আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশ কি জরুরি অবস্থার দিকে এগুচ্ছে?



দেশ কি জরুরি অবস্থার দিকে এগুচ্ছে? ফকির ইলিয়াস ========================================== ঢাকার আমেরিকান দূতাবাস ভ্রমণ এলার্ট জারি করেছে মার্কিন নাগরিকদের জন্য। বাংলাদেশ সফরের বেলায় এই এলার্ট। বলা হয়েছে ৭ জানুয়ারি ২০১৪ পর্যন্ত এই এলার্ট বলবৎ থাকবে। ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দূতাবাসের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এই সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক থাকতে পারে।

তাই মার্কিন নাগরিকদের ঢাকা সফরের বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। এটা মার্কিন দূতাবাসের রুটিন ওয়ার্ক। যে কোনো কঠিন সময় এলেই দূতাবাস সেই রাষ্ট্র সম্পর্কে তার নাগরিকদের আগাম সতর্কবার্তা জানায়। বাংলাদেশ আবারো সেই তালিকায়Ñ তা দেখে মর্মাহত না হয়ে উপায় নেই। কী হচ্ছে বাংলাদেশে? দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, বিরোধী দলের অবরোধে গাড়িতে আগুন এবং ট্রেনলাইন উপড়ে ফেলা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন- ‘লঞ্চ আর ফেরি ডুবিয়ে দেয়ারও নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এই তথ্য আমাদের কাছে আছে। তথ্য-প্রযুক্তির যুগে কিছু লুকিয়ে রাখা যায় না। ’ কথা হচ্ছে, এসব জানার পরও দেশের কর্ণধাররা বিহিত ব্যবস্থা করছেন না কেন? বাংলাদেশে এখন অবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, ‘সমঝোতা হলে সব কিছুই সম্ভব।

’ বিরোধী দল মনোনয়নপত্র দাখিল প্রক্রিয়ায় না আসায় তফসিল পরিবর্তনের কোনো সুযোগ রয়েছে কিনা- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে সিইসি একথা বলেন। জনগণ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আশায় আছে- মন্তব্য করে সিইসি বলেন, ‘আমি এখনো আহ্বান জানাচ্ছি, দুদলই এগিয়ে আসেন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করেন। জনগণকে প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ দিন। ’ কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

দুই প্রধান দল সমঝোতায় আসেনি। দেশের ট্রেনলাইন উপড়ে ফেলার মতো ঘটনা প্রমাণ করছে, এই দেশে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে চরমভাবে বিঘিœত করাই একটি মহলের অন্যতম উদ্দেশ্য। এরা কারা। কী তাদের উদ্দেশ্য- তা সরকারের অজনা নয়। বাংলাদেশে একটা রাজনৈতিক সমঝোতা হোক, তা চাইছেন বিদেশের বন্ধুরাও।

জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব ফার্নান্দেজ তারানকো ৬ ডিসেম্বর ঢাকা সফরে আসার কথা রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ৪ ডিসেম্বর ঢাকা সফর করেছেন। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি দেশের মানুষের জন্য মঙ্গলজনক হবে কিনা- তার কোনো হিসাব কিছুই বলা যাচ্ছে না। দেশের রাজনীতিতে আরেক খেলোয়াড় হয়ে ভানুমতির খেল দেখাচ্ছেন প্রাক্তন স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বলেছেন- তিনি নির্বাচন করবেন না।

কেন করবেন না এর কোনো সঠিক ব্যাখ্যা তার নেই। অথচ তিনি নির্বাচনকালীন সরকারে তার দলের মন্ত্রী-উপদেষ্টা সবই দিয়েছেন। ওরা এখনো পদত্যাগও করেননি। এরশাদ বলছেন, তার দলের প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন এরশাদ মত পাল্টাবেন।

১৩ ডিসেম্বর তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন না। সংবাদ সম্মেলন করে এরশাদ নিখোঁজ হয়ে গেছেন, এমন খবরও এসেছে মিডিয়ায়। একটা কথা বলা দরকার, এরশাদ এখন তার নিজ দলেই অনেকটা আগন্তুকের মতো। কারণ এরশাদের অন্যতম খলিফা কাজী জাফর আহমদ এখন খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠভাজন হবার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি একটি দলও গঠন করেছেন।

জাতীয় পার্টিকে ভাঙার কাজটি সফলভাবেই করতে পেরেছে বিএনপি। কিন্তু কথা হচ্ছে, এরশাদ কি নির্বাচন বর্জন করে টিকে থাকতে পারবেন? না পারবেন না। কারণ তার ওপর অনেক খড়গ এখনো ঝুলে আছে। অমীমাংসিত রয়ে গেছে বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর দায়ের করা সেই মামলাটি। যে মামলাটিতে এরশাদের অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের বিষয়টি ছিল।

