সিমকি ভাবী ফোনের ওই প্রান্ত থেকে প্রায় চ্যাঁচিয়েই উঠলেন এবার, ‘... উফফ, ভাবী- তারপর যা হলো যদি দেখতেন ! আমি তো বারান্দাতেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। গুলি শুরু হওয়া মাত্রই অবশ্য চলে গেলাম ভেতরে। দোতলার জানালার ফাঁক দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখলাম পুরোটা। একটা গার্ডও বাঁচেনি ভাবী, মুক্তিবাহিনী সবগুলোকে শেষ করেছে ! ...’
জাহানারা ইমাম ফোনের এই প্রান্তে নীরবে হাসলেন। ঢাকা শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের অপারেশন এখন আর কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও বোমা ফাটছে- এক দুইজন খানসেনা মারা যাচ্ছে।
গ্রেনেড আর হালকা কিছু অস্ত্রের সাথে অনিঃশেষ সাহস আর দেশপ্রেমে ভর করে বাচ্চা কিছু ছেলে যেন স্পর্ধিত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছে পাকিস্তানিদের- দেখি, পারলে আটকাওতো আমাদের !
সিমকি ভাবীকে জাহানারা ইমাম চেনেন বহু আগে থেকেই। তার ছেলে তূর্যও তো বেশ নামডাক করেছে ফুটবল খেলে, সালাউদ্দিন নামেই স্টেডিয়াম পাড়ায় এক নামে পরিচিত সে। তূর্য নাকি এখন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সাথে খেলে বেড়াচ্ছে। তা এই তূর্যদের বাসার সামনেই সেদিন এক দারুণ গেরিলা অপারেশন দেখে ফেলেছেন সিমকি ভাবী। ফোন করে এতো উচ্ছ্বাস নিয়ে বলছিলেন সেটার কথাই।
ফোনের আলাপ শেষ করে জাহানারা ইমাম নিচে নেমে এলেন। গ্রাম থেকে হাফিজ এসেছে। সে অপেক্ষা করছে রুমীর জন্যে। আর রুমী এদিকে সকাল বেলাতেই বেরিয়েছে কোথায় যেন, দুপুরে নাকি কী মিটিং আছে ওদের। ... হ্যাঁ, কয়েকদিন হলো রুমী ঢাকাতেই থাকছে।
সিমকি ফোনে ২৫শে আগস্টের অ্যাকশনের কথা বলছিলো। এর আগে ঢাকায় যত গেরিলা অপারেশন হয়েছে, সবগুলোর বর্ণনা লোকমুখে শুনেছেন জাহানারা ইমাম। আর এবার সরাসরি শুনেছেন গেরিলাদের মুখে, রুমীরাই তো করে এসেছে অপারেশনটা ! জাহানারা ইমামের গর্ব ভেতরে ভেতরে খুব হচ্ছে ছেলের জন্যে, ছেলের বন্ধুদের জন্যে। তবে একটা অসুবিধাও হচ্ছে এবার তার। গেরিলাদের গল্প করার সময় নিজের কোনো অনুমান যোগ করতে পারছেন না জাহানারা ইমাম, যদি কেউ সন্দেহ করে ফেলে !
