মেজর ডালিমের
লেখাটি সরাসরি তুলে ধরা হল, কোন
যোজন-বিয়োজন করা হয় নি ।
===============
===============
=========
জনগণের স্বতঃস্ফুর্ততা এবং সমর্থন
দিয়েছিল নৈতিক স্বীকৃতি এবং সংসদে দুই
তৃতীয়াংশ ভোটে গৃহিত পঞ্চম
সংশোধনীর মাধ্যমে দেয়া হয়েছিল
সাংবিধানিক স্বীকৃতি।
বস্তুতঃ শেখ মুজিব তার নিজের ও
পরিবারের
ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী একটা ভিত্তি দেয়ার
লক্ষ্যেই বাকশালী স্বৈরাচার কায়েম
করেছিলেন। এভাবেই যুগযুগ
ধরে স্বৈরাচারী শাসকরা আর্বিভুত হয়।
এরা একই নিয়মে ক্ষমতা কুক্ষিগত
করে।
জামার্নীর হিটলারের উত্থান
ঘটেছিল এভাবেই।
নাৎসী পার্টি তাকে মহামানব আখ্যায়িত
করেছিল। বাকশালীরাও শ্লোগান
তুলেছিল, “এক নেতা, এক দেশ,
বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। ”
ফলশ্রুতিতে মুজিব পরিণত হয়েছিলেন,
একজন স্বৈরাচারী রাষ্ট্রনায়কে।
ইটালীতে মুসোলিনির আবির্ভাবও
ঘটেছিল একই প্রক্রিয়ায়।
আওয়ামী লীগের শাসনামল ছিল
বর্বরতার নজীরে পূর্ণ। সংসদীয়
গণতন্ত্রের
গলা টিপে হত্যা করে একদলীয়
ব্যবস্থার প্রবর্তক। সংবাদপত্রের
স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, মৌলিক
অধিকারসহ সকল রাজনৈতিক অধিকার
হরণ করা হয়েছিল। জাতি কখনোই এই
কলংকিত ইতিহাসের কথা অন্তর
থেকে মুছে ফেলতে পারে না। আওয়ামী-
বাকশালী শাসনামল ছিল মূলতঃ হত্যার
ইতিহাস, নারী নির্যাতনের ইতিহাস,
লুণ্ঠনের ইতিহাস, শোষণের ইতিহাস,
চোরাচালানের ইতিহাস, দেশের
স্বাধীনতা-সার্ব ভৌমত্ব ভারতীয়
সম্প্রসারণবাদের পায়ের তলায়
লুটিয়ে দেবার ইতিহাস, জাতীয়
অর্থনীতিকে বিকিয়ে দেবার ইতিহাস,
রক্ষীবাহিনীর শ্বেত সন্ত্রাসের
ইতিহাস, স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা ও
লাখো শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানীর
ইতিহাস।
রাষ্ট্রীয়করণের
নামে আওয়ামী লীগ ব্যাংক, বীমা, মিল,
কল-কারখানায় হরিলুট করেছিল।
দেশে সম্পদ পাচাঁর করার জন্য
সীমান্তকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিল।
আওয়ামী শাসনামলে অবাধ লুটপাটের
ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে ‘তলাহীন
ঝুড়ি’ আখ্যা পেয়েছিল। আওয়ামী লীগের
আমলে বিদেশী সাহায্যের বেশিরভাগ
মালই ভারতের কোলকাতা ও
বিশাখা পাওম বন্দরে খালাস পেতো।
একাত্তরের যুদ্ধ আর ধ্বংসযজ্ঞের পর
বাহাত্তরে কোন দুর্ভিক্ষ
না হয়ে আওয়ামী লীগের শাসন ও
শোষণের ফলে ’৭৪-এ দুর্ভিক্ষের
সৃষ্টি হয়েছিল।
অনাহারে মারা গিয়েছিল
লাখ লাখ আদম সন্তান। ডাষ্টবিনের
উচ্ছিষ্ট নিয়ে কাড়াকাড়ি করেছিল মানুষ
আর কুকুরে। অনাহারে মৃত ব্যক্তিদের
কলাপাতার কাফনে দাফন করতে হয়েছে।
ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য বন্য লতা-পাতা,
কচু-ঘেচু আর কলাগাছের কান্ড
সংগ্রহে ব্যস্ত জাল
পরা বাসন্তীরা আওয়ামী কুশাসনের
ঐতিহাসিক সাক্ষী। বিপুল পরিমাণ
অর্থের বিনিময়ে সরকারিভাবে ভারত
থেকে সুন্দরী ও সোহাগী নামের দেড় হাত
প্রস্ত ও সাত হাত দৈর্ঘ্য
শাড়ী আমদানি করে আওয়ামী লীগ
বস্ত্রহীন, নিরন্ন ও দুর্ভিক্ষপীড়িত
মানুষের সাথে জঘণ্য মস্করা করেছিল।
জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ঐ কাপড়ের নাম
দিয়েছিল ‘উলঙ্গ বাহার শাড়ী’।
আওয়ামী লীগ ও বাকশাল সরকার তাদের
শাসনামলে এ দেশের
জনগণকে গণতন্ত্রের নামে দিয়েছিল
স্বৈরাচার; সমাজতন্ত্রের নামে শুরু
করেছিল সামাজিক অনাচার;
বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের
