আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এটা পড়ে কেউ কেউ হয়তো আমাকে বিএনপি - জামাত ব্রান্ডিং করে ফেলবেন,(গালি্ও দিবেন বলাযায়)। কিন্তু বাস্তবে আমরা কতটুকু সতন্ত্র? তাই লিখা আছে এতে..

আমি অমানুষ, সব মানুষের সাথে আমার বাস। নাকি মানুষ আমি, আমার বসবাস সব অমানুষের সাথে

শফিক রেহমান মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রধানমন্ত্রী বা ডেট এক্সপায়ার্ড প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা সম্প্রতি বারবার বলছেন, নির্বাচন বাংলার মাটিতে হবেই। কিন্তু তিনি কখনোই বলছেন না ওই নির্বাচনের রেজাল্ট আগেই স্থির হবে ইনডিয়ার মাটিতে। এই বিষয়টি নিয়ে তুমি একটা রিপোর্ট লিখে ফেল। এটা আমাদের লিড রিপোর্ট হবে।

শামীম তার ডিপ্লম্যাটিক করেসপনডেন্ট খসরু সালামকে নির্দেশ দিল। শামীমের নির্দেশ শুনে খসরুর মুখে হাসি ভরে গেল। সে বলল, সারা দেশের মানুষ এখন ইনডিয়ান হস্তক্ষেপ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছে। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক রিপোর্টটি লিখতে বললেন। শামীম ভাই, এই জন্যই আপনার সঙ্গে কাজ করা ভালো লাগে।

এই জন্যই মাইনে কবে হবে তার নিশ্চয়তা না থাকা সত্ত্বেও দৈনিক শুকতারায় কাজ করে যাচ্ছি। আর এই জন্যই দেশের তাবত আওয়ামী পত্রিকা আর টিভি থেকে ভালো অফার আসা সত্ত্বেও আপনাকে ছেড়ে যাচ্ছি না। হয়েছে হয়েছে। শামীম বিব্রত স্বরে ওকে থামিয়ে দিল। দেশের মানুষ এখন বুঝে ফেলেছে আওয়ামী মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের কোনো ক্ষমতা নেই।

পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে গোপন কিন্তু কথিত আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন, তিনি (সৈয়দ আশরাফ) কিছু জানেন না জানেন শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আসলে শেখ হাসিনা-ও এখন কিছু জানেন না। জানেন নতুন দিল্লিতে তার পালকরা। দিল্লি থেকে পালকদের নির্দেশ আসছে ঢাকায় ইনডিয়ান হাই কমিশনে। যেহেতু শেখ হাসিনা যেতে পারছেন না ইনডিয়ান হাই কমিশনে এবং যেহেতু হাসিনার সঙ্গে ঘনঘন প্রকাশ্য সাক্ষাৎকার ইনডিয়ান হাই কমিশনারের জন্য কিছুটা দৃষ্টিকটু হতে পারে, সেহেতু ইনডিয়ান হাই কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন শেখ হাসিনার আমেরিকাপ্রবাসী কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রত্যাশী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ১১ নভেম্বর ২০১৩-র সকালে।

ইনডিয়ান হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণ ও শেখ হাসিনার মধ্যে কুরিয়ার সার্ভিসের দায়িত্ব পালন করেছেন জয়। আকস্মিকভাবে জয় আবার আমেরিকা চলে যাবার পর কুরিয়ার সার্ভিসের দায়িত্ব পালন করেছেন শেখ হাসিনার ইংল্যান্ডপ্রবাসী কিন্তু বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সম্মানপ্রত্যাশী বোন শেখ রেহানা। পঙ্কজ শরণের সঙ্গে শেখ রেহানার প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয় ২৪ নভেম্বর ২০১৩-র সন্ধ্যায়। অর্থাৎ, সব ডিসিশন ও প্ল্যান আসছে দিল্লি থেকে ঢাকায় ইনডিয়ান হাই কমিশনে এবং সেসব বাস্তবায়িত হচ্ছে শেখ হাসিনার মাধ্যমে। এই অ্যাংগলেই তো রিপোর্টটা লিখতে হবে।

তাই না? খসরু বলল। কারেক্ট। এটাই কঠিন সত্য। এটাই রূঢ় বাস্তব। একাত্তরে পচিশে মার্চ দিবাগত রাতে শেখ হাসিনার পিতা আত্মসমর্পণ করেছিলেন পাকিস্তানের কাছে।

আর শেখ হাসিনা আত্মসমর্পণ করেছেন ইনডিয়ার কাছে। শামীম বলল। কবে শেখ হাসিনা আত্মসমর্পণ করেছিলেন? ভারতিনগরে আশ্রয় আগস্ট ১৯৭৫-এ শেখ হাসিনা বেড়াতে গিয়েছিলেন তদানীন্তন ওয়েস্ট জার্মানির রাজধানী বন-এ। তখন ঢাকায় তার পিতার মৃত্যুর পর তিনি আশ্রয় নেন দিল্লিতে। থাকা শুরু করেন ভারতিনগরে একটি সরকারি কলোনির নিচ তলার ফ্ল্যাটে।

তার বোন রেহানাও তা সঙ্গে তখন ছিলেন। ওই ফ্ল্যাটের বিপরীত ফ্ল্যাটে থাকতেন সিতাংশু দাশ যিনি ছিলেন প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ডেইলি ইনডিয়ান এক্সপ্রেস-এর সম্পাদক এবং ইন্দিরা গান্ধীর আস্থাভাজন। সিতাংশু দাশের আদিবাড়ি ছিল আসামে এবং তিনি কিছু বাংলা বলতে পারতেন। সিতাংশুর স্ত্রী ইন্দু ছিলেন মধ্যপ্রদেশের এবং তিনিও আধা-বাংলা বলতে পারতেন। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ইনডিয়ান এক্সপ্রেসের করেসপনডেন্ট পদে লন্ডনে কর্মরত ছিলেন।

