আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মওদূদীবাদের সাথে ইসলামি আক্বীদার মতপার্থক্য

আমি গর্ব করি--কারণ আমি মুসলিম। আমি গর্ব করি-- আমি রাসুল(স.) এর একজন উম্মত। আমি আমার বাবা-মা কে নিয়ে গর্ব করি। আমি গর্ব করি--কারণ আমি একজন বাঙগালী। .....

জামাতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মওদূদীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: ------------------------------------------------------------ হিজরী সন ১৩২১ সালের ৩রা রজব ১৯০৩ ইং জনাব আবুল আলা মওদূদী (পাকিস্তানের) আওরঙ্গাবাদ শহরের আইন ব্যবসায়ী জনাব আহমদ হাসান মওদূদীর গৃহে জন্ম লাভ করেন।

মওদূদী সাহেব নিজের ভাষায় বলেছিলেন, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা হচ্ছে আলেম বা ইন্টারমিডিয়েট যাকে তৎকালিন মৌলভী পাশ বলা হতো। অর্থাৎ তিনি আলেম পর্যন্ত লেখা-পড়া করেছিলেন । স্বীয় পিতার আর্থিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করতে ব্যর্থ হন তিনি । তবে বাল্যকাল থেকে লেখা-লেখি ও সাহিত্য চর্চা ছিল তার অন্যতম ভাল অভ্যাস। কিন্তু ধীরে ধীরে এ অভ্যাসকে সে নিজের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম ও ছোটকালে লালিত বিতর্কিত ভ্রান্ত মতবাদ প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে ঊনিশ শ’ আঠারো সালে বিজনৌর থেকে প্রকাশিত মদীনা নামক পত্রিকায় সংবাদিকতা শুরু করেন।

দীর্ঘ চৌদ্দ বৎসর পর্যন্ত বিভিন্ন লেখা-লেখি, সাংবাদিকতা, আন্দোলন, সংগ্রামের পর ১৯৩২ সালে নিজের ভ্রান্ত মতবাদকে সর্বস্তরের মুসলমানদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে তারজুমানুল কুরআন নামক নিয়মিত মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। এরপর ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট লাহোরে তার এ ভ্রান্ত মতবাদকে রাষ্ট্রীয়রূপ দেওয়ার দৃঢ় পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিষ্ঠা হলো ‘জামাতে ইসলাম’ নামক একটি ধর্মীয় সংগঠন। যে সংগঠন আজ উপমহাদেশে তার ভ্রান্ত মতবাদকে প্রচার-প্রসার করে অগণিত সরল প্রাণ মুসলমানদের ঈমান আকীদাকে ধ্বংস করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তাই জনাব মওদূদী সাহেবের ভ্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে এখানে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করছি। যাতে সরলপ্রাণ মুসলিম মিল্লাতকে তার ভ্রান্ত মতবাদ থেকে নিজের ঈমান আকীদা হেফাজত করতে পারেন।

-তথ্যসূত্রঃ মওদূদী একটি জীবন একটি ইতিহাস- যে সব বিষয়ে মাওলানা মওদূদীর সাথে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতপার্থক্য রয়েছে, তা হলো কুরআন, হাদীস, প্রিয় নবী, ইসলাম, ফেরেশতা, সাহাবায়ে কেরাম, মুজতাহিদ, ইমাম মাহদী, ওলামায়ে কেরাম, আওলিয়ায়ে এজাম, উসূলে হাদীস, তাফসীর, ফিকহ, তাসাউফ, তাকলীদ, মাজহাব থেকে শুরু করে আরো অসংখ্য বিষয়ে। এখানে মাত্র উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উপস্থাপন করছি। মওদূদীর ভ্রান্ত আকীদা নবীগণ নিষ্পাপ নন! --------------------------------------------- عصمت انبياء عليهم السلام كے لوازم ذات سے نہيى اورايك لطيف نكتہ يہ ہے کہ اللہ تعا لے نے بالاراده ہر نبى سے كسى نہ كسى وقت حفاظت اٹھا كر ايك دولغز شيى ہو جانےدى ہے নিষ্পাপ হওয়া আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের জন্য আবশ্যকীয় নয়, এতে এমন একটি সূক্ষ্ণ রহস্য বিদ্যমান আছে যে, আল্লাহ তাআলা ইচ্ছাপূর্বক প্রত্যেক নবী থেকে কোন না কোন মূহুর্তে স্বীয় হেফাজত উঠিয়ে নিয়ে তাদের থেকে দু’একটি পদস্খলন পদচ্যুতি (গুনাহ) হতে দেন। নবী হওয়ার পূর্বে তো হযরত মূসা আলাইহিস সালাম কর্তৃকও একটি বিরাট গুনাহের কাজ সংঘটিত হয়ে গিয়েছিল। (রসায়েল ও মাসায়েল, পৃষ্ঠা ২৪, ১ম খন্ড।

তাফহীমাত, আবুল আলা মওদূদী। ২য় খন্ড, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ, পৃষ্ঠা: ৫৭, পাকিস্তান। ) ইসলামী আকীদা ---------------------------- ইসলামী শরীয়তের আলোকে عصمت বা নিষ্পাপ হওয়া নবীদের জন্য অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ, বরং عصمت এর ক্ষেত্রে নবীগণ ফেরেশতা থেকেও অধিক হকদার। যেমন নিবরায কিতাবে عصمت সম্পর্কে ইমাম মাতুরিদী রাহমাতুল্লাহি তাআলা আলাইহি বলেন, اَلْأَنْبِيَاءُ أَحَقُّ بِالْعِصْمَةِ مِنَ الْمَلئِكَةِ “নবীগণ ফিরিশতাদের তুলনায় ইসমতের অধিক হকদার। ” (নিবরায।

