আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিন বদলের লড়াইয়ে একজন মুক্তাদির

সিলেট সদর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা টুকেরবাজার। একটি ঘরে মধ্যে কম্পিউটার নিয়ে গভীর মনোযোগী ১০ জন তরুণ-তরুণী। কেউ করছেন টাইপ, কেউ ব্যস্ত ফটোশপে ছবি এডিটিংয়ে। দুই-একজন ইন্টারনেটে ব্রাউজিংয়ের মাধ্যমে খুঁজছেন প্রয়োজনীয় তথ্য। পাশে থেকে একজন শিক্ষক সাহায্য করছেন তাদের।

কম্পিউটার নিয়ে মনোযোগী হওয়া এসব তরুণ-তরুণীর একমাস আগেও প্রযুক্তি সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না। আত্মনির্ভরশীল হওয়ার মানসে তারা এসেছেন খন্দকার আবদুল মালিক ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। এখান থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা দাঁড়াতে চান নিজের পায়ে। বর্তমানে ওই ফাউন্ডেশনের ৬টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ২৮৮ জন তরুণ কম্পিউটার ও ৩টি কেন্দ্রে ৪৫ জন তরুণী সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন আরও কয়েকশ তরুণ-তরুণী।

আর যিনি গ্রামের যুবসমাজকে আত্দনির্ভরশীলতার এ সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন তিনি হলেন খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, পেশায় শিল্পপতি। খন্দকার মুক্তাদির জানান, তার বাবা ছিলেন সিলেট-১ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য। তিনি যেখানেই যেতেন সেখানে যুব সমাজকে চাকরির পেছনে না ছুটে আত্দনির্ভরশীল হওয়ার তাগিদ দিতেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি একই কাজ করে গেছেন। বাবার স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন তিনি।

বাবার নামে গড়ে তোলেন 'খন্দকার আবদুল মালিক ফাউন্ডেশন'। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে কম্পিউটার ও সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে তরুণ-তরুণীদের আত্দনির্ভরশীল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। খন্দকার মুক্তাদির আরও জানান, শুধু যুব সমাজকে আত্মনির্ভরশীল করা নয়, সিলেটের কৃষকদের জন্যও তিনি কিছু করতে চাইছেন। আগামী শুষ্ক মৌসুম থেকে সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও, জালালাবাদ ও হাটখোলা ইউনিয়নের ৩ হাজার একর জায়গা তিনি সেচের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছেন। শুষ্ক মৌসুমে অনাবাদি পড়ে থাকা এসব জায়গায় রবিশস্য ও ধান চাষাবাদের জন্য তিনি বিনামূল্যে সেচের ব্যবস্থা করবেন।

এরই মধ্যে এই প্রকল্পের প্রাথমিক কাজও শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। খন্দকার আবদুল মালিক ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক মাহবুবুর রহমান জানান, ২০১০ সালের শুরুতে ৪২ জন প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে সিলেট নগরীর কুমারপাড়ায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু শহরের প্রশিক্ষণার্থীরা তুলনামূলক সচ্ছল হওয়ায় প্রায় এক বছর পর ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি বন্ধ করে সদর উপজেলার টুকেরবাজার, কান্দিগাঁও, মোগলগাঁও, টুলটিকর, খাদিমনগর, জালালাবাদ ও দক্ষিণ সুরমায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা হয়। মাহবুব জানান, বর্তমানে টুকেরবাজারে ৭০ জন, চণ্ডিপুলে ৭০ জন, কান্দিগাঁওয়ে ৪২ জন, মোগলগাঁওয়ে ২২ জন, বালুচরে ৪২ জন ও খাদিমনগরে ৪২ জন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। জালালাবাদের কালারুকা ইসলামগঞ্জ, শিবেরবাজার ও মোগলগাঁও সেন্টারে ১৫ জন করে সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

তিনি জানান, প্রশিক্ষণ বাবদ প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে কোনোরকম ফি নেওয়া হয় না। উপরন্তু প্রশিক্ষণ শেষে তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ারও চেষ্টা চালানো হয়। সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউপির চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নের খন্দকার আবদুল মালিক ফাউন্ডেশনের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তরুণ-তরুণীরা আগ্রহ নিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। যুগোপযোগী এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এলাকার যুব সমাজের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।