০১।
আজকে দিকে দিকে আলোর মিছিল দেখে মনে পড়ল, আলোর গল্পটা পুরো শেষ হয় নি। আগের পর্বে ইলেকট্রনের ওঠানামায় কি করে আলো বের হয়, কিংবা আলোর গুঁতোয় কি করে ইলেকট্রন (জামায়াত শিবিরের মত) দৌড়ের ওপর থাকে সেই গল্প শুনিয়েছিলাম। হেলাল হাফিজের “নিখুঁত স্ট্রাটেজী” ছিলঃ ‘পতন দিয়েই আজ ফেরাবো পতন। ’ দিনকাল যে পড়েছে, এমন নিখুঁত হতে প্রস্তুত থাকা দরকার।
যাহোক, আপাতত আমার স্ট্রাটেজি হল “আলোক দিয়েই আজ বাড়াব আলো” এই গল্প বলা। বিজ্ঞানের খটোমটো গল্প ভেবে এড়িয়ে যাবেন না যেন।
০২।
আজকের গল্পটা লেজারের। লেজারের নাম তো সবাই শুনেছেন আশাকরি।
এটা আসলে ইংরেজি একটা বাক্যের সংক্ষিপ্ত রূপ। L তে Light, A তে Amplification, S তে Stimulated, E তে Emission, R তে Radiation. Light Amplification by Stimulated Emission of Radiation এই হল LASER। অর্থাৎ, বোধগম্য বাংলায় বললে দাড়াঁয়ঃ আলো দিয়ে গুঁতিয়ে আরো বেশি আলো বের করা। তা এই লেজারও কোয়ান্টামের রাজ্যেরই ঘটনা। ছোট কালে কুয়াশা’র লেজারগানের কথা শুনে ভাবতাম আহা একখানা পেলে গোয়াযমের আর তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোদের মাথা আর ধড় টুকু রেখে ২ হাত, ২ পা, আর ২+১... (ইয়ে না কইলে হয়না? এইটুক কি তা কইতে শরম লাগে তো।
) এক্কবারে হাওয়া করে দিতাম। (ব্যাটা বাঁচবি না মানে? এরপর ৯০ বছর তোকে বাঁচতেই হবে। ) যাকগে, এট্টূ বড় হয়ে ভাবলাম এটা বুঝি ফিকশন। আরেট্টূ বড় হয়ে দেখি এ তো পুরাই সাইঞ্ছ। যাই হোক আনন্দ, জ্ঞানলাভ, জামাতপোন্দানি আর ভালবাসা একলা করতে হয়না, সবাইরে নিয়ে মিলে-মিশে ভাগ দিয়ে করতে হয়।
১ নাম্বারটা ১২ তারিখ একদফা হইছে, এখন রেস্ট নেই। ২ নাম্বারটা এখন করতে যাচ্ছি, জ্ঞান পকেটে রেখে লাভ নাইঃ বদলে দাও, থুক্কু- ছড়িয়ে দাও। ৩ নাম্বারটা চলমান, পাইলেই ঢুশুম। আর ৪ নাম্বার, হুমম... মানে... কিছু কথা থাক না গুপন (কপিরাইটঃ মতিকন্ঠ)।
০৩।
এমনিতে পরমাণুর একফ্লাট থেকে নিচের ফ্লাটে (খালি থাকা সাপেক্ষে) লাফিয়ে নামতে গেলেই বাড়তি শক্তিটুকু ফেরত দিতে হয় ইলকট্রনকে। এখন এই ফিরতি শক্তির ঢেউ নির্দিষ্ট একটা সীমার মাঝে থাকে তবে আমরা দেখি আলো। আলোড় মত এমন আরো অনেক অদৃশ্য (যেমন এক্সরশ্মির ঢেউ) ঢেউও বের হতে পারে। তবে এই সব ঢেউই বের হয় পুলিশের হাতে তাড়া খাওয়ার পর কাছা তুলে কিংবা খুলে দৌড় দেয়া ছত্রভঙ্গ শিবিরের মিছিলের মত। একেকজন একেকদিকে।
তাই এই আলোর শক্তিও থাকে কম। অন্যদিকে, লেজারের আলো বের হয় এক তালে পায়ে পা মিলিয়ে, বিজয় দিবস প্যারেডের মত কুচকাওয়াজ করতে করতে। তবে, এমনিতে নয়- গুঁতো দিলে তবেই।
০৪।
আমাদের কিছু বন্ধু ছিল- যারা এক মুহূর্তও একলা থাকার পাত্র নয়।
