আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২২ ডিসেম্বর

...............................................................................................................................................................।

ঘড়ির কাটায় টিক টিক শব্দ ১২ টা’র কাটা ছুই ছুই। ডিং ডং ডিং… প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বারবার,হুমম!১২টা বেজে গেছে,ক্যালেন্ডারের পাতায় নতুন দিন স্থান পেয়েছে,আজ ২২ ডিসেম্বর রুদ্রের জন্মদিন। আসুন আমরা সবাই মিলে সেলিব্রেট করি,একসাথে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই… ‘শুভ জন্মদিন’। সেলিব্রেটির তোকমাটা গায়ে জড়ায়নি এখনো,তাই এই মধ্যরাতে শুভাকাংখীরা চমকে দিয়ে কেক নিয়ে হাজির হননি রুদ্রের দরজায়।

তবে ১২ টা বাজতেই ফোন কলে চাপ বাড়তে শুরু করেছে…ছিল খানিকক্ষন! মিনিট পনেরো হবে। কাছের মানুষজন ফোনে করে স্বল্পসময়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। এখন বিজ্ঞানের যুগ চলছে,নতুন নতুন গ্রহের সন্ধান খুজতে ব্যস্ত বিজ্ঞানীরা,বাস্তবিক জীবনের বাহিরে মানুষের জন্য ইন্টারনেটের দুনিয়ায় নতুন এক পৃথিবীর সন্ধান করে দিয়েছে জুকারবার্গ। ফেসবুক!রুদ্র এ যুগের সহচারী হয়ে তাই এ জগতের বাহিরে নিজেকে রাখতে পারেনি। জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা জমা হতে শুরু করেছে রুদ্রের ফেসবুক ওয়ালে।

রুদ্র চোখ মেলে আছে ফেসবুকের পাতায়,বন্ধুদের শুভেচ্ছার জবাব দিচ্ছে। রাশিচক্রে রুদ্রের বিশ্বাস নেই। তবুও প্রতিদিন পত্রিকার রাশিচক্রের পাতাটায় একবার হলেও চোখ বুলানো তার চাই-ই চাই। কাগজে মোড়ানো খবরের কাগজ সকালের আগে কোনভাবেই পৌছাবেনা। আজ বিশেষ দিন,আর তর সইছেনা রুদ্রের,রাশিচক্রটা দেখে নেয়া দরকার,এই বিশেষ দিনটা কেমন যাবে,বিশেষ কী-ইবা অপেক্ষা করছে তার জন্য,হোক না তা মানুষের কল্পনা,তবুও, আশার বার্তা মানুষের মনকে খানিকক্ষন হলেও আনন্দে রাখতে পারে।

ইন্টারনেটের এই দুনিয়ায় পিছিয়ে পড়ার কোন কারন থাকতে পারেনা,রুদ্র পত্রিকার অনলাইন সংস্করনে চোখ বুলাতে লাগলো,অনলাইনে পত্রিকা পড়া রুদ্রের পছন্দ নয়,খবরের কাগজ হাতে নিয়ে চোখ বুলাতে যে ভিন্ন আমেজ পাওয়া যায় তার সাথে কম্পিউটারের সামনে চোখ রেখে পড়ার কোন তুলনা হতে পারেনা। কিন্তু আজ বিশেষ দিনে রুদ্র সেই বিরক্তি মুছে অনলাইনে চোখ বুলাল,বৈশ্বিক খবরাখবরের দিকে তার দৃষ্টি নেই,তার মনোযোগ রাশিচক্রের পাতায়। কিন্তু একি!রাশিচক্রের পাতায় আজ কিছুই নেই। কন্যা,তুলা,বৃষ,সিংহ,মকর কোন রাশিচক্রের নামই চোখে পড়ছেনা। সুস্পষ্ট অক্ষরে একটি বাক্যই চোখে পড়ছে-‘অনিবার্য কারনবশত আজকের রাশিচক্র পাতা প্রকাশিত হলনা’।

