আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছবি আছে তারপরও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে

হরতাল-অবরোধে নাশকতার স্থিরচিত্র, ভিডিও ফুটেজ হাতে পেয়েও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ কাউকে ধরতে পারছে না। পুলিশের দাবি, ঘটনা ঘটিয়ে অপরাধীরা দ্রুত জায়গা পরিবর্তন করছে। সে কারণে তাদের ধরা যাচ্ছে না।

পুলিশের কাছে এ মুহূর্তে ঠিক কতগুলো ঘটনার ছবি বা ভিডিও ফুটেজ আছে সে সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ বলছে, তাদের মিডিয়া উইং সব টিভি চ্যানেলের খবর রেকর্ড করে।

বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় যেসব ছবি ছাপা হয় সেগুলোও সংগ্রহে রাখে। গোয়েন্দা বিভাগের নিজস্ব ভিডিও ও ক্যামেরা টিম রয়েছে। কিন্তু ছবির সূত্র ধরে কারা নাশকতায় জড়িত তাদের কোনো সুনির্দিষ্ট তালিকা এখনও করে উঠতে পারেনি তারা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আসামি শনাক্ত করা গেলেও গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ।   

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম প্রথম আলো ডটকমকে বলেছেন, অনেক সময় অন্য জায়গা থেকে লোক ঢাকায় এসে যানবাহনে আগুন দিচ্ছে।

জড়িতরা নাশকতার কাজ করে দ্রুত চলে যাচ্ছে। তাই আসামি শনাক্ত করা গেলেও গ্রেপ্তারে সময় লাগছে।

চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর পুলিশ কর্মকর্তারা চেষ্টা চালাচ্ছেন। অচিরেই সফল হবেন বলে দাবি করেন তাঁরা।

 

কোথায় তাঁরা জানে না পুলিশ

গত ২৬ অক্টোবর থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপি ও তার মিত্রদের রাজনৈতিক কর্মসূচী চলাকালে ৬১ জন নিহত হয়েছেন।

আহত হয়েছেন বহু। এ সময় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ককটেল বিস্ফোরণ, পেট্রল কিংবা গান পাউডার ছিটিয়ে যানবাহনে আগুন দেওয়া, রাস্তায় টায়ার পোড়ানোর ছবি প্রথম আলো ও এর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশ হয়েছে। অন্যান্য পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলেও এ সব দৃশ্য দেখানো হয় প্রতিদিনই। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে আজকে পর্যন্ত হরতাল-অবরোধে নাশকতার ফুটেজ দেখে ১১টি ঘটনায় ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে গত ১ ডিসেম্বর ধানমন্ডি ১৫ নম্বর সড়কে দীপক পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়ার সময় গ্রেপ্তার হারুনের নামও রয়েছে।

ডিএমপি থেকে সরবরাহ করা এজাহারে দেখা গেছে, বাড্ডায় ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের একটি ঘটনায় অভিযুক্তের সংখ্যা ছিল ৫০-৬০ জন। এ বছরের ২৬ মে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ভিডিও ফুটেজ দেখে তেজগাঁও ২৮ নভেম্বর শিল্পাঞ্চল এলাকায় ছাত্রদলের মিছিল থেকে গাড়ি পোড়ানোর অপরাধে মাইলিন, আবদুল্লা, রবিউল শরীফ ও আশরাফুল আলম নামে চার জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, আরও কয়েকজন ব্যক্তি ওই মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে তাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন কি না এ ব্যাপারে তথ্য দিতে পারেননি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান।

 

ছবি শিবিরও পাঠিয়েছিল...

গত ২৮ নভেম্বর ঢাকার কাছে টঙ্গীতে বনমালা রেল গেট এলাকায় জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের কর্মীরা রেল লাইনের ওপর আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও অবরোধ করে, রেল লাইনের ফিসপ্লেটও উপড়ে নেয়।

এ ঘটনার ক্যামেরাবন্দী ছবি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির সব সংবাদমাধ্যমে পাঠিয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখিয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশনও। ২৯ নভেম্বর প্রথম আলোর চার এর পাতায় ছবিটি ছাপা হয়।

ঢাকা রেলওয়ে থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ মজিদ গতকাল সোমবার প্রথম আলে ডটকমকে বলেন, অবরোধের ঘটনায় রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী ওয়াজির মজুমদার বাদী হয়ে ঢাকা রেলওয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। কিন্তু কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু জন জামায়াত ইসলামীর কর্মীকে প্রথম আলোতে প্রকাশিত ছবি দেখিয়ে এদের পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। তাঁরা প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে টঙ্গীতে রাজধানীর উত্তরা ও আশেপাশের অন্যান্য এলাকা থেকে কর্মীরা আসেন। একইভাবে টঙ্গী  থেকে কর্মীরা প্রয়োজনে অন্য এলাকায় যান।

 

জসীমকে পাওয়া যায়নি

রাজশাহীতে গত এক বছরে মাত্র একজনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে পুলিশ। যদিও এ সময়ে পুলিশের সহকারী কমিশনার পর্যায়ের দু জন কর্মকর্তাই শিবিরের হামলায় চারবার আহত হয়েছেন।