খেতে যাবে, বলবে- ‘দোস্ত, খিদা লাগছে, চল খাইগা। ’ ক্লাসে যাবে, বলবে- ‘দোস্ত, বেল দিছে, চল যাইগা। ’ (অনেকসময়, ত্যাগ করতে যাবে, তখনও অভ্যাসবশত বলে বসে- ‘দোস্ত, হাগা চাপছে, চল আসি হাইগা। ’) কি উপদ্রব রে বাবা। যা হোক, এই প্রজাতির এক সদস্য পোজপাজ মাইরা প্রাণসখীসমভিব্যাহারেপ্রেমময়বিহারে যাবার প্রাক্কালে আমিও একবার পৌনে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে বলছিলামঃ “দোস্ত, আয় একলগে যাইগা।
” বন্ধু ক্যান যে ক্ষেপে গেলো! কিছু মানুষ বড্ড অসহিষ্ণু হয়, কি আর করা। তবে লাভের মধ্যে লাভ, আর কখনো ঘুম ভাঙ্গিয়ে সদলে ভোগের কিংবা ত্যাগের দাওয়াত দেয়নি। তো, যা বলছিলাম- এমন বন্ধুবৎসল শক্তির টুকরো সমেত কিছু ইলেকট্রনও আছে। এরা ফ্লাটের বাইরে এক পা দিয়ে সেজেগুজে তৈরি হয়ে বসে থাকে- আয় যাইগা বলে ডাক দিলেই একযোগে ভোঁ। এই ঘটনা অবশ্য সব পদার্থের পরমাণুতে হয় না, বিশেষ কিছু পদার্থের পরমাণুতেই ঘটে; জানেন তো- সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি।
এখন শক্তির এই দু হরিহর আত্মার বন্ধু যখন হাতে হাত, চোখে চোখ, আরো অনেককিছুতে অনেককিছু রেখে তালে তাল মিলিয়ে যাত্রা করে- তখন শক্তি হয়ে গেলো কিন্তু দ্বিগুন। এরা যদি সামনে আরো এমন সঙ্গী পায়, তাদেরও গুঁতিয়ে বের করে দল ভারি করে। এবং বাড়তেই থাকে। ফলাফল হয় টুকরো টুকরো অনেকগুলো আলোর বিশাল এক সুশৃঙ্খল বাহিনী- এই বাহিনীর নামই লেজার রশ্মি।
০৫।
আমাদের সবচাইতে পরিচিত ও বহুল ব্যাবহৃত লেজার হল ‘রুবি লেজার’। চাবির রিং কিংবা লাইটারের সাথে অনেকের হাতে হাতেও এটি দেখা যায়। এর গঠন কিন্তু অলৌকিক কিছুনা, অতি সরল। এর দুপাশে থাকে দু’খানা আয়না। একটা পুরো বন্ধ, আরেকটা আধাখোলা।
এদের মাঝখানে থাকে একটুকরো রুবি, যাতে ইলেকট্রনদের ঝুলিয়ে রেখে দেয়ার ব্যাবস্থা হয়। প্রথমে বাইরের ‘ঠিক মাপমত’ একটুকরো আলোর গুতোঁয় কোনও এক বন্ধুবৎসল এক টুকরো আলো ছুটে আসে, কিন্তু ছুটে যাবেটা কোথায়? দুদিকেই তো আয়না। সেই আলোরা তখন এই দুই মুখোমুখি আয়নার মাঝে ড্রপ খেতে খেতে ভাগিয়ে আনে আরো অসংখ্য টুকরো আলোকে। যেহেতু রুবির ফ্লাটে বন্ধুবৎসল শক্তিওলা ইলেকট্রনেরা বসে রয়েছে- প্রতি চক্করেই নতুন নতুন শক্তিরা জমা হতে থাকে এই দলে। এভাবে জমতে জমতে একসময় আধাখোলা আয়নাটা দিয়ে বের হয়ে আসে কিছু বেয়াড়া আলোর টুকরো।
প্রযুক্তিবিদেরা এমনভাবেই তাদের মাপ ঠিক করে দেন যেন এই পর্যায়ে প্রতি চক্করে যতটুকু আলো বেশি হয় ঠিক ততটুকু বেরিয়ে যেতে পারে, আর বাকিটা আবার দ্বিগুন হবার চক্করে পড়ে। এরা ভেতরে ছুটোছুটি করে নতুন নতুন আলোকে রিক্রুট করতে থাকে। তারপর চলতেই থাকে চলতেই থাকে। (জামায়াতীরাও কিন্তু এই পদ্ধতিতে অন্ধকার বাড়িয়ে চলেছে নিরন্তর; প্রতিষেধক পাই বিজ্ঞানী নিউটনের কথায়- ‘আলো। আরও আলো’।
)
০৬।