থাকতেন উত্তর লন্ডনে উডসাইড পার্কে। এক সময়ে তিনি লন্ডনস্থ ইনডিয়ান ফরেন করেসপনডেন্টস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৭১-এর পরে তিনি আহমেদাবাদ ও দিল্লিতে সম্পাদক পদে কাজ করেন। তিনি সুভাষচন্দ্র বসু-র জীবনী লেখেন যেটির ওপর ভিত্তি করে হলিউডে একটি মুভি নির্মাণের কথা হয়। সিতাংশুর এসব পরিচিতির কারণে দিল্লিতে তারই ফ্ল্যাটের বিপরীত ফ্ল্যাটে হাসিনার থাকার ব্যবস্থা হয়।

বলা যায় সেই সময় থেকে সঙ্গত কারণে ইনডিয়ান সরকারের প্রতি শেখ হাসিনার কৃতজ্ঞ জীবনের শুরু। সিতাংশু পরিবার প্রায় পাচ বছর যাবৎ হাসিনা পরিবারের যতœ নেন। দৈনন্দিন বাজার করায় সাহায্য থেকে শুরু করে শহরে যাতায়াত পর্যন্ত সব কিছুই। মে ১৯৮১-তে হাসিনার বাংলাদেশে ফিরে আসার ব্যবস্থা করেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। সম্ভবত তিনি দুটি কারণে হাসিনার প্রত্যাবর্তন সুগম করেছিলেন এক. তিনি শ্রদ্ধা করতেন শেখ মুজিবুর রহমানকে যার ৭ মার্চ একাত্তরের ডাকে তিনি ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে উই রিভোল্ট ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলেন।

সুতরাং শেখ মুজিবের মেয়ের প্রবাসী জীবনের সমাপ্তি তিনি টানতে চেয়েছিলেন। দুই. শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। বিবদমান দুটি বড় গ্রুপের নেতা ছিলেন আবদুর রাজ্জাক এবং মিজানুর রহমান চৌধুরী। উত্তরাধিকার রাজনীতিতে অভ্যস্ত ইনডিয়া চেয়েছিল বাংলাদেশেও তাই করতে এবং সেই প্ল্যানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে সংঘবদ্ধ এবং পুনর্গঠিত করতে। এই লক্ষ্যে সম্ভবত ইনডিয়ান সরকার তখন বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করে হাসিনা পরিবারকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিতে।

প্রেসিডেন্ট জিয়া তাই করেছিলেন। খুব লজ্জার বিষয় যে শেখ হাসিনা পরবর্তী সময়ে বিভিন্নভাবে ইনডিয়ান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেও ব্যক্তি সিতাংশু দাশ এবং ব্যক্তি জিয়াউর রহমানের প্রতি কোনো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেননি। বাংলাদেশ সম্পর্কে ১৯৭১ থেকে ইমোশনালি সম্পৃক্ত থাকার কারণে সিতাংশু চেয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ দেখতে। তিনি আশা করেছিলেন তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হবে। সেটা হয়নি।

জুন ১৯৯৬-এ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হবার পর সিতাংশু আশা করেছিলেন অন্তত এবার তিনি সেই আমন্ত্রণ পাবেন। কিন্তু সিতাংশু সেটা পাননি। আর জিয়া পেয়েছিলেন এবং এখনো পাচ্ছেন শেখ হাসিনার কৃতজ্ঞতা নয়- কৃতঘ্নতা। জিয়ার মৃত্যুর পর শোক প্রকাশে তিনি যাননি খালেদার কাছে। পরবর্তী সময়ে ড. ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুর পরে শোক প্রকাশের জন্য খালেদা গিয়েছিলেন হাসিনার কাছে।

১৯৯৬-এ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হবার সাত দিনের মধ্যেই তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নির্দেশে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল চন্দ্রিমা উদ্যোনে জিয়ার সমাধিস্থলে যাবার বেইলি বৃজ। ইনডিয়ার প্রতি হাসিনার কৃতজ্ঞতা ও আনুগত্যের কারণ এবং ইতিহাস বলতে গিয়ে কিছুটা সাইড ট্র্যাক করে তার দুটি কৃতঘ্নতার কথা বললাম। এতে তোমাদের বুঝতে সুবিধা হবে হাসিনার অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট সুবিধাবাদিতা। এই সুবিধাবাদিতার আরেকটি স্ফূরণ এখন ঘটছে। শেখ হাসিনা বলে থাকেন, তিনি নামাজ পড়েন, কোরআন পড়েন।

আবার তিনিই শাপলা চত্বরে সমবেত নিরস্ত্র মুসলিম নিধনের অভিযোগে সমালোচিত হন। তিনি ঢাকা থেকে ২০ মাইল দূরে তুরাগ নদীর তীরে না গিয়ে গণভবনে থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে ইজতেমায় পরোক্ষ শরিক হন। অথচ নির্বাচনী প্রচারণায় সুবিধা হতে পারে ভেবে প্রায় ২,০০০ মাইল দূরে মক্কায় গিয়ে ওমরাহতে প্রত্যক্ষ শরিক হন। একই কারণে তিনি এখন মাথায় পট্টি বেধে সভা-সমাবেশ করছেন যেটা করেছিলেন ১৯৯৬-এর নির্বাচনের আগে। মে ১৯৮১-তে প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যু এবং ফেব্রুয়ারি ১৯৮২-তে ক্যুর পর ক্ষমতাসীন হন ইনডিয়ান আস্থাভাজন জেনারেল এরশাদ।