রুদ্রের মন প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেল,অন্য পত্রিকাগুলোর ওয়েবসাইট খুলে দেখবার ইচ্ছে হলনা। অন্যদেরটা তার মনপুত নয়,এই পত্রিকায় যিনি লিখেন তার বেশ নাম ডাক,জনমনে অনেক সমাদৃত। নিজের মনকে বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে এই মধ্যরাতেই ফোন দিলেন ঐ জোতিসকে,যিনি ঐ পত্রিকায় রাশিচক্রের পাতায় লিখে থাকেন। -হ্যালো,স্লামালাইকুম! -ওয়ালাইকুম আসসালাম! -দুঃখিত!আপনাকে এই মধ্যরাতে ফোন দিয়ে বিরক্ত করার জন্য! -আচ্ছা ঠিকাছে…কী বলবেন বলুন! -আজকে রাশিচক্রের বিষয়ে কিছু লিখেননি কেন?? ………………………………………… -আপনি রাশিচক্রে বিশ্বাস করেন? -বিশ্বাস অবিশ্বাসের কিছু নেই,এই পাতাটি আমি প্রতিদিনই পড়ি,ভালো লাগে,আমার রাশিতে ভালো খারাপ যে সংবাদই থাকুক না কেন। -ও,আচ্ছা!তাহলে এই মধ্যরাতে হঠাত রাশিচক্রের বিষয়ে তলব।

-আসলে আজকে আমার জন্মদিন!তাই রাশিচক্রে আমার দিনটি কেমন যাবে কেন জানি এটা একটু জানতে ইচ্ছে করছিল। -দেখুন!আপনারা এ যুগের সন্তান,এসবে অতিমনোযোগী হওয়া আপনাদের ঠিক বেমানান,আর সৃষ্টিকর্তাই সব শক্তির ঊর্দ্ধে,উনার ইশারা ছাড়া কোন কিছুই হয়না,আপনি ভালোই জানেন। রাশিচক্রের বিপদবার্তা দেখে নিজেকে ঐ দিনের জন্য সতর্ক রাখার চেয়ে প্রতিটা দিনই আমাদের সমান গুরুত্ব দিতে হবে,আপনাকে সতর্কতার সাথে চলতে হবে। আপনার তীব্র ইচ্ছাকে সমীহ করে আমি আপনারটা বলে দিচ্ছি তবে এসবে দৃঢ় মনযোগী না হয়ে নিজ কর্মের দিকে সচেষ্ট থাকবেন আর সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রেখে চলবেন। আজ তো ২২ ডিসেম্বর,আপনি মকর রাশির জাতক।

যা দেখা যাচ্ছে সর্বসাকুল্যে আজকের দিনটি আপনার জন্য শুভ! -হুমম…!আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ………… …… রুদ্র এবার খুশিমনে নিদ্রাযাপনে প্রস্তুত হল। জোতিসের কাছ থেকে শুভবার্তা পাওয়া গেছে। তাহলে পুর্বের পরিকল্পনাই বহাল থাকবে। সকালবেলা উঠেই শুরু হল তথ্য সংগ্রহের কাজ।

ইতিহাসের পাতায় এই দিনটি কম গুরুত্বপূর্ন নয়,ভৌগলিক দিক থেকে এ দিনটির একটু আলাদা গুরত্ব রয়েছে। ভৌগলিক তথ্যাদি পর্যালোচনা করলে এমন কিছু তারিখ সম্পর্কে জানা যায় যে তারিখগুলোতে- দিন রাত্রি সমান,সবচেয়ে বড় রাত্রি কিংবা সবচেয়ে বড় দিন এমন কিছু বিশেষত্ব আছে,২১ জুন,২৩ সেপ্টেম্বর এই তারিখগুলোর সাথে ২২ ডিসেম্বর তারিখটিও লিখা রয়েছে। আর বেশ নামকরা অনেক মনীষীরও জন্মহয়েছে এই তারিখে। সুতরাং রুদ্রের জন্মতারিখটা খুব অপয়া তারিখে পড়েনি। (না,জন্মদিনটা তাহলে খুব অপয়া তারিখে পড়েনি।

