গেন্দু মিয়ার চরিত্র – ফুলের মতন পবিত্র!
গতকালকে শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস ছিলো। টিভিতে দেখলাম শহীদদের আত্মীয় স্বজনেরা বলছেন যে, গত এবারেরটা গত সবগুলোর তুলনায় একটু ভিন্ন, একটু বেশি স্বস্তির। কারণ হচ্ছে, প্রথমবারের মত কিছুটা হলেও প্রতিশোধ নেয়া গিয়েছে। কিছুটা হলে ৪২ বছর আগে করা শহীদদের আত্মত্যাগকে কিছুটা হলেও সন্মান জানানো শুরু করা গিয়েছে বাংলার মাটিতে বাংলা মায়ের ধর্ষকদের উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে।
আমি জানি না এতে আমার খুশি হওয়া উচিৎ কিনা, আমার উল্লসিত হওয়া উচিৎ কিনা।
আমার পরিচিত সার্কেল গুলোতে সব নব্য বুদ্ধিজীবির অবস্থান। কেউ চিকিৎসক, কেউ প্রকৌশলী, কেউ গবেষক/বিজ্ঞানী, আবার কেউ বা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যা অর্জন করে কর্পোরেট চাকুরিজীবি। এদের অনেককেই পুরো ব্যাপারটাতে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার ষড়যন্ত্রটাকেই বেশি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। এটাতেও আমার ব্যক্তিগত ভাবে কোন আপত্তি নেই - আমার বিশ্বাস ধর্ম এবং রাজনীতির মতবাদ যার যার তার তার, যতক্ষন না বিশ্বাস বা মতবাদটি অন্য কারোর ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।
সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় যেটি, সেটি হচ্ছে একটা শ্রেণী পুরো মুক্তিযুদ্ধ এবং তার আদর্শ নিয়ে জাতি হিসেবে আমাদের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস পাচ্ছে।
এদের কথাবার্তা প্রায় এরকম - "মুক্তিযুদ্ধ তো আমাকে জিজ্ঞেস করে করা হয়নি। এটা নিয়ে আমার কোন অনুভূতি কেন থাকবে? আমি ইতিহাস জানি না, জানতে চাইও না। আমি শুধু 'আপাতত' শান্তি ও স্বস্তি চাই। ব্যাস!" এটি নিয়ে আমার প্রবল আপত্তি।
শৈশবে আমার ধারণা ছিলো মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে যার মত ইতিহাস বলে চলেছে জাগতিক মুনাফার আশায়, কিন্তু কিছু কিছু বিষয় নিয়ে মতভেদ থাকবে না, থাকতে পারে না।
যেমন - চিহ্নিত ও প্রতিষ্ঠিত অপরাধী এবং তাদের অপরাধ। কিন্তু, দেখা গেলো মতভেদ আছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোয় যে মেরুকরন হয়েছে তাতে ব্যাপারটা আরো নগ্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি এটা এতদিন জানলেও মানতাম না, তাই স্বস্তিতে ছিলাম। কিন্তু এখন কেন যেন সেই বাঁধটা ভেঙে গিয়েছে।
মুক্তমতের প্রকাশাধিকার অবশ্যই বাঞ্ছনীয়, কিন্তু ততক্ষনই যতক্ষন এটা সমগ্র জাতি সত্তার অস্তিত্ত্বের বিরুদ্ধে না যায়। ঠিক এজন্যই আমি টেলিভিশনে দেখা আনন্দের সাথে নিজের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতাকে মেলাতে পারলাম না।
আমার মনে হয় কোন রাজনৈতিক দল যদি মুক্তিযুদ্ধের আবেগ নিয়ে নোংরা খেলা খেলার চেষ্টা করে (এবং সফলকাম হয়) তাহলে দায়িত্বটা এসে বর্তায় আমাদের ওপর, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর ওপর। আমরাই ওদের সুযোগ দেই। আর যে জাতি তার গৌরবময় ইতিহাস নিয়ে, নিজ দেশের বীরদের নিয়ে, তাদের আত্মত্যাগ নিয়ে এহেন সংশয়ে থাকে, আমার কেন যেন মনে হয়, সে দেশে বীররা জন্ম নেয়া বন্ধ করে দেয়।
তবে একই সাথে যে কারণে এখনো দেশকে নিয়ে আশাবাদী হওয়া ছেড়ে দেইনি সেটি হচ্ছে মন্দের সাথে সাথে শুভশক্তিও খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসা শুরু করেছে। রাজনৈতিক ফায়দার আশা ছেড়ে দেশের জন্য কাজ করার মত জনশক্তি তৈরি হচ্ছে।
আমাদের বিজয় তখনই সম্পূর্ন হবে যখন দেশের প্রতিটি মানুষকে অন্তত কিছু মৌলিক বিষয়ে একমত করানো যাবে - যেই মৌলিক বিষয়গুলো ধ্রুব হবে, দলাদলির বাইরে থাকবে, আর যেগুলো জাতি হিসেবে আমাদের সত্তার পরিচায়ক হবে।
আজ ১৫ই ডিসেম্বর। মুক্ত স্বাধীন জাতি হিসেবে আগামীকাল আমরা আরো একটি বছরে পদার্পন করতে যাচ্ছি।
প্রকৃত বিজয়ের কাঁটা ভরা পথে চলতে গিয়ে আমরা হাল ছেড়ে দেবো না, যেমনটি দেয়নি নয় মাস ধরে আত্মত্যাগ করা আমাদের পূর্বপুরুষেরা, এই প্রত্যয় নিয়ে আর সবাইকে বিজয় দিবসের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখাটা শেষ করছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।