দেশে অপরাধীদের আতঙ্কিত করার মত সর্বদা সঙ্গীন উঁচু করা কালো পোশাকধারী র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীসহ নানা ধরনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকা সত্ত্বেও যেভাবে মানুষ মারা পড়ছে তাতে কি এই কথাই প্রমাণিত হয় না যে, দেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে? শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকাকে নিরাপদে রেখে দেশের বাকী জেলাসমূহ বিচ্ছিন্ন ও নিরাপত্তাহীন রেখে একটি দেশ কি স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে দাবী করতে পারে?
সা¤প্রতিক বিরোধী জোট আহুত সপ্তাহব্যাপী এবং গত সপ্তাহের প্রায় সবকটি দিন হরতাল এবং অবরোধের সম্মুখীন ছিল সারা দেশ। এই আন্দোলন চলাকালে একদিকে সারা দেশের সংঘাত সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে অন্যদিকে রেলগাড়ি ও বাস-ট্রাক, সিএনজি, অটোরিক্সা পোড়ানোর মহোৎসব শুরু হয়, যা এখন পর্যন্ত চলমান। এই কয়দিনে রেলের যে পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তা পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে গেলেও আগামী দশ বছরে এর ক্ষতিপূরণ সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ আছে। স্ট্যান্ডার্ড গ্র“পের আগুনে যে ১২০০ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতি হল তার শোধ কি দিয়ে করা যায় তা এমন একটি গরীব দেশের মানুষের চিন্তারও উর্ধ্বে। শুধু তাই নয়, এর সাথে জড়িত ১৮,০০০ শ্রমিকের ভাগ্যও আজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
মালিকের কান্না ও শোকের কথা না হয় বাদই দিলাম। কিন্তু রাষ্ট্রের এই সম্পদ এভাবে নৈরাজ্যকারীদের হাতে ভস্ম হয়ে যাবে আর রাষ্ট্র এখনো স্থিতিশীলতা দাবি করে আত্মপ্রসাদে ভুগবে তা মেনে নেওয়া যায় না। একমাত্র ঢাকা মহানগরীতে গিজ গিজ করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে রক্ষা করে, যদিও তাও সম্ভব হচ্ছে না, কারণ এই নগরীর পেটের ভেতর অথাৎ শাহবাগেই চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে ১৯ জন মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন জন ইতোমধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। খিলগাঁওয়ে ককটেলের আঘাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নারী ব্যাংক কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন।
মালিবাগে মারা গেছেন একজন। বিভিন্ন সরকারি কার্যালয় ছাড়াও সরকার দলীয় নেতা-কর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের বাড়িতে বাড়িতে, পত্রিকা অফিসের সামনে বোমা হামলার ঘটনা প্রমাণ করে রাষ্ট্র এসব বীভৎস ঘটনা মোকাবেলায় পুরোপুরিই ব্যর্থ। কিন্তু এরই মধ্যেই চলছে নির্বাচনের প্রস্তুতি। ঘটা করে নির্বাচন কমিশন ২০১৪ সালের তফসিলও ঘোষণা করেছেন। ক্ষমতাসীন দলটি নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থী মনোনয়ন কাজ শেষ করে ফেলেছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ পুনরায় নতুন করে ডিগবাজী দেওয়ায় আওয়ামী লীগকে এখন একাই জোটকে সাথে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু নির্বাচন কি আদৌ করা সম্ভব? কারণ, সারাদেশের বহুস্থানে নির্বাচন কমিশনের অফিস ইতোমধ্যে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন হবে জানুয়ারির ৫ তারিখে। অথচ দু’মাস আগের অবস্থাই সরকার মোকাবেলা করতে পারছে না। এমতবস্থায় এই ধারা চলতে থাকলে নির্বাচনের সময় পরিবেশ কি রূপ নেবে তা আগাম ধারণা করা কোন কঠিন কাজ নয়।
এখন কোন একটি কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে সাধারণ মানুষের প্রাণহানি রোধ করা সম্ভব নয়। কারণ বিরোধী দল তাদের দাবী আদায়ে অনড় আছে। পথ এখন দু’টো- একটি হচ্ছে বিরোধী দলের দাবী পূরণ করে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ত্যাগ আর অন্যটি হচ্ছে শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়া। বিরোধী দলের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে ক্ষমতাসীন সরকার কোন মতেই দায় এড়াতে পারেন না। কারণ যারা ক্ষমতায় নেই তারা প্রশ্নবিদ্ধ অনেক কাজ করতে পারেন, রাষ্ট্রের প্রতি তাদের কোন দায় নেই, দায় আছে যারা রাষ্ট্রযন্ত্রের পরিচালনায় আছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।