)। প্রাত্যহিক কাজ শেষ করে বিকেলে বন্ধুদের আমন্ত্রিত পার্টিতে যোগ দিতে হবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা,সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত অবধি এইখানেই বন্দি থাকতে হবে,অতপর প্রশান্তির ক্লান্ততা নিয়ে বাসায় ফিরতে হবে। সুতরাং তার আগেই সেরে ফেলতে হবে সেই গুরত্বপূর্ন কাজটি। ভার্সিটি থেকে ফেরার পথেই অবরুদ্ধ করতে হবে নাবিলাকে।

-কেমন আছ,নাবিলা? -ভালো!আপনি কেমন আছেন? -হুমম!ভালো। নাবিলা…… -হুমম…কি? বলেন… -একটু সময় হবে? -হুমম!হবে, একটুই হবে…সময়টা যেন একটুর বেশি অতিক্রম না করে -হা হা…হুম। …… ভার্সিটির একটা অপরিচিত ক্যান্টিনে বসে আছে দুজন। অপরিচিত এই অর্থে যে,অন্য ক্যান্টিনগুলো থেকে এখানে মানুষের সমাগম একটু কম। -আজকে তারিখটা যেন কত? -২২ ডিসেম্বর।

এই তারিখের সাথে ভৌগলিক পরিবর্তনেরও কী যেন একটা বিরাট মিল আছে। সবচেয়ে বড়দিন,সবচেয়ে বড় রাত্রি কিংবা দিন-রাত্রি সমান এমন একটা কিছু এই তারিখেই। -তাই নাকি? -হুমম!আর এই তারিখেই কিন্তু বিখ্যাত মনীষী…জন্মগ্রহন করেছেন -ওরে বাবা…তাহলে তো এই দিনটা’র গুরত্ব অনেক। আজ রাশিচক্রেও দেখলাম,আমার আজকের দিনটিতে অধিকাংশ রাশির জাতক-জাতিকাদের দিন শুভ। সেদিন একটা উপন্যাসে পড়েছিলাম এক ছেলে তার জন্মদিনে একটা মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল,এবং মেয়েটি জানতো যে আজ ছেলেটির জন্মদিন,তারা দুজনেই পূর্বপরিচিত,ছেলেটির বিশেষদিনে মন খারাপ হয় এমন কাজ করা ঠিক হবেনা ভেবে মেয়েটি ছেলেটির প্রস্তাবে হ্যা বলেছিল।

উপন্যাসে লেখক সেদিনটির তারিখ হিসেবে ২২ ডিসেম্বর ব্যবহার করেছেন। -বাহ!... -জানতো আগামীকাল ক্যাম্পাসে একটা আবৃত্তি সন্ধ্যার আয়োজন বসছে,আমি ঠিক করেছি হেলাল হাফিজের এই কবিতাটাই আবৃত্তি করবো,দেখতো কেমন হবে? রুদ্র তার ডায়েরিটা মেলে নাবিলার দিকে বাড়িয়ে দিল। নাবিলা পড়ছে আর মিটিমিটি হাসছে,রুদ্র বিরতিহীন পলকে তাকিয়ে রইল নাবিলার দিকে। ‘কেউ জানে না আমার কেন এমন হলো । কেন আমার দিন কাটে না রাত কাটে না রাত কাটে তো ভোর দেখি না কেন আমার হাতের মাঝে হাত থাকে না; কেউ জানেনা ।

