আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দিলেই সমাধান?

বাংলাদেশের রাজনীতির কেন্দ্রে এখন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত ১৮ দল বলেছে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরে গেলেই তারা নির্বাচনে যাবে। গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেন রাজনৈতিক সংকট নিরসনের এক নতুন দাওয়াই দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক সংকটের সমাধান এক মিনিটেই হয়ে যায়। শেখ হাসিনা সরে গেলেই সব সংকটের সমাধান হয়ে যাবে।

টকশোতে, সেমিনারে এখন প্রকাশ্যই আলোচনা, শেখ হাসিনা সরে গেলেই নাকি সব সংকট সমাধান হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ নয়, শুধু শেখ হাসিনাকে মাইনাস করলেই যদি রাজনৈতিক সংকট সমাধান হয় তাহলে নির্বাচন কমিশন, আইনপ্রয়োগকারী বাহিনী, প্রশাসন_ এদের কোনো ভূমিকা নেই? শেখ হাসিনা চলে গেলেই দেশে 'ম্যাজিক' হয়ে যাবে? লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের একমাত্র ক্ষত তাহলে শেখ হাসিনা?

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আড়াল করতে সামনে এলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু আর এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে আন্দোলনের তীর তাক করা হয়েছে শেখ হাসিনার দিকে। শেখ হাসিনাকে মাইনাস করলেই যানবাহন পুড়বে না, অগি্নদগ্ধ হবে না মানুষ, রেললাইন উপড়ে ফেলা হবে না, ককটেলের আঘাতে প্রাণ হারাবে না স্কুলের শিক্ষার্থী। শেখ হাসিনা এত ক্ষমতাবান যে, তাকে সরালেই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে? তাহলে বাংলাদেশের সব দল ও নেতার চেয়ে শক্তিশালী হলেন শেখ হাসিনা? তাই তিনি থাকলে বিরোধী দলের সব দাবি মানলেও নির্বাচন হবে না?

দক্ষিণ আফ্রিকার মুক্তির অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, 'যখন প্রতিপক্ষ তোমার আদর্শের বদলে তোমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করবে, তোমাকে সরিয়ে দিতে চাইবে, তখন তুমি নিশ্চিত হবে তোমার আদর্শের বর্মে তুমি মজবুত। তারা তোমাকে আদর্শচ্যুত করতে পারবে না জন্যই তারা তোমাকে সরাতে চাইছে।

' আজ শেখ হাসিনার ব্যাপারেও এই অমর উক্তি প্রযোজ্য।

বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, শেখ হাসিনা তার আদর্শে এত দৃঢ় অবস্থায় আছেন যে, তাকে সরানো ছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের আর কোনো রাস্তা নেই। শেখ হাসিনাকে সরানো ছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের রায় কার্যকর করা ঠেকানোর আর কোনো পথ নেই। শেখ হাসিনাকে সরানো মানেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নির্বাসন। শেখ হাসিনাকে সরানো মানেই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদের উত্থান।

আপনি পছন্দ করুন আর নাই করুন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে এ মুহূর্তে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্যই কি তাকে সরিয়ে দেওয়ার এত আয়োজন? টকশোতে মধ্যরাতে আর্তনাদ? শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক জীবনে বারবারই 'মাইনাস' ষড়যন্ত্রের মুখে পড়েছেন, কখনো তাকে শারীরিকভাবে মাইনাস করার চেষ্টা করা হয়েছে, কখনো তাকে রাজনৈতিকভাবে মাইনাস করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই চেষ্টা এখন নতুন মোড়কে বাজারে ছাড়া হয়েছে।

যতদিন তিনি রাজনীতিতে আছেন ততদিন প্রতিপক্ষের প্রধান লক্ষ্য হলেন শেখ হাসিনা। কারণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তিনিই প্রধান নেতা।

তার রাজনীতির সূচনাই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়েই। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তিনি রাজনীতি করেছেন। কিন্তু সেই রাজনীতি হলো তরুণ বয়সে কবিতা লেখার মতো। তিনি যে সময় স্কুল থেকে কলেজে পা রেখেছেন তখন এই ভূখণ্ডে গনগনে আগুনের মতো আন্দোলন। তিনি বেড়ে উঠেছেন, ৩২ নম্বরের বাড়িতে, যে বাড়িটি ছিল বাঙালির গণজাগরণের কেন্দ্র।

এরকম বাড়ির সন্তানের রক্তে তো রাজনীতি প্রবাহমান। তার বেড়ে ওঠা, বিয়ে_ সব পর্বজুড়েই রাজনীতি। কিন্তু রাজনীতির পাদপ্রদীপে তিনি আসেন ১৯৮০ সালে। যখন অন্তর্কলহে জর্জরিত বিভক্ত, নেতৃত্বহীন আওয়ামী লীগের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন ছিল ঐক্যের সুতো।

শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়েছিল, বিদ্যমান উপদলীয় কোন্দল ঠেকাতে।

মস্কোপন্থি (আবদুর রাজ্জাক) এবং মার্কিনপন্থিদের (ড. কামাল হোসেন) আপোস ফর্মুলা ছিলেন শেখ হাসিনা। উভয়পক্ষই আশা করেছিলেন, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হলে তিনি তাদের পকেটেই থাকবেন। ড. ওয়াজেদ মিয়ার বহুল আলোচিত গ্রন্থ 'বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে কিছু স্মৃতি' পড়লে দেখা যায়, শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হওয়ার পর দফায় দফায় তার সঙ্গে নানা গ্রুপের লোকেরা দেখা করেন। আওয়ামী লীগের একটি অংশের সম্ভবত আশা ছিল, শেখ হাসিনা প্রবাসে থেকেই নামমাত্র সভাপতি থাকবেন, আর তার নামে আওয়ামী লীগ চালাবেন তারাই। কিন্তু তারা হিসাব করেননি, জাতির পিতার উত্তরাধিকার একজন আপাদমস্তক রাজনীতিক।

এ সময়টা জিয়াউর রহমানের শাসন। জাতির পিতার নাম নিষিদ্ধ। একাত্তরের ঘাতক-দালালরা সব জেল থেকে বেরিয়ে এসেছে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে গোলাম আযম বাংলাদেশে। বেতারে-টেলিভিশনে 'পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী' বলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জিয়া রাজনীতিকে ডিফিক্যাল্ট করতে গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে টাকা উড়াচ্ছেন দেদার।

অনেক আওয়ামী সেনা 'জিয়া বন্দনা' শুরু করেছেন। কার্যত বিরোধী দল বলে কিছু নেই। জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দ মানে সামরিক আদালতে বিচার, জেল, গুম, হত্যা। জাতির পিতার হত্যাকারীরা বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক চাকরি নিয়ে আয়েশে ঢেঁকুর তুলছে। ৩২ নম্বর বাড়িটি যেন মৃত্যুপুরী।

এরকম এক পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তার প্রিয় স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের। সিদ্ধান্তটি সহজ ছিল না। কারণ মৃত্যুর ভয় ছিল, হুমকি ছিল, রক্তচক্ষুর আস্ফালন ছিল। কিন্তু সব কিছু উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা ১৯৮০ সালের ১৭ মে দেশে ফিরলেন। তিনি কাঁদলেন, পুরো জাতিকে কাঁদালেন।

মানুষের অধিকার আদায়ের ডাক দিলেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দেশে ফিরে তিনি তার কতৃত্ব জানান দিলেন। তিনি বুঝিয়ে দিলেন, তিনি কাগুজে সভাপতি নন, তাকে পুতুল বানিয়ে রাখারও সুযোগ নেই। দলের সাধারণ কর্মী, যারা জাতির পিতাকে ভালোবাসেন, আওয়ামী লীগকে ভালোবাসেন_ দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের নয়নের মণিতে পরিণত হলেন শেখ হাসিনা। তাদের মধ্যে তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা এবং অকুণ্ঠ সমর্থনে তিনি আওয়ামী লীগের হাল ধরলেন।

দ্রুতই শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ নেতাদের এক অংশের বিরাগভাজন হয়ে পড়লেন। কারণ তারা যে আশায় শেখ হাসিনাকে সভাপতি করেছিলেন, সে আশা অপূর্ণই রয়ে গেল। ভেতরে ভেতরে তারা 'মাইনাস ফর্মুলা'র ছক কষলেন। তাকে রাজনীতি থেকে বিদায় করার প্রক্রিয়া শুরু হলো। আওয়ামী লীগ ভাঙল।

কিন্তু আওয়ামী লীগের লাখো কর্মী তাদের হৃদয় জমা দিলো শেখ হাসিনার কাছে। 'বাকশাল' ক্ষীণ থেকে শীর্ণকায় হয়ে এক সময় মৃত্যুবরণ করল। শেখ হাসিনা 'ঘরের ছেলেদের ঘরে তুলে নিলেন। ' এই উদারতা তৃতীয় বিশ্বের দেশে তো বটেই, বিশ্ব রাজনীতিতে বিরল। যারা তাকে 'মাইনাস' করতে চেয়েছিল, তাদের তিনি বুকে টেনে নিলেন।

রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করলেন। এরপর ৯১-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আকস্মিক বিপর্যয় আবার শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার পরিকল্পনা সামনে এলো। বলা হলো শেখ হাসিনা 'মাইনাস' হলেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। আওয়ামী লীগের পাতি নেতা, উপনেতারাও শেখ হাসিনার রাজনীতির ভুলত্রুটি ধরে চায়ের কাপে ঝড় তুলতে শুরু করলেন (ভাগ্যিস তখন এত টকশো ছিল না)। শুধু দরিদ্র কৃষক, জেলে, গরিব মেহনতী মানুষ, আওয়ামী লীগের সেসব কর্মী যারা চাওয়া-পাওয়ার হিসাব করে রাজনীতি করেন না, শুধু বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনাকে ভালোবাসেন_ তারা তাদের অটুট আস্থা, আনুগত্য অব্যাহত রাখলেন।

এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাদের ঘরোয়া আড্ডায় দেখতাম শেখ হাসিনার প্রতি ভ্রূ কুঁচকানো বিরক্তি। ভাবটা এমন যে, শেখ হাসিনা বিদায় হলেই আওয়ামী লীগ বেঁচে যায়। কিন্তু তারা কেউ একবার বললেন না, জাতির পিতার মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগকে কোমা থেকে বাঁচিয়ে তুলেছিলেন শেখ হাসিনা। ভাঙা হাট আবার গড়লেন শেখ হাসিনা। তারপর দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনলেন শেখ হাসিনা।

গঙ্গার পানিচুক্তি করলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিচুক্তি করলেন, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা প্রবর্তন করলেন, একটি বাড়ি একটি খামার হলো, খাদ্যে দেশ হলো স্বয়ং সম্পূর্ণ। স্বপ্নের মতো দেশ চালালেন, তারপরও সমালোচকদের মুখ চলল। শেখ হাসিনার মুখ বন্ধ করার পরামর্শ কানপাতলেই শোনা গেল। যারা আগে পত্রিকার পাতায় কলাম লিখতেন 'বন্যেরা বনে সুন্দর আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে', আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনা করতে পারবে না। পাঁচ বছর পর তারা বললেন, সব কিছুই ঠিক ছিল কিন্তু শেখ হাসিনা বেশি কথা বলেন।

এটা যেন এক ভয়াবহ সমস্যা!

শেখ হাসিনাকে আমার প্রায়ই মনে হয়, বাড়ির বড় মেয়ের মতো। যে মায়ের কষ্ট ঘোঁচাতে নিজের লেখাপড়া বন্ধ করে হেঁসেল সামলান, বাবার যত্নআত্তি করেন, অফিস থেকে ফেরার পর তার পা টিপে দেন। নিজের শখের জামা ছোট বোনকে দিয়ে দেন। দুরন্ত ভাইয়ের বায়না মেটাতে নিজের জমানো টাকা খরচ করেন। কিন্তু এ নিয়ে কারও তৃপ্তি নেই বরং এটাই যেন তার কর্তব্য মনে করা হয়।

আর একটু পান থেকে চুন খসলেই তার ওপর অভিমান, ক্ষোভ-রাগ অাঁচড়ে পড়ে। তার কাছে সবার চাওয়া অনেক, কিন্তু তাকে দেওয়ার মতো কেউ নেই। তিনি শুধু দেবেন বিনিময়ে একটি ধন্যবাদও পাবেন না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিন দশক ধরে দুই নেত্রীর কথা আলোচিত হয়। বস্তুত এ সময় রাজনীতির মূলধারা তারাই।

কিন্তু অদ্ভুত দেখুন শেখ হাসিনা যদি সংসদীয় রীতি প্রতিপালনের খাতিরে বিরোধী নেতা হিসেবে অন্য বিরোধী দল জামায়াতের সঙ্গে সংসদে বৈঠক করেন তাহলে হাহাকার পড়ে যায় অথচ বেগম জিয়া যদি তাদের মন্ত্রী বানান তাহলে কেউ টুঁ-শব্দটিও করেন না। বেগম জিয়া গার্মেন্টের বেতন এক টাকা না বাড়ালেও কেউ সমালোচনা করে না। শেখ হাসিনা দুবার বেতন বাড়িয়েও সুশীল সমাজের একটি ধন্যবাদও পান না। বেগম জিয়া এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ না বাড়িয়েও কারও সমালোচনা শুনলেন না, আর শেখ হাসিনা চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাড়িয়েও নানামুখী মন্তব্যের জালে। বেগম জিয়া শিশুদের বই ফেব্রুয়ারি-মার্চের আগে দিতে পারতেন না।

