বিরোধী দলের বর্জনের মধ্যে আগামী ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সরকারের এগিয়ে যাওয়ায় কোনো সমাধান আসবে না বলে একবাক্যে মত দেন তারা সবাই।
গোলটেবিলে অংশ নেয়া বিরেধী দলের নেতারা সঙ্কটের জন্য সরকারকে দায়ী করলেও মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বিএনপিকে দায়ী করে বলেন, নির্বাচনে না এসে তারাই সঙ্কট সৃষ্টি করেছে।
নাগরিক সমাজের নেতারা দুই প্রধান দলকে একত্রে বসে সমঝোতার আহ্বান জানান। তা না হলে অগণতান্ত্রিক শক্তির উত্থানের শঙ্কাও প্রকাশ করেন তারা।
আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রকাশের দিন এবং নির্বাচন প্রতিহতের আহ্বানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের ‘ঢাকামুখী অভিযাত্রার’ আগের দিন শনিবার দেশজুড়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে এই গোলটেবিল বৈঠক হয়।
রাজধানীর একটি হোটেলে ‘সঙ্কটে বাংলাদেশ, নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এই বৈঠকে চার ঘণ্টা ধরে আলোচনা করেন ৫৪ জন। এর আয়োজনে ছিল চার সংগঠন সিপিডি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, সুজন ও টিআইবি।
এর মধ্যে ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, অধ্যাপক রেহমান সোবহান, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ এস এম শাহজাহান, মইনুল হোসেন, হোসেন জিল্লুর রহমান, সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, রোকেয়া আফজাল রহমান, ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হক, পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রমুখ।
গোলটেবিলে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
ব্যারিস্টার রফিক বলেন, “যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে, এর জন্য নির্বাচন পেছানো যেতে পারে। আর এই পরিপ্রেক্ষিতে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
সরকারকে বুঝতে হবে, ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে কোনো লাভ নাই। ”
গোলটেবিলে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
হোসেন জিল্লুর বলেন, “৫ জানুয়ারি নির্বাচন হলে ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের যে অর্জন, তাকে দূরে ঠেলে দেয়া হবে। তাই এখান থেকে ন্যূনতম দাবি উঠতে পারে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন স্থগিত করার। ”
পঞ্চদশ সংশোধনীর পর সংবিধানের বর্তমান ধারা অনুযায়ী নির্বাচনের পক্ষে আওয়ামী লীগ অবস্থান নিলে তার বিরোধিতা করে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে নামে বিএনপি।
এর মধ্যে ৫ জানুয়ারি ভোটের তারিখ রেখে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দুই দলের দূরত্ব আরো বাড়ে।
বিভিন্ন মহলের উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর জাতিসংঘ মহাসচিবের দূত অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকোর মধ্যস্থতায় দুই দলের নেতারা বৈঠকে বসলেও তাতেও কোনো সমাধান আসেনি।
এরপর ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করতে অটল শেখ হাসিনা বলেন, সমঝোতা হলে পরবর্তী সংসদ ভেঙে আগাম নির্বাচন দেয়া হবে। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দেন।
দুই দলের এই অবস্থানে উদ্বেগ প্রকাশ করে মঞ্জুর এলাহী বলেন, “নির্বাচন পেছানোর পাশাপাশি দুই দলকে একটি সমঝোতায় আসতে হবে, নতুবা রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হতে পারে।
“দুই দল যদি ফেইল করে, তাহলে সেটা কোনোভাবেই দেশের জন্য ভালো হবে না।
ধমীয় উগ্রবাদীরা দেশের শাসন ক্ষমতা নিয়ে নিতে পারে। আর এটি হলে কোনো অধিকারই থাকবে না। ”
“আমাদের সমস্যা আমাদেরই সমাধান করতে হবে। বাইরে থেকে এসে কেউ এ সমস্যা সমাধান করতে পারবে না,” মন্তব্য করে দুই নেত্রীকে একত্রে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান ব্যারিস্টার রফিক।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত গোলটেবিল আলোচনার আলোচনার সমন্বিত প্রস্তাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে দেখা করে সমঝোতার জন্য তাদের তাগিদ দেয়ার পরামর্শ দেন।
হোসেন জিল্লুর দুই দলের বাহিরে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থান প্রত্যাশা করে হোসেন জিল্লুর বলেন, “দুই দলেই একনায়কতন্ত্র চলছে। এর থেকে বের হয়ে একটি সংস্কারের ধারণা ডেভেলপ করতে হবে।
“একইসঙ্গে তৃতীয় রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী কাজ শুরু করতে হবে। ”
সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন হোসেন