পৃষ্টা ২৮৪। ) কেননা, শয়তান নবীদের থেকে অনেক দূরে থাকে। عصمت সম্পর্কে নকলী দলীলঃ পবিত্র কুরআন পাকেও আল্লাহ পাক শয়তানকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, اِنَّ عِبَادِىْ لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ “হে ইবলিস! আমার বিশিষ্ট বান্দাদের উপর তোমার কর্তৃত্ব নেই। ” (সূরা আল হিজার, আয়াত : ৪১ ) আর শয়তানও স্বয়ং স্বীকার করেছিল, وَلَأُغِوَ ينهُمْ أَجْمعيْنَ – اِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُم الْمُخْلِصِيْنَ “হে আল্লাহ! তোমার বিশিষ্ট বান্দাগণ ব্যতীত বাকী সবাইকে বিপথগামী করবো। ” (সূরা আল হিজার, আয়াত ৪১) উল্লিখিত আয়াতে নবীগণ যে নিষ্পাপ তা সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হলো।

কারণ গুনাহ হয় শয়তানের وسوسه দ্বারা । আর নবী-রাসূল তথা বিশিষ্ট বান্দাগণ وسوسه থেকে পূতঃপবিত্র। মিশকাত শরীফে اَلْوَسْوَسَةُ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে প্রত্যেক মানুষের সাথে একজন শয়তান অবস্থান করে যার নাম কারীণ। প্রিয় নবী বলেন, আমার কারীন মুসলমান হয়ে গেছে। মিশকাতের অপর হাদীসে মনাকেবে ওমর অধ্যায়ে বর্ণিত আছে, হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু যে রাস্তা দিয়ে গমন করেন তথা হতে শয়তান পালিয়ে যায়।

তাহলে বুঝা গেল, যার উপর নবীর সুদৃষ্টি রয়েছে সেও শয়তান থেকে নিরাপদ থাকেন। অতএব, বর্ণিত কুরআন হাদীস থেকে প্রমাণিত হল নবী-রাসূলগণ নিষ্পাপ। তাঁদের কোন গুনাহ থাকতে পারে না। সে জন্যই ইমাম মোল্লা আলী কারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় কিতাব মিরকাত শরহে মিশকাতে নবীগণ যে নবুয়াতের আগে ও পরে সর্বদা যাবতীয় ছোট-বড় ভুলত্রুটি গুনাহ থেকে পবিত্র নিষ্পাপ থাকেন। তা এভাবে র্ব্ণনা করেছেন, اَلْأَنْبِيَاءُ مَعْصُوْمُوْنَ قَبْلَ النَّبُوَّةِ وَبَعْدَهَا عَنْ كَبَائِرِ الذُّنُوْبِ وَصَغَائِرِهَا وَ لَو سَهْوًا عَلى مَاهُوَ الْحَقُّ عِنْدَ الْمحقِّقين “নবীগণ নবুয়াতের পূর্বে ও পরে কবীরা-সগীরা উভয় প্রকার গুনাহ থেকে নিষ্পাপ পবিত্র এমনকি অনিচ্ছাকৃতভাবেও ।

এটাই মুহাক্কিক ওলামাদের নিকট হক কথা। ”(মিরকাত) কারণ নবীদের উপর থেকে যদি আল্লাহর হেফাযত উঠে গিয়ে عصمت নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তাদের নির্দেশিত শরীয়তের বিধানাবলীতে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। আর যৌক্তিক দিক দিয়েও যতক্ষণ নবীগণকে নিষ্পাপ (মাসূম) মেনে নেয়া না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত নবী, সাধারণ দার্শনিক ও সংস্কারের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না। তাই ইসলাম এটাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। অথচ মওদূদী নবীদের থেকে হেফাযত উঠিয়ে নিয়ে আল্লাহ কর্তৃক তাঁদের থেকে ভূলত্রুটি গুনাহ সংঘটিত করার যে মারাত্নক কুফরী আকীদা প্রকাশ করেছে তা কখনও ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়।

বরং এটা অল্লাহর শানেও চরম বিয়াদবী বৈ কিছুই নয়। আর হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এক মিশরীকে শাসনের উদ্দেশ্যেই শাস্তি দিয়েছিলেন। এতে ওই মিশরীর মৃত্যু ঘটে। এটা কখনও গুনাহ নয় বরং ন্যায় বিচার। অথচ মওদূদী এটিকে বড় গুনাহ বলে নবীদের শানে চরম আবমাননাকর উক্তি করলেন।

দলীলসমূহ : কানযুল ঈমান, রুহুল ইরফান, নিবরায, ফিকহ আকবর, শরহে আকায়েদে নসফী, শরহে মাওয়াকিফ, মিরকাত শরহে মিশকাত। মওদূদীর আকীদা ------------------ এ মর্মে দোয়া করুন যে, এ বিরাট কাজ (নবুয়তী দায়িত্ব) পালন করতে গিয়ে আপনি যে ভুল-ভ্রান্তি বা দোষ-ত্রুটি করেছেন, তা সব তিনি যেন মাফ করে দেন। তাফহীমুল কুরআন, ১৯ তম খন্ড, আবুল আলা মওদূদী, সূরা আন নসর, পৃষ্ঠা: ২৮৭। অনুবাদ: আবদুল মান্নান তালিব, আধুনিক প্রকাশনী, ঢাকা। ইসলামী আকীদা ------------------------ সূরা আন নসরের استغفار এর মর্মার্থ হচ্ছে, আপনি তাঁর নিকট মাগফেরাত বা ক্ষমা প্রার্থনা করুন।

