"আপনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে কি বলবেন?"
"তাঁকে নিয়ে বলার কী আছে?"
"উনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম নোবেল বিজয়ী। ভারতের একটি আঞ্চলিক ভাষার কবি হয়েও বিশ্ব জয় করতে পেরেছিলেন। "
"আরে, উনি ছিলেন জমিদার পুরুষ। দিনরাত প্রজা ঠ্যাংয়িয়ে রাতে বজরায় বসে গান লিখতেন। উনার লিংক ছিল ভাল।
ঐরকম লিংক থাকলে যে কেউ নোবেল পেয়ে যায়। উনি দেশের জন্য কিছু করেছেন? কয়েকটা প্রেমের গান লেখা ছাড়া আর কিছু করেছেন জীবনে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতা করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশ চাননি। আর আমরা বেকুব বাঙ্গালীরা উনারই লেখা গানকে জাতীয় সঙ্গীত বানিয়ে বসে আছি। বেকুব আর কারে কয়! আর শুনেছি, উনার নাকি উনার ভাবীর সাথেও অবৈধ প্রেম ছিল?"
"আহেম(গলা পরিষ্কার করে)! আর কাজী নজরুল ইসলাম?"
"ঐ ব্যাটাতো আস্ত নাস্তিক! মুসলমান হয়ে লিখেছেন শ্যামা সঙ্গীত! বিয়ে করেছেন হিন্দু মহিলাকে।
ছেলের নাম রেখেছেন সব্যসাচী! সব্যসাচী কে ছিল জানো?"
"জানি। অর্জুনের এক নাম ছিল সব্যসাচী!"
"তাহলেই বুঝো। আর তাঁর ক্যারেক্টারেও সমস্যা ছিল। মেয়ে দেখলেই প্রেমে পরে যেতেন। "
"হুমায়ূন আহমেদ? বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যিক সম্পর্কেও কি একই কথা বলবেন?"
"উনাকে নিয়ে বলার কিছু আছে? নিজের মেয়ের বান্ধবীকে যে বিয়ে করে ফেলে, তাকে নিয়ে কথা বলবার রুচি আমার নেই।
"
"তাহলে ড. মুহম্মদ ইউনুস সম্পর্কে আপনার রাগের কারণ বোধয় আমি বুঝতে পারছি। "
"অবশ্যই! ঐ ব্যাটা একটা সুদখোর! গরীবের সবকিছু কেড়ে নিয়ে নিজে টাকার পাহাড় গড়ছে। দেশকে কিছু দিয়েছে সে?"
"প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে তিনি নোবেল বিজয় করেছেন। "
"হাহাহাহা! একজন ইকনমিস্টকে কখনও শান্তিতে নোবেল বিজয় করতে দেখেছে কেউ? ঐ রকম সাহেবদের পা চাটতে পারলে যে কেউ নোবেল জিততে পারে। "
"কিন্তু ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি থীয়রিটিক্যালি যথেষ্ট যৌক্তিক।
এই থিওরি অ্যাপ্লাই করে অনেক দেশ দারিদ্রমুক্ত হচ্ছে। ঋণের টাকা ঠিক মত খাটিয়ে কেউ যদি নিজের ভাগ্য বদলাতে না পারে, সেটার দায় কী করে তার প্রবর্তককে নিতে হবে? আমি যদি পরীক্ষার খাতায় নিউটনের সূত্রগুলো না লিখতে পারি, এবং মনে মনে নিউটনকে গালাগালি করি....ব্যপারটা কি অনেকটা সেরকম নয়?"
"যা জানোনা, তা নিয়ে কথা বলতে এসোনা। গরীবের টাকা মারা ছাড়া উনি আর কিছু করেছেন? যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে উনার ভূমিকা কী?"
মঞ্জুর আর তর্ক বাড়ালো না। বিখ্যাত উক্তিটি মনে পড়ে গেল, "মূর্খের সাথে তর্কে যেওনা। মূর্খ তোমাকে নিজের অবস্থানে নামিয়ে এনে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই তোমাকে হারিয়ে দিবে।
"
পরিশিষ্ট: পুরো কথোপকথন শেষে জনাব মোজাম্মেল হকের শিশু পুত্র রাইয়িদ তার বাবাকে বলল, "বাবা! আমি বড় হয়ে এই দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে চাইনা। ওরা কারও অবদানের সঠিক মূল্য দিতে জানেনা। "
পাদটিকা: ড. ইউনুসকে নিয়ে রাজনীতিবিদদের টানা হ্যাচরা বন্ধ করা উচিৎ। এখন একটি পত্রিকা গুজব রটিয়ে দিয়েছে, তিনি নাকি কাদের মোল্লাকে বাঁচাতে আন্তর্জাতিক নেতাদের অনুরোধ করেছিলেন। ফালতু মন গড়া খবর রটাতে শুধুমাত্র "বাঁশের কেল্লার" দোষ দিয়ে লাভ নেই।
আরও অনেকেই আছেন একই কাতারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।