২৫ তারিখের অপারেশনটার কথা ছেলেদের মুখে শুনতে শুনতে একরকম মুখস্থই হয়ে গেছে জাহানারা ইমামের।
সেদিন কালোরাত ২৫শে মার্চের পাঁচ মাস হবে। বদি, হাবিবুল আলম, শাহাদাত, স্বপন, হ্যারিস, রুমী- ওরা সবাই মিলে ঠিক করে, এই ২৫ তারিখেই পাকিস্তানিদের মনে রাখার মতো একটা দাগা দিতে হবে। হ্যারিস, জিয়া, মুক্তার, আনু- সাথে আরো দুটা ছেলে চলে যায় রাজারবাগ পুলিশলাইনের দিকে। আর হাবিবুল আলম, কাজী, রুমি, বদি, স্বপন, সেলিম- এরা ঠিক করে ধানমন্ডির দিকে অপারেশন চালাবে। ২০ নম্বর রোডে এক চাইনিজ ডিপ্লোম্যাট আর ১৮ নাম্বার রোডে এক ব্রিগেডিয়ারের বাড়ি রেকি করে এসেছে ওরা।
ওখানে প্রতিদিনই প্রায় সাত আটজন পাকিস্তানি মিলিটারি পুলিশ পাহারা দেয়। রুমীদের টার্গেট ছিলো ওই মিলিটারিরা।
হাবিবুল আলমেরা ধানমন্ডি চার নম্বর রোড থেকে একটা মাজদা গাড়ি হাইজ্যাক করে প্রথমে। সে এক মজার ব্যাপার, কারণ গাড়ির কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেলো সেটা আবুল মনসুর আহমেদের বড় ছেলে মাহবুব আনামের গাড়ি। অর্থাৎ, তাদের পরিচিত মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজ আনামের বড় ভাই যিনি।
তা এই নিয়ে খানিক হাসাহাসিও হলো।
মূল অপারেশন আরম্ভ হলো সাড়ে সাতটা নাগাদ, সন্ধ্যার আলোছায়া মিলিয়ে অন্ধকার নামার পর। হাবিবুল আলম গাড়ি চালাচ্ছিলো, আর তার পাশে বসেছিলো সেলিম ও কাজী। পেছনের সিটে মাঝে রুমী, দুই পাশে স্বপন আর বদি। প্রথমেই ওরা যায় চীনা ডিপ্লোম্যাটটির বাসার সামনে।
সেখানে গিয়ে ওদের হতাশ হতে হয়- কারণ সেদিন বাসার পাহারায় কোন মিলিটারিকেই দেখা যায়নি। হতাশ হয়ে ছেলেরা ঠিক করে, এবার তাহলে ধানমন্ডি ১৮ নম্বরেই যাবে ওরা।
১৮ নম্বরে ব্রিগেডিয়ারের বাড়ির সামনে দিয়ে গাড়ির গতি কমিয়ে ওরা দেখলো সাত-আটজন মিলিটারি বেশ গল্প করতে করতে আড্ডা দিচ্ছে। কমান্ডে থাকা হাবিবুল আলম ছেলেদের অপারেশনের জন্যে সময় বেঁধে দেয় তিন মিনিট, এরপর সে সাত মসজিদের মোড় থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে আসে।
দ্বিতীয়বার বাড়িটিকে ক্রস করতে গিয়েই গাড়ির ভেতর থেকে হাবিবুল আলমের ‘ফায়ার’ ডাকের সাথে সাথে বদি আর কাজীর স্টেনগান দুই লেভেলে গুলি ছুঁড়লো।
বদি টার্গেট করেছিলো পেট, আর কাজী বুকের দিকে। ব্যাস, খতম ! কিছু বুঝে ওঠার আগেই শেষ মিলিটারিগুলো !
তবে অ্যাকশনের এরপরেও বাকি ছিলো অনেকটাই। ধানমন্ডির মাঝদিয়ে এদিক-সেদিক ঘুরে হাবিবুল আলম যখন গাড়িকে নিয়ে মিরপুর রোডে ফেললো, দেখলো পাঁচ নম্বর রোডের সামনে থেকে মিলিটারি চেকপোস্ট বসে গেছে- লম্বা লাইন সেখানে। এর একটা অর্থ, ১৮ নম্বরের ঘটনা ছড়িয়ে গেছে এতোক্ষণে। রাস্তায় ব্যারিকেড।
রুমীরা খেয়াল করে, রাস্তায় মাটির উপরেও এল-এম-জি নিয়ে সতর্ক শুয়ে আছে দুইজন গার্ড। হাবিবুল আলম ইনডিকেটরে ডান দিকে টার্ন নেবার সিগন্যাল দিয়ে সামান্য ডানে ঘুরবার ভান করতেই দাঁড়ানো মিলিটারিদের একজন ওদের গাল দিয়ে বলে, ‘কিধার যাতা হ্যায় ?’
সেই মুহুর্তেই হাবিবুল আলম গাড়ি ঘুরিয়ে ফেলে বাঁ দিকে, আর চাপা গলায় রুমীর ‘ফায়ার’ চীৎকারের সাথে স্বপন আর বদি গুলি করে। এল-এম-জি নিয়ে শুয়ে থাকা গার্ড দুইজন শেষ সাথে সাথেই, বাকিদের হতচকিত ভাব কাটবার আগেই গেরিলারা ঢুঁকে পড়ে পাঁচ নম্বর রোডে।
মিলিটারিরা কিন্তু এরপরেও হাল ছাড়েনি। পাঁচ নম্বর দিয়ে গ্রীন রোডে যখন প্রায় পৌঁছে গেছে মাজদা, ঠিক তখনি রুমীই খেয়াল করে ব্যাপারটা।
‘লুক, লুক! আ জীপ ইজ ফলোয়িং আস !’