অথচ কুরআন সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াসের আলোকে প্রমাণিত যে, আমাদের প্রিয় নবীসহ সকল নবী রাসূলগণ যাবতীয় ছোট-বড় গুনাহ, ভুল-ত্রুটি থেকে মুক্ত। তাহলে এ আয়াতের অর্থ অবশ্যই তাবীল করতে হবে। যেমন যুগশ্রেষ্ঠ মুফাসসিরগণ এ আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন, এখানে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজের গুনাহ ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলা হয়নি, বরং উম্মতের গুনাহ মাফ চাইতে বলা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আল-হাবী লিল ফাতওয়া গ্রন্থের ২য় খন্ডে আম্বাউল আম্বিয়া ফি হায়াতিল আম্বিয়া অধ্যায়ে লিখেছেন। اَلنَّظْرُ فِى أَعْمَالِ أُمَّتِه وَ الْاِسْتِغْفَارُ لَهُمْ مِنَ السَّيِّئَاتِ “আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের আমলগুলো দেখেন এবং তাদের পক্ষ থেকে আল্লাহর দরবারে (উম্মতের) গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

এটাই প্রিয় নবীর استغفار এর প্রকৃত অর্থ। অথচ মওদূদী استغفار এর অপব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রিয় নবীকে গুনাহগার বানানোর এবং নবুয়তী দায়িত্ব পালনে অক্ষমতার যে মনগড়া অভিযোগ স্থির করতে চেয়েছেন, তা প্রিয় নবীর পবিত্র শানে মস্ত বড় জুলুম ও বেয়াদবীর শামিল। দলীলসমূহ: পবিত্র কুরআন, তাফসীরে আযীয, মাদারিজুন্নাবুয়াত, শরহে শিফা শরীফ, তাফসীরে রূহুল বয়ান, আল-আবী লিল ফতাওয়া। মওদূদীর আকীদা ------------------------ ১. মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক নন। ২. রাসূল না অতিমানব, না মানবীয় দুর্বলতা থেকে মুক্ত।

তিনি যেমন খোদার ধন-ভান্ডারের মালিক নন, তেমনি খোদার অদৃশ্যের জ্ঞানেরও অধিকারী নন বলে সর্বজ্ঞ নন। ৩. তিনি পরের কল্যাণ বা অকল্যাণ সাধন তো দূরে নিজেরও কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে অক্ষম। ৪. তিনি কোন কিছু হালাল বা হারাম করতে পারেন না। লন্ডনের ভাষণ, পৃষ্টা: ৩-১৯, কৃত: আবুল আলা মওদূদী, অনুবাদ: আখতার ফারূক, জুলকরনাঈন প্রেস, ৩৮, বানিয়া নগর, ঢাকা। ইসলামী আকীদা ------------------ কুরআন সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াসের আলোকে অবশ্যই আমাদের প্রিয় নবী ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক ছিলেন।

পবিত্র কুরআনে اليوم أكملت لكم دينكم বলে প্রিয় নবীর মাধ্যমে ইসলামকে পরিপূর্ণতা দান করেছেন আল্লাহ তা’আলা। তাই তিনি যদি ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক না হন, তাহলে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক কে? অতিমানব অর্থ অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি। সুতরাং প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিমানব ছিলেন এবং মানবীয় দুর্বলতা থেকেও সম্পূর্ণ মুক্ত, পুতঃপবিত্র ছিলেন, বিধায় আজ তাঁর প্রদর্শিত দ্বীণ আমরা সঠিকভাবে পেয়েছি। তিনি খোদার ধন ভান্ডারের মালিকও ছিলেন। পবিত্র হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, اِنِّى أُوْتِيْتُ مَفاتيح خَزَائِنِ الْأَرْضِ “প্রিয় নবী স্বয়ং বলেছেন, আমাকে জমিনের খণিসমূহের চাবি দেওয়া হয়েছে বা ধন-ভান্ডারের মালিক বানানো হয়েছে।

(বোখারী শরীফ, ২য় খন্ড, পৃষ্টা: ১০৪২। ) হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে এ ধরনের আরও একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও তাঁকে অদৃশ্যের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে: عِلْمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِر عَلى غَيْبِه أَحَدًا – اِلَّا من ارْتَضى مِنْ رَسول “অদৃশ্যের জ্ঞাতা, আল্লাহ আপন অদৃশ্যের উপর কাউকে ক্ষমতাবান করেন না আপন মনোনীত রাসূল ব্যতীত। ” ( সূরা আল জিন ।

আয়াত : ২৬। ) এ আয়াতে প্রিয় নবীসহ আপন রাসূলদেরকে ইলমে গায়েব দেওয়ার বিষয়ে আল্লাহ তা’আলা সুস্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। আর তিনি স্বয়ং আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে কল্যাণদাতা হিসাবেই প্রেরিত হয়েছেন। পবিত্র কুরআন শরীফে এরশাদ হয়েছে, وَمَآ أَرْسَلْناكَ اِلَّا رَحْمَةَ لِّلْعالَمِيْنَ “হে নবী! আমি আপনাকে সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত (কল্যাণ) স্বরূপ প্রেরন করেছি। ”(সূরা আল আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭ ।