সেই সময়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসাতে ইনডিয়া চায়নি দুটি কারণে। এক. হাসিনা তখন রাজনীতিতে শিক্ষানবিশ ছিলেন। দুই. সশস্ত্র বাহিনী তখন জিয়াভক্ত এবং আওয়ামীবিরোধী ছিল। এর পরের নয় বছরে এরশাদকে নানাবিধভাবে সমর্থন দিয়ে যায় হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। ১৯৯০-এ ইনডিয়া সিদ্ধান্তে আসে খালেদার নেতৃত্বে বিএনপির পুনর্জাগরণ ও জনপ্রিয়তাকে ঠেকাতে হলে গণধিককৃত এরশাদকে বাদ দিয়ে হাসিনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

সুতরাং ডিসেম্বর ১৯৯০-এ গুডবাই প্রেসিডেন্ট এরশাদ। কিন্তু ফেব্রুয়ারি ১৯৯১-এ প্রাইম মিনিস্টার রূপে হাসিনাকে ওয়েলকাম করা ইনডিয়ার পক্ষে সম্ভব হয়নি। বেরসিকভাবে সেই নির্বাচনে খালেদা বিজয়ী হন। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাসীন করার জন্য ইনডিয়াকে অপেক্ষা করতে হয় আরো পাচ বছর। পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন যেন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয় সেজন্য এই পাচ বছরে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে গোপন বৈঠক ও সহ-আন্দোলন, নবনির্মিত চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন পোড়ানো এবং ১৭৩ দিন হরতালসহ বিক্ষোভ করে আওয়ামী লীগ।

জুন ১৯৯৬-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য অর্জিত হলেও সংবিধানকে বদলে ফেলে সেটাকে হাসিনা বিধান করার মতো দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা তারা পায় না। সেজন্য অপেক্ষা করতে হয় আরো প্রায় বারো বছর। দিল্লিতে সাজানো ২০০৮- এর নির্বাচন ডিসেম্বর ২০০৮-এর নির্বাচন কিভাবে হবে এবং তার ফলাফল কি হবে সেটা সাজানো হয় দিল্লিতে। দিল্লি সরকার থেকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয় ওয়াশিংটনে ইনডিয়ান রাষ্ট্রদূতের কাছে এবং তিনি সেটা জানিয়ে দেন আমেরিকান সরকারকে। সেই সময়ে আমেরিকান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা সেক্রেটারি অফ স্টেট ছিলেন হিলারি ক্লিনটন।

দিল্লির অনুরোধে আমেরিকান সরকার তখন এই প্ল্যানে সমর্থন দিয়েছিল এবং সম্পূর্ণ সাজানো নির্বাচনের ফলাফলকে আমেরিকান সরকার কংগ্রাচুলেট করেছিল। পর্দার আড়ালে ঘটে যাওয়া এই সত্যটি জানা যায় ১৬ জানুয়ারি ২০১১-তে প্রকাশিত হিলারি-হাসিনার ইংরেজি টেলি-সংলাপের বিবরণে। এই টেলি-সংলাপের আংশিক বিবরণ আমি আগে দিয়েছি। এখন আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি। Hillary : Madame Prime Minister, I thought I would not have to go that far. But, unfortunately, I was wrong. I hope you know as much we know, how your government came to power. Don’t forget that we helped you congratulating you after the election, terming it as free and fair. You know Prime Minister, how this election result was pre-arranged at the behest of our good friends in New Delhi. We acted the way they suggested us. And please don’t forget that Gen. Moyeen, who brought you to power, now in the USA and perhaps, we now know, more than you could possibly imagine. এবার শোন বাংলায়।

হিলারি : আমি ভেবেছিলাম আমাকে এত দূর যেতে হবে না। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমি ভুল ভেবেছিলাম। আপনি জানেন এবং আমরাও জানি কিভাবে আপনার সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ভুলে যাবেন না, নির্বাচনের পর আমরা বলেছিলাম, সেটা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে এবং আপনাকে সাহায্য করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী, আপনি জানেন দিল্লিতে আমাদের বন্ধুদের নির্দেশে কিভাবে ফলাফল আগেই ঠিক করা হয়েছিল।

তারা যেভাবে চেয়েছিল সেভাবেই আমরা চলেছিলাম। প্লিজ, আপনি এটাও ভুলে যাবেন না যে, জেনারেল মঈন যিনি আপনাকে ক্ষমতায় এনেছিলেন তিনি এখন আমেরিকাতে আছেন এবং আপনি যতখানি কল্পনা করতে পারেন, তার চেয়েও বেশি এখন আমরা জানি। এদের পুরো সংলাপের ট্রান্সকৃপ্ট এখন facebook.com/ Shafik Rehman Presents--এ পাওয়া যাচ্ছে। পড়ে নিও। শেখ হাসিনার সঙ্গে ইনডিয়ার সম্পর্ক কতোটা গভীরে প্রোথিত সেটা বুঝতে হলে হিলারি-হাসিনার এই টেলি-সংলাপটি বারবার মনে করতে হবে।

অবশিষ্ট নয়- উচ্ছিষ্ট তার পর গত পাচ বছরে ইনডিয়ার প্রতি শেখ হাসিনার কৃতজ্ঞতা হয়েছে আরো গভীর এবং আনুগত্য হয়েছে আরো দৃঢ়। কারণ, এক. ক্ষমতাসীন হবার পরপরই ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯-এ ঢাকায় বিডিআর বিদ্রোহের সময়ে ইনডিয়া দিয়েছিল অতি প্রয়োজনীয় উপদেশ-নির্দেশ। শেখ হাসিনা সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন। তিনি বিডিআরকে বিদায় দিতে পেরেছেন এবং সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন। দুই. খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে উগ্র ইসলামপন্থী রূপে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্থাপিত করায় ইনডিয়ান কূটনৈতিক সাহায্য পেয়েছেন।

এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সাহায্য পেয়েছেন তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. দীপু মনির কাছ থেকে। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এবং আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মকাণ্ডে প্রায় অপরিচিত ড. দীপু মনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন, তার স্বামী ড. তওফিক নওয়াজের ইনডিয়ান কানেকশনে। কে এই ড. তওফিক নওয়াজ? তিনি একজন আইনজীবী এবং স্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে বয়সের ব্যবধান অনেক। ড. তওফিক নওয়াজ আইন পেশায় সফল কিন্তু বিখ্যাত হননি। তবে তিনি সফল হয়েছিলেন বাশি বাজানোতে এবং খ্যাতি পেয়েছিলেন ঢাকার ইনডিয়ান হাই কমিশনে।

রমনা থানার কাছাকাছি ইস্পাহানি কলোনিতে তার বাড়িতে প্রায়ই বাশি বাজানোর আসর বসতো যেখানে আসতেন সফরকারী ইনডিয়ান বাশিবাদকরা। অপ্রত্যাশিতভাবে ২০০৯-এ দীপু মনি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রবীণ আওয়ামী নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন দীপু মনি উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন। কিন্তু সেটা সত্য নয়। স্বামীর সুবাদে দীপু মনির ইনডিয়ান কানেকশন আগেই ছিল।

২০০৯-এর পর সেটা পোক্ত হয়। আর হ্যা, ২০০৯-এর পর তিনি আকাশে উড়তে থাকেন। বিভিন্ন পত্রিকায় রিপোর্ট এসেছে দীপু মনি পাচ বছরে প্রায় ৬০০ দিন বিদেশে থেকেছেন। ইস্পাহানি কলোনির ফ্ল্যাট থেকে তওফিক-দীপু মনি জুটি পচিশ গজ দূরে তাদের স্বপ্নের রাস্তা ইস্কাটন গার্ডেনসে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত বহু রুম বিশিষ্ট একতলা ভবনে এসে ওঠেন। তওফিক নওয়াজের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তি মনে করেন, তওফিক শাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে এবং শাদা শালে আবৃত হয়ে সুন্দর সুরে বাশি বাজান বটে, কিন্তু তার মন শাদা নয় এবং সুশীল সমাজের কিছু ব্যক্তির সঙ্গে তার সম্পর্ক জটিল।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ড. কামাল হোসেন ও স্যার ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে তার সম্পর্ক সৌহার্দ্যমূলক ছিল না। তাই পররাষ্ট্র দফতর থেকে দীপু মনির নিষ্ক্রান্ত হবার পর এখন আওয়ামী মহল থেকে সূক্ষ্ম প্রচারণা চালানো হচ্ছে যে আওয়ামী সরকার দ্বারা ড. ইউনূস নির্যাতিত হবার জন্য প্রধান দায়ী ব্যক্তি তওফিক নওয়াজ। এই প্রচারণা চালিয়ে তারা শেখ হাসিনাকে আমেরিকান রুদ্ররোষ থেকে বাচানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাদের এই প্রচেষ্টা নিষ্ফল হয়েছে। কারণ কূটনৈতিক মহল ভালো করে জানেন যে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ঈর্ষা ও আক্রোশের জন্যই ড. ইউনূস অপমানিত হয়েছেন, পদবিতাড়িত হয়েছেন এবং সরকারি ব্যাংকিং সেক্টরে রাবিশপ্রিয় অর্থমন্ত্রীর চরম ব্যর্থতা সত্ত্বেও অক্টোবর ২০১৩-এর শেষ সপ্তাহে গ্রামীণ ব্যাংক গ্রাস করার সরকারি প্ল্যান পাস হয়েছে।

ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে তওফিক নওয়াজের অন্তরঙ্গতার অভাব শেখ হাসিনার বর্তমান নির্বাচনী প্ল্যানের একটি বড় অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সমাজের ছয় বিশিষ্ট ব্যক্তি গত সপ্তাহে দেখা করে হাসিনা নির্বাচনের বিরোধিতা করেছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়েছেন হাসিনা। বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বরে তিনি ড. কামালের নাম উচ্চারণ না করে তার প্রতি বিষোদগার করছেন এবং প্রশ্ন রেখেছেন তিনি (ড. কামাল) যদি বিশিষ্ট হন তাহলে আমরা (হাসিনা ও তার দল) কি অবশিষ্ট? উত্তরে সুশীলসমাজের এক ব্যক্তি বলেছেন, হাসিনার এই উক্তিতে অনুপ্রাস আছে কিন্তু কোনো অনুচিন্তা নেই। এতে হাসিনার অন্তর্দাহ প্রকাশিত হয়েছেÑ অন্তর্দৃষ্টি প্রকাশিত হয়নি।

আসলে হাসিনা অবশিষ্ট নন, রাজনীতিতে উচ্ছিষ্ট হতে চলেছেন। শেখ হাসিনার অন্তর্জগতে ড. তওফিক নওয়াজের প্রভাব ক্ষতিকর হতে পারে ব্র্যাক ব্যাংক বিষয়ে স্যার ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে ড. নওয়াজের মতবিরোধিতা। কেউ কেউ মনে করেন আগামীতে কোনো অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান রূপে ফজলে হাসান আবেদন মনোনীত হতে পারেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ এই মনোনয়নের বিরোধিতা করতে পারে তওফিক নওয়াজের প্রভাবে। এসব কারণে আওয়ামী মহলে প্রশ্ন উঠেছে ড. নওয়াজের প্রভাবের উৎস কোথায়? উত্তর আগেই বলেছি, ইনডিয়া।