নষ্ট রাখীর কষ্ট নিয়ে অতোটা পথ একলা এলাম পেছন থেকে কেউ বলেনি করুণ পথিক দুপুর রোদে গাছের নিচে একটু বসে জিরিয়ে নিও, কেউ বলেনি ভালো থেকো। সুখেই থেকো! যুগল চোখে জলের ভাষায়, আসার সময় কেউ বলেনি মাথার কসম আবার এসো । জন্মাবধি ভেতরে এক রঙিন পাখি কেঁদেই গেলো শুনলো না কেউ ধ্রুপদী ডাক, চৈত্রাগুণে জ্বলে গেলো আমার বুকের গেরস্থালি বললো না কেউ; তরুণ তাপস, এই নে চারু শীতল কলস । লন্ডভন্ড হয়ে গেলাম তবু এলাম । ক্যাঙ্গারু তার শাবক নিয়ে যেমন করে বিপদ পেরোয় আমিও ঠিক তেমনি করে সভ্যতা আর শুভ্রতাকে বুকে নিয়েই দুঃসময়ে এতোটা পথ একলা এলাম শুশ্রূষাহীন ।

কেউ ডাকেনি তবু এলাম, বলতে এলাম- ভালোবাসি!’ নাবিলা ভালো করেই জানে উপন্যাস নিয়ে রুদ্র যা বলেছে তা সত্য নয়,কাল ক্যাম্পাসে আবৃত্তি সন্ধ্যার আয়োজন বসছে ঠিক,কিন্তু আবৃত্তিকার রুদ্রের নাম এই প্রথম শুনেছে সে, এতদিন ধরে কোন অনুষ্ঠানেই আবৃত্তির মঞ্চে রুদ্রকে দেখা যায়নি। সুতরাং এ তথ্যটিও বানোয়াট। নাবিলা কবিতাটি পড়া শেষ করে রাগান্বিত চেহারায় রুদ্রের দিকে মাথা তুলে তাকাল। রুদ্র ভেতরে ভয়,শংকা কাজ করছে,কী জানি বলে উঠে নাবিলা!কিন্তু রাশিতে আজ তার দিন শুভ,ভয় পাওয়া চলবেনা,রুদ্র তার পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে চলল। নাবিলার দু’ চোখের দিকে তাকিয়ে অকপটে বলেই চলল- আই লাভ ইউ,নাবিলা।

আই রিয়েলি লাভ ইউ! & টুডে ইজ মাই বার্থডে!! জন্মদিনের কথা শুনে নাবিলা একটু হেসে উঠে। যাই হোক,বেচারাকে উইশ তো করা উচিত। রুদ্রকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হল। শুভেচ্ছা শেষে নাবিলা বলে উঠে -জন্মদিনের দিনে মিথ্যা বলতে নেই,আপনি মিথ্যা বললেন কেন? -হুমম!উপন্যাস,আবৃত্তি এসব মিথ্যা ধার করেছি কেবল তোমার জন্য কিন্তু ‘ভালোবাসি’ শব্দটার সাথে মিথ্যের ছিটফোটা সম্পর্কও নেই। -তাই নাকি! -হুমম! ………………………… জন্মদিনের সুবাদেই হোক,আর মন থেকেই হোক সেদিন নাবিলা রুদ্রের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিল।

সম্পর্ক গড়িয়েছেও কিছুদিন কিন্তু নাবিলা’র সাথে একটি বসন্তও পার করতে পারেনি রুদ্র,তার আগেই……। রুদ্রের নিঃসঙ্গতা ভারী হয়ে ক্রমেই বিরাট আকার ধারন করতে চলেছে,কারো সান্নিধ্যে নিজেকে সপে দিতে চায়। পত্রিকায় আজকেও রাশিচক্রের পাতায় লিখা হয়েছে মকর রাশির জাতক জাতিকাদের জন্য দিনটি শুভ। নাবিলা নামেই আরেকটি মেয়ের সাথে তার পরিচয় হয়েছে কিছুদিন আগে। এক নাবিলার ছায়া সে আরেক নাবিলার মাঝে খুজে পেয়েছে,কী আশ্চর্য!অনেক ব্যাপারে দুজনাতে অনেক মিল।

রুদ্র বুঝতে পারছেনা কি করবে!পরিকল্পনা কি আগেরমতই থাকবে নাকি ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে!কারন আজ ২২ ডিসেম্বর,রুদ্রের জন্মদিন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।