আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মা, ককটেল মারবে না তো!

পাঁচ বছর বয়সী সাদিয়া পড়ে নার্সারি শ্রেণীতে। গত সোমবার সকালে পাহাড়তলী সিগন্যাল কলোনি এলাকার বাসা থেকে মায়ের সঙ্গে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল সে। যাত্রাপথে হঠাৎই ককটেল বিস্ফোরণ। বোমার আঘতে রক্তাক্ত হয় ছোট্ট সাদিয়ার শরীর। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলেও ক্ষণে ক্ষণে চমকে উঠছে সে।

রাজি হচ্ছে না বিদ্যালয়ে যেতেও।
আহত সাদিয়ার চাচা ওমর ফারুক জানান, পরিবারের সদস্যরা এখন সাদিয়াকে নানাভাবে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন খেলনা দিয়ে তার মনের আতঙ্ক দূর করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এর পরও স্বাভাবিক হচ্ছে না সে। বাইরে যাওয়ার কথা শুনলেই আতঙ্কে গুটিয়ে যাচ্ছে।


হালীশহর এলাকার গৃহবধূ জেসমিন সুলতানা বলেন, ‘আমার সাত বছরের ছেলে সিয়াম টেলিভিশন ও পত্রিকায় অগ্নিদগ্ধ মানুষ ও সহিংসতার ছবি দেখে খুব ভয় পেয়েছে। স্কুল তার আনন্দের জায়গা হলেও গত কয়েক দিন ধরে ঘর থেকে বের হতে চাইছে না। বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ায় বাধ্য হয়ে তাকে নিয়ে অবরোধের দিন স্কুলের পথে বের হয়েছি। রাস্তায় বের হয়ে ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছিল সিয়াম। বার বার প্রশ্ন করছিল, মা কেউ ককটেল ছুড়ে মারবে না তো? আগুন ধরিয়ে দেবে না তো?’
সাদিয়া বা সিয়ামের মতো নগরের বিদ্যালয়গামী শিশুদের মধ্যে এখন ভর করেছে আতঙ্ক।


এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আতঙ্ক নিয়েই বিদ্যালয়ে আসছে। তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে হরতাল অবরোধে এতদিন আমরা বিদ্যালয় বন্ধ রেখেছি। কিন্তু শিক্ষাবর্ষ শেষ হয়ে আসায় পরীক্ষার জন্য বিদ্যালয় খোলা রাখতে হচ্ছে।
এ বছরের ২৮ মার্চ ১৮-দলীয় জোটের টানা ৩৬ ঘণ্টা হরতাল চলার সময় অপর্নাচরণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী অন্তু বড়ুয়া ককটেল বিস্ফোরণে আহত হয়। নগরের হেমসেন লেইনের বাসা থেকে মায়ের সঙ্গে কোচিং সেন্টারে হেঁটে যাওয়ার পথে তার ডান চোখে ককটেলের স্প্লিন্টার এসে লাগে।


অন্তু বড়ুয়ার আহত হওয়ার ঘটনা পত্রিকায় ছাপা হলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। সবাই আশা করেছিল, এমন সহিংসতা থেকে রেহাই পাবে শিশুরা। কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো।
গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সরাইপাড়া এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণে আহত হয় সাত বছরের মিনহাজ হোসেন। মিনহাজের দিনমজুর বাবা মমতাজ মিয়া জানান, তাঁর ছেলে বিদ্যালয় থেকে ফিরে খেলতে বের হয় বাড়ি থেকে।

এ সময় অবরোধকারীদের ছোড়া ককটেল বিস্ফোরণে সে আহত হয়। জীবনের সংশয় না থাকলেও মিনহাজ আতঙ্কে ভুগছে বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।
শিশু মনস্তত্ত্ববিদেরা বলছেন, এসব ঘটনায় বদলে যাচ্ছে শিশুদের মনোজগত।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ ধরনের ঘটনাগুলো শিশু মনে স্থায়ী ছাপ ফেলতে পারে, শিশুর মনে তৈরি করতে পারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। এমনকি তার ভেতরে আচরণজনিত সমস্যাও হতে পারে।


তিনি বলেন, শিশুদের কথা চিন্তা করে এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও শিশুর পরিবারকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এসব ঘটনা নিয়ে শিশুদের সামনে বেশি আলোচনা না করাই উচিত। এ ছাড়া শিশুর নিরাপত্তার দিকেও নজর রাখতে হবে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।