এসব বিষয় নিয়ে লেখার ক্ষেত্রে নিয়ম হল প্রথমে নিজে কোন পক্ষে সেটি পরিষ্কার করে দেয়া। না হলে ট্যাগিং শুরু করে দেযা হয়। আমার ট্যাগড হতে সমস্যা নেই। কিন্তু অর্ধেক লোক যদি আমাকে ট্যাগ করে 'ক', আর বাকি অর্ধেক লোক যদি আমাকে ট্যাগ করে দেয় '-ক' তাহলে তো কাটাকুটি হয়ে সবার সময়ই নষ্ট। ট্যাগবাজদের সময় বাঁচানোর জন্য তাই আমি কোন পক্ষে তা আগেই বলে দিচ্ছি।
রামপালের ব্যাপারে আমি এখনও বিপক্ষে কারণ যে তিনজন বিশেষজ্ঞ এটির পক্ষে লিখেছেন তাদের মধ্যে একজন নিজেই আবার ঠিক হওয়ার শর্ত হিসেবে তিনটি পর্যায়ে তিনটি মনিটরিং কমিটির প্রস্তাব করেছেন যাদের নির্বাহী ক্ষমতা থাকবে। যেহেতু এই কমিটিগুলো করার ব্যাপারে এখনও আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা আসেনি কাজেই আমি এটার পক্ষে না। যদি আসে বিবেচনা করব। আমি টিকফা চুক্তিরও বিপক্ষে। আমার কাছে চুক্তিটি অস্বাভাবিকরকমের ব্ল্যাংকেট মনে হয়েছে।
আমার অপেশাদার ও অনভিজ্ঞ মস্তিষ্ক বলে আমাদের বৈদেশিক চুক্তিগুলো হওয়া উচিৎ পণ্যভিত্তিক বা সেক্টরভিত্তিক এবং স্বল্পমেয়াদী যাতে করে নিয়মিত রিভিউ করা যায়।
আমি এই ব্যাপারটির নাম দিয়েছি 'রামপাল বুকলেট সিনড্রোম '। জাতীয় কমিটি যে রামপাল বুকলেটটি প্রকাশ করেছে তার সবচেয়ে যন্ত্রনাদায়ক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর কোন তথ্যপুঞ্জি বা বিবলিওগ্রাফী নেই। এই কারণে অনেক দাবী যেগুলোর কোন ব্যাখ্যা নেই তা স্বাধীনভাবে যাচাই করার কোন সুযোগ নেই। যেহেতু বুকলেটে তাদের বিশেষজ্ঞদের নাম উল্লেখ নেই আপনাকে বার বার প্রশ্নগুলো নিয়ে তাদের মুখপাত্র যেমন কল্লোল মুস্তফা বা আনু মুহম্মদদের কাছে যেতে হবে।
যদি তারা আপনার কোন প্রশ্নের উত্তর না দেয় তাহলে কিছু করার নেই।
আপনি কোন কিছুর বিরোধিতা করবেন - আপনার বিরোধিতাতে নিশ্চয়ই অনেক ভাল ভাল বক্তব্য থাকবে যেগুলো যাচাই করা যাবে, যার তথ্যসূত্র থাকবে এবং যেগুলোকে স্বাধীন বিশ্লেষণ ও পরিসংখ্যান সমর্থন করবে। এগুলোই তো আপনার অবস্থানের পক্ষে যথেষ্ট হওয়ার কথা!
সেই বিরোধিতার মেনিফেস্টোতে এমন কোন বিষয় কেন ঢুকিয়ে দিবেন যেটির কোন তথ্যসূত্র থাকবে না? আপনাকে অনুরোধ করলেও দিতে পারবেন না। তার ফাঁকে ফাঁকে এমন কিছু কেন থাকবে যার কোন ব্যাখ্যা নেই? অথবা কেন প্রাসংগিক একটি ব্যাপার যেটি না থাকার কারণে আপনার বিরোধী অবস্থানটি অস্পষ্ট থেকে যাচ্ছে সেটি নেই? অথবা প্রশ্ন করার পরও কেন সেই ব্যাপারটির কোন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন না?