) অন্ধকারে নিমজ্জিত সমাজকে সত্য ন্যায়ের আলোতে আলোকিত করে, অসভ্য জাতিকে সভ্য করে, জাহান্নামীদেরকে জান্নাতের পথ প্রদর্শন করে তিনি কি কল্যাণ করেন নি? জামায়াতে ইসলামীর একটি সংস্থা ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ যদি কল্যাণ করতে পারে তাহলে প্রিয় নবীর শানে কেন এত বড় বেয়াদবী? পরিশেষে মওদূদীর আরেকটি ভ্রান্ত আকীদা হচ্ছে প্রিয়নবী কোন কিছু হালাল ‍কিংবা হারাম করতে পারেন না। অথচ পবিত্র কুরআন ও হাদীসে অসংখ্য দলীল রয়েছে শরীয়তের বিধানাবলীতে পরিবর্তণ, পরিবর্ধণ এবং কোন কিছুকে হালাল কিংবা হারাম করার ক্ষমতাও মহান আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবকে দান করেছেন। যেমন- قالتلوا الْذِيْنَ لَايُؤْمِنُوْنَ بِا للهِ وَلَا بِاليَوْمِ الْآخِرِ وَ لَا يُحَرِّمُونَ مَا حرم اللهُ وَ رَسُوْلُه যুদ্ধ কর তাদের সাথে যারা ঈমান আনে না আল্লাহ উপর কিয়ামত দিবসের উপর এবং হারাম মানে না ওই বস্তুকে, যাকে হারাম করেছেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল। ” (সূরা আ্ত তাওবা, আয়াত: ২৯। ) এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় আল্লাহ পাকের পরে তাঁর প্রিয় হাবীবও কোন কিছুকে হালাল কিংবা হারাম করতে পারেন এটাকে খোদাপ্রদত্ত ক্ষমতা বলা হয়।

হাদীসে পাকে অসংখ্য প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে যে, প্রিয় নবী অনেক কিছুকে হালাল অথবা হারাম ঘোষণা করেছেন যেমন পবিত্র মক্কা শরীফের ন্যায় মদীনা শরীফকেও প্রিয় নবী নিজে হারাম বা পবিত্র ঘোষণা করেছেন। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করনে- اِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَرَّمَ هَذَا الحرام “নিশ্চয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই হারাম শরীফ (মদীনাকে) হারামরূপে গণ্য করেছেন। ” অন্য হাদীস শরীফে রয়েছে- اِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَرَّمَ مَا بَيْنَ لَابتى الْمَدِيْنَةِ “প্রখ্যাত সাহাবী হযরত রাফে বিন খদীজ রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র মদীনা মুনাওয়ারাকে পবিত্র হারামরূপে গণ্য করেছেন”। (সহীহ মুসলিম শরীফ ও তাহাভী শরীফ। ) অতএব প্রমাণিত হলো, কোন কিছুকে হালাল, হারাম করার ক্ষমতা প্রিয় নবীর রয়েছে, এটা তাঁর খোদাপ্রদত্ত অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

দলীলসমূহ: কুরআন শরীফ, বোখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তাহাভী শরীফ। মওদূদীর আকীদা --------------------- আজমীর শরীফে যেয়ারতের উদ্দেশ্যে গমন করা জেনার গুনাহের চেয়েও মারাত্নক! جولوگ حاجتيى طلب كرنےكيليے ا جميرياسالايے مسعود كى قبرياايسے ہی دوسرے مقامات پر جاتے ہي وہ اتنا بڑاگناہ کر تے ہي کہ قتل اور زناکاگناہ اس سےکمترہے “যারা মনষ্কামনা পূর্ণ করার জন্য আজমীর অথবা সালায়ে মসউদের কবরে বা এই ধরনের অন্যান্য স্থানে যায়, তারা এত বড় গুনাহ করে যে, হত্যা ও জিনার গুনাহ তার তুলনায় কিছুই নয়। ” (তাজদীদ ও ইহইয়ায়ে দীন (ইসলামী রেনেঁসা আনোদালন,) আবুল আলা মওদূদী পৃষ্ঠা: ৭২ । অনুবাদ: আবদুল মান্নান তালিব। আধুনিক প্রকাশনী, ঢাকা।

) ইসলামী আকীদা ---------------- নবী-অলী তথা আল্লাহর নেক বান্দাদের রওয়াপাকে বা মাজারে তাদেরই অসীলায় মনষ্কামনা পূরণে গমন করা সম্পূর্ণ শরীয়তসম্মত। কেননা পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- وَلَوْ أَنَّهُمْ اِذْ ظَلَمُوْا أَنْفُسَهُمْ جآءُوْكَ فَاسْتَغْفِرُوا اللهَ وَالسْتَغْفر لَهُمُ الرَّسُوْلُ لَوَجَدُوا اللهَ تَوَّابًا رَحِيْمًا “যদি কখনও তারা নিজেদের আত্নার প্রতি জুলুম করে হে মাহবুব আপনার দরবারে হাজির হয়। অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী ও দয়ালু পাবে। ”(সূরা আন নিসা, আয়াত ৬৪ ।

) হযরত মরিয়ম আলাইহাস সালামের হুজরায় হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম আপন রবের নিকট পুত্র সন্তান লাভের আশায় এভাবে দোয়া করেছিলেন هُنَالِكَ دَعَا زَكريا رَبَّه قَالَ رَبِّ هَبْ لِىْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِيَّةً طَيِّبَةً اِنَّكَ سَمِيْعُ الدُّعاءِ “এখানে প্রার্থনা করলেন হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম আপন রবের নিকট, হে আমার রব! আমাকে তোমার নিকট থেকে প্রদান কর পবিত্র সন্তান। নিশ্চয় তুমিই প্রার্থনা শ্রবণকারী। ” ( সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৩৮ । ) এ ছাড়াও অন্য আয়াতে রয়েছে وَالْتَغُوَا اليه الْوَسيْلَةْ “তোমরা তাঁরই দিকে অসীলা (মাধ্যম) তালাশ করো। ”(সূরা আল মায়িদা, আয়াত ৩৫ ।

