আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টান টান উত্তেজনা

২৯ ডিসেম্বর ঘিরে দেশ এখন বিস্ফোরণোন্মুখ। যে কোনো মূল্যে ঢাকা অভিমুখে 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' সফল করতে মরিয়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। কিন্তু তাদের এ কর্মসূচি নিয়ে জিরো টলারেন্সে সরকার। কর্মসূচি করতে না দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়েছে সর্বাত্দক ব্যবস্থা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ কর্মসূচি প্রতিহত করার প্রস্তুতি নিয়েছে।

রাজধানীর চারটি প্রবেশমুখে সতর্ক পাহারা বসানোর ঘোষণা দিয়েছে দলটি। নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে গিয়ে বিএনপির নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি, সরকার এবং আওয়ামী লীগ- তাদের এই ত্রিমুখী অবস্থানে দেশ এখন টান টান উত্তেজনায়।

কী হবে ২৯ ডিসেম্বর? বিরোধী দলের 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' কর্মসূচি কেন্দ্র করে কি ছড়িয়ে পড়বে সহিংসতা? উত্তেজনা আর শঙ্কার মধ্য দিয়ে বছর শেষে এমন সব প্রশ্ন এখন সর্বমহলে।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' কর্মসূচি ঘোষণার ৫ ঘণ্টা পর বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ও কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

দুপুর ১২টা থেকে সেখানে যাওয়া-আসায় বিধিনিষেধ আরোপ করে পুলিশ। ঢাকা অভিযাত্রার এ কর্মসূচি ঘিরে উত্তাপ ছড়াতে থাকে তখন থেকেই। পুলিশের এ অবস্থানে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত বুধবার সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, কর্মসূচিতে বাধা দিলে খারাপ হবে। কিন্তু পুলিশ কর্মসূচির অনুমতি না দিয়ে বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীদের পাকড়াও অভিযান শুরু করে। গতকাল গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

আগের দিন গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার হন সাবেক দুই এমপি। এরপরও রবিবারের ঢাকা অভিযাত্রার কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল। বাধা দেওয়ার আশঙ্কায় গত বুধবার সন্ধ্যা থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগাম ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও সর্বোচ্চ জমায়েত করতে চায় বিরোধী দল। সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিরোধী দল ৫ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের আগে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে ঢাকাকে অশান্ত করার কৌশল নিয়েছে বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।

এ আশঙ্কা থেকেই ঢাকায় কাউকে সমাবেশ করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, হেফাজতে ইসলামকে সমাবেশ করার সুযোগ দিয়ে যে ভুল হয়েছিল, সে ভুল আর হবে না। সরকারের কয়েকটি প্রভাবশালী সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানদের কাছে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এ মনোভাব জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৫ জানুয়ারির আগের এক সপ্তাহ কীভাবে নির্বিঘ্ন রাখা যায়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু ঢাকায় নয়, দেশের কোথাও বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের সমবেত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না।

সূত্র জানায়, নাশকতার আশঙ্কা থেকেই বিএনপি-জামায়াতের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ-র্যাবের একাধিক টিম।

জোর প্রস্তুতি বিএনপির : আগামী ৫ জানুয়ারি ভোট ঠেকাতে 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' নামে ঢাকায় জনতার গণজমায়েতের চ্যালেঞ্জ নিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও ঢাকায় আসতে শুরু করেছে জোটের নেতা-কর্মীরা। জমায়েত হতে পারলে ভোটের দিন পর্যন্ত টানা সপ্তাহব্যাপী ঢাকায় অবস্থানের পরিকল্পনা রয়েছে ১৮ দলের। 'যেখানে বাধা সেখানেই অবস্থান' এমন নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে নেতা-কর্মীদের।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মার্চ ফর ডেমোক্রেসির নেতৃত্ব দেবেন। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ ডিএমপির কাছে লিখিত আবেদনও করা হয়েছে। তবে জমায়েতের এখনো অনুমতি পাওয়া যায়নি। রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে বিশাল শোডাউনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, যত বাধাই আসুক, তারা কর্মসূচি পালন করবেনই। বেগম খালেদা জিয়া 'গ্রেফতার বা গৃহবন্দী' হতে পারেন এমন আশঙ্কা নিয়েও তিনি ওইদিন রাজপথে নামবেন। বুধবার রাতে পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা দেখা করতে গেলে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান বেগম জিয়াও। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের বার্তা ইতোমধ্যেই সারা দেশে পেঁৗছে গেছে। ইতোমধ্যেই তৃণমূল থেকে নেতা-কর্মীরা ঢাকামুখী হতে শুরু করেছেন।

নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগের নালিশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইসিতে নালিশ দেওয়ার কিছু নেই। একটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশ করা নিয়ে কমিশনের কিছুই বলার নেই। ভোট দেওয়া না দেওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রত্যেক নাগরিকেরই রয়েছে। জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের পাশাপাশি লন্ডনে চিকিৎসাধীন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কর্মসূচির সামগ্রিক বিষয় দেখভাল করছেন। লাল সবুজের জাতীয় পতাকার পাশাপাশি 'প্রহসনের নির্বাচনকে না, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারকে হ্যাঁ' শিরোনামে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে নয়াপল্টনে জড়ো হতে বলা হয়েছে।

কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানীর আশপাশের এলাকা ছাড়া প্রত্যেক মহানগর জেলা ও থানা পর্যায় থেকে জোটের একটি অংশকে এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে যেন তৃণমূলে নেতা-কর্মীদের একটি অংশ বাস্তবায়ন করতে পারে সে কারণেই তাদের থাকতে বলা হয়েছে। অপেক্ষাকৃত শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম নেতা-কর্মীদের ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। তবে বিএনপির একটি সূত্রে জানা গেছে, কর্মসূচিতে বাধা দিলে ১ জানুয়ারি থেকে অসহযোগ ও গণকারফিউর মতো কঠোর কর্মসূচি হবে। মার্চ ফর ডেমোক্রেসি সফলে মরিয়া জামায়াতও।

সঙ্গে থাকছে হেফাজতও। সারা দেশ থেকে হেফাজত কর্মীরাও যোগ দিতে ঢাকার পথে রয়েছে। আজ জুমার আগেই সারা দেশ থেকে জামায়াত-হেফাজত কর্মীদের ঢাকা পেঁৗছতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ তৎপর : বিএনপির কর্মসূচি ঠেকাতে ব্যাপক তৎপর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা রাজধানীতে অবস্থান নেওয়ার নানা প্রস্তুতিও নিয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহম্মদ নাসিম বলেছেন, ২৯ ডিসেম্বর আমরাই মাঠে থাকব। এ লড়াই বাঁচা-মরার লড়াই। হয় ওরা থাকবে, নয়তো আমরা থাকব। নির্বাচনের আগে আর কোনো সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। গতকাল বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিএনপির মার্চ ফর ডেমোক্রেসি প্রতিহত করতে বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

এ ছাড়া নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়ায় বিএনপির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীরে নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গতকাল নির্বাচন কমিশনার মো. আবদুল মোবারকের সঙ্গে দেখা করে এ আহ্বান জানান। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের রবিবারের ঢাকামুখী অভিযাত্রা কর্মসূচি ধরে নির্বাচন কমিশনে এই নালিশ জানায় আওয়ামী লীগ।

সরকারের কঠোর পদক্ষেপ : রবিবারের ঢাকা অভিযাত্রা কর্মসূচিকে ঘিরে সম্ভাব্য অরাজক পরিস্থিতি সম্পর্কে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সরকারের ঊধর্্বতন মহলকে অবহিত করেছে। ওইদিন নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের ওই সমাবেশকে ঘিরে আরও সহিংসতা ও নাশকতা সৃষ্টি হতে পারে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে খবর রয়েছে।

এ বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে সরকারকে জানিয়েছে তারা। এ প্রেক্ষাপটে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা হলে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

গ্রেফতার অভিযান : 'ঢাকা অভিযাত্রা' কর্মসূচিকে ঘিরে যাতে কোনো নাশকতা সৃষ্টি হতে না পারে সে লক্ষ্যে বিএনপি-জামায়াতের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করতে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে পুলিশ-র্যাবের একাধিক টিম। গতকাল বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকনকে আটক করে পুলিশ। গতকাল বিকাল সোয়া ৪টার দিকে মৎস্য ভবনের কাছ থেকে তাকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব খোকন আটকের ঘণ্টাখানেক আগেই হাইকোর্ট বিভাগে মওদুদ আহমদসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের জামিন আবেদনের শুনানি করেন। এর আগে নির্বাচন স্থগিতে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার নতুন কর্মসূচি ঘোষণার একদিনের মধ্যে তার গুলশানের কার্যালয়ের সামনে থেকে বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাদের আটক করা হয়। এর মধ্যে কয়েকজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। বড়দিনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার গুলশানের ওই কার্যালয়ে খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ওই অনুষ্ঠানের আগে-পরে পুলিশের আটক অভিযান চলে। এর আগে সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার গুলশানের বাড়ির সামনে থেকে শাম্মী আকতার এমপি, সাবেক এমপি সরদার শাখাওয়াত হোসেন বকুল, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা অধ্যাপক আমিনুল ইসলামসহ অন্তত ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদিকে গতকাল থেকে ঢাকামুখী যানবাহনের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের টহল ও নিরাপত্তা তল্লাশি চলছে রাজধানীজুড়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেছেন, ১৮ দল অবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালনের ঘোষণা দিলেও সারা দেশে সহিংসতা ও নাশকতা অব্যাহত রয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে। বিরোধী দলের 'ঢাকা অভিযাত্রা' কর্মসূচির অনুমতি দেওয়াও সমীচীন হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।