আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্পেস-০০৪ (সায়েন্স ফিকশন)

এখনো সবুজ শৈশবে ভর করে লাখো স্বপ্ন বুনি দিন রাত

নিশির এখনো আসে নি, এদিকে শিপ ছেড়ে দিবে একটু পরেই, আজকাল সব কিছুই সময় মতো হচ্ছে না। চারিদিকে কেমন অমনোযোগী তাড়াহুড়া, সবাই কেমন জানি ভাবশুন্য! তাপায়া অটো ইমো তে মিউজিক প্লেয়ার অন করে সাত হাযার ফুত উঁচুতে স্পেস স্টেশন এ অপেক্ষা করছে, আজ দুজনার ইমাইন এর সাথে দেখা করবার কথা। তাপায়া আর নিশির একসাথে ১২ বছর ধরে মিল্কি০০৪২১ স্পেসশিপ নির্মাতা কোম্পানির সাথে কাজ করছে। ১২ বছরে নিশিরের আসতে কোনও দিন ও দেরি হয় নি , ঠিক সময়ে চলে এসেছে। দুই ঘণ্টা চলে গেছে।

প্লেয়ার এর ইমো চেঞ্জ হয়ে হেভি মেটাল বাজা আরম্ভ করেছে, নিশির আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করছে তার মাথায় কোনও চেঞ্জ অনুভূত হয় নি কিন্তু গানের জেনার চেঞ্জ হয়ে গেছে! আজকাল সব অবাক করা ঘটনা হচ্ছে। ৪ ঘণ্টা পর নিশির এলো। ওকেও আজ কেমন জানি উদ্ভ্রান্ত দেখাচ্ছে। -ডাউন স্পেস এ একটু ঝামেলা ছিল বলে আসতে দেরি হল, ইমাইন ফোন করেছিল আজ আর দেখা হবে না, বলেছে নেক্সট মিটিং টাইম জানিয়ে দিবে। নিশির এবার বুঝতে পারলো মাথায় রাগ রাগ অনুভুতি হচ্ছে।

এতক্ষণ অপেক্ষা কররা পর যদি কাজ টাই না হবে তাহলে যে কারো মাথা গরম হতে বাধ্য। নিশির ইডিবল পেপারে প্যাঁচানো দুইটা পটেটো সটীক বের করে একটা খাওয়া শুরু করে দিল, তাপায়া বুঝতে পারলো ওর খিধে পেয়েছে তাই ওকে দেবার কথা ভুলে আগেই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। শেষ মেশ দিল ! -তাপায়া চলো আজকে লাস্ট রেঞ্জে যাই, আর কোনও কাজ নেই আজকে। আর হাতে আরও অনেক সময় আছে। -চলো প্রায় দুই ঘণ্টা হেটে তারা লাস্ট রেঞ্জের একে বারে প্রান্তে এসে গেছে।

এই জায়গায় খুব ঘন ঘন যাতায়াত নিশিরের। কাছেই একটা মদের দোকান এটা কোনও দিন সে বন্ধ দেখেনি। আজ থেকে ৪০০ বছর আগে যখন নিশির তার মায়ের সাথে সাত হাযার ফুট উঁচুতে এসে পৃথিবী ছেড়ে স্পেস ০০৪ এ বসবাস শুরু করে তখন এইদিক টায় আসা নিষেধ ছিল, কারন এখান থেকে নিচে পৃথিবীর’র অনেক কিছু দেখা যায়। -নিশির তুমি এখানে কি পৃথিবী দেখার জন্য এসেছ? তুমি জানো এই কাজ স্পেস অথোরিটি দেখলে ৩০ বছরের জেল সাথে সব ফেসিলিটিস ১০০০ বছরের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। নিশির কে আজ অসম্ভব রকমের ভাবশুন্য দেখাচ্ছে।

তাতায়া বুঝতে পারে কোনও ঝামেলা নিশ্চয়ই হয়েছে। নিজে থেকে ও কিছু জিজ্ঞেস করে না, জানে একটু পরেই ও সব বলে দিবে। -তাতায়া আমার এইসব ভালো লাগে না, কি হবে এতোদিন বেচে? - মানে?? - আমার মনে হয় কোথাও একটা ঝামেলা হচ্ছে কোথাও আবার আমাদের শিফট করা হবে , হয়তো অন্য কোথাও এর চাইতেও খারাপ বা ভালো জায়গায়। হয়তো তোমার বা আমার জায়গা আলাদা হবে। আতঙ্কে তাতায়া নিসচুপ হয়ে গেল, ওর হাত ঠাণ্ডায় কাপা শুরু করেছে।