) বর্ণিত আয়াতসমূহ মহান আল্লাহর নেক বান্দাদের নিকট মনষ্কামনা পূরণের উদ্দেশ্যে যাওয়া এবং তাঁদের অসীলায় প্রার্থনা কবুল হওয়ার উৎকৃষ্ট প্রমাণ । অন্যান্য বর্ণনা দ্বারাও হাজত বা মনষ্কামনা পূরণার্থে বিভিন্ন মাজারে বা আল্লাহ মাহবুব বান্দাদের দরবারে যাওয়ার বাস্তব প্রমাণ কিতাবে রয়েছে। যেমন – ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- اِنِّى لَأتَبَرَّك بِأَبِى حَنِيْفَةَ وَ أَجِىُ اِلَى قَبره فَاِذَا عَرَضَتْ حَاجَة صَلَّيْتُ رَكْعَتَيْنِ وَسَئَلْتُ اللهَ تَعَالى عِنْدَ قَبره فَتُقْضى سَرِيْعً “আমি ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহির দরবারে আসি এবং বরকত হাসিল করি। আমার যখন কোন হাজত হয়, তখন ইমাম আবু হানিফার মাজারে দু’রাকাত নামায পড়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করি। ফলে দ্রুত আমার হাজত পূর্ণ হয়ে যায়।

”(রদ্দুল মুহতার, ১ম খন্ড, ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রাহ। ) সুতরাং অসংখ্য দলীলাদির মাধমে প্রমানিত হলো মনষ্কামনা পূর্ণ করার জন্য আল্লাহর নেক বান্দাদের রওযাতে যাওয়া শুধু জায়েয নয়, বরং প্রখ্যাত ইমামদের অনুসৃত নীতিও বটে। অতএব, আজমীর শরীফ, সালায়ে মাসউদের দরবারে মনষ্কামনা পূরণার্থে যাওয়া বৈধ এবং এটাকে মওদূদী কর্তৃক জেনা ও হত্যার গুনাহর চাইতে মারাত্নক গুনাহ বলা ইসলামের উপর বড় জুলুম ছাড়া আর কিছুই নয়। আরো দলিলের জন্য ক্লিক করুন দলীলসমূহ : কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, রদ্দুল মুহতার, ফতোয়ায়ে আজীজিয়া, বুযুর্গ কে আকীদা। মওদূদীর আকীদা --------------------- প্রিয় নবীর সুন্নাত ফাতেহাকে পূজার সাথে তুলনা! ايك طرف مشركانہ پوجا پاٹ كى جگہ فا تحہ زيارت نياز نذر عرس سندل چڑھا يے نشان علم تعزےاور اسی قسم کےدو سرےمذ ہبی اعمال کى نئ شريعت تصنيف كرلى گ “একদিকে মুশরিকদের ন্যায় পূজা আর্চনার পরিবর্তে ফাতেহাখানী, যেয়ারত, নজর-নিয়াজ, উরস, চাদর চড়ানো, তাজিয়া করা এবং এই ধরনের আরও অনেক ধর্মীয় কাজ সম্বলিত একটি নতুন শরীয়ত তৈরি করা হয়েছে।

” (তাজদীদ ও ইহইয়ায়ে দ্বীন (ইসলামী রেনেঁসা আন্দোলন), আবুল আলা মওদূদী, পৃষ্ঠা: ৬, অনুবাদ: আবদুল মান্নান তালিব, আধুনিক প্রকাশনী, ঢাকা। ) ইসলামী আকীদা ------------------- ফাতেহা যেয়ারত প্রিয় নবীরই সুন্নাত, আল্লাহর অলীদের মাজারে নজর-নিয়াজ, ওরশ, মাজারে যেয়ারতকারীদের সুবিধার্থে আলোকসজ্জা এবং অলীদের সম্মানার্থে গিলাফ বা চাদর ইত্যাদি জায়েয ও সওয়াবের কাজ। এগুলোকে মুশরেকানা বলা কুফরী ও নবী অলীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার নামান্তর । ফাতেহা ও যেয়ারত প্রিয় নবীরই সুন্নাত হওয়ার করণে এটাকে মুশরেকানা বলে মওদূদী কুফরী করেছেন। কেননা ফতোয়া হচ্ছে اهانة السنة كفر প্রিয় নবীর সুন্নাতকে ইহানত করা কুফরী।

ফাতেহা সম্পর্কে সংক্ষেপ দলীল হচ্ছে, মিশকাত শরীফের المعجزات অধ্যায়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে বর্ণিত আছে হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন আমি কিছু খোরমা খেজুর প্রিয় নবীর সামনে পেশ করলাম এবং এর বরকতের জন্য দোয়া করতে আরজ করলাম। فضمهن ثم دعالى فيهن بالبر كة তখন তিনি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এগুলোকে একত্রিত করলেন এবং বরকতের জন্য দোয়া করলেন অর্থাৎ ফাতেহা দিলেন। ( মিশকাত শরীফ, ‍পৃষ্টা: ৫৪২। ) যেয়ারত সম্পর্কে হাদীস হচ্ছে: عَنْ بَرِيْدَةَ رَضِىِىَ الله عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُنْتُ نَهِيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُوْرِ فَزُورُوهَا “হযরত বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম, এরশাদ করেছেন, তোমাদেরকে (প্রথমে) কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম (এখন থেকে আর বাধা নেই) যেয়ারত করো। কেননা এটা আখেরাতের স্মরণ করিয়ে দেয়।