এভাবে কদম মিলিয়ে চলায় এই আলোর শক্তি হয় অনেক বেশি, অনেক ঘন। এই আলো এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়েনা সহজে। আর সবগুলো টুকরোর শক্তিও আবার হয় একদম সমানে সমান। ফলাফল হয় নিখুঁতভাবে সুশৃঙ্খল একঝাঁক আলো।
একটুও না কমে ও না ছড়িয়ে এই আলো যেতে পারে মাইলের পর মাইল। নভোচারীরা চাঁদে একখানা পেল্লায় আয়না রেখে এসেছিলেন। (সাইদীর মুখ দেখার জন্য না অবশ্যই। ) পৃথিবী থেকে আলো পাঠিয়ে আর ফিরিয়ে এনে, আসতে যেতে কত সময় লাগে সেটুকু মেপে চাঁদটা আসলে ঠিক কতখানি দূরে সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেপে ফেলাটাই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু সাধারন আলো তো একটু খানি গেলেই পথ হারিয়ে ছাড়া গরুর মত এদিকওদিক ছড়িয়ে পড়ে।
তবে চাই অসাধারণ আলো- এই অসাধারণ আলোর কাজ করে দিয়েছিল লেজার। সুক্ষ্ণ ঝালাই আর কাটাকুটি ছাড়াই সুক্ষ্ণ অপারেশনের জাদু দেখায় লেজার। পুরু ইস্পাতের পাতে একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে ফুটো করে ফেলে লেজার। বন্দুক কিংবা ক্যামেরায় স্বয়ংক্রিয় ভাবে লক্ষ্যবস্তুর দুরত্ব মেপে দেয় লেজার। আর উদ্দাম কন্সার্টে লাল-সবুজ-নীল হরেক রঙের মনমাতানো কারুকাজ তো আছেই।
এমন নানা কাজের কাজী এই ঘন আলো। আমাদের জ্ঞানগুলোকেও কিন্তু ঠিক এই লেজারের কায়দায় বাড়িয়ে নিয়ে একতালে ছড়িয়ে দিতে হবে। না হলে একই পাল্টা স্ট্রাটেজিতে কেবল অন্ধকার বিবর্ধিত হয়ে ছড়িয়ে পড়বে শিবিরের ভুত থেকে ভুতে। আর শিবিরের ভুত কিন্তু যেনতেন ভুতও নয়, ‘ক্যাসপার দ্য ফ্রেন্ডলী গোউস্ট’ ও নয়। এ একেবারে মামদো ভুত, অতএব- সাধু সাবধান!
০৭।
গান শুনেছিলাম “আসছে ফাগুনে আমরা দ্বিগুন হবো”। ফাগুন পর্যন্ত অপেক্ষার সময় নেই। পৌষ শুরু হল আজ, এখনই দ্বিগুন, চতুর্গুন, বহুগুন হতে হবে। নইলে পরে, মেরুরাত্রির মত সুদীর্ঘ মাঘ মাসের হাতছানি দেখছি কিন্তু। আলো দিয়ে গুঁতিয়ে আরো আলো বের করুন।
আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দিন সবাইকে। তীব্র আলোয় দূর হয়ে যাক জামায়াত-শিবির নামের জ্বলন্ত অন্ধকার। বিজয় দিবস সমাগত। কবিগুরু বলে গিয়েছিলেন “যখনি দাঁড়াবে তুমি সম্মুখে তাহার তখনি সে, পথ কুক্কুরের মত সঙ্কোচে-সত্রাসে যাবে মিশে। ” এই কথা বিজয়ের মাসে প্রমাণ না হলে আর কবে হবে? বিজয় দিবসের আলোকিত শুভেচ্ছা সব মানুষকে (অবশ্যই, সব হোমোস্যাপিয়েন্সকে নয় )
পুনশ্চঃ
রিটন ভায়ের বিধি বাম দেখে বামপার ফলন হওয়া "বামাতি" দের জাতীয় পতাকা ডিজাইন করে ফেলার লোভ সামলাতে পারলাম না।
ওখানে কিভাবে যোগ করি বুঝতে না পেরে এখানেই জুড়ে দিলাম।
এই বামাতিদের থেকেও সাবধানে থাকুন, সাবধানে রাখুন। জামাতীরা হয়তোবা চেনা আছে, এরা কিন্ত চেনা নেই...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।