তার বিরুদ্ধে যে মামলাটি দায়ের করা হয়, তা হচ্ছে- মতিঝিল থানা : ডাইরি নং- ৭২৬ তাং-১৩/১২/৯০ ইং। মামলাটি দায়ের করেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। এরশাদের বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ রয়েছে, তার মধ্যে প্রথম এবং প্রধান অভিযোগটি ছিলÑ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল। স্বৈরাচার এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে সামরিক আইন জারি করে রাখেন চার বছরেরও বেশি সময় ধরে। তারপর প্রহসনমূলক নির্বাচনের আশ্রয় নিয়ে তার মাধ্যমে ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর আনীত বিলের সাহায্যে অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করে নেন।

এরশাদ কোন পথ বেছে নেবেন তা দেখার জন্য আমাদের ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে এর মাঝে দেশে অন্যান্য ধারাবাহিক কাজগুলো হবে কিনা- তা নিয়েই কথা উঠছে। অন্যতম যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার বিচারের রায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আগে কার্যকর করা হবে কিনা- তা এখনো স্পষ্ট নয়। দেশে প্রতিদিন গণহত্যা হচ্ছে। অবরোধের নামে মানুষ মারা হচ্ছে।

অবরোধ দীর্ঘতর হচ্ছে। অন্যদিকে সংবিধান রক্ষার নামে একতরফা নির্বাচনের দিকেই এগুচ্ছে সরকার। দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নিগৃহীত হচ্ছেন। গোলাম রব্বানী কিংবা তানভীর ইমামের মতো নেতারা নাজেহাল হয়েছেন। কারো বাড়িতে আগুন দেয়া হচ্ছে।

কেউ আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। কথা হচ্ছে, তাহলে তো আওয়ামী লীগের ভেতরেই ‘চেইন অব কমান্ড’ কাজ করছে না। বড় দলে বহুমত থাকবে এমনটি বলে নির্বাচন নিয়েও দলীয়-অভ্যন্তরীণ তেলেসমাতি হবে, আর মানুষ তা বুঝবে না? মানুষকে কি এতোই বোকা ভাবছেন রাজনীতিকরা? একটা ছোট্ট সংবাদ আমরা আবারো পড়তে পারি। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে খেটে খাওয়া একদল দিনমজুর স্মারকলিপি দিতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এরপর দিনমজুররা গুলশান-বনানী এলাকায় মিছিল করেন।

গেলো মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে তারা একটি মিছিল নিয়ে রওনা হন। পুলিশ দিনমজুরদের খালেদা জিয়ার বাসায় ঢুকতে দেয়নি এবং তাদের স্মারকলিপিও গ্রহণ করা হয়নি বলে জানা গেছে। মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। মানুষ নিরূপায়। এই অবস্থায় দেশের ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে প্রশ্ন আসছে।

দেশ রক্ষা করতে হবে যে কোনো মূল্যে। দেখা যাচ্ছে, পুলিশ- র‌্যাবের ওপরও চড়াও হচ্ছে হামলাকারীরা। এ অবস্থায় সরকার পিছু হটার কোনো উপায় নেই। বরং যে কোনো মূল্যে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা পুনর্বহাল করাই প্রধান কাজ। দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হলে সাময়িকভাবে সকল সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধ করা সম্ভব হতে পারে।

এটা যদিও স্থায়ী কোনো সমাধান নয়, তবুও পরিস্থিতি শান্ত করে পরবর্তী সিদ্ধান্তের দিকে এগোনো যেতে পারে। মনে রাখতে হবে এই দেশের রাজনীতি গণমানুষের জন্য। মানুষ একটি শান্তিপূর্ণ দেশ চায় বলেই ৩০ লাখ শহীদ প্রাণ দিয়েছিলেন। এই সেই ডিসেম্বর মাস- যে মাস আমাদের বিজয়ের। এই মাস আমাদের মহান বুদ্ধিজীবীদের হারানোর মাস।

বাঙালি জাতি পশ্চিমা হায়েনাদের হটিয়েছে। আজ এই কালোশক্তিকেও রুখে দেবে। আবারো বলি, প্রয়োজনে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হোক। খেটে খাওয়া মানুষেরা আর এই লাশের ভার বইতে পারছেন না। তাদের মুক্তি দেয়া হোক।

যারা এই হীন কর্মকা-ের মদতদাতা- তাদের বিচারের কাটগড়ায় দাঁড় করানো হোক। আমরা যে বিজয়ের বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, সেই বিজয়ের চেতনায়ই উদ্বুদ্ধ হোক আজকের প্রজন্ম। --------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১৩

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।