রুমীকে বলে দিতে হয় না, চোখের পলকে সিনেমার মতন স্টেনের বাঁট দিয়ে গাড়ির পেছনের কাঁচ ভেঙে ফেলে সে- আর শুরু করে গুলি ছুঁড়তে। দুই পাশের জানালা দিয়ে বদি আর স্বপনও যোগ দেয় সাথে। ওদের নিশানা ব্যর্থ হয়নি, জীপের ড্রাইভার মারা পড়ে প্রথম চোটেই। জীপটা গিয়ে ধাক্কা খায় ল্যাম্পপোস্টে, উলটে পড়ে সাথে সাথেই।
এই অ্যাকশনের কথাই মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে সারা ঢাকায়।
ফোনের সিমকি ভাবী থেকে শুরু করে বাসায় বেড়াতে আসা ফকির বা মোর্তুজা- এরা সবাই খুব আত্নতৃপ্তি নিয়ে বলছে, ‘এরা তো মানুষ না ভাবী- এরা হলো জ্বিন ! চোখের সামনে দিয়ে না হলে এরকম কেউ উধাও হয়ে যেতে পারে ?’
জাহানারা ইমামকেও চোখ বড় বড় করে বলতে হচ্ছে, ‘নাহ, বিচ্ছুগুলোর সাহস আছে বলতে হবে, এরকম বেপরোয়া কাণ্ড কীভাবে করে নইলে !!’
... রুমী বাসায় এলো সন্ধ্যারও পরে। হাফিজকে দেখে সে মহা খুশি- তাকে ছাদের ঘরে নিয়ে গেলো কথা বলবে বলে। রাত ন”টার দিকে খেতে বসে সবাই। সাইড টেবিলের রেডিওর কলকাতা স্টেশন থেকে ভেসে আসে একের পর এক বাংলা গান। ওদের কানে আসে খুদিরামের সেই গান- একবার বিদায় দে মা, ঘুরে আসি ...।
রুমী বলে, ‘কী আশ্চর্য আম্মা ! দুপুরেই এই গানটা একবার শুনলাম আজকে, আবার এখন বাজছে ! কপালে কী আছে আল্লায় জানে !’
জাহানারা ইমাম মৃদু ধমক দেন রুমীকে- ‘অ্যাই, অলুক্ষুনে কথা একদম বলবি না। ... তুই বরং ভর্তাটা আরেকবার নে। ’
খাওয়ার পরে রুমীর আবদার ধরে বসে। ‘আম্মা, মাথাটা দপদপ করছে। একটু টিপে দাও না !’
যুদ্ধ শুরুর আগে মায়ের আদরের ভাগ নিতে বেশ মধুর একটা ঝগড়া করতো রুমী আর জামী।
এখন জামী আর সেদিকে যায় না। ‘আমার ভাগেরটা এই কয়েকদিন ভাইয়াকেই দাও!’, খুব উদারতার সাথে এই মন্তব্য করেছে সে কয়দিন আগে।
রুমীর ঘরে জিম রিভসের রেকর্ড বাজতে থাকে। জাহানারা ইমাম রুমীর মাথার কাছে বসে চুলে নিলি কাটতে থাকেন। জিম রিভস গান গাইতে গাইতে থেমে যান একসময়, জাহানারা ইমাম বলেন-‘কী গান যে শুনিস, কথা তো কিছুই বুঝি না !’