এ জন্য কেউ তার কাছে কৈফিয়ত চাইত না। আর শেখ হাসিনা জানুয়ারির ১ তারিখে বই দেওয়ার পর বলা হলো বইয়ে তো বেশ বানান ভুল! শেখ হাসিনা হরতাল ডাকলে দেশে আহাজারি উঠত, বলা হতো বিরোধী দলকে আন্দোলনের ভাষা বদলাতে হবে। বেগম জিয়া হরতাল ডাকলে বলা হয়, শেখ হাসিনা দাবি মানলেই তো পারেন। শেখ হাসিনা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের এক বিন্দু সমালোচনা করলে সবাই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। বেগম জিয়া ১৫ আগস্ট উৎসব করে কেক কাটলে কোনো সুশীল তাকে তিরস্কার করেন না।

সুশীল বিনোদনের টকশোতে যে যত শেখ হাসিনার সমালোচনা করবেন, তিনি তত নিরপেক্ষ, পণ্ডিত। প্রশংসা করলেই আপনি দলকানা, মূর্খ।

যাক সে প্রসঙ্গ। ২০০১ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির পর আবার মাইনাস ফর্মুলা সামনে এলো। এবার মাইনাস ফর্মুলা এলো দুদিক থেকে।

একটি দলের মধ্যে থেকে অন্যটি বিরোধী পক্ষ থেকে। কিন্তু শেখ হাসিনা এ সময় সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবে আহত ক্ষত-বিক্ষত অসহায় মানবতার পাশে দাঁড়াতেই ব্যস্ত ছিলেন। দলের কিছু নেতা, পাতি নেতাদের কাছে শেখ হাসিনার হাজার দোষ। কিন্তু আওয়ামী লীগের কোটি সমর্থক ও কর্মীর কাছে তিনি এক ম্যাজিক টনিক, সম্মোহনী। তার একটি কথায় লাখো কর্মী রাস্তায় ঝাঁপিয়ে পড়ে।

বেঁচে থাকার উৎসবে মাতে। তাই দলের ভেতরে যারা তাকে মাইনাস করতে চান, তারা দ্রুতই কোণঠাসা হয়ে পড়ে। শক্ত সাংগঠনিক ভিত্তির জোরে প্রতিপক্ষের মাইনাস ফর্মুলার পালে বাতাস পায়নি। রাজনৈতিকভাবে শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে না পারার ফলে শারীরিকভাবে মাইনাসের নীলনকশা রচিত হয়। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল সেই মাইনাস ফর্মুলার নৃশংস বাস্তবায়ন।

এরপর রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে আসে ওয়ান-ইলেভেন। এবারও দলের ভেতরে-বাইরে শুরু হয় মাইনাস ফর্মুলা। এটা সবাই জানে। এ নিয়ে অনেক লেখালেখিও হয়েছে। তাই নতুন করে এ প্রসঙ্গ বাড়াতে চাই না।

ওয়ান ইলেভেনের মাইনাস ফর্মুলার জবাব আসে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে।

তারপর এখন শুরু হয়েছে আবার মাইনাস ফর্মুলা। টকশোতে বলা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন মেরুদণ্ডহীন, বেশ ভালো কথা। পরক্ষণেই ওই পণ্ডিত বলছেন শেখ হাসিনা সরে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে_ কি চমৎকার। বাসে মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে।

বলা হচ্ছে শেখ হাসিনা কেন ক্ষমতা ছাড়ছেন না? তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দিলেই তো বিরোধী দল আর এসব করে না। তার মানে আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারা, রেলে আগুন, পণ্যভর্তি ট্রাকে আগুন সব জায়েজ? গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ভাষা কি এরকম নৃশংস হতে পারে?

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পর্যন্ত ঠিক ছিল। এই দাবি যখন শেখ হাসিনা সরাও আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। তখন বলতেই হচ্ছে এর পেছনে অন্য মতলব আছে। মতলবটা পরিষ্কার।

এই মতলবে এখন সুশীল-কুশীল-যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী সবাই এক হয়েছেন তাদের লক্ষ্য নির্বাচন নয়, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো। এ জন্য আন্দোলনের নামে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে পেশাদার সন্ত্রাসী, খুনিদের। আমাদের সুশীলরা বার বার বলেন, 'ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। ' শিক্ষা কি তারা নেন? তারা কি জানেন না, মুষ্টিমেয় কয়েকজন সফেদ শিক্ষিতের বাইরে বাংলাদেশের নীরব এক জনগোষ্ঠী আছে। সেই জনগোষ্ঠীর ৫০ ভাগের বেশি শেখ হাসিনাকে তাদের অভিভাবক মনে করেন।

তাদের মুক্তিদাত্রী মনে করেন। তাদের মতামত উপেক্ষা করে, চাইলেই কি শেখ হাসিনাকে মাইনাস করা যাবে? ইতিহাসের শিক্ষা হলো যতবার তাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, ততবার তিনি মানুষের ভালোবাসায় আরও শক্তিশালী হয়েছেন।

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

ই-মেইল :poriprekkhit@yahoo.com

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।