জানি না কেন লিখি! তবু লিখি মনের খেয়ালে, পরিবর্তন করার মানসে, পরিবর্তিত হওয়ার মানসে। যদিও জানি সব ব্যর্থ হচ্ছে। তবুও আমি আছি সেদিনের সেই আলোকময় প্রত্যুষার আগমনের অপেক্ষায়
বিএনপি’র ডাকা ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ আগামীকাল ২৯ শে ডিসেম্বর। এর আগে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে বিএনপি নেতৃত্ত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট কয়েক দফা হরতাল এবং অবরোধের ডাক দিয়ে দেশকে অচল করে দেয়। রাজধানী শহর ঢাকা ছাড়া বাকী সারাদেশ এতে কার্যত প্রায় অচল হয়ে পড়ে।
হরতাল-অবরোধ চলাকালীন এই সময়গুলোতে সহিংসতায় প্রচুর মানুষ হতাহত হয়। এর মধ্যে কতগুলো বীভৎস্য মৃত্যু মানুষের অন্তরকে ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়ে গেছে। এসব ঘটনায় রাজনৈতিকদলগুলো একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দায় সারতে চেয়েছে। কিন্তু আক্রান্ত মানুষের অভিব্যক্তি তা কোন যুক্তিতেই গ্রহণ করেনি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসবাণী কিংবা চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের প্রতিশ্র“তিও তাদেরকে মোটেও আশ্বস্ত করেনি।
শাহবাগে চলন্ত গাড়িতে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মারার ঘটনায় ১৯ জনের মধ্যে নিহত তিনজন ছাড়াও ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন ছিলেন অন্যরা । গীতা সেন ছিলেন তাদেরই একজন। প্রধানমন্ত্রী অন্যদের সাথে তাকেও যখন দেখতে যান তখন এই বিক্ষুব্ধ নারী তাকে কতগুলি অপ্রিয় কথা শুনিয়েছেন যান মিডিয়ার কল্যাণে আমরা টেলিভিশনের পর্দায় দেখতে পেয়েছি। আমরা দেখেছি গীতা সেনের কতক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিব্রত বোধ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে কী জবাব থাকতে পারে এই প্রশ্নগুলোর? গীতা সেন তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, “আমাদের কি দোষ? আমরা আপনাদের তৈরি করেছি, আপনারা আমাদের তৈরি করেন নি।
আমরা কেন আপনাদের কারণে আগুনে পুড়বো? আমরা ভালো সরকার চাই, আমরা অসুস্থ সরকার চাইনা। ” সত্যিকার অর্থে এই-ই হচ্ছে জনগণের প্রকৃত মানসিকতা। তারা রাজনীতিবিদদের এই কর্মকাণ্ডকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু রাজনীতিবিদগণ সেটা বুঝবেন কি? না, তারা বোঝার মত অবস্থায় নেই। তারা কিছুতেই এসব বুঝতে চাইবে না।
প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলের উপর দোষ চাপিয়ে এমন আন্দোলন কখনো দেখেননি বলে পার পেতে চেয়েছেন। কিন্তু তিনি যে দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারাও যে একই চরিত্রের অধিকারী তা নতুন করে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় তারাও হরতাল, অবরোধ ডাকে, মানুষ পোড়ায়, সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে। এরা সবাই একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ মাত্র। অতীতের কথা না হয় বাদই দিলাম।
আগামী ২৯ ডিসেম্বর বিরোধী জোট মার্চ ফর ডেমোক্রেসি নামে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় এই যে, বিরোধী জোটের এই কর্মসূচী ঠেকাতে ক্ষমতাসীন দলের একটি অঙ্গ-সংগঠন অর্থাৎ মটর চালক লীগ আগামী ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর দুই দিন হরতাল আহ্বান করেছে।
খবরে প্রকাশ, “১৮ দলের ঢাকামুখি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ নামে অভিযাত্রা ঠেকাতে আগামী ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর সারাদেশে হরতাল ডেকেছে ‘মটর চালক লীগ’ নামে সরকার সমর্থিত একটি সংগঠন। বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় এক প্রেস বার্তায় মটর চালক লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি আবু তাহের উদ্দিন আবু তাহের এ হরতাল আহবানের কথা জানান। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল চক্রান্তের প্রতিবাদে এবং আন্দোলনের নামে পরিবহন চালক শ্রমিকদের নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন করছে বিএনপি-জামায়াত।