ক্ষমতাসীন হবার এক বছর পরে জানুয়ারি ২০১০-এ শেখ হাসিনা যান ইনডিয়াতে এবং একটি চুক্তি করেন ইনডিয়ার সঙ্গে। বহু বছর পরে সুযোগ হয় তাদের অলিখিত অনুরাগের একটি লিখিত, কিন্তু বাংলাদেশ সংসদে অনালোচিত, পরিনতিতে। কেউ কেউ বলেন, এই চুক্তিটি একটি রাজনৈতিক কাবিননামা। এই চুক্তিতে বলীয়ান হয়ে ইনডিয়া ট্রানজিটের অধিকার প্রয়োগ করে। বাংলাদেশের মধ্য-পূর্বাঞ্চলে আশুলিয়া থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ষোলটি কালভার্ট বন্ধ করে এবং তিতাস নদী প্রবাহকে দুই জায়গায় প্রতিহত করে ইনডিয়া বিভিন্ন সাজসরঞ্জাম নিয়ে যায় ত্রিপুরাতে।

উৎসাহী ইনডিয়ান ব্যবসায়ীরা দলে দলে বাংলাদেশে আসতে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে তাদের কারো কারো বিগলিত হাসিমুখের ছবি প্রকাশিত হয়। ইনডিয়া প্রভাব ও প্রীতি অত্যন্ত অনাকাঙ্খিতভাবে প্রদর্শিত হয় বাংলাদেশ কৃকেট টিমের জার্সিতে। সেখানে SAHARA সাহারা, শব্দটি লেখা হয় যেটি একটি বিতর্কিত ইনডিয়ান প্রতিষ্ঠানের লোগো এবং যেটি ইনডিয়ান কৃকেট টিমের জার্সিতেও লেখা হয়। বাংলাদেশের টাইগাররা ইদুরোচিত মানসিকতায় গায়ে চড়ায় সাহারা জার্সি।

বাংলাদেশের ফুটবলাররা শংকিত হন, তবে কি শেখ কামাল ফুটবল টিম, শেখ জামাল ফুটবল টিম, মুক্তিযোদ্ধা ফুটবল টিম সমূহের জার্সিতে আগামীতে সাহারা, টাটা, রিলায়ান্সের লোগো দেখা যাবে? আরো উদ্বিগ্ন হন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, যখন রাবিশপ্রিয় অর্থমন্ত্রী ইনডিয়ান ও বাংলাদেশি কারেন্সি একই হবার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা ৩৬৫ দিন বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখতে ও বন্দনা শুনতে অভ্যস্তরা প্রশ্ন তোলেন, তাহলে কি বাংলাদেশের কারেন্সি নোট ও কয়েনে অদূর ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধুর ছবির বদলে ইনডিয়ান কারেন্সি নোটের আদলে মহাত্মা গান্ধির ছবি দেখা যাবে? আওয়ামী নেত্রী শেখ হাসিনা কি এতটাই সেল-আউট বা বিক্রি হয়ে গিয়েছেন? শেখ হাসিনার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের গার্মেন্টস ইনডাস্টৃতে অনুপ্রবেশ করতে থাকেন ইনডিয়ান পূজিপতিরা। এই সেক্টরে বিভিন্ন উচু পদে অধিষ্ঠিত হন ইনডিয়ান একজিকিউটিভরা। তাদের স্ত্রীরাও এখানে এসেছেন এবং বিভিন্ন চাকরি করছেন। ফলে উচু পদে বাংলাদেশিদের জব অপরচুনিটি সংকুচিত হয়েছে।

এরপর কিছু ইনডিয়ান এন্টারপ্রেনিউয়ারের নজর পড়ে বাংলাদেশের হাউজিং সেক্টরে। তাদের কেউ কেউ এসে দাবি করেন বাংলাদেশে তাদের মামার বাড়ি ছিল এবং তারা নগরায়নের স্বপ্ন দেখান শেখ হাসিনাকে। সৌভাগ্যের বিষয় হাউজিং সেক্টরে ইনডিয়ানরা এগোতে পারে নি। কারণটা আওয়ামী সরকারের অনিচ্ছা নয়। কারণ- রিহ্যাব সদস্যদের দৃঢ় প্রতিরোধ।

একইভাবে বাংলাদেশে ইনডিয়ান মুভি নিয়মিত দেখানোর প্ল্যান প্রতিহত করেন এই দেশের মুভি প্রযোজকরা। মিশন পসিবল মিশন সাকসেসফুল হাউজিং ও মুভি সেক্টরে ইনডিয়ান অনুপ্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ হবার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাদের আগ্রাসন সাময়িকভাবে থমকে দাড়ায়। ইনডিয়ানরা তখন মনোযোগী হয় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আরো প্রভাব বিস্তারে। তাদের এই লক্ষ্য অর্জনে আরো সহায়ক ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসে শেখ হাসিনার সরকার। ১৯৯৫-৯৬ এ জামায়াতের সহ আন্দোলনকারী হলেও মুক্তিযুদ্ধের প্রায় চল্লিশ বছর পরে আওয়ামী লীগ রিইনভেন্ট বা পুনরাবিষ্কার করে মুক্তিযুদ্ধ।

প্রথম মুক্তিযুদ্ধে অনুপস্থিত শেখ হাসিনা “দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ” ঘোষণা করেন। “মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ এবং বিপক্ষ শক্তি তত্ত্ব” প্রচারের মাধ্যমে তিনি দেশকে বিভক্ত করেন। আন্তর্জাতিক যুদ্ধ অপরাধ আদালতে বিচারের নামে মামলা-রায়-দণ্ডাদেশ প্রভৃতি কর্মসূচি চালিয়ে যান। এই কর্মসূচি পালনে আওয়ামী সরকার নতুন আইন তৈরি করে ব্যাকডেটে এফেক্ট দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আরো গুরুদণ্ড দেয়। বিচার বিভাগের ইতিহাসে এ ছিল অতি অন্যায় অবিচারের অভূতপূর্ব ঘটনা।

