আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোন এক বেওয়ারিশ রাত্রিতে


১. রাত কয়টা বাজে? গভীর রাত। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। সবাই ঘুমিয়ে আছে। নিশ্চিন্তে নীরবতায়। শুধু একটি বেওয়ারিশ কুকুর চিৎকার করছে।

হয়ত আজ সারাদিন কিছু পেটে পরেনি। কাওকে বলার সুযোগ তার নেই তার। তাই এ চিৎকার। নিজেকে ওই বেওয়ারিশ কুকুরের মতই মনে হয়। ওই কুকুরের হয়ত খাবারের কষ্ট।

তারও খাবারের কষ্ট। হা, খাওয়াই বটে। তা যে রুপেই থাকুক না কেন? হয়তো তা শারীরিক ক্ষুধা নিবারণ করে না। কিন্তু অন্য ক্ষুধা নিবারণ করে। যে ক্ষুধা তাকে প্রতিনিয়ত খেয়ে যাচ্ছে।

হা, সে ড্রাগসে আসক্ত। সিগারেট, গাজা, ফেন্সিডিলের পথ ধরে এখন হেরোইনে আসক্তি। এসব খেলে কিছুক্ষণ সব ভুলে থাকা যায়। অথবা ভুলে থাকার ভণ্ডামি করা যায়। কিন্তু সত্যিই কি ভুলে থাকা যায়? এ গভীর রাতে আজ রিয়ানার কথা খুব মনে পড়ছে।

কেমন আছে রিয়ানা? ভেবে হেসেই উঠল মৃদুল। রিয়ানা ভাল আছে। খুব বেশি ভাল আছে। যার স্বামী কাস্টমসে চাকরি করে তার স্ত্রী ভালই থাকে। অন্তত বাইরে থেকে।

আচ্ছা, যাদের জীবন বিলাসিতায় পরিপূর্ণ তারা কি বাইরে থেকেই সুখী? নাকি ভেতর থেকেও সুখী? Money cannot bring happiness. Damn theory. ভাল থাকার জন্যই ত রিয়ানা তাকে ছেড়ে চলে গেছে। ২. বড় ঘড়িটার শব্দে ঘুম থেকে জেগে উঠলো রিয়ানা। রাত তিনটা বাজে। তবু তার স্বামী প্রবরের আসার কোন নাম ঘন্ধও নেই। ইউরোপ টুরে গিয়েছিল।

আজ সকালে বেক করেছে। মালপত্র পাঠিয়ে দিয়েছে সকালেই। শুধু মানুষটাই আসেনি। নিশ্চয় কোন বারে পরে পরে ড্রিঙ্কস করছে। অথবা কোন ফাইভ-স্টার হোটেলে নগদ অর্থের বিনিময়ে ভালোবাসা কেনা হচ্ছে।

স্বামী প্রবর অবশ্য চেষ্টা করেছিল রিয়ানা কে ভদ্র সমাজের উপযোগী করে তুলতে। কিন্তু ফেল করেছে। বিভিন্ন পার্টিতে নিয়ে যেত তাকে। অনেক চেষ্টা করেও অবশ্য হার্ডড্রিঙ্কস গেলাতে পারেনি তাকে। একবার তো সবার সামনে “ফকিন্নির মেয়ে” বলে গালি দিয়েছিল।

তারপরও চেষ্টার কোন ত্রুটি করেনি রিয়ানা। কিন্তু বাধ ভেঙ্গে গেল সেদিন। যেদিন জব্বার সাহেব, তার পার্টিতে তাকে কুপ্রস্তাব দেন। খুব রেগে গেলে মানুষ হিতাহিত বোধ লোপ পায়। তাই তো এ ধরণের সাধারণ একটি ঘটনাতেও রিয়ানা জব্বার সাহেবের মত একজন আপাদমস্তক ভদ্রলোককে চড় মেরে বসে।

তার স্বামী প্রবর কেন সেটা মেনে নেবে? তিনিও রিয়ানাকে উল্টো চড় মারেন। এবং “You bloody doggy bitch” বলে গালি দেন। তার পর থেকে অবশ্য তিনি আর রিয়ানাকে নিয়ে কোন পার্টি তে যাননি। এ ধরণের কোন ক্ষেত মেয়েকে নিয়ে আর যাই হোক পার্টিতে যাওয়া না। কি নেই তার জীবনে? গুলশানে বাড়ি, দামি গাড়ি।

লিমিটলেস ক্রেডিট কার্ড। তারপরেও কোথায় যেন একটি কষ্ট! আসলে এ বিশাল বাড়িতে একটি সাজানো আসবাব ছাড়া আর কিছুই নয় সে। কিংবা স্বামী প্রবরের............ আচ্ছা, মৃদুল কেমন আছে? ভাল আছে তো? তাকে কি ভুলতে পেরেছে? নিশ্চয় ঘৃণা করে। আর কেনই বা করবেনা? তাদের সম্পর্ক সেই ভেঙ্গে দিয়েছে। কিন্তু কেন সে সম্পর্ক ভেঙ্গে দিয়েছিল তা কি মৃদুল জানে।

না, জানে না। ৩. না, আজকের ডোজ টা একটু বেশি হয়ে গেছে। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। আসলে এ জীবন নামক বোঝা কে যে আর কতদিন বয়ে বেড়াতে হবে তা নিয়ে নিজেই সন্দিহান হয়ে গেছে। সে কি স্বেচ্ছামৃত্যুকে বেছে নিয়েছে? হবে হয়ত।

আচ্ছা, মৃত্যুর পরের জীবনে কি আছে? সেখানে কি শাস্তি অপেক্ষা করছে। হবে হয়ত। আচ্ছা, সে শাস্তি কি এ শাস্তির থেকে ভয়ানক? না, চিন্তাগুল জড়িয়ে যাচ্ছে। আরেক ডোজ নিতে হবে। খুব বেশি প্রয়োজন।

খুব বেশি.........। । ৪. গাড়ীর শব্দে তন্দ্রা ভেঙ্গে যায় রিয়ানার। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকেন তার জীবন সঙ্গিনীর দিকে। ওনি যে আজ একা আসেননি।

সঙ্গিনী নিয়ে এসেছেন। দিব্বি ঢুকে যান তার বেডরুমে। সেই সঙ্গিনী হথাত বলে উঠেঃ আচ্ছা, ওই মহিলা কে? She? My slave. দুইজন অট্টহাসিতে মেতে উঠে। হাসি চলতেই থাকে। দরজা বন্ধ হয়ে যায়।

রিয়ানার ঘুম আসছে না। কিছুতেই ঘুম আসছে না। কিন্তু তাকে ঘুমুতেই হবে। দেখি, এক মুঠো স্লিপিং পিলেও কি ভাবে ঘুম আসে না। একি শহরের দুই প্রান্তে দুই জন নর-নারী একি রাত্রিতে বিদায় নেয়।

এই গতিময় শহরের তাতে কি যায় আসে? সে তার নিজস্ব গতিতে চলতেই থাকে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।