পদোন্নতি ও পদায়নের দাবিতে সরব হওয়ার পরিকল্পনা করছেন দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি না পাওয়া জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাঁরা বর্তমান সরকারের আমলের পুরোটা সময় বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হয়ে আছেন।
পদোন্নতিবঞ্চিত এই ওএসডি কর্মকর্তারা সংখ্যায় এক হাজারের বেশি। তাঁদের কয়েকজন প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের কাছে নিজেদের দাবি তুলে ধরে ন্যায়বিচার চাইবেন। এর পরও দাবি মানা না হলে গণপদত্যাগ করে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করবেন।
দাবি আদায়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁদের।
প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, এসব কর্মকর্তার বেশির ভাগ ‘বিএনপি-জামায়াত সমর্থক’ হিসেবে পরিচিত। তাঁদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ছয় শ কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়নি গত পাঁচ বছরে। আর প্রায় ৪০০ কর্মকর্তাকে ওএসডি ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্তি করে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ কাজ না দিয়ে বসিয়ে রেখে বেতন দেওয়া হচ্ছে তাঁদের।
কয়েকজন মন্ত্রী-সচিবের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব কর্মকর্তা সচিবালয়ে জড়ো হয়ে আন্দোলন করার পরিকল্পনা করছেন বলে সরকারের কাছে খবর আছে। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে তাঁরা সভা-সমাবেশ করে সচিবালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারেন।
এ অবস্থায় সচিবালয়ের নিরাপত্তা জোরদার করতে গত বৃহস্পতিবার জরুরি বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ইতিমধ্যে সচিবালয়ের গ্রন্থাগার, ক্যান্টিনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
সরকারের একটি সূত্রের দাবি, এই কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও করেছেন।
তবে বৈঠকের কথা অস্বীকার করে ওএসডি কর্মকর্তা বিজন কান্তি সরকার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আমাদের অধিকার আদায় করতেই সংশ্লিষ্ট সচিবদের কাছে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি, আগেও তাঁদের কাছে গিয়েছি। অন্যায়ভাবে এত দিন আমাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। ওএসডি করে রাখা হয়েছে। ’ তিনি মনে করেন, নির্বাচন সামনে রেখে নিরপেক্ষ প্রশাসন গড়তে হলে তাঁদের পদোন্নতি দিতেই হবে। ১৯৮২ ব্যাচের যুগ্ম সচিব বিজন কান্তি সাত বছর ধরে ওএসডি রয়েছেন।
সূত্রমতে, বর্তমান সরকারের আমলে উপসচিব থেকে সচিব পর্যায়ে যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, ততবার প্রতিটি পদোন্নতির ক্ষেত্রে সমসংখ্যক কর্মকর্তাকে দলীয় বিবেচনায় বঞ্চিত করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। এবার পদোন্নতিবঞ্চিতদের সংখ্যাটা বেশি।
বিগত বিএনপি সরকারের সময় যেসব কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই পদোন্নতি পাননি। আবার কোনো দলের পক্ষে নন, এমন নিরীহ কর্মকর্তারাও পদোন্নতি থেকে বাদ পড়েছেন।
এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করতে ব্যাপক রদবদল করা হতো এবং পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতিও দেওয়া হতো।
ওএসডি থাকা একজন যুগ্ম সচিব জানান, তিনি জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনারসহ প্রশাসনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। প্রশাসনে তাঁকে নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। তবু তাঁকে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। আরেক কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের গাড়ি কেনার জন্য ঋণ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি, বিদেশে পড়তে যেতে দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মোশাররাফ হোসাইন ভূঞা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে জনপ্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, পদ না থাকায় পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। আর দলীয় বিবেচনায় কাউকে ওএসডি করা হয়নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।