আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীল শেয়ালের গল্প

যা দেখি,শুনি,অনুভব করি, আমি স্বপ্নি। তাই গল্পে রুপ দিতে চাই...............

এক জঙ্গলে খুবই ধূর্ত একটা শেয়াল ছিল। অন্যান্য শেয়ালদের মত অক্লান্ত পরিশ্রম করে জঙ্গলে খাবার সংগ্রহ করাটা তার কাছে ছিল রীতিমত বিরক্তিকর। আর তাই খাবারের খোঁজে প্রায়ই সে জঙ্গলের পাশের গ্রামগুলোতে রাতের বেলা হানা দিয়ে কৃষকদের হাঁস মুরগী চুরি করে ধরে নিয়ে যেত। অন্যান্য দিনের মত, একদিন রাতে সে আবারো গ্রামের এক রঙ ওয়ালার বাড়িতে হানা দেয়।

শেয়ালের এমন কর্মকান্ডে অতিষ্ট, ওৎ পেতে থাকা রঙ ওয়ালা শেয়ালকে প্রচন্ড রকম দৌড়ানি দেয়। দৌড়ানি খেয়ে চতুর শেয়াল গিয়ে পড়ে রঙ ওয়ালার নীল রঙের খালে (যেখানে রঙ গোলানো হয়)। পরিস্থিতি শান্ত হলে খাল থেকে উঠে শেয়াল দেখে তার পুরো গায়ের রঙ নীল হয়ে গেছে। মনের দুঃখে সে জঙ্গলের পথে হাটতে থাকে, আর ভাবতে থাকে, শরীরের এই রঙ নিয়ে সে আবার কিভাবে তার শেয়াল সম্প্রদায়ের কাছে ফেরত যাবে, যদি তারা তাকে অস্বীকার করে। হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।

সে সোজা জঙ্গলে গিয়ে, জঙ্গলের সকল পশুদের (বাঘ, সিংহ, ভল্লুক, উল্লুক, শেয়াল, বিড়াল ও অন্যান্য) ডাক দিয়ে একটা জরুরী সভার আয়োজন করে। সভায় উপস্থিত সকলে বিচিত্র এই প্রানীটিকে দেখে যার পরনাই হতবাক হয়ে যায়। চালাক শেয়াল সকলের উদ্দেশ্যে বলতে থাকে, আমাকে দেখে অবাক হবার কিছুই নাই। আমি ঈশ্বর প্রদত্ত একজন। ঈশ্বর আমাকে পাঠিয়েছেন, এই জঙ্গলের দায়িত্ব গ্রহন করার জন্য।

আর তাই আমি সবার থেকে আলাদা এবং উন্নত। সকলে ধূর্ত শেয়ালের কথা মেনে নেয় এবং শেয়ালকে জঙ্গলের রাজা মনোনীত করে। রাজা হবার পর শেয়ালের আর খাবার দাবারের কোন সমস্যা হয় না, তাকে খাবার সংগ্রহ করতে যেতে হয় না, শুধু সে বসে বসে হুকুম করত আর চলে আসত খাবার। কিন্তু সব থেকে বেশি সমস্যা হতে থাকে জঙ্গলে থাকা বাকী শেয়ালদের। নীল শেয়ালের অত্যাচারে তারা জঙ্গলে টিকতে পারছিল না।

কথায় কথায় তাদের উপর নেমে আসত রাজার নানা অবিচার, অত্যাচার। হঠাত একদিন বুড়ো শেয়াল, জঙ্গলের বাকী শেয়ালদের মিটিং ডাকে। মিটিং এ বুড়ো শেয়াল বলে যে, এই রাজা আসলে ঈশ্বর প্রদত্ত কেউ নয়। এটাও আমাদের মত একটা শেয়াল, শুধু তার গায়ের রঙ নীল তোমরা কি তা এতদিনেও বুঝতে পার নাই। বাকী শেয়ালেরা নিজের সাথে রাজাকে মেলাতে থাকে।

তারা সমস্বরে বলে উঠে কথা সত্য, রাজা আর কেউ নয় সেও আমাদের মত একটা শেয়াল। এখন আসে, ধরে দেয়ার পালা। কিভাবে শেয়ালের চতুরতা, জঙ্গলের আগের রাজাদের কাছে ধরে দেয়া হবে? অবশেষে ল্যাংড়া শেয়াল প্রস্তাব করে আমরা সকলে মিলে সমস্বরে ‘হুক্কা হুয়া’ ডেকে উঠব, সে সত্যি শেয়াল হলে অবশ্যই প্রতি উত্তর করবে। শেয়ালেরা সমস্বরে ডেকে উঠে ‘হুক্কা হুয়া’। ‘হুক্কা হুয়া’ ডাক নীল শেয়ালের কানে যায়, খুব কষ্ট করে সে প্রতি উত্তর করা থেকে নিজেকে বিরত রাখে।

পরের দিন আবারো শেয়ালেরা ‘হুক্কা হুয়া’ ডাক দেয়, আবারো খুব কষ্টে প্রতি উত্তর দেয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখে নীল শেয়াল। এভাবে নয় দিন জঙ্গলের শেয়ালেরা ডাক দেয়, কিন্তু নীল শেয়াল নিজেকে বিরত রাখে। দশম দিনে বাকী শেয়ালেরা যখন আবারো ‘হুক্কা হুয়া’ ডাক দেয়, তখন ধুর্ত নীল শেয়াল থাকতে না পেরে ডেকে উঠে ‘ক্যায়া হুয়া’.............

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।