এই তালিকায় রয়েছে উপ-পরিদর্শক ও কনস্টেবল পর্যায়ের অর্ধশতাধিক সদস্য। এ সব ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ দেখে শুধুমাত্র আসাদুল ইসলাম নামে একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পেরেছে। আসাদুল নগরের শালবাগান এলাকায় পুলিশের ওপরে হামলা চালিয়েছিলেন। ১ এপ্রিল নগরের শালবাগান এলাকায় পুলিশের উপপরিদর্শক (সশস্ত্র) জাহাঙ্গীর আলমকে শিবির ক্যাডারেরা  পিটিয়ে মাথা থেঁতলে দিয়ে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যায়। নগরের শাহ মুখদম থানার শিবিরের সাবেক সেক্রেটারি জসীম উদ্দিন ওই দিন জাহাঙ্গীরের মাথার হেলমেট কেড়ে নিয়ে পুলিশকে আঘাত করেন।

যাওয়ার সময় তিনি অস্ত্রটিও নিয়ে যান। জসীমের বাড়ি রাজশাহী নগরের শাহ মুখদম থানা এলাকার ভাড়ালীপাড়া মহল্লায়। তাঁর বাবার নাম জালাল উদ্দিন। ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ তাকে শনাক্ত করেছে। এই হামলার ঘটনায় বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জসীম এই মামলায় সাত নম্বর আসামি। ওই ঘটনার দিন জসীম গায়ে কমলা রঙের জামা, পরনে ছাই রঙের প্যান্ট পরেছিলেন। হামলার এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর (পুলিশের উপপরিদর্শক) উপুড় হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে নীল রঙের টি শার্ট ও হলুদ টুপি পরা একজন জাহাঙ্গীরের কোমর থেকে তাঁর রিভলবারটি বের করেন। এক পর্যায়ে অস্ত্রটি মাটিতে পড়ে গেলে জসীম তা নিয়ে যান। গত ৩ এপ্রিল রাতে আটক শিবিরকর্মী আসাদুল ইসলাম নিশ্চিত করেন, এই নীল টি শার্ট ও হলুদ টুপি পরা যুবকের নাম গিয়াস মনির।

তিনি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র।

গত বছর ২ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র থেকে প্রায় অর্ধশত রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়। পুলিশের সামনে এ সব ঘটনা ঘটলেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেনি। অস্ত্র-হাতে হামলার সম্মুখভাগে ছিলেন ছাত্রলীগের কয়েকজন বিতর্কিত নেতা। তাদের ছবি পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়।

টেলিভিশনেও দেখা যায়। পরে এদের মধ্যে আখেরুজ্জামান ওরফে তাকিম, তৌহিদ আল হোসেন ওরফে তুহিনকে দুর্বৃত্তরা চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে কুপিয়ে জখম করে। বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, অনেককে শনাক্ত করা গেলেও ধরা পড়েছেন একজন। বাকিরা পলাতক। ধরার চেষ্টা চলছে।

 

কিছুটা সফল পুলিশ

চট্টগ্রামে নগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, গত এক মাসে চট্টগ্রাম নগরে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের অন্তত ছয়টি বড় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে অংশ নিয়েছেন প্রায় দু শ নেতা-কর্মী। সবকটি ঘটনার ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে। এ সব ফুটেজ ধরে কেবল সাতজন গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সর্বশেষ শনিবার অলংকারে মোড়ের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মনির নামে এক যুবক গ্রেপ্তার হন।

গত শনিবার সংঘর্ষের ঘটনায় দুই যুবক পুলিশকে লক্ষ্য করে আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি ছোড়ে। বিভিন্ন পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে দুই পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হন। আন্দোলনকারী যুবকদের কেউ কেউ মুখোশ পরে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। গুলিবর্ষণকারী এক যুবকের পাশে ছিলেন মনির।

তাঁকে গত রোববার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মুখোশধারী একজনের ছবি পুলিশ সংগ্রহ করেছে। হামলাকারী অপর একজনের ছবি এখনও পুলিশ পায়নি। নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. বাবুল আক্তার প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘প্রতিটি বড় ঘটনার ফুটেজ আমাদের হাতে আছে। আমরা অনেককে চিহ্নিত করতে পেরেছি।

ধরেছি সাতজনকে। অলংকারের ঘটনায় অস্ত্রধারী দুজনের মধ্যে একজনের আসল ছবি হাতে এসেছে। আমরা এই আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের ব্যাপারে আশাবাদী। অলংকার মোড়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন নগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শাহেদ আকবর। তিনি বলেন, ‘শনিবার অনেকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে।

সাংবাদিকেরা দু জনের ছবি পেয়েছে। আমরা ওই অস্ত্রধারীদের চিনি না। ’

এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। স্থানীয়ভাবে ও সংবাদ পত্রের মাধ্যমে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জামায়াতে ইসলামী এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

 

(প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন একরামুল হক, চট্টগ্রাম; আবুল কালাম মোহাম্মদ আজাদ, রাজশাহী; কমল জোহা খান, ঢাকা ও মোহাম্মদ আলম, টঙ্গী) 



সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।