(মুসলিম শরীফ । ) আর অলীদের মাজারে সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যেই গিলাফ চড়ানো হয় এবং যেয়ারতকারীদের সুবিধার্থে বাতি জ্বালানো হয় এটা না জায়েয নয়, বরং পবিত্র কুরআন দ্বারা প্রমাণিত। কারণ আল্লাহর অলীগণ তাঁদের মাজারসমূহ আল্লাহর নিশান বা নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভূক্ত। তাই তাঁর নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ এভাবে কুরআনে পাকে এসেছে- ذَلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللهِ فَاِنَّهَا مِنْ تَقْوى الْقُلُوْبِ “আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করলে, হৃদয়ের তাওয়া অর্জিত হয়। ” ( সূরা আল হজ্জ, আয়াত : ৩২।

) এ সম্মানের বেলায় কোন শর্তারোপ করা হয়নি। এক এক দেশে এক এক ধরনের রীতি প্রচলিত আছে। তাই যে দেশে যে রীতির প্রচলন আছে, সেই মতে সম্মান প্রদর্শন করা জায়েয। অলীগণের মাজারে ফূল অর্পন, চাদর চড়ানো, বাতি জ্বালানো ইত্যাদির উদ্দেশ্য হচ্ছে সম্মান প্রদর্শন করা । এগুলোর বৈধতার উপর ফতোয়ায়ে শামী, আলমগীরী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফতোয়ার কিতাবসমূহে বিস্তারিত দলীলাদি পেশ করা হয়েছে।

অতএব, এগুলোর প্রতি কটাক্ষ করার কোন যৌক্তিকতা নেই। দলীলসমূহ: কুরআন শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, ফতোয়ায়ে শামী আলমগীরি। মওদূদীর আকীদা --------------------- সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি নন! معيار حق توصرف الله كا كلام اور اسكے رسول كى سنت ہے صحا بہ معيار حق نہي “সত্যের মানদন্ড শুধুমাত্র আল্লাহর কালাম এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত। সাহাবা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা অনহুম সত্যের মানদন্ড নন। (তরজুমানুল কুরআন, অগষ্ট সংখ্যা, ১৯৭৬।

) ইসলামী আকীদা -------------------------- কুরআন সুন্নাহর আলোকে সাহাবায়ে কেরাম معيارحق বা সত্যের মানদন্ড। কেননা তাঁদের মাধ্যমেই আমরা নিখুকভাবে মহান আল্লাহর একমাত্র দ্বীন ইসলাম পেয়ে ধন্য হয়েছি। পবিত্র কুরআনে সাহাবায়ে কেরামের প্রশংসায় মহান আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন: رَضِىَ اللهُ عَنْهُمْ وَ رَضُوْا عَنْه “আল্লাহ তাঁদের (সাহাবাদের) উপর সন্তুষ্ট এবং তাঁরা তাঁর (আল্লাহর) উপর সন্তুষ্ট। ”(সূরা আল বাইয়্যিনাত, আয়াত : ৮। ) আরো অসংখ্য আয়াতে সাহাবায়ে কেরামের প্রশংসা করা হয়েছে।

অপর আয়াতে এরশাদ হয়েছে: كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّة أُخرجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَ تَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكر “জনসাধারণের কল্যাণের জন্য শ্রেষ্ঠতম উম্মত হিসাবেই তোমাদের আত্নপ্রকাশ। তোমরা সৎকাজের আদেশ দান করবে এবং অন্যায় কাজে বাধা দেবে। ( সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১২০। ) এ আয়াতে أُخِرْجَتْ لِلنَّاسِ বলে সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণকে واجب এবং তাঁদের পরিচালিত পথকে মানুষের জন্য দলীল হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। হাদীসে পাকেও এরশাদ হয়েছে: أَصْحَابِى كَالنُّجُومِ فَبِأَيهمْ اِقْتِدَيْتُمْ اِهْتِدَيْتُمْ “ আমার সাহাবীগণ তারকারাজির ন্যায় ।

তোমরা যে কারো অনুসরণ করো না কেন সঠিক পথের দিশা পাবে। ”(মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা : ৫৫৪ । ) عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِى وَسُنَّةِ الْخُلَفَآءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيْينَ “তোমরা আমার ও আমার খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আকড়ে ধর । ”( আবু দাঊদ, কিতাবুস সুন্নাহ। পৃষ্টা: ৬৩০ ।

) অন্য হাদীসে مَا أَنَا عَلَيْهِ وَ أَصْحَابِى বলে প্রিয় নবী বলেন, যারা আমি ও আমার সাহাবাদের পথে সুপ্রতিষ্ঠিত ও অবিচল রয়েছে, তাঁরাই জান্নাতী বা মুক্তিপ্রাপ্ত দল। মিরকাত শরহে মিশকাতে আল্লামা মোল্লা আলী কারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন: فَلَا شَكَّ وَ لَارَيْبَ أَنَّهُمْ أَهْلُ السُّنَّةِ وَ الْجَمَاعَةِ “নিঃসন্দেহে উপরোক্ত হাদীসের উল্লেখিত মুক্তিপ্রাপ্ত বেহেশতী দলই হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত। ” বর্ণিত কুরআন-সুন্নাহর আলোকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদা ইচ্ছে সাহাবায়ে কেরাম معيار حق বা সত্যের মানদন্ড। তাঁদের ব্যাপারে যে কোন প্রকার সমালোচনা, মানহানিমূলক মন্তব্য ও দোষ বর্ণনা করা প্রিয় নবীর হাদীস মোতাবেক নিষিদ্ধ। যেমন হাদীসে পাকে এরশাদ হয়েছে: عَنْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُلُ اللهِ صَلّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا رَأيتمْ الَّذِيْنَ يَسُبونَ أَصْحَابِى فَقُولُوا لَعْنَةُ اللهِ عَلى شَرِّكُمْ হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন প্রিয় নবী এরশাদ করেছেন, তোমরা যদি দেখ যে, কেউ আমার সাহাবীকে গালি দিচ্ছে বা মন্দ বলছে, তখন তোমরা বলো তোমাদের অন্যায়ের উপর আল্লাহর অভিশম্পাত।