কোন খারাপ জিনিসের কেবল বিরোধিতা করাই যথেষ্ট নয়। আপনার সেই বিরোধিতার দফাগুলো যদি নিখুঁত না হয়, যদি অস্পষ্ট হয় তাহলে সেটি আপনার অবস্থানকেই দুর্বল করে দেয়।
তার উপর যারা সেই খারাপ কাজটি (অন্তত আপনার দৃষ্টিতে খারাপ) করতে চাচ্ছে তারা আপনার এই দুর্বলতাকে তাদের নিজেদের নৈতিক ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করে।
দুইটি উদাহরণ দেই:
রামপাল বিরোধিতার পাটিগণিতে মংলা বন্দরের অনুপস্থিতি
আমি যখন রামপাল নিয়ে লেখা জাতীয় কমিটির বুকলেটটি পড়া শুরু করি তখন কল্লোল মুস্তফার সাথে আমার দীর্ঘ আলাপ হয় যেটির সমাপ্তি ঘটে আমার কিছু প্রশ্ন উত্তরহীন থেকে যাওয়ার মাধ্যমে। প্রায় আড়াইশো কমেন্ট তার মধ্যে আবার বেশ কিছু হল আমার বন্ধুবান্ধব আমাকে আওয়ামী লীগের দালাল ধরে নিয়ে বোকার মত চিৎকার চেঁচামেচি। এর মধ্যে খুঁজে নিতে পারলে ভাল, না হলে আমি এখানে আবার বলে দেই। প্রস্তাবিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে যখন বলা হয় সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে তখন আমরা আসলে কি ধরণের টাইমলাইন নিয়ে কথা বলছি? এটি কি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার ৫০ বছরের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে? নাকি ১০০ বছরের মধ্যে? নাকি ৫০০ বছর? নাকি ১০০০ বছর? ধ্বংস হওয়ার সংজ্ঞাটি কি? বুকলেটে বলা হয়েছে আমাদের সুন্দরবন বলে কিছু থাকবে না, থাকবে শুধু ভারতের অংশটুকু।
জীববৈচিত্র্য ও দূষণের ব্যাপারে রামপাল ও মংলা বন্দরের মধ্যে কিছু ওভারল্যাপ আছে। তার উপর মংলা বন্দর আরও নিকটে। তাহলে মংলা বন্দরের ব্যাপারে জাতীয় কমিটির অবস্থান কি? মংলা বন্দরের কারণে তাহলে সুন্দরবন কতদিনে ধ্বংস হবে? আমরা যদি রামপাল ঠেকিয়ে দেই তাহলে আমরা এর বিনিময়ে কত বছর গেইন করলাম? এ ধরনের কথা বললে একটি সাধারণ প্রত্যুত্তর হল যদি এক দশকও বেশি গেইন করা যায় সেটি কি আমাদের জন্য ভাল নয়? সেক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হল নিশ্চয়ই ভাল কিন্তু আমি নিশ্চিত হতে চাচ্ছি এটি কি এক দশকই? সেই সংখ্যার পিছনের উৎস সেই গবেষণাটি কোথায়? পরিসংখ্যানটি কি? বিশ্লেষণ কি? বুকলেটের অল্প কয়েক ফর্মার মধ্যে না দেয়া গেলে তথ্যসূত্রটি তো দেয়া যেতে পারত। যদি তাও না পারেন তাহলে প্রশ্ন করার পর উত্তর তো দিতে পারতেন!
টিকফা চুক্তির বিরোধিতায় সফটওয়্যারশিল্পের ধ্বংস হওয়ার আশংকা
একই ভাবে প্রথম আলোতে আনু মুহাম্মদ যখন টিকফা চুক্তি নিয়ে লিখলেন তখন আমি আবিষ্কার করলাম সেই লেখায় টিকফা চুক্তির ধারাভিত্তিক কোন বিশ্লেষণ নেই। তো আমি অনুরোধ করলাম যদি এ নিয়ে কোন ধারাভিত্তিক বিশ্লেষণ থাকে যার বিবলিওগ্রাফী আছে তাহলে আমাকে যেন ওনারা কষ্ট করে দেন।
কল্লোল মুস্তফা আমাকে তার নিজের একটি লেখা দিলেন যেটি যথারীতি 'রামপাল বুকলেট সিনড্রোমে' আক্রান্ত। একজায়গায় দাবী করা হয়েছে টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে 'সফটওয়্যার শিল্প দেউলিয়া হয়ে যাবে'। যথারীতি লেখায় কোন তথ্যসূত্র নেই। কোন উদাহরণ নেই টিকফা স্বাক্ষরের ফলে কোন কোন দেশে সফটওয়্যার শিল্প দেউলিয়া হয়ে গেছে। সফটওয়্যার শিল্পে প্রভাব পড়া এক জিনিস আর দেউলিয়া হওয়া অন্য জিনিস।
দেউলিয়া হওয়া মানে যে প্রভাব পড়বে তা সামাল দেয়ার সক্ষমতা আমাদের সফটওয়্যার শিল্পের এখনও হয় নি। এ ধরণের একটি সুনির্দিষ্ট দাবীর পিছনের যে গবেষণা, পরিসংখ্যান, বিশ্লেষণ থাকার কথা সেটি লেখাতে যথারীতি অনুপস্থিত। তারপর ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে অনুরোধ করার পরও সেই তথ্যসূত্র পাওয়া যায় নি।
একটি জিনিস আবারও স্মরণ করিয়ে দেই সুন্দরবনের উপর প্রভাব পড়বে কিনা আর সফটওয়্যার শিল্পের উপর প্রভাব পড়বে কিনা সেটি কমনসেন্স দিয়েই বলে দেয়া যায়। কিন্তু কতটুকু প্রভাব পড়বে, সেটি কি গ্রহণযোগ্য সময়ের উপর কাটিয়ে উঠার সক্ষমতা আছে কিনা নাকি ধ্বংস হওয়ার মত সেটি কিন্তু পরিমাপের বিষয়।
এই পরিমাপ হল গবেষণা, পরিসংখ্যান আর বিশ্লেষণের ফলাফল। দাবী যদি করেন তাহলে সেটির পিছনের গবেষণার তথ্যসূত্রটি যোগ করতে অসুবিধা কোথায়? যে দাবীর তথ্যসূত্র বার বার অনুরোধ করলেও দিতে পারবেন না সেই দাবী করার দরকারটি কি?
একটি জিনিস বাংলাদেশের সব অ্যাকটিভিস্টের স্মরণ রাখা জরুরী। এটি ২০১৩ সাল। কোন দাবী করলেই প্রথমেই ঘন্টাতেই কয়েক হাজার গুগল সার্চ হয়ে যায় শুধুমাত্র আপনার দাবীটি সঠিক কিনা যাচাই করার জন্য। গুগল বন্ধ হয়ে গেলেও কিন্তু কোন সমস্যা নেই আমাদের কিন্তু পিপীলিকা আছে!
[লেখা শেষ।
ট্যাগবাজরা ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন!]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।