আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মূল্য-ছাড় এ মধ্যবিত্ত

আমি নিজে মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। ছোট বেলা থেকে মধ্যবিত্তদের নানান সমস্যার কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি। ‘মিডল্‌ ক্লাস মেন্টালিটি’ নামের জনপ্রিয় একটা গালিই তো প্রচলিত আছে। সেই গালিটা অবশ্য আমরা মিডল্‌ ক্লাসরাই সবচেয়ে গম্ভীরভাবে নিজের আনন্দ ঢেকে রেখে আরেকজন মধ্যবিত্তের উপর সবচেয়ে বেশি ব্যাবহার করে থাকি। আমি নিজেই যে কতবার ভুরু কুঁচকে আরেকজনকে “মিডল্‌-ক্লাস-মেন্টালিটি” গালি দিয়ে মনে মনে হেসেছি তার হিসেব নেই।

তা যাই হোক, প্রবাসে কোন দোকানে মূল্য-ছাড় চলাকালীন সময় এই মিডল্‌-ক্লাস-মেন্টালিটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। মনে করেন পঞ্চাশ ডলার মূল্যের একটা জিনিসের দাম যখন বিশাল মূল্য-ছাড়ের পর আটচল্লিশ ডলার করা হয়, তখন সেই জিনিসটা কেনার জন্য মানুষ পাগল হয়ে যায়। ভাই আমার নিজের সাড়ে চার বছরের দোকানদারির অভিজ্ঞতা আছে। আমি মোটেই বাড়িয়ে বলছি না। আমি নিজে এমন কাস্টমার দেখেছি যে কি না মাত্র ১৫ পয়সা (সেন্টস্‌) বাঁচানোর জন্য পাঁচ ডলার গাড়ির তেল খরচ করে আমার দোকানে এসেছে।


বক্সিং ডে (ক্রিস্টমাসের পরের দিন) এই মূল্য-ছাড়ের সবচেয়ে বড় উৎসব। মানুষ ভোর পাঁচটা থেকে নিজের পছন্দের দোকানের সামনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে মুল্য-ছাড়ে জিনিস কেনার জন্য। আমি নিজেও এবার অনেক প্রিপারেশন নিয়ে বক্সিং ডে’র শপিং এ বের হয়েছিলাম। গত দু’মাস ধরে এই দিনের জন্য টাকা জমিয়েছি। মূল্য-ছাড়ের প্রতি আমারও যে সহজাত আকর্ষণ রয়েছে।

আমিও যে মধ্যবিত্ত।
যাই হোক আমি এবার সাহস করে বিলাস বহুল ব্র্যান্ডের একটা জ্যাকেট এর দোকানে ঢুকে পড়লাম। একটা জ্যাকেট খুবই পছন্দ হলো। দারুণ একটা জিনিস। পঞ্চাশ শতাংশ মূল্য ছাড়ের পরেও জ্যাকেটটা’র দাম দেড় শ’ ডলার।

দাম যতই হোক জিনিসটা আজকে কিনবোই। আগামীকালই এই জিনিসের দাম আবার তিন শ’ ডলার হয়ে যাবে। তখন এই জিনিসের দিকে ‘হা’ করে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। ডিস্‌প্লেতে ঝুলানো জ্যাকেট টা আমার সাইজের না। দোকানের কর্মচারী আমার সাইজেরটা স্টক থেকে নিয়ে আসতে গিয়েছেন।

এদিকে আমি তিনশ ডলারের জ্যাকেট দেড় শ’ ডলারে পেয়ে যাওয়ার খুশিতে ডগমগ করছি। বাঁধভাঙ্গা সেই খুশির সাথে ছোট একটু দুশ্চিন্তা মনে উঁকি দিচ্ছে। দেড় শ’ ডলার দিয়ে জ্যাকেট কেনা মানে হলো আমার পুরা সপ্তাহের বাসা ভাড়া একটা জ্যাকেট এর পেছনে খরচ করা। কিন্তু তিন শ’ ডলারের জ্যাকেট দেড় শ’ ডলারে কেনার খুশিটা সেই দুশ্চিন্তাটাকে একেবারে ক্লীন বোল্ড আউট করে দিলো। আমি যখন খুশিতে ফুর ফুর করে উড়ে বেড়াচ্ছি ঠিক তখনই দোকানের কর্মচারী এসে আমাকে জানালেন যে আমার সাইজটা উনাদের স্টকে নেই।

তাঁর কথা শুনে আমার বুকটা............ আমার বুকটা............... আবার আনন্দে নেচে উঠলো । আমি আবার খুশিতে ফুর ফুর করে উড়তে লাগলাম। এই খুশি আমার দেড় শ’ ডলার বেঁচে যাবার খুশি। এইবার এই আনন্দ আমার তিন শ’ ডলারের জ্যাকেট দেড় শ’ ডলারে কিনতে না পারার বেদনাকে একেবারে ক্লীন বোল্ড আউট করে দিলো।
আমার ধারণা আমরা মধ্যবিত্তরা সব সময় সুখী থাকি।

পেয়েও সুখী, না পেয়েও সুখী। জয় আনন্দের, জয় মধ্যবিত্ত-মানসিকতার!!!
লিখেছেন; নাঈম অঙ্কন

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।