”( তিরমিযী মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৫৫৪। ) এ ছাড়াও অসংখ্য দলীলের মাধ্যমে সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাটি প্রমাণিত। পক্ষান্তরে সাহাবায়ে কেরামের শানে বেয়াদবী, সমালোচনা ও মানহানি নিষিদ্ধ। দলীলসমূহ: কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, শরহুল আকাঈদ, কানযুল ঈমান, রুহুল ইরফান। মওদূদীর আকীদা ----------------------- আলেমদের জন্য তকলীদ নাজায়েয! ميرے نزديك صاحب علم آدمى كيليے تقليدناجائز اور گناه بلكہ اس سے بهى شديد تر چيز ہے “আমার মতে দ্বীনী ইলমের ক্ষেত্রে বুৎপত্তি রাখেন এমন ব্যক্তির জন্য তাকলীদ (মাজহাব অনুসরণ) না জায়েয এবং গুনাহ।

বরঞ্চ তার চাইতেও সাংঘাতিক। ” (রাসায়েল ও মাসায়েল। আবুল আলা মওদূদী । পৃষ্ঠা: ১৪৮। অনুবাদ: আবদুস শহীদ নাসীম।

শতাব্দী প্রকাশনী, ঢাকা। ) ইসলামী আকীদা ---------------------------- চার মাজহাবের যে কোন একটি অনুসরণ করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ওয়াজিব। এটা ইজমায়ে ওলামা দ্বারা সর্ব সম্মতিক্রমে স্থিরকৃত। এর ব্যাপারে পরবর্তীকালের কোন ব্যক্তির মনগড়া বানোয়াট ফতোয়া গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ উম্মতের অন্তর্ভূক্ত সমস্ত মুহাদ্দিসীন, মুফাসসিরীন, ওলামা, পীর মাশায়েখ, অলীয়ে কামেলীন, বুযুর্গানে দ্বীনও মাজহাবের অনুসরণ করেছেন।

যেমন- গাউসে পাক হযরত আবদুল কাদের জিলানী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি হাম্বলী মাজহাবের অনুসারী ছিলেন। হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ, মুজাদ্দেদে আলফে সানী, শাহ ওয়ালী উল্লাহ, ইমাম বোখারী, ইমাম মুসলিম ও ইমাম গাজ্জালী রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম থেকে শুরু করে ইমাম, দার্শনিক, ইসলামী চিন্তাবীদগণ মাজহাবের অনুসরণ করেছেন। মওদূদী নিজেকে উপরোল্লিখিত মহাজ্ঞানীদের চাইতেও বড় জ্ঞানী মনে করে তাদেরকে পাপী হিসাবে চিহ্নিত করতে অপচেষ্টা চালিয়েছেন। অথচ পবিত্র কুরআন সুন্নাহর অসংখ্য দলীলের মাধ্যমে تقليد তথা মাজহাব মেনে চলা আবশ্যক । যেমন: وَاتَّبِعْ سَبِيْلَ مَنْ أَنَابَ اِلَّى “আর তারই পথে চলো যে আমার প্রতি প্রত্যাবর্তন করেছে।

”(সূরা লোকমান। আয়াত : ১৫। ) এ আয়াতে আল্লাহর দিকে ধাবিত ব্যক্তিবর্গের তাকলীদ বা অনুসরণ করাকে আবশ্যক করা হয়েছে। أَطِيْعُوا االلهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَ أُوْلِى الْأَمْرِ مِنْكُمْ “আল্লাহর আনুগত্য কর, তাঁর রাসুলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা আদেশ প্রদানকারী রয়েছে তাদেরও। ”(সূরা আন নিসা।

আয়াত ৫৯। ) এর আয়াতে أولى الأمر বলতে মুহাক্কিকদের মতে ফিকাহবিদ, মুজতাহিদ ও আলেমগণ। যেহেতু তারাই তো ইসলামী শাসনকর্তাদের প্রধান Adviser হিসাবে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনায় সাহায্য করে থাকেন। অতএব, أولى الأمر বলতে ইসলামী শাসক ও মুজতাহিদ আলিমগণকেই বুঝানো হয়েছে। তাই কুরআন দ্বারা তাদের তাকলীদ প্রমাণিত হলো।

