আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হে ঈশ্বর, আমাদের মুরগীর কলিজা দিন!

মাঝে মাঝে বৃষ্টি দেখে হাত বাড়ানোর ইচ্ছে জাগে... ভেতর ভেতর যাই পুড়ে যাই, কেউ জানেনা আমার আগে...

ছোটবেলা দাদী আমাকে মুরগীর কলিজা খেতে দিতেন না। তার ধারণা, মুরগীর কলিজা ছোট, এই কলিজা খেলে আমার কলিজাও ছোট হয়ে যাবে। সেই ছোট কলিজা নিয়ে আমি হবো ভীরু-কাপুরুষ! কারণে অকারণে ভয়ে আমার সেই ছোট কলিজা শুকিয়ে আরও ছোট হয়ে যাবে! পুলিশের খাকি পোশাক কিংবা রক্ত দেখলেই আমার ছোট কলিজা থরথর করে কাঁপতে থাকবে। সমস্যা হচ্ছে মুরগীর কলিজা না খেয়েও আমার কলিজা ছোট হয়েই আছে। এই কলিজা কারণে অকারণে ভয়ে শুকিয়ে যায়।

আমি কুরবানির সময় গরু জবাই দেখতে পারি না, গাঁও-গ্রামে চোর ধরা পড়লে মানুষ মহাআনন্দে নিয়ে চোর পেটায়, আমি সেই চোর পেটানোও দেখতে পারি না। এবার গ্রামে গেছি। বাজারের মাঝখানে দেখি ছোটখাট এক জটলা। সেই জটলার কাছে গিয়ে দেখি, সৌম্য শান্ত চেহারার বৃদ্ধ এক দোকানী কি করে যেন গোটা দুই ইঁদুর ধরে ফেলেছেন। এই ঈদুরের উৎপাতে তার দোকানের মালামালের দফারফা।

কিন্তু ইদুরের কোন গতিই তিনি করতে পারছেন না। আজ দুই মহা ত্যাদরকে ধরতে পেরে তার আনন্দের সীমা নেই। তিনি সেই দুই ইঁদুরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়েছেন, এখন আগুন দিবেন, উৎসুক জনতা কৌতূহল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কখন আগুন দেয়া হবে। জ্বলন্ত শরীরে খানিকবাদেই ঈদুর দুইটা দিগ্বিদিক ছুটবে, একসময় পুরে ছাই হয়ে যাবে। কি চমৎকার দৃশ্য! এই দৃশ্য মিস করা মানে মানব জনম বৃথা!! ভয়ে আমার কলিজা আবারো শুকিয়ে গেল! আমি হতভম্ব গলায় বললাম, 'চাচা মিয়া, আপনি কি মানুষ?' এই কথায় সবাই মিলে যেন আকাশ থেকে পড়ল, 'কি সমস্যা তোমার?' আমি মিনমিনে গলায় জবাব দিলাম, 'আমার আর কি সমস্যা? এমনে কইরা কেরোসিন ঢাইলা আপনেগো গায়ে আগুন দিলে বুঝতেন, সমস্যা কার?' ওনারা রীতিমত বিরক্ত! চোখের সামনে কি চমৎকার একটা খেলা মিস হয়ে যাচ্ছে! আহা! কেউ একজন রেগেমেগে বলেই ফেললেন, 'ওই ব্যাটা, ইন্দুর আর মানুষকি এক নাকি?' এই বক্তব্য ফেলে দেয়ার মত বিষয় না।

গভীর চিন্তার বিষয়। আমি গভীর চিন্তায় পড়ে গেলাম। সম্ভবত তেনারাও। কারণ পুড়িয়ে ইঁদুর মারার পরিকল্পনা কার্যকর হোল না। অন্য উপায় নিয়ে তারা ব্যস্ত হয়ে গেলেন।

বছরখানেক আগে, বিশ্বজিৎ নামের এক ছেলেকে রাস্তায় ছাত্রলীগের কিছু ছেলেকুপিয়ে মেরেছে। সেই দৃশ্য নিয়ে দেশের মিডিয়ায় তোলপাড়। আমি আমার মুরগীর কলিজা নিয়ে সেই দৃশ্য দেখবার সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারিনি। কিন্তু কোন কুক্ষণে যেন সেই দৃশ্য আজ টিভিতে দেখলাম। আমার সেই মুরগীর কলিজা কেমন কেমন করে যেন স্বাভাবিক থেকে গেল।

আমি এই স্বাভাবিকত্বের কারণ খুঁজে পেলাম না। একসময় আমার মনে হোল, আমার ভেতরে একধরণের অদ্ভুত ভাবনা হচ্ছে, সেই ভাবনা জুড়েই একটাই উপলদ্ধি, 'এই দৃশ্য বাস্তবের কোন দৃশ্য না। এটি কোন সিনেমার শুটিং। সেই সিনেমা দুর্বল চিত্তের লোকজনের দেখা নিষেধ। এই শুটিঙের দৃশ্যে যারা অভিনয় করেছে, তারা অতি উঁচুমানের অভিনেতা! তাদের অভিনয়শৈলীর গুণে দৃশ্য বাস্তব মনে হয়েছে।

কিন্তু বাস্তবে এমন কোন ঘটনা ঘটা সম্ভব না! সম্ভব না!! কখনোই সম্ভব না'!! আমি নিজের কলিজার এই প্রবোধ নিয়ে চুপচাপ বসে আছি। তখন দেখি সেই খুনিগুলা খুব স্বাভাবিকভঙ্গীতে হেঁটে যাচ্ছে, তাদের মুখভর্তি হাসি, তারা দম্ভভরে চিৎকার করছে। সেই চিতকারে তারা জানান দিচ্ছে, তাদের কেউ কিছু করতে পারবে না! এইখানে এসে আমার মুরগী কলিজা ভয়ে শুকিয়ে গেল!! মনে হল, ওদের কলিজাটা কত বড়? কিসের কলিজা? আমি জানি না। আমার কেবল মনে হয়, ঈশ্বর ওদের কলিজাটা ছোট করে দাও। একেকটা মুরগীর কলিজার মতন!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।