আবার সেই পরিবহনযোগে ঢাকায় কথিত ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র নাম দিয়ে জামাত বিএনপির অরাজকতা সৃষ্টির কর্মসূচি রুখে দিতে ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর সারাদেশে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালিত হবে। এ হরতাল বিএনপি জামাতের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে। তবে এম্বুলেন্স, সংবাদপত্রবাহী গাড়ি, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও প্রশাসনের গাড়ি, দোকান-পাট, ব্যাংক-বীমা, অফিস আদালত হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। ” কথা হচ্ছে সরকার এই হরতালের মোটেও বিরোধী নয়। বরং তাদের প্রত্যক্ষ মদদে এ হরতাল পালিতও হবে- এতেও কোন সন্দেহ নেই।
তাই বলা যায়, এরাই যে বিরোধী দলে গেলে আবার সরকারকে ক্ষমতা থেকে টেনে হিঁচড়ে নামানোর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে হরতাল, অবরোধ, আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য সাধারণ মানুষকে চলন্ত গাড়িতে গান পাউডার ছড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। বরং এমনটাই করবে এতে কোন সন্দেহ নেই। সুতরাং এই রাজনীতি এবং এই রাজনীতিবিদদের হাতে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার কোন নিশ্চয়তা নেই।
আরেকটি প্রসঙ্গে আসা যাক। ঠিক কি কারণে রাজনীতিবিদদের মধ্যে এই বিকৃতি এসেছে তা একটি কষ্টসাধ্য গবেষণার বিষয়।
ঠিক বুঝে আসে না এরা কিসের জন্য রাজনীতি করেন। টাকার জন্য নাকি খ্যাতির জন্য, সম্মানের জন্য না মানব সেবার জন্য? যদি টাকার জন্য হয়ে থাকে তাহলে তো দেখা যায় তাদের যথেষ্ট পরিমাণে টাকা রয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া সরকার দলীয় প্রার্থীদের সম্পদের তালিকা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে (যদিও তা পরে সরকারের আপত্তির মুখে সরিয়ে ফেলা হয়েছে) দেখা গেছে গত পাঁচ বছরে কিভাবে একেক জনের সম্পদ ফুলে ফেঁপে উঠেছে। শুধুমাত্র কৃষি এবং মৎস্য চাষের মাধ্যমেই কোন কোন সাংসদের আয় হয়েছে বছরে কোটি টাকার উপরে। এই নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতুকবোধেরও উদয় হচ্ছে।
তাদের অনেকেই জামাই খুঁজতে গিয়ে এখন মৎস্যচাষীদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছেন! যদি অর্থের জন্যই রাজনীতি করে থাকেন তাহলে বলতে হয়- আপনাদেরতো যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ আছে। আর কত অর্থ চাই? একটি পরিবার বেঁচে থাকতে আর কত অর্থ দরকার হতে পারে? বিরোধী দলীয় নেত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং তৃতীয় বৃহত্তম দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের যে পরিমাণের অর্থ আছে সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার হিসেবে তা দিয়ে নিশ্চিন্তে তারা কয়েক পুরুষ পার করে দিতে পারেন। অন্যান্য এমপি, মন্ত্রীও তাদের স্ত্রীদের সম্পদের তালিকার দিকে তাকালেও একই কথা প্রযোজ্য। সুতরাং যথেষ্ট কামাইয়ের পর এবারও কি একটু থামা যায় না?
আর যদি সম্মানের প্রসঙ্গ আসে তাহলে বলতে হয়, আপনাদের এই ঘৃণ্য রাজনীতির খেলায় কিন্তু আপনাদের সম্মানে মোটেও বাড়ছে না। মানুষ আপনাদের আড়ালে যেসব বাক্য উচ্চারণ করে তা শুনলে আপনাদের কান ঝাঁ-ঝাঁ করে উঠবে।
আর যদি জনসেবার জন্য যদি রাজনীতি করেন তাহলে নির্বাচিত হওয়ার এত কি প্রয়োজন? যারা সত্যিকার অর্থেই জনসেবা করতে চায় তার জন্য নির্বাচিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং তারা নিজেদেরকে আড়ালে রেখেই জনসেবা করতে পছন্দ করেন। হাজী মুহম্মদ মুহসীন, মাদার তেরেসাদের মত অকাতরে যারা জনসেবা করে গেছেন, নিজেদের ধন-সম্পদ উজার করে গেছেন তারা কি নির্বাচিত হয়েছিলেন? তাদের জীবনীই কি জনসেবা করতে ইচ্ছুকদের জন্য আদর্শ নয়? আর যে কারণে সেবা করা হয় অর্থাৎ স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করা সেটাতো কেউ না দেখলেও তিনি দেখেনই- অন্তত এই বিশ্বাসটুকু তো তাদের রয়েছে!
প্রকৃত অর্থে এই রাজনীতি কোন যুক্তিতে গ্রহণযোগ্য নয়। এই রাজনীতির গ্রহণযোগ্যতার একটি মাত্র কারণ থাকতে পারে, আর তা হলো বিকৃত মানসিকা। কিন্তু মানুষ হিসেবে, সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তা কতটা মানানসই তা কি রাজনীতিবিদগণ একটিবারের জন্য হলেও ভেবে দেখবেন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।