ফুটবলে বাংলাদেশের মান ও জনপ্রিয়তা দুটোই শূন্য কোঠায় নেমে এসেছে। এতটা খারাপ অবস্থা যে পুরস্কার ঘোষণা করেও গ্যালারিতে দর্শক মিলছে না। পুরো দেশ এখন ক্রিকেট বলতে পাগল। কিন্তু তাই বলে ফুটবল একেবারে হৃদয় থেকে মুছে যায়নি। বিশ্বকাপ এলেই প্রমাণ মিলে বাংলার মানুষ ফুটবলকে কতটা ভালোবাসে।
১২ জুন থেকে দুনিয়া কাঁপানো এ আসরে পর্দা উঠছে। কিন্তু গ্রুপ ও ফিকশ্চার নির্ধারণ হওয়ার পর থেকেই উত্তেজনা শুরু হয়ে গেছে। কে যাবে প্রি-কোয়ার্টারে বা কারা গ্রুপ খেলেই বিদায় নেবে এ হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে গেছে। এখনই বিশ্বের অনেক খ্যাতনামা ফুটবলারও এ নিয়ে তাদের বিশ্লেষণ তুলে ধরছেন। বাংলাদেশের মাঠ কাঁপানো সাবেক দুই ফুটবলার শেখ মো. আসলাম ও কায়সার হামিদ আট গ্রুপের শক্তি ও পারফরম্যান্স বিচার করে গ্রুপ পর্ব টপকিয়ে কারা শেষ ষোলতে ঠাঁই পেতে পারে সেই সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন।
আসলাম বলেন, একমাত্র 'ডি' গ্রুপ ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে বলা যায় ফেবারিটরাই শেষ ষোলতে জায়গা করে নেবে। সাবেক তিন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালি, উরুগুয়ে ও ইংল্যান্ড একই গ্রুপে পড়েছে। বাকি থাকবে কোস্টারিকা। আসলে বড় ধরনের অঘটন না ঘটলে এটা নিশ্চিত যে কোস্টারিকার টিকে থাকার কথা নয়। কথা হচ্ছে, আরেকটি দলকেও তো ছিটকে যেতে হবে।
এখন কোন বিশ্বচ্যাম্পিয়নের বিদায় ঘণ্টা বাঁচবে। আসলাম বলেন, বর্তমানে যদি খেলোয়াড় স্কিল ও পারফরম্যান্স বিচার করি তাহলে মনে হয় 'ডি' গ্রুপে উরুগুয়ের শীর্ষে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বিশ্বকাপের পর থেকে তারা একটা ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। ইতালি চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেও কেন জানি তাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে নৈপুণ্যতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ২০১২ সালে ইউরো ফুটবলে রানার্সআপ হলেও সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি।
হয়তো আমার ধারণা ভুল হতে পারে, তারপরও বলছি বিশ্বকাপে ইতালি মূলত চেয়ে থাকবে বালাতোলি্লর দিকে। অবশ্যই যে উঁচুমানের খেলোয়াড়। ইউরো সেমিফাইনালে তার নৈপুণ্য ছিল মনে রাখার মতো। তারপরও বিশ্বকাপের চাপ তিনি সহ্য করতে পারবেন কিনা সেটাও দেখার বিষয়। ইতালিতে আরও ভালোমানের খেলোয়াড় রয়েছে।
কিন্তু দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তারকা বালোতোলি্ল ফ্লপ করলে ইতালির স্পিরিট নষ্ট হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়ের পর ইংল্যান্ডের যাওয়া সম্ভাবনা বেশি। এটা ঠিক বিশ্ব ফুটবলে বর্তমানে ইংলিশদের পারফরম্যান্স সুখকর নয়। কিন্তু তারা আবার টেনশনপূর্ণ ম্যাচে জ্বলে উঠতে পারে। আসলাম বলেন, একমাত্র 'ডি' গ্রুপ ছাড়া বাকিগুলোর হিসাব করা অনেকটা সহজ।
যেমন 'এ' গ্রুপ থেকে স্বাগতিক ব্রাজিল যে শীর্ষে থেকেই পরবর্তী রাউন্ডে যাবে তা অনেকটা নিশ্চিত। এরপর ক্রোয়েশিয়া, ক্যামেরুন ও মেঙ্েিকার শক্তি প্রায় সমান। তারপরও এদের মধ্যে আমি ক্যামেরুনকেই বেছে নেব। আর 'বি' গ্রুপে অপ্রত্যাশিত কোনো কিছু না ঘটলে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেন ও রানার্সআপ নেদারল্যান্ডই যাবে পরবর্তী রাউন্ডে। 'সি' গ্রুপে দ্রগবার আইভরিকোস্ট ও কলম্বিয়াকে এগিয়ে রাখব।
তবে জাপান একেবারে ছেড়ে দেবে বলে মনে হয় না। 'ই' গ্রুপে ফ্রান্স পরবর্তী রাউন্ডে যাবেই। এরপরই সম্ভাবনা রয়েছে সুইজারল্যান্ডের। ইকুয়েডর বা হন্ডুরাস অঘটন ঘটাতে পারবে বলে মনে করি না। এশিয়া বলে ইরানের দিকে বাংলাদেশের আলাদা দৃষ্টি থাকবে।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এফ গ্রুপে আর্জেন্টিনা, নাইজেরিয়া ছাড়া প্রি কোয়ার্টারে অন্য কারো যাওয়া সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। 'জি' গ্রুপে অবশ্যই তিনবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে এগিয়ে রাখব। যুক্তরাষ্ট্র তেমন শক্তিশালী নয়। পর্তুগাল ও ঘানার মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তারপরও টিম স্পিরিটে রোনালদোরাই প্রি-কোয়ার্টারে ঠাঁই পেতে পারে।
'এইচ' গ্রুপে বেলজিয়াম ও রাশিয়ার সম্ভাবনা থাকলেও দক্ষিণ কোরিয়াকেও একেবারে ফেলে দিতে পারছি না।
এদিকে কায়সার হামিদের বিশ্লেষণও প্রায় একই হলেও 'ডি' গ্রুপে তিনি উরুগুয়ে ও ইতালিকে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে বসাতে চান। তিনি বলেন, ইংল্যান্ডও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তবে এখন তাদের সেই শক্তি নেই যে উরুগুয়ে ও ইতালির মতো দলকে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপে টিকে থাকবে। 'এ' গ্রুপে ব্রাজিল, ক্যামেরুন, 'বি' গ্রুপে স্পেন, নেদারল্যান্ড, 'সি' গ্রুপে কলম্বিয়া, আইভরিকোস্ট, 'ই' গ্রুপে ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, 'এফ' গ্রুপে অবশ্যই আর্জেন্টিনা, নাইজেরিয়া। 'জি' গ্রুপে জার্মানি ছাড়া সুপার সিঙ্টিনে পর্তুগাল বা ঘানার মধ্যে যে কেউ সুযোগ পাবে।
তবে রোনালদো জ্বলে উঠতে পারলে পর্তুগাল গ্রুপ চ্যাম্পিয়নও হয়ে যেতে পারে। এইচ গ্রুপ থেকে কায়সার হামিদ বেলজিয়াম ও রাশিয়াকেই বেছে নিয়েছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।