একটু অসুস্থবোধ করছি, না একটু না, বেশ ভালোই অসুস্থ । প্রকৃতিকে ভালবাসলে কি হবে, প্রকৃতি আমাকেও ছাড় দেয় নি । সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা আমাকেও পেয়ে বসেছে ।
প্রকৃতির প্রতি কেমন যেন একটা গভীর টান অনুভব করি । কেন জানি মনে হয় প্রকৃতি কেবল আমারই ।
কিন্তু প্রকৃতি কাউকে ছাড় দেয় না ।
মাঝে মাঝে জীবনকে অসহ্য মনে হয়। বুজি এ জীবন থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো ছিল । গরীবের প্রাণ কৈ মাছের মত, সহজে শেষ হবার নয় । এদের জীবনে রয়েছে নানা দুর্ভোগ, নানা যন্ত্রণা, লাঞ্ছনা, বঞ্চনা ।
এদের জীবনী শক্তি এত সহজেই শেষ হয়ে যায় না ।
“ প্রতিনিয়তই এরা তিল তিল করে মরছে, তবুও এরা বেঁচে থাকে । ”
এরা জীবনের অর্থ খুঁজতে যায় না, শুধু বেঁচে থাকতে চায় ।
“ বেঁচে থাকার অপ্রতিরোধ্য লড়াইয়ে এরা একে অপরের সহিত কামড়া-কামড়ি করিয়া বাঁচিয়া থাকে । ”
এরা শুধু এক মুঠো ভাতের মূল্য বোঝে ।
এরা এক মুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে চায় । এক মুঠো ভাতই এদের কাছে সব । এরা এক মুঠো ভাতের জন্য সব কিছু করতে পারে , সেখানে জীবন অত্যন্ত তুচ্ছ জিনিস । এ প্রসঙ্গে ‘ভাত দে’ নামক চলচিত্রটির কথা উল্লেখ না করলেই নয় ।
এক মুঠো ভাতের জন্য মানুষ মানুষকে হত্যা করতে কুণ্ঠা বোধ করে না ।
“বেঁচে থাকতে চাই, এক মুঠো ভাত চাই, ভাত দে । ”
প্রায় সময়ই চলচিত্র গুলোতে দেখতে পাই ,
“ দিনের পর দিন না খেয়ে আছে ।
এক নাগাড়ে তিন দিনেরও বেশী সময় ধরে না খেয়ে থাকার পরও নিজের পাতের এক চিমটি ভাততুকু সন্তানের পাতে, ভাইয়ের পাতে কিংবা স্বামীর পাতে তুলে দিচ্ছে । ”
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে ,
“ আমার দ্বারেও এক ভিখারিনী এসেছিল। তার সাথে তার একটি ছোট ছেলে ছিল ।
এই ভিখারির (আমারও) সৌভাগ্য হয়েছিল ঐ দরিদ্র ভিখারিনীকে এক মুঠো পানি ভাত খেতে দেয়ার । ভিখারিনী মা’ টি না খেয়ে তার সন্তানকে খেতে দিয়েছিল। ক্ষুধার্ত ছেলেটি শুধু খেয়েই চলেছে, কোন পানে তাকাচ্ছে না । ভিখারিনীটি দেখতে পেল যে ছেলেটি তার জন্য কিছুই অবশিষ্ট রাখছে না । ক্ষুধার জ্বালা আর সইতে না পেরে, ভিখারিনী মা’ টি এবার সন্তানের হাত চেপে ধরে নিজেই গোগ্রাসে গিলতে শুরু করল ।
”
“ ক্ষুধা এতটাই নিষ্ঠুর । বাস্তবতা এতটাই নির্মম । ”
আমার মত ভদ্র লোকের লেবাসধারী লোকেরাও স্বার্থের জন্য জানোয়ারের মত আচরন করে । আর যে সকল মানুষ অনাহারে ধুঁকে ধুঁকে মরছে তাদের কাছে এক মুঠো ভাত অমৃততুল্য । যে তাকে এক মুঠো ভাত খেতে দিবে, সে লোকটি তো তার নিকট স্বর্গীয় দূত, ফেরেস্তা সমান ।
তার জন্য ইহ জীবন কেন, পর জীবনও কোরবান । তার জন্য ( যে লোকটি খেতে দিল ) মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করা তো মামুলি জিনিস, মানুষ হত্যা, পুড়িয়ে মারা, আত্মঘাতী হামলা করতেও সে (ভাতের জন্য হাহাকারকৃত ক্ষুধার্ত মানুষটি) প্রস্তুত।
“ এ জীবনতো শেষ হয়েই গেছিল, ইনি আমায় এক মুঠো খেতে দিছেন, আস্তাকুড় থেকে তুলে আনি থাকার জায়গা দিছেন। ইনিই আমার ত্রাণকর্তা, ইনিই আমার জীবন দান করছেন। আর তার জন্য আমি একটা বোমা ছুড়ে মারতে পারব না ? তার জন্য জীবন দান তো তুচ্ছ জিনিস, যে কোন কিছুই করতে প্রস্তুত ।
”
রাষ্ট্র যতদিন মানুষের এক মুঠো অন্নের সংস্থান করতে পারবে না, এক মুঠো ভাতের অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারবে না ততদিন দাঙ্গা, হাঙ্গামা, খুন রাহাজানি এ সকল হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হবে না ।
যদি রাষ্ট্র মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে না পারে তাহলে, স্বার্থলোভী, ক্ষমতালিপ্সু, রক্ত পিপাসু মানুষগুলোর সাধারণ মানুষের রক্ত নিয়ে হোলি খেলার উৎসব কোনদিন সাঙ্গ হবে না ।
শেষ করার আগে,
“ মানুষের রক্তে পিয়াস মেটায় মানুষ । জানোয়ার চাটে জানোয়ারের রক্ত । ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।