সঙ্গত কারণে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আন্তর্জাতিক যুদ্ধ অপরাধ আদালতের তীব্র নিন্দা করে। কিন্তু ইনডিয়ান বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়া এই তথাকথিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে উল্লসিত হয়ে ওঠে। পশ্চিম বাংলা থেকে কবি ও গায়ক সুমন চট্টোপাধ্যায় একাধিক কবিতা পাঠিয়ে ফেব্রুয়ারি ২০১৩-তে শাহবাগে সম্মিলিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সৈনিকদের স্বাগত জানান। বলা যায় ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ছিল বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে ইনডিয়ান প্রভাবের সর্বোচ্চ বিন্দু বা Peak Point (পিক পয়েন্ট)। দিল্লিতে ইনডিয়ান পলিটিশিয়ান ও বুরে্যাক্র্যাটরা এবং ঢাকায় ইনডিয়ান হাই কমিশনের ডিপ্লম্যাট ও ইনটেলিজেন্স স্টাফরা সেলিব্রেশন মুডে আসেন।

১৯৭১-এর পরে স্বাধীনচেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে যেটা সম্ভব হয়নি, ৪২ বছর পরে ২০১৩-তে তারই কন্যা বশীভূত শেখ হাসিনার শাসন কালে সেটা সম্ভব হলো। মিশন পসিবল! মিশন সাকসেসফুল! ইনডিয়ানদের আনন্দের বাড়তি কারণ ছিল, তারা এই সাফল্য অর্জন করতে পেরেছিল প্রায় অপ্রকাশ্যে থেকে। এজন্য বাংলাদেশে কোনো প্রকাশ্য কূটনৈতিক তৎপরতা তাদের চালাতে হয় নি। তৃতীয় মুক্তিযুদ্ধের সূচনা কিন্তু ইনডিয়ানদের এই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। জানুয়ারি ২০০৯ থেকে মার্চ ২০১৩, এই ৫০ মাসে দেশ জুড়ে আওয়ামী সরকারের দুঃশাসন এবং আওয়ামী নেতা-কর্মীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষ মুক্তির পথ খুজছিল।

প্রথম মুক্তিযুদ্ধ ছিল নয় মাস ব্যাপী। শুধু শাহবাগে কেন্দ্রীভূত তথাকথিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ স্থায়ী হয় মাত্র দুই মাস। শেখ হাসিনার আশীর্বাদ, মিডিয়ার ক্যামেরাপোষকতা, ব্যবসায়ীদের প্যাকেট বিরিয়ানি ও মিনারাল ওয়াটার সাপ্লাই এবং ভূইফোড় তরুণ নেতাদের মাইকবাজি শেষ হয়ে যায় দুই মাস পরেই। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ ২০১৩-র পরে এপৃল ২০১৩-তে শাপলা চত্বরে সূচিত হয় তৃতীয় মুক্তিযুদ্ধ যে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে অংশ নেন দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আগত প্রায় পাচ লক্ষ ধর্মপ্রাণ নিরস্ত্র মুসলিমরা। এই তৃতীয় মুক্তিযুদ্ধ ডিসেম্বরে ২০১৩-তে নবম মাসে পা দিয়েছে এবং এখন এতে অংশ নিয়েছে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের কবল মুক্ত হবার অটল লক্ষ্যে সারা দেশের মানুষ।

আওয়ামী লীগের নতুন আইডি কার্ড ৫ মে ২০১৩-তে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামির দ্বিতীয় বৃহৎ সমাবেশের পর বিনা নোটিশে পূর্ব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ৬ মে-র প্রথম প্রহরে নিরস্ত্র জনতার ওপরে ব্যাপক হামলা চালায় সরকারের বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী। হতাহত হয় অজানা সংখ্যক মানুষ। কিন্তু সারা বাংলাদেশে খবর ছড়িয়ে পড়ে শতাধিক, এমনকি সহস্ত্রাধিক মানুষের নিহত হবার সংবাদ, যেটা পরবর্তী সময় প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয় না। ৬ মে রাতে দিগন্ত টিভি এবং ইসলামী টিভি সম্প্রচার নিষিদ্ধ করে দেয়ার ফলে মানুষের বদ্ধমূল ধারনা হয় যে আওয়ামী সরকার সত্যটা গোপন করেছে।

দেশ জুড়ে মানুষের বিশ্বাস হয় যে, আওয়ামী লীগ একটি অবিশ্বাসী সরকার, যে মুসলিম ধর্মবিশ্বাসীদের অকাতরে পাইকারি হারে হত্যা করতে পারে। এতকাল আওয়ামী লীগের পাবলিক পরিচয় ছিল ইনডিয়া পন্থী রূপে। ৫ ও ৬ মে-র পর থেকে আওয়ামী লীগের দেশ ব্যাপী নতুন পরিচয় হয় ইসলাম বিরোধী দল রূপে। এখন আওয়ামী লীগের এটাই আইডি কার্ড। ফলে ঢাকার ইনডিয়ান হাই কমিশনে নেমে আসে গ্লুম অ্যান্ড ডুম (Gloom and doom)- বিষণ্নতা এবং সর্বনাশ হয়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তা।