ও নিশিরের দিকে তাকিয়ে - সেটা ঠিক আছে পরে ভেবে দেখা যাবে , কিন্তু ঐ বেচে থাকা নিএ কি যেন বলেছিলে? - বলেছিলাম আমার স্পেস এর নিয়ম বেচে থাকা মরে যাওয়া কিছুই ভালো লাগে না, এতো দিন বেচে থাকা অর্থহীন, দেখ আমরা যারা একসাথে এসেছিলাম তাদের কেউ আর নেই। তুমি হয়েছ স্পেস ০০৪ এ, আমার ৪০ বছর পর তোমার সামনে আরও ১০০০ বছর বাকি। চুপ চাপ দুইজন দেখছে নিচের অদ্ভুত একটা সবুজ গোল মাঠের মতো পৃথিবী। স্পেস প্রোটোকল এর আওতায় আজ থেকে ২০০০ বছর আগে পৃথিবীর কিছু নির্বাচিত লোকেদের নিয়ে স্পেস০০৪ শুরু হয়। গ্রাভিটেসন থিওরি’র ১২ টা বাজিয়ে একদন বিজ্ঞানি আবিস্কার করল ইচ্ছা মতো উচ্চতায় বাস করার এক পদ্ধতি।

দূষণ মুক্ত এক বাসস্থনের আশায় মানুষ পাড়ি জমাতে শুরু করে মহাশুন্নের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। এর মধ্যে জায়গা ভাগা ভাগি নিয়ে পৃথিবী তে শুরু হয় এক বিধ্বংসী যুদ্ধ! কেউ মরতে চায় না সবার চাই অমরত্ব ক্ষমতা আর মহাকাশে বসবাসের সুবিধা। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে টিকে ছিল বাংলাদেশ নামের ছোট দেশ যার কিনা এই বিবাদেই জেতে হয় নি। নিশিরের মা ছিল বাংলাদেশি। এখনো নাকি বাংলাদেশ নামক ঐ জায়গায় সল্পআয়ূর মানুষেরা বেচে আছে।

তারা ডিএনএ প্রোফাইল চেঞ্জ করেনি, তারা পৃথিবীর নিয়ম মতো বেচে থাকতে চেয়েছিল, তাই তাদের যুদ্ধও করতে হয় নি। নিশিরের মা নাসা নামে পৃথিবীর সবচাইতে উন্নত কোনও রিসার্চ প্লান্টে স্পেসশিপ ডিজাইন এ কাজ করত। সেই সুবাধে সবার আগে স্পেস০০৪ এ নিশিররের মা ও নিশির চলে আসে/তাদের আসতে বাধ্য করায় নাসা যখন নিশিরের বাবা বাংলাদেশে ছিল। এখানে এনেই নিশিরের মা ও তার ডিএনএ প্রোফাইল চেঞ্জ করে দেয়া হয়। রাখা হয় স্পেসটারমিনেশন সেন্টারে যেখানে তাদের আর তাতায়ার জন্ম এখানেই।

ওর বেড়েওঠা প্রশিক্ষণ সব এখানেই। ওর বয়স ১৬০ আর নিসিরের ২০০। হঠাৎ করেই তাতায়া কিসের একটা আওয়াজ পেল, ব্যাগে ঘড়ি টিক টিক আওয়াজ করছে। - নিশির চলো উঠি এদিকটা আজকে আর নিরাপদ নয়। - তাতায়া এইখানেই আজকে সারা রাত থাকবো, হিসাব মতে আজকে ডিসেম্বর ১৮ বিশাল আকারের চাঁদ উঠবে আর আজকে স্পেস০০৪ এর জন্মবার্ষিকী ! আমার ঐ দিকে জেতে ইচ্ছা করছে না মাতা মাতি আর হুড়াহুড়ি।

এর চাইতে এখানেই থাকি, আজকে গার্ড বের হবে না সবার ছুটি। যদিও ঠাণ্ডা বেশি, তুমি এখানে বস , খাবার কিছু নিয়ে আসছি। আচ্ছা নিশিরের কথা মতো যদি আমাদের আসলেই আবার অন্য কোথাও নেয়া হয় তাহলে? আবার যদি দুইজনের স্পেস একি না হয়। (চলতেও পারে নাও পারে...... গল্প টা ! )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।