আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেহ বিক্রি

লাখো শহীদের বাংলায়, রাজাকারের ঠাই নাই।

চোখ মুখ কুঁচকে আম গাছটার দিলে তাকালেন পঞ্চাশোর্ধ মোসাদ্দেক সাহেব। কাকটার তীব্র কা কা ডাকে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। শব্দ করে কয়েকবার তাড়াবার বৃথা চেষ্টা করলেন। কোন এক অদ্ভুত কারনে গ্রামে অন্যান্য বাড়ির চাইতে তার বাড়িতেই কাকের আনাগোনা বেশি, সেই সাথে কা কা ডাকও।

যতক্ষন বাড়িতে থাকেন ততক্ষন তাকে কাকের এই কাকা শব্দ সহ্য করতে হয়। বিরক্ত মুখে পিচিক করে এক দলা থুতু ফেললেন পাশে। মোসাদ্দেক সাহেব গ্রামের চেয়ারম্যান। সবাই তাকে খুব মান্য গন্য করে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন তিনি, দান খয়রাতের হাতও তার ভালো।

পানির মত টাকা পয়সা দান করেন তিনি। বড়ই দিল খোলা মানুষ। মনটাও অবলা নারীর মত অবলা। মানুষের দুঃখ কষ্টে ঠিক রাখতে পারেন না নিজেকে। তার ধ্যান জ্ঞান সব সময় থাকে পরের উপকারে।

স্ত্রী মারা গেছে বছর দশেক আগে। বাড়িতে তার এক মাত্র মেয়ে কলেজে পড়ে। কোন এক অদ্ভুত কারনে তার বাসায় কোন কাজে মহিলা থাকে না। কেউ কেউ ৫/৬ মাস কাজ করলেও অনেকেই এক দেড় মাসেই চলে যায়। রমিজ মিয়া মোসাদ্দেক সাহেব সম্পর্কে এভাবেই ধারনা দিচ্ছিল হালিমের মাকে।

রমিজ মিয়া মোসাদ্দেক সাহেবের খুবই কাছের মানুষ। বাড়িতে রান্না বান্না করার কাজে একজন মানুষ দরকার। তাই রমিজ মিয়া হালিমের মাকে নিয়ে যাচ্ছে চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়িতে। থাকা খাওয়া বাবদ মাসে মাসে ৩ হাজার টাকা। স্বামীহারা তিন সন্তানের জননী হালিমের মায়ের জন্যে এই তো অনেক।

“বাবা, কলেজে যাইতাছি” বলেই বের হয়ে গেল মেয়েটা। দেখতে দেখতে কত বড় হয়ে গেল। এইবার একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিতে পারলেই হয়। “সালামালাইকুম চেয়ারম্যান সাব। ” রমিজ মিয়ার সালামে সচকিত হলেন মোসাদ্দেক সাহেব।

“এই যে নিয়া আইছি। রইচপুরের সামাদের বউ। বড়ই কামের। দিন রাইত খাটতে পারে। আপনের বাসার কাম কাইজ এখন থিকা ও করবো।

” আপাদমস্তক দেখে নিলেন একবার। গায়ে ময়লা শাড়ি। বাম হাতের বগলের কাছ দিয়ে ব্লাউজের ছেড়া অংশটুকু শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢেকে রাখার আপ্রান চেষ্টা ব্যর্থ। শরীরে অভাবের প্রবল ছাপ থাকলেও দেখতে একেবারে খারাপ না। হালিমের মার বুকের দিকে তাকিয়ে চোখ আটকে গেল।

এই বয়সেও শরীরে শিহরণ অনুভব করলেন মোসাদ্দেক সাহেব। ইশারা করতেই হালিমের মাকে তার কাজ বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেল রমিজ। মোসাদ্দেক সাহেব উঠে ঘরের ভেতর চলে গেলেন। উচ্চস্বরে হালিমের মাকে ডাকলেন। হালিমের মা এলে তার খোঁজ খবর নিয়ে বলে শুরু করলেন, সেই কত বছর আগে লতিফার মা আমরা গেছে, অনেক ভালবাসতেন লতিফার মাকে, কখনো কোন কষ্ট দেননি, সব সময় চেয়েছেন সব ইচ্ছা পুরন করতে।

লতিফার মা ও উনাকে খুব ভালবাসতেন। তাদের মধ্যে কোন অশান্তি ছিল না। কিন্তু আল্লাহ তাদের সুখ সহ্য করলেন না। আল্লাহ লতিফার মাকে বেহেস্তে নিয়ে গেলেন। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মোসাদ্দেক সাহেব হালিমের মার কাধে হাত রাখলেন।

হালিমের মা নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হল। মোসাদ্দেক সাহেব বলতে লাগলেন “তোমাকেও আমি লতিফার মার মত সুখে রাখবো, তোমার সব ইচ্ছা পুরন করব, তুমি শুধু একটু মাঝে মাঝে আমার খেয়াল রেখো। আমার মনের ইচ্ছা গুলো বোঝার চেষ্টা করো”। বলেই হাত নিচের দিকে নামাতে লাগলেন। হালিমের মা এতক্ষনে বুঝে গেছে কি হতে চলেছে এবং আপ্রান চেষ্টা করছে নিজেকে বাঁচাবার।

শত অভাবের মধ্যে দিয়ে গিয়েও কখনো কারো কাছে শরীর বিক্রি করেনি। অনেকেই তার শরীরের দিকে দৃষ্টি দিয়েছে, লালসার হাত বাড়িয়েছে কিন্তু হালিমের মা সব সময় নিজেকে বাঁচিয়ে চলেছে। আজও সে নিজেকে বাচাবে, যেভাবেই হোক বাচাবে। শরীর সে কখনোই বিক্রি করবে না। মোসাদ্দেক সাহেবের সাথে শক্তিতে না পেরে ওঠার কারনে তার দুই পায়ের মাঝে সজোরে লাথি বসিয়ে দিল হালিমের মা।

ঘর থেকে দৌড়ে বের হয়ে যাবার সময় কোন কথা বলতে না চাইলেও মুখ থেকে নিজের অজান্তেই বের হয়ে আসে “কুত্তার বাচ্চা”।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।