পবিত্র হাদীস শরীফেও তাকলীদ সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে: عَنْ تَمِيْمِ الدارىْ رَضِى اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ: اِنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَلدِّيْنُ النَّصِيْحَةُ قُلْنَا لِمنْ؟ قَلَ لِلهِ وَلِكِتَابِه وَلِرَسُولِه وَ لِأُمَّةِ الْمُسْلِمِيْنَ وَعَامَّتِهِمْ “হযরত তামীমদারী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, ধর্ম হলো কল্যাণ কামনা। আমরা (উপস্থিত সাহাবীগণ) আরজ করলাম, কার কল্যাণ কামনা? তিনি ফরমালেন, আল্লাহর, তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসুলের, মুসলমানদের মুজতাহিদ ইমামগণের এবং সাধারণ মুসলমানদের। ” (-মুসলিম শরীফ। জা’আল হক, পৃষ্ঠা: ৩৫ । ) উল্লিখিত হাদীসের মুজতাহিদ ইমামগণের কল্যাণ কামনা মানে তাদের তাকলীদ সম্পর্কে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ নববীতেও বর্ণিত হাদীসের ব্যাখ্যায় তাকলীদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসীন কেরাম মুফাসসিরীনে ইজাম তাঁদের স্ব স্ব গ্রন্থে তাকলীদ বা মাজহাব মানা যে ওয়াজিব তা দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেছেন এবং নিজেরাও বিভিন্ন মাজহাবের ইমামদের অনুসরণ করে উম্মতে মুহাম্মদীকে শিক্ষা দিয়েছেন। আরো দলিলের জন্য ক্লিক করুন দলীলসমূহ : কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, রুহুল বয়ান, খাযিন, দররে মানসূর , মিশকাত, রাবী, ফতহুল কদীর, জা’আল হক। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা মওদূদীর স্বপ্ন, কেন পূর্ণতা পেল না? ---------------------------------------------------------------- মওদূদীর রচনাবলী অধ্যয়ন করলে যে কোন মুসলমানের হৃদয়ে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেতনা সৃষ্টি হয়। মওদূদীও আজীবন যে স্বপ্ন দেখে এসেছিল তা কেউ অস্বীকার করবে না।

মওদূদী একটি ইসলামী রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করে হুকুমতে এলাহিয়ার যে ভিত্তি রচনা করতে চেয়েছিল তা কেন পূর্ণতা পেল না তা একেবারে সূর্যের চাইতেও স্পষ্ট। কারণ, হুকুমতে এলাহিয়ার মূল মডেল হচ্ছেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খোলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবায়ে কেরাম রিদ্বওয়ানুল্লাহি তা’আলা আলাইহিম, আজমাঈন। অথচ মওদূদী সেই প্রিয় নবীর পবিত্র মর্যাদ Position কে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনাকে বৈধ মনে করে প্রকৃত ইসলাম থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছিল। যার ফলে মুসলিম মিল্লাত তাকে গোমরাহ ও তার দলকে গোমরাহ দল হিসাবে আখ্যায়িত করে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করছে। সে যদি রসুলপ্রেমকে ধারণ করে খোলাফায়ে রাশেদীনের মডেলকে সামনে রেখে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে সম্মুখে অগ্রসর হত, তাহলে বিশ্বের অনেক দেশে আজ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হত।

বর্তমানেও যারা এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত তাদেরকেও কথাটি চিন্তা করে বিশুদ্ধ আকীদা ধারণ করে সামনে অগ্রসর হতে হবে, অন্যথায় ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাবে না। কেননা, প্রিয় নবীর দ্বীনকে রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিষ্ঠা করার পূর্বে প্রিয় নবীর প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাবোধ ও শানে রেসালতের প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা থাকা আবশ্যক। বিশ্বব্যাপী মওদূদীর বিরুদ্ধে লিখিত অসংখ্য গ্রন্থাবলীর মাত্র কয়েকটির নাম প্রদত্ত হলbr /> -------------------------------------------------------------- বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত (মাত্র কয়েকটি): -------------------------------------------------------------- * প্রকৃত ইসলাম রদ্দে মওদূদী- মুফতী আল্লামা ইদ্রিস রযভী * এক নজরে মওদূদী- জামাত-শিবিরের ভ্রান্ত মতবাদ – মাওলানা জাকির হোছাইন। * জামাতে ইসলামী- নামধারী মওদূদী জামাতের স্বরূপ – মওলানা আজিজুর রহমান (শর্শিনা) * সতর্ক বাণী- মও. মোহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর * জেহাদের আহ্বান ও মওদূদী মতবাদের বাস্তব চিত্র -চরমোনাইর পীর। * মি: মওদূদীর নতুন ইসলাম মুফ. মও. মনসুরুল হক।

* মওদূদীর কলমে নবী-রাসুলগণের অবমাননা- মও. আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী * সংশোধন- মও. শামসুল হক ফরিদপুরী * জামাতে ইসলামী কোন পথে- মুফ. মুফাজ্জল আলী । ভারত থেকে প্রকাশিত (মাত্র কয়েকটি ): -------------------------------------------------------------- * ইসলাম কি চার বুনিয়াদী ইস্তেলাহী- হাকীমুল উম্মত মুফতী আহমদ এয়ার খান নঈমী রহ. * জামাত ইসলামী কা শীষ মহল- মাওলানা মোস্তাক আহমদ নিজামী * ইসলামী ইউনিফরম- মও. হোছাইন আহমদ মদনী * জামাতে ইসলামী সে মুখালিফত কিউঁ- মও. হাবীবুর রহমান * আয়েনায়ে তাহরীকে মওদূদিয়ত- মও. মুফতী মাহদী হাসান * দারুল উলুম কা এক ফতোয়ায়ে হাকীকত – মও. কারী তৈয়ব * তাহরীকে জামাতে ইসলামী- মও. দাউদ রায় * মওদূদী কা উল্টা মাযহাব- মুফতী মাহবুব আলী খান * দেওবন্দ কা এক না দান দোস্ত – মও. নাজমুদ্দীন * নয়া মাযহাব- মও. দাউদ রায় * ফেতনায়ে মওদূদী- মও. জাকারিয়া * তফসীর বির রায় কা শরয়ী হুকুম – মুফতী সৈয়দ আবদুর রহীম * তদবীর কা দোসরা রুখ- মও. আবদুল কুদ্দুস মওদূদীর দেশ পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত (মাত্র কয়েকটি): -------------------------------------------------------------- * মোকালামায়ে কাজেম।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।