নামে জাতিকে করেছিল বিভক্ত; আর
ধর্মনিরপেক্ষতার নামে যুগিয়েছিল
ধর্মহীনতার ইন্ধন। স্বৈরাচারী মুজিব
সরকার সুপ্রীম কোর্টের সাংবিধানিক
ক্ষমতা পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছিল! ১৫ই
আগষ্টের বৈপ্লবিক পরিবর্তন
যদি না হত তাহলে গণতন্ত্রের
বধ্যভুমিতে আজকের শতাধিক
রাজনৈতিক দলকে একদলীয় বাকশালের
ধ্বজা বহন করেই বেড়াতে হত।
এমনকি আওয়ামী লীগ নামক কোন
দলেরও পুর্ণজন্ম হত না। আওয়ামী-
বাকশালীদ ের অনাসৃষ্টির জন্য
বিধ্বস্ত সামাজিক, রাজনৈতিক ও
অর্থনৈতিক অবস্থার
ঘানি দেশবাসীকে অনির্দিষ্টকালের
জন্য টানতে হত।
দেশ স্বাধীন হওয়ার
পর হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র,
গোলাবারুদ, স্বর্ণ, মূল্যবান ধাতু,
যানবাহন, মিল-কারখানার মেশিনপত্র,
কাঁচামাল ভারতের
হাতে তুলে দিয়ে আওয়ামী লীগ সমগ্র
জাতিকে প্রতিপক্ষ করে স্বাধীনতার
সোল এজেন্ট সেজে বসেছিল। এসবের
প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় দেশমাতৃকার
অন্যতম সেরা সন্তান ও বীর
মুক্তিযোদ্ধা মেজর জলিলকে গ্রেফতার
করা হয়েছিল; প্রাণ হারাতে হয়েছিল
বিপ্লবী সিরাজ সিকদার ও
হাজারো মুক্তিযোদ্ধাকে। লাঞ্ছণার
শিকারে পরিণত হতে হয় অনেক
দেশপ্রেমিককে। দীর্ঘমেয়াদী অসম
চুক্তির মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা ও
সার্বভৌমত্ব বন্ধক রেখেছিল
আওয়ামী লীগই। লালবাহিনী, নীলবাহিনী,
স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, রক্ষীবাহিনীসহ
ইত্যাকার নানা রকমের বাহিনী গঠনের
দ্বারা দুঃসহ নৈরাজ্য সৃষ্টি করার মধ্য
দিয়ে বিনা বিচারে ত্রিশ হাজার
থেকে চল্লিশ হাজার রাজনৈতিক কর্মীর
প্রাণ সংহার করার কালো ইতিহাস
আওয়ামী-বাকশালীদ ের দ্বারাই
সৃষ্টি হয়েছিল।
বন্দী অবস্থায়
রাজনৈতিক নেতা জনাব সিরাজ
সিকদারকে নির্মমভাবে পাশবিক
অত্যাচার করে হত্যা করার পর শেখ
মুজিব স্বয়ং সংসদ অধিবেশনে ক্ষমতার
দম্ভে বলেছিলেন, “কোথায় আজ সিরাজ
সিকদার?”
জাতির আশা-
আকাংখাকে জলাঞ্জলি দিয়ে নিজের
ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার
উদ্দেশ্যে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়,
সে ব্যবস্থা টিতে থাকেতে পারে না।
জনসমর্থন ছাড়া কোন ব্যবস্থাই
দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। জাতীয়
বেঈমান ও বিশ্বাসঘাতকরা যখন জাতির
কাঁধে একনায়কতন্ত্র, স্বৈরাতন্ত্রের
বোঝা চাপিয়ে দেয়, জাতীয় স্বার্থ
বিকিয়ে দেয়, ব্যক্তি ও গোষ্ঠি স্বার্থ
হাসিলের জন্য মীরজাফর বা রাজাকার-
আলবদরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তখন
তাদের অন্যায়-অত্যাচার , শোষণ,
নির্যাতন থেকে জাতিকে বাঁচানোর জন্য
তাদের দুঃশাসন উৎখাত করার জন্য
দেশপ্রেমিকদের বিপ্লবের পথ অবলম্বন
করতে হয়েছে যুগে যুগে। একই
যুক্তিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট
বিপ্লব সংগঠিত করেছিল বাংলাদেশ
সেনা বাহিনীর দেশপ্রেমিক অংশ। সেই
বিপ্লব ছিল একটি সফল অভ্যুত্থান।
দেশ ও জাতি মুক্তি পেয়েছিল দাসত্বের
নাগপাশ ও স্বৈরশাসনের শ্বাসরুদ্ধকর
পরিবেশ থেকে। বাকশাল সরকারের
উৎখাত ও মোশতাক সরকারের
প্রতি জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন এ
কথাই প্রমাণ করেছিল জনগণের আশা-
আকাংখার সাথে বাকশালের কোন
সম্পর্ক ছিল না। একদলীয় শাসন
ব্যবস্থার প্রতি জনসমর্থনও ছিল না।
১৫ই আগষ্টের বিপ্লব স্বতঃস্ফুর্ত
জনসমর্থন পেয়ে একটি জনপ্রিয়
অভ্যুত্থানে পরিণত হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।