দিল্লি থেকে ঢাকা পর্যন্ত ইনডিয়ান কর্মকর্তারা প্রচ- নাড়া খান। তাদের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ভ্রান্তিবিলাসের কারণ ও প্রতিকার বিষয়ে খতিয়ে দেখেন। তারা সিদ্ধান্তে আসেন আপাতত : শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের স্বীয় পদে রেখে নির্বাচনে ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। টার্গেট : ২০১৪-র নির্বাচনে আবার আওয়ামী লীগকে বিপুল ভাবে বিজয়ী করা।

ইংল্যান্ডের সাপ্তাহিক দি ইকনমিস্টের রিপোর্টে বলা হয়েছিল ২০০৮-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার উদ্দেশ্যে ব্যাগফুল মানি বা বস্তাভর্তি টাকা বাংলাদেশে খরচ করা হয়েছিল। সম্ভবত এবার ইনডিয়ান কর্মকর্তারা প্ল্যান করেছেন ট্রাকফুল মানি বা ট্রাকভর্তি টাকা বাংলাদেশে পাঠাবেন। এই লক্ষ্যে ইনডিয়ানরা তাদের আন্ডারওয়ারÑগেঞ্জি খুলে একেবারে নুডভাবে কর্মকা- শুরু করে দেয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই ধরনের খোলাখুলি ইনডিয়ান হস্তক্ষেপ এই প্রথম। এর জন্য দায়ী শেখ হাসিনা।

নগ্ন নির্লজ্জ কর্মকাণ্ড এই নগ্ন নির্লজ্জ ইনডিয়ান কর্মকাণ্ডের প্রথম পর্যায়ে ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৩-তে ইনডিয়ান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডিং ইন চিফ (জিওসি) লেফটেনান্ট জেনারেল দলবীর সিংসহ একটি প্রতিনিধি দল চার দিনের সফরে ঢাকায় আসেন। সঙ্গে ছিলেন দলবীর সিংয়ের স্ত্রী নমিতা। সফরকালে তারা দেখা করেন বাংলাদেশের সেনা প্রধান ইকবাল করীম ভূইয়ার সঙ্গে। যিনি সংক্ষেপে আইকেবি (IKB) নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের নৌ বাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবীব-এর সঙ্গে একটি বৈঠক হয় দলবীর সিংয়ের।

এই সফরকালে ইনডিয়ানরা বাংলাদেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সামরিক প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখেন। এই পর্যন্ত বলে শামীম উঠে গিয়ে তার কফি মেকারের সুইচ অন করল। সেনা প্রসঙ্গ টেনে আনা কি উচিত হবে? বিশেষত দেশের এই অনিশ্চিত মুহূর্তে? খসরু প্রশ্ন করল। উপায় নেই। সেনাবাহিনী প্রসঙ্গ বারবার টেনে আনছেন শেখ হাসিনা।

তার ছেলে জয় এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ। তারা যদি সেনাবাহিনীর কথা তুলে দেশের মানুষকে ভয় দেখাতে পারেন অথবা আশ্বস্ত করতে পারেন এবং সেটা করতে গিয়ে সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাড় করিয়ে বিপদগ্রস্ত করতে পারেন তাহলে আমাদেরও দায়িত্ব আছে সেনাবাহিনীকে বিপদমুক্ত রাখার লক্ষ্যে কথা বলার। শামীম দুই কাপ কফি বানিয়ে টেবিলে রেখে বলল। মনে রেখ, সেনাবাহিনী শুধু হাসিনা-রেহানা, জয়-পুতুলের পাহারাদার নয়- তারা সারা দেশের মানুষের পাহারাদার। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ইতিপূর্বে চায়নিজ ও আমেরিকান সহযোগিতা পেয়েছে।

ইনডিয়ানদের থেকে তারা কি পেতে পারে? খসরু জিজ্ঞাসা করল। উপদেশ এবং নির্দেশ। শামীম একটু হাসল। আমেরিকা অবশ্য কিছুটা বিরক্ত আগেই হয়েছিল। শেখ হাসিনা স্বয়ং মস্কোতে গিয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনার বিলিয়ন ডলার চুক্তি করাটাকে আমেরিকা ভালো চোখে দেখে নি।

শোনা যাচ্ছে ওই অস্ত্র কেনার প্রথম কিস্তি পরিশোধের সময় এখন হয়েছে। রাশিয়ানরা চিন্তিত এই মেয়াদ উত্তীর্ণ সরকার সেই টাকাটা দিতে পারবে কি না। তারা আরো শংকিত আগামীতে যদি কোনো নির্বাচনের পরে বিএনপি সরকার গঠন করে তাহলে তারা আদৌ কোনো টাকা পাবে কি না। উদ্বিগ্ন রাশিয়ানদের মনে পড়েছে এরশাদের শাসন আমলের শেষ দিকে বৃটেন থেকে কেনা তিনটি এটিপি প্লেনের মধ্যে খালেদা জিয়ার প্রথম সরকার একটির ডেলিভারি নেয়নি এবং বাকি দুটির চড়া দাম সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছিল। রাশিয়ানদের আরো মনে পড়েছে, শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে শাসনের শেষ দিকে চায়নিজদের কাছ থেকে পুরনো মডেলের মোবাইল ফোনসেট এবং চড়া দামে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কেনার যে চুক্তি হয়েছিল, সে দুটি খালেদা জিয়ার তৃতীয় শাসন আমলে বাতিল করা হয়েছিল।