উঠে গিয়ে রুমী আরেকটা রেকর্ড লাগায়।
মায়ের আদর পেতে আবার বিছানায় শুয়ে বলে, ‘আম্মা- এই গানটা শোনো মন দিয়ে। কথাগুলো খুব সুন্দর। ’
ঘরের ভেতর ভাসতে থাকে টম জোনসের গলা। গ্রিন গ্রিন গ্রাস। রুমীর খুব প্রিয় গান এটা, প্রায়ই বাজায় সে।
জাহানারা ইমামেরও শুনতে শুনতে সুরটা মুখস্থ হয়ে গেছে। যদিও কথাগুলো বিশেষ ভালো বোঝেন না তিনি।
তিন মিনিটের গানটা শেষটা হয়ে যাবার পর রুমী মুখ খুলে। সে কথা বলে থেমে থেমে। গলা শুনে মনে হয়, কেউ যেন বহু দূর থেকে কথা বলছে ফিসফিস করে।
‘গানটা কী বলছে জানো আম্মা ?...
এক ফাঁসির আসামী তার গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসেছে। ট্রেন থেকে নেমে সে দেখে, তার বাবা আর তার প্রেমিকা ম্যারি এসেছে তাকে বাড়ি নিতে। সে দেখে, এতোদিনের বিরহেও তার প্রিয় ছোটবেলার গ্রামের বাড়িটাও একদম বদলায় নি, আগের মতোই আছে। সেই বাড়ির চারপাশে বাতাসে কী সুন্দর দুলছে সবুজ সবুজ ঘাস। লোকটার এতো ভালো লাগলো, কী যে সুন্দর সেই সবুজরঙা ঘাস! এরপর হাত বাড়িয়ে সে যেই ছুঁতে চাইলো সবুজ রংটাকে, তখনই সে চমকে দেখে তার হাত ঠেকেছে ধূসর রঙা পাথরে।
... লোকটা বুঝে যায় মা, সে আসলে শুয়ে আছে তার জেল কুঠুরীতে, সে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো...’
জাহানারা ইমাম কেমন অমঙ্গলের আশংকায় রুমীর মাথা বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘চুপ কর রুমী, চুপ কর !... এতো কম বয়স তোর রুমী, তুই এসব কথা বলছিস কেন- জীবনের কিছুই তো দেখলি না, পৃথিবীর কিছুই তো জানলি না !’
রুমী কেমন অদ্ভুত বেদনার এক হাসি দিয়ে বলে, ‘মা- বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন বলে একটা কথা আছে, জানো না ? ... আমি জীবনের পুরোটা তোমাদের মতো দেখিনি সত্যি। কিন্তু মা, জীবনের যত মাধুর্য- যত তিক্ততা, সবকিছুরই আমি স্বাদ পেয়েছি। চলে যেতে হলে আমি কোন আক্ষেপ নিয়ে যাবো না। ’
সত্যিই রুমী কোন আক্ষেপ নিয়ে গেলো না। ঘন্টা দুয়েক পরেই একদল মিলিটারি এসে ধরে নিয়ে যায় রুমী আর তার বাবা শরীফ ইমামকে।
শরীফ ইমাম ফিরে এসেছেন পরে, রুমী আর কখনো ফেরে নি জাহানারা ইমামের কাছে।
সেই রাতের শেষে মিলিটারি পুলিশ হানা দেয় ৩৭০, রাজারবাগের বাড়িটাতেও।
আলতাফ মাহমুদ তখন ঘুমোচ্ছিলেন স্ত্রী সারা আর মেয়ে শাওনকে নিয়ে। পাশের ঘরে ফজরের নামাজ শেষ করে তসবিহ জপছেন সারার মা, আর রেওয়াজ করছেন সারার ছোট বোন শিমূল বিল্লাহ- পরবর্তীতে যিনি পরিচিত হবেন শিমূল ইউসূফ নামে।
শিমূলের রেওয়াজের ফাঁকে জানালায় চোখ রাখতেই দেখেন ট্রাক ভর্তি মিলিটারি ঘেরাও করে ফেলেছে বাড়ি।
শিমূলের চীৎকারে গোটা বাড়ী জেগে ওঠে, মা নির্ভাবনায় হাত রাখেন কোরান শরীফে। মায়ের সরল বিশ্বাস ছিলো, তারা রক্ষা পাবেন সকল বিপদ থেকে।
শেষ রক্ষা হয় নি। পেছনের দরজা ভেঙে মিলিটারি ঘরে ঢোঁকে। আলতাফ মাহমুদ, সারার চার ভাই আর সারার ছোট মামা আবুল বারাক আলভীকে সারি বেঁধে দাঁড় করানো হয় ড্রইংরুমে।
‘ইধার আলতাফ মাহমুদ কৌন হ্যায় ?’
পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চির আলতাফ মাহমুদ এগিয়ে আসেন পুরু লেন্সের চশমা নিয়ে। সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি আর লুঙ্গি তার পরনে। অফিসারের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ঝিলু দ্যা গ্রেট বলেন, ‘আমি। আমিই আলতাফ মাহমুদ। ’
পর মুহূর্তেই বন্দুকের বাঁটের আঘাতে ঠোঁট কেটে যায় আলতাফ মাহমুদের।
তিনি সে অবস্থাতেই বলেন, ‘তোমরা যা খুঁজছো- তার খবর এরা কেউই জানে না। ধরতে হলে কেবল আমাকেই ধরো। ’
আলতাফ মাহমুদ চলে গেলেন উঠোনের লেবু গাছটার গোড়ায়। ক্র্যাক প্লাটুনের ছেলেদের জন্যে ঢাকায় এক দূর্গ হয়ে উঠেছিলো রাজারবাগের এই বাড়িটি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জন্যে এখান থেকেই ছেলেদের হাতে করে গানের টেপ পাঠিয়েছেন তিনি, তাদের অস্ত্র পর্যন্ত আলতাফ মাহমুদ লুকিয়ে রেখেছেন এই উঠোনে।
আলতাফ মাহমুদ বুঝে গেছেন, সেই অস্ত্রের খোঁজ পেয়েই এখানে আসা মিলিটারির। অস্ত্র না পেলে তারা হয়তো অত্যাচার করবে সবাইকেই, তিনি তা চান না।
একা একাই কোদাল হাতে মাটি খুঁড়ে অস্ত্র বোঝাই দুটো বড় ট্রাঙ্ক বের করলেন আলতাফ মাহমুদ। এর মাঝে বেয়নেট অজস্রবার আঘাত করেছে তার কপালে, সেখান থেকে চামড়া কেটে ঝুলছে। রক্তে ভেসে গেলো তার মুখ, সেটা কাদায় মাখামাখি।
আলতাফ মাহমুদ অস্ত্রের ট্রাঙ্ক বের করার কাজ শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন। পাকিস্তানি মেজরটির সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘নাও- তোমরা যা খুঁজছো, সব এখানেই আছে। এবার আমায় অ্যারেস্ট করে বাকিদের ছেড়ে দাও। ’
পরমুহুর্তেই প্রবল এক চড় খেয়ে আলতাফ মাহমুদ পড়ে গেলেন মাটিতে। মিলিটারির চড়ে তার চশমা অর্ধেক ভেঙে কোনক্রমে ঝুলে রইলো চোখে।
তাচ্ছিল্যের গলায় মেজরটি বললো, ‘বেহেনচোত বানগাল!’
ঝিলু দ্যা গ্রেট উঠে দাঁড়ালেন ধীরে ধীরে। এরপর, ভোরের ধোঁয়া ধোঁয়া আলোয় অদ্ভূত এক অপার্থিব দৃশ্যের জন্ম দিয়ে মেজরটিকে বললেন, ‘সুরের চেয়ে বেয়নেটের ক্ষমতা অনেক বেশি, তাই মনে হচ্ছে না মেজর সাহেব? ... আমার কী মনে হচ্ছে জানেন? মনে হচ্ছে, ইতিহাসে আপনার ঐ বেয়োনেটের কোনো জায়গা থাকবে না। সেখানে জায়গা থাকবে স্বাধীন বাংলাদেশের। ’
মেজরটি তীব্র চোখে আলতাফ মাহমুদের চোখে চেয়ে রইলেন। আধভাঙ্গা চশমার নিচের যে চোখজোড়ায় কোন আক্ষেপ ছিলো না।
রুমীর মতোই।
মা
থা উঁচু করে শিস বাজাতে বাজাতেই বাড়ির আঙ্গিনা থেকে শেষবারের মতো বেরিয়ে গেলেন আলতাফ মাহমুদ।
রুমী আর আলতাফ মাহমুদেরা জেল কুঠুরীর ধূসর সেলে নির্মম অত্যাচারের মাঝে স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের ফেরার, কিন্তু সেটা কখনো হয়ে ওঠেনি তাঁদের। ছোঁয়া হয়নি আটষট্টি হাজার গ্রামের গ্রিন গ্রিন গ্রাস।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।