে পারে! যদি তাঁর লেখা কবিতা মানুষ না পড়তে চায়! কবি এই আতঙ্কের কারনে কবিতা থেকে দূরে রইলেন বহুবছর।

দূরে রইলেন তাঁর অগণিত পাঠকের ধরা-ছোঁয়ার অনেক বাইরে। কবির এই স্বেচ্ছানির্বাসন বাংলা কবিতার পাঠকদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি বৈ আর কিছুই নয়। কবি এই সম্পর্কে নিজেই একটি কবিতায় বলেছেন, “ এত ভালোবাসা পেয়ে, ভিতরে ভীষন লাজে বেদনারা লাল হয়ে গেছে। ” তবে আশার কথা হল খুব শীঘ্রই কবি ফিরছেন কবিতার প্রিয় আঙ্গিনায়। আমরা কবির প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় রইলাম।

তাঁর কিছু কবিতা

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।