সুতরাং এবার রাশিয়ানদের কাছ থেকে কেনা সমরাস্ত্রের দাম রাশিয়ানরা পাবে কিনা সে বিষয়ে তাদের মনে সন্দেহ উঠেছে। জানা গেছে এ বিষয়ে খালেদা কেনো মতামত দেন নি। তবে বিএনপির জনৈক শীর্ষ নেতা বলেছেন, যদি তারা কোনো নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেন তাহলে তারা খুটিয়ে দেখবেন, এক. রাশিয়ান সমরস্ত্র কেনার আদৌ কোনো দরকার ছিল কি না, দুই. সমরাস্ত্রগুলোর দাম ন্যায্য কি না এবং তিন. সমরাস্ত্র কেনার কমিশন কতো ছিল এবং কমিশন কে বা কারা পেয়েছেন? বিএনপি আরো দেখবে সমরাস্ত্র কেনার চুক্তির সময়ে শেখ হাসিনার মস্কোতে যাওয়ার কোনো দরকার ছিল কি না। আমেরিকানদের জন্য রাশিয়ান অস্ত্র কেনাটা একটা মাইনর ফ্যাক্টর হলেও, একটা ফ্যাক্টর তো বটেই। শেখ হাসিনার এই রাশিয়ান সফরের পরে বেলারুশে তার সফরটাকে আমেরিকা ভালোভাবে নেয়নি।

কারণ, বেলারুসের প্রেসিডেন্ট একজন ড্রাগস চোরাচালানকারী রূপে কুখ্যাত। আমেরিকানরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে যে দুটি মেজর কারণে তা হলো- এক. আওয়ামী সরকারের মুসলিম নিধন যজ্ঞ কাউন্টার এফেকটিভ হতে পারে। পাইকারি হারে মুসলিম হত্যা এবং তারপরে নিহতদের নিয়ে শেখ হাসিনার ব্যঙ্গ বিদ্রুপের ফলে নির্যাতিতরা বাধ্য হতে পারে আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতিতে গিয়ে সন্ত্রাসী পথ বেছে নিতে। সেটা হবে আমেরিকার জন্য ব্যাড নিউজ। কারণ আমেরিকাতে আছে প্রায় পাচ লক্ষ বাংলাদেশি মুসলিম যাদের সঙ্গে ইন্টারএকশন হতে পারে বাংলাদেশের আন্ডারগ্রাউন্ড মুসলিমদের।

অর্থাৎ, বিশ্বের চতুর্থ বড় ইসলামী দেশ হতে পারে শুধু গার্মেন্টস এক্সপোর্টারই নয়- টেররিজম এক্সপোর্টারও। এই সম্ভাবনা আমেরিকানদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। যদিও শাপলা চত্বরে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করায় আমেরিকা সন্তোষ প্রকাশ করে এবং সেই সময় কিছুটা বিএনপি বিমুখ হয়ে পড়ে তবুও তারা বোঝে আওয়ামী সরকার অনুসৃত ইসলাম দমন নীতি চরম বুমেরাং হয়ে ম্যানহাটানে সহিংস ঘটনায় রূপান্তরিত হতে পারে। দুই. ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত ও লালিত গ্রামীন ব্যাংককে বাচাতে হবে। এসব ঘটনার বহু আগে ঢাকায় আমেরিকান দূতাবাসকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল তারা ওয়াশিংটন থেকে সরাসরি নির্দেশ নিচ্ছেন, নাকি, দিল্লির মাধ্যমে নির্দেশ নিচ্ছেন? তখন তারা দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন, তারা সরাসরি ওয়াশিংটনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

কিন্তু গত কয়েক মাসে যখন বাংলাদেশে ইনডিয়ান সামরিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রকাশিত হতে থাকে তখন ঢাকায় আমেরিকান দূতাবাস সরাসরি ইনডিয়ার সঙ্গে প্রকাশ্য যোগাযোগ শুরু করে। ডিপ্লম্যাটিক টর্নেডো সোমবার ২১ অক্টোবর ২০১৩ বিকেলে ওয়েস্টিন হোটেলে খালেদা জিয়ার প্রেস কনফারেন্সের পর সেই সন্ধ্যাতেই নিজের উদ্যোগে আমেরিকান রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা সন্ধ্যায় গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের অফিসে যান। দেখা করেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে। পরদিন মঙ্গলবার ২৩ অক্টোবরে মজিনা ফ্লাই করেন দিল্লি অভিমুখে। ধারনা করা হয় তার এই ইমিডিয়েট ইনডিয়া টৃপের কারণ ছিল এক. দিল্লিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশ বিষয়ে আলোচনা করা এবং দুই. এশিয়া-প্যাসিফিক কমান্ডের আমেরিকান কর্মকর্তাদের অবহিত করা।

ড্যান মজিনা ঢাকায় ফিরে আসেন ২৬ অক্টোবর। তার এই টর্নেডো টৃপে মনে হয় ইনডিয়া এবং আমেরিকার মধ্যে নীতিগত বিরোধ জট পাকিয়ে গেছে। মজিনা সেই জট খুলতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। কিন্তু আওয়ামী সমর্থনে ইনডিয়া অটল রয়েছে। ইনডিয়াকে বোঝাতে মজিনা আবার চেষ্টা করেন।

সোমবার ২৮ অক্টোবরে তিনি আবার পঙ্কজ শরনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেটাও ফলপ্রসূ হয় না। এরপর বৃহস্পতিবার ৩১ অক্টোবরে মজিনা প্রায় দুই সপ্তাহের জন্য আমেরিকায় চলে যান। কিন্তু আমেরিকান তৎপরতা অব্যাহত থাকে। মঙ্গলবার ৫ নভেম্বরে পঙ্কজ শরণও যান দিল্লিতে রিপোর্ট করতে।

বিশ্বের ১২০টি দেশে নিযুক্ত ইনডিয়ান দূতাবাস প্রবীনদের বার্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সেখানে বিশদ আলোচনা তিনি করেন। রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ড্যান মজিনার সঙ্গে আলোচনার বিস্তারিত বিবরণ দেন তিনি। এক সূত্র মতে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইনডিয়া ও আমেরিকার মধ্যে বৃহত্।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।