জানি না কেন লিখি! তবু লিখি মনের খেয়ালে, পরিবর্তন করার মানসে, পরিবর্তিত হওয়ার মানসে। যদিও জানি সব ব্যর্থ হচ্ছে। তবুও আমি আছি সেদিনের সেই আলোকময় প্রত্যুষার আগমনের অপেক্ষায়
দুটো গল্প বলি। গল্প দুটো একই রকম । শুধু ভার্সনটা আলাদা।
অনেকেই হয়তো জানেন। তাও রিপিট করছি। কারণ, গল্পের বাস্তব সময় এখন উপস্থিত।
একদা এক সাধু তার অনুসারীদের নিয়ে একটি দেশে গমন করেন। তাবু খাটিয়ে তিনি শিষ্যদের নিয়ে বসবাস আরম্ভ করলেন।
সাধু শিষ্যদের দিয়ে বাজার থেকে খাদ্য সামগ্রী কিনিয়ে অত:পর রান্না করে খেতেন। একদিন এক শিষ্য বললেন, গুরু চলুন আমরা এদেশে থেকে যাই। এখানে গুড়ের দামে সন্দেস পা্ওয়া যায়। এখানে থাকলে আমরা গুড় না ঐ দামে সন্দেস খেতে পারব। গুরু চোখ বড় বড় করে বললেন, তাই নাকি?
তারপর তিনি সব শিষ্যদের ডেকে নিয়ে বললেন, এখনি গাট্টি বোচকা বাধাই করো।
এই দেশে আর একমূহুর্তও নয়। এ্ই দেশে থেকে যাওয়ার জন্য প্রস্তাবকারী তখন জিজ্ঞেস করলেন, গুরু এর কারণ কী?
তখন গুরু বললেন, যে দেশে গুড় আর সন্দেসের দাম এক, সে দেশে ভাল মন্দের কোন পার্থক্য নেই। দুটোই সমান। অতএব সাধুদের পক্ষে এখানে থাকা সম্ভব নয়।
দ্বিতীয় গল্পটি একই রকম।
সাধুকে তার শিষ্য প্রস্তাব করলো, গুরু এদেশে মাছ গোস্তের চেয়ে সবজির দাম বেশি। চলুন আমরা এদেশে থেকে যাই । আর সবজির দাম দিয়ে গোস্ত কিনে খেয়ে মোটা হতে পারব। সুখে থাকত পারব। যথারীতি গুরু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে শিষ্য দের ডেকে বললেন, বাধো বোচকা, উঠাও গাট্টি।
কিন্তু শিষ্য আপত্তি করলো। সে বললো, না, আমি যাবো না। আমি এখানে থেকে ভাল ভাল খেয়ে মোটা হবো। অগত্যা সাধু বললেন, এই দেশে থাকলে তুই মরবি। তু্ই থাক, আমি ভাগলাম।
শিষ্য সস্তায় গোসত, মাছ ও পুষ্টিকর খাবার খেয়ে অল্পদিনেই মোটা হয়ে গেল।
কিছুদিন পরে ঐ দেশে দেয়াল চাপা পড়ে এক চোর মারা গেলো। চোরের বউ রাজার কাছে নালিশ করলো যে গৃহস্ত দুর্বল দেয়াল তৈরি করেছে তাই ঐ দেয়াল ভেঙ্গে চোরের মৃত্যু হয়েছে। অতএব গৃহস্তকে জরিমানা দিতে হবে। রাজা গৃহস্থকে ডেকে এনে দোষী সাব্যস্ত করলেন।
কিন্তু গৃহস্থ বললো আমি তো ঠিকই টাকা শোধ করেছি, কিন্তু মিস্ত্রি দেয়ালের মাটিতে বেশি পানি দিয়েছে তাই দেয়াল দুর্বল হয়ে গেছে। অতএব দোষ মিস্ত্রির। মিস্ত্রিকে ডেকে আনার পর মিস্ত্রি বললো, হুজুর! দোষ আমার নয়। আমি দেয়ালের মাটিতে পানি ঢালার সময় এক সুন্দরী পথ দিয়ে যাত্রা করছিল। তার দিকে চেয়ে থেকে আমার হাত থেকে পানি বেশি পড়ে গেছে।
সুন্দরীকে ডাকা হলে সুন্দরী বললো, আমার কী দোষ? আমার কানের ঝুমকার কারণেই আমাকে এত সুন্দরী দেখাচ্ছিল। যে কর্মকার এই ঝুমকা বানিয়েছে সব তার দোষ। অতএব স্বর্ণকারকে দায়ী করা হলো। কিন্তু স্বর্ণকার বেচারা এতই রোগা ও শীর্ণকায় যে ফাসির রশি তার গলায় আটকানোর মত নয়। অতএব রাজা সিদান্ত নিলেন যে এই শীর্ণকায় লোককে শাস্তি দিয়ে লাভ নাই।
রাজ্য থেকে খুজে একজন মোটা লোক নিয়ে আসা হোক। পাইক পেয়াদা খুজে খুজে গুরুর ঐ শিষ্যকে ধরে নিয়ে এলো। শিষ্য ভয়ে প্রমাদ গুনলেন। ফাসি দেওয়ার আগ মূহুর্তে তার গুরুর কথা মনে হল, 'তুই এখানে মারা পড়বি। ' কিন্তু ততক্ষণে সব সময় শেষ।
আমাদের দেশে যেভাবে বর্তমানে মুর্খ ও অমানুষগুলো ক্ষমতার চূড়ান্ত পজিশনে উঠে এসেছে আর ভালো মানুষগুলো সিস্টেমের গ্যাড়াকলে পড়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছে, নাই হয়ে গেছে এতে মনে হয় দেশ গল্পের সেই রাজ্যের পর্যায়ে চলে গেছে। এখানে এখন অসত লোকেরা সম্মান পাচ্ছে, ক্ষমতা পাচ্ছে। সত লোকেদের উপর ছড়ি ঘোরানোর বৈধতা পেয়ে গেছে। অতএব এই দেশে থাকলে আমরা গুরু অবাধ্য শি্ষ্যের মত মারা পড়ব। যেমনটা করে মারা পড়ছি ককটেলের আঘাতে, চলন্ত বাসে বসে পুড়ে কাবাব হয়ে।
এই দেশে এটাই এখন স্বাভাবিক। আর বিচার! বিচার চেয়ে এদেশে বিচার পাওয়া যাবে না। এর ঘাড় থেকে ওর ঘাড়ে। সব শেষে ভাল মানুষ সাজা পাবে। তাদের অপরাধ তারা এখানে থাকে কেন!
ভাগো! ভাগো!! কিন্তু কোথায়? ভাগারও কোন জায়গা নেই।
বস্তুবাদী সভ্যতার যেখানেই যাবে তোমাকে সেখান থেকেই ধরে আনা হবে। আত্মিক দিক দিয়ে এই সিস্টেমের অবনতি হলেও যান্ত্রিক দিয়ে, বস্তুগত দিক দিয়ে এটা অনেক উপরে উঠে গেছে। পৃথিবীর প্রতি ইঞ্চি মাটি, প্রতি ইঞ্চি পানি এর করায়ত্বে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।