আমার কথা সিরিয়াসলি নিয়া বাঁশ খাইলে নিজ দায়িত্বে বাঁশ খাইয়েন ফ্যামিলি ট্যুরে কুমিল্লা গিয়েছি। কুমিল্লায় কিছুদিন আগেই মামুজানের পোস্টিং হয়েছে। আমার সফর সঙ্গী হয়েছে আমার ছোট খালা,আমার মামার শাশুড়ী,মামার শা্লী(শাম্মি খালামনি),আর শাম্মি খালার দুই ছেলে-মেয়ে।
আমার কাহিনী শাম্মি খালার ছেলে আরাফকে নিয়ে। অনেক ছোটবেলা থেকেই আরাফের সাথে আমার বেশ খাতির।
তবে কুমিল্লায় এসে আরাফের সাথে খাতিরটা “গলায় গলায় পিরীত” টাইপ হয়ে দাড়ালো। আরাফের বয়স এখন পাচ বছর। বয়স পাচ হলে কি হবে,সে ইতিমধ্যে জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ব্যাপারে বেশ চিন্তিত হয়ে পরেছে। এত চিন্তায় পরতো না,যদি বাংলা সিনেমাটা একটু কম-কম দেখত। ভারতীয় বাংলা চ্যানেলগুলোর কল্যানে কিভাবে আই লাভ ইউ বলতে হয়,কিভাবে নায়িকাকে ফুল দিতে হয়,কিভাবে হাটু নিচু করে আংটি গিফট করতে হয়-সব সে মুখস্থ করে ফেলেছে।
এই অবস্থায় সে খুব একজন নায়িকার অভাব বোধ করছে। আশে পাশে নায়িকা সে খুব একটা পাচ্ছে না। এই অবস্থায় আরাফ আর আমার কুমিল্লা সফর।
কুমিল্লায় যাওয়ার পথে সে আমার পাশে ছাড়া আর কারো পাশেই বসবে না। তার মা বহু চেষ্টা করেও আমার পাশ থেকে তাকে কেড়ে নিতে পারল না।
একসময় পাশে বসে থাকতে থাকতে আমার কাধে মাথা রেখে বেচারা ঘুমেয়ে পড়ল। ঘন্টা খানেক পর ঘুম থেকে উঠে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ চুলকাতে চুলকাতে বলল, “তোমার ড্রেসের ডিজাইনটা খুবই সুন্দর। সব সময় লাল জামা পরবা। ওকে?”
আমি তার কথা শুনে হেসে ফেললাম। সে আবার বলল, “হাসো ক্যান?”
আমি বললাম, “এমনিতেই হাসি।
”
তারপর তার রোমান্টিক কথা শুরু হল। তা আর নাই বলি। বাংলা সিনেমায় বলে এমন কোনো রোমান্টিক কথা সে আর বাদ দিলো না। যাই হোক,রোমান্টিক কথা শুনতে শুনতেই আমারা কুমিল্লা পৌছে গেলাম।
কুমিল্লা গিয়ে সে আর আমার পিছন ছাড়েনা।
আমি যেখানে যাবো,সেও সেখানেই যাবে,আমি যা করব সেও তাই করবে,তার চেয়েও ভয়াবহ হল,সে আমাদের সবাইকে অবাক করে ঘোষনা করল যে সে এখন থেকে আর শুটকী আপুর মত করেই হাটবে।
আরাফ মিয়ার কর্মকান্ডে আমি যথেষ্ট পুলকিত। সে আমাকে কাচা কাচা অক্ষরে লাভ লে্টারও দিতে শুরু করে দিল। চিঠির কথা প্রতিবারই একরকম।
বিশাল একটা হার্টের ভিতরে আমার নাম।
সাথে বাসার সামনে থেকে কুড়িয়ে আনা কাঠগোলাপ!আমি তো আরাফ বাবুর তামশা দেখে সেই মাপের পুলকিত। যাই হোক,শেষ পর্যন্ত একজন প্রেমিক পাওয়া গেল। কিন্তু সমস্যা বাধালো শ্রেয়শী। শ্রেয়শী হল আমার কুমিল্লাইয় বসবাসরতএকজন কাজিন। তার বয়সও আরাফের কাছাকাছি।
সেদিন শ্রেয়শী আমাদের সাথে দেখা করতে এসেই ঘোষনা দিল-বড় হয়ে সে আরাফকে বিয়ে করবে। আমার নাগর আরাফও দেখলাম শ্রেয়শীর প্রস্তাবে রাজী!শ্রেয়শী সেদিন খেলা করে চলে গেল।
পরের দিন আমার সাথে দেখা করতে আসল আমার বান্ধবী তূর্ণা। তূর্ণাকে দেখে সে আমার কানে কানে বলল, “আপু,তূর্ণা আপু তো তোমার চেয়ে বেশী সুন্দর!”
আমি অবাক চোখে পাকনা পুলার দিকে তাকালাম। ব্যাটার এখনই এই অবস্থা।
বড় হইলে তো পুরাই প্লেবয় হবে!
তূর্ণা যতক্ষন বাসায় থাকল ততক্ষন সে তার পিছে পিছে ঘুরল। কিছুক্ষন পর এসে আরাফ মিয়া আমাকে এক কঠিন সিদ্ধান্ত জানিয়ে গেল। সে ভেবেছিল আমাকেই বিয়ে করবে। কিন্তু এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে তূর্ণাকে বিয়ে করবে। আমি তার কথা শুনে খুবই মনক্ষুন্ন হলাম।
তার কথা শুনে আমার মামি তাকে বলল,তূর্ণা্র তো আর একটা ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে।
তূর্ণার বিয়ে ঠিক হওয়া শুনে আরাফ মিয়া পুরা পল্টি দিল। সে সুন্দরমত আমার গলা ধরে ঝুলাঝুলি শুরু করে দিল। তার ডায়ালগ তখন একটাই, “আপু,আমি শুধু তোমাকে বিয়ে করব। শ্রেয়শীকেও বিয়ে করব না,তূর্ণা আপুকেও বিয়ে করব না।
শুধু তোমাকে বিয়ে করব। ”
তার কথা শুনে আমার আরেক কাজিন সারাফ বল, “আপু গো,এই বাটপার এখনই এইরকম করে,তাইলে বড় হইলে কি করবে?”
আমি সারাফের কথার কোনো জবাব দিলাম না। আমি প্রতারিত হয়ে যথেষ্ট বিরক্ত!!!!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।