আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৭১ এ ঢাকার গেরিলা অপারেশনগুলো। পর্ব ০৪ খিলগাঁও বাজার, স্টেট ব্যাংক এর গেইট এবং ফার্মগেট মিলিটারি চেকপোস্ট

আমি দুয়ার খুলে বের হয়ে জোছনা ধরতে যাই। আমার হাত ভরতি চাঁদের আলো ধরতে গেলে নাই!

খিলগাঁও বাজার, স্টেট ব্যাংক এর গেইট এবং ফার্মগেট মিলিটারি চেকপোস্টঃ খিলগাঁও বাজার এর অপারেশনে ছিল ৩ জন গেরিলা ঃ ফারউক, সালাম এবং মুজিবর। এই বাজারে পাকি জানোয়ার সেনারা সবসময় অত্যাচার করতো। ঘটনার দিন গেরিলারা রামপুরা থেকে গাড়ী হাইজ্যাক করে বাজারে আসে। ফারউক ও সালাম এর কাছে ছিল রিভলবার এবং মুজিবর এর কাছে ছিল স্টেনগান।

পেছন দিক থেকে অত্যাচাররত তিন পাকি জানোয়ার সেনাকে ব্রাশফায়ার করে মুজিবর আর গাড়ী স্টার্ট দিয়ে কাভার দেয় ফারউক ও সালাম। স্টেট ব্যাংক (বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংক) এর অপারেশন এ ছিল ক্র্যাক প্লাটুন এর ৫ জন গেরিলা। চলুন তাঁদের নাম জেনে নেই আগেঃ সিরাজ, মুজিবর, আজাহার, হাবীব এবং খালেদ। আর তাঁদের অস্ত্র ছিল একটি স্টেনগান আর দুটি গ্রেনেড ও একটি প্লেটার চার্জ (যাতে ছিল ২০ পাঊণ্ড পি. কে)। ষ্টেট ব্যাংক তৎকালীন পাকিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ছিল আর এর নিরাপত্তা অনেক বেশী ছিল।

ব্যাংক এর একপাশের বাঙ্কার এ পাহারায় থাকতো পশ্চিম পাকি পুলিশ এবং এর প্রবেশপথের পাহাড়া নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিবর্তন হতো। এছাড়াও পশ্চিম পাকি পুলিশ এর দুটো ক্যাম্প ও ছিল সেখানে। গেরিলারা অপারেশনের সময় নির্ধারণ করে তৎকালীন ষ্টেট ব্যাংক এর গভর্নর ও বাঙালী বিদ্বেষী দুররাণী এর ঢাকা আগমনের সময়। আগস্ট মাসের শুরুতে সে ঢাকায় আসছে চারদিনব্যাপী এক সম্মেলনের উদ্বোধন করতে- যেখানে অংশ নিবে ব্যাংক ও অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বড় নির্বাহীরা। ডেডলাইন ৩ আগস্ট, আজাহার ব্যাংকের একজন পিওন এর সাহায্য বেলা ১২ টায় রেকি সম্পন্ন করে।

সন্ধ্যা ৬ টাতে গেরিলারা রিক্সাতে করে আসে। ঠিক হয় সিরাজ এবং আজাহার বিস্ফোরক প্লেটারটি নিয়ে ব্যাংকের উত্তর দিকের গেটে পুলিশদের বাঙ্কার এর পাশে বসাবে। এবং স্টেনগান নিয়ে কাভার দেবে মুজিবর। খালেদ এবং হাবীব গ্রেনেড নিয়ে কিছু দূরে প্রস্তুত থাকবে। কিন্তু সিরাজ এবং আজাহার বিস্ফোরক প্লেটারটি নিয়ে এগিয়ে এলে পুলিশরা সন্দেহ করে এগিয়ে আসে।

বেকায়দা দেখে সিরাজ এবং আজাহার ওটা রেখে দূরে সরে যায়। এই জিনিসটা দেখার জন্য যখন পুলিশের সাথে কিছু পথচারীও ভিড় করেছিলো তখন মুজিবর ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকে পুলিশ কিছু বুঝে উঠবার আগেই একটি জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে চার্জ ইগনাইট করে পালিয়ে যায়। আর কিছুক্ষণ পড়েই ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেপে উঠে গোটা এলাকা। শেষ হয় আরেকটি অপারেশন। ফার্মগেট মিলিটারি চেকপোস্ট অপারেশন- যা ছিল গেরিলাদের অন্যতম সফল অপারেশন এর একটি।

চলুন প্রথমে এই অপারেশন এর গেরিলাদের নাম ও অস্ত্রগুলো কী ছিল জেনে নেইঃ এই অভিযানে ছিল ৬ জন ক্র্যাক প্লাটুন গেরিলা ঃ জুয়েল, বদিউজ্জামান (বদি নামেই বেশি পরিচিত), আলম, পূলূ, স্বপন এবং ড্রাইভিং এ সামাদ। এই দলের অস্ত্র ছিল ঃ আলম- চাইনিজ এস. এম. জি, অন্যান্যদের হাতে স্টেনগান, জুয়েল ও পূলূর কাছে আরও ছিল একটি ফসফরাস গ্রেনেড ও একটি গ্রেনেড-৩৬। ফার্মগেট মিলিটারি চেকপোস্ট ছিল বেশ বড়। ক্যান্টনমেন্ট, অপারেশন হেডকোয়ার্টারস, এম. পি.এ হোস্টেল সংলগ্ন থাকায় এখানে বসেছিল কড়া চেকপোস্ট। ট্রাফিক আয়ল্যান্ড এর উপর তাঁবু খাটিয়ে মিলিটারি পুলিশ ও তাদের সহযোগীদের থাকার জায়গা করা হয়েছিলো।

ডেডলাইন ৭ আগস্ট, ১৯৭১। অপারেশনের সময় নির্ধারণ করা হয় রাত ৮.০০-৮.০৫ মিনিট। প্রথম রেকি করা হয় দুপুরের দিকে এবং চূড়ান্ত রেকি হয় সন্ধ্যা ৭ টায় যা সম্পন্ন করে আলম ও সামাদ। তারা এই অপারেশন এ নেয় ফোক্স ওয়াগন গাড়ী। তারা সেখানে গিয়ে দেখতে পায় চেকপোস্ট এ শুধু রাজাকার আর মিলিটারি পুলিশ রয়েছে কিন্তু কোন মিলিটারি নেই।

রাস্তা দিয়ে মিলিটারি জীপ আর কনভয় আসা যাওয়া করছে। সিনেমা হল এর মাথায় এল. এম. জি নিয়ে দাড়িয়ে আছে মিলিটারি। ঠিক হয় ওপেনিং কম্যান্ড দিবে গেরিলা বদিউজ্জামান এবং পুরো ১ মিনিট ব্রাশফায়ার এর পরে ক্লোজিং কম্যান্ড দিবে স্বপন, পালিয়ে যাবার আগে জুয়েল আর পূলূ ছুঁড়ে দিবে ফসফরাস গ্রেনেড ও একটি গ্রেনেড-৩৬। সময়ঃ সন্ধ্যা ৭.৫০/ স্থানঃ ইস্কাটন। সামাদ এর বাসা থেকে সবুজ রঙ এর টয়োটা গাড়ীতে করে তাঁরা এগিয়ে যায় ফার্মগেট এর দিকে।

অপারেশনস্থল এ গিয়ে ওপেনিং কম্যান্ড হল ঃ ফায়ার !!!! সাথে সাথে পুরো ১ মিনিট চলল ব্রাশফায়ার। এরপর স্বপন এর ক্লোজিং কম্যান্ড ঃ রিট্রিট!!!! মুহূর্তেই গ্রেনেড ও ফসফরাস বোমা ছুঁড়ে গেরিলারা গাড়ী নিয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো!! ছুঁড়ে মারা বোমাতে ডেটোনেটর ফিউজ লাগানো ছিল না বলে বিস্ফোরিত হয় নি। এই অপারেশন এ অংশ নেয়া বদি পরবর্তীতে শহীদ হন। এই সফল অপারেশনে নিহত হয় ৫ জন পাকি জানোয়ার পুলিশ এবং ৬ জন রাজাকার। (চলবে) পর্ব ৫ ঃ মিশন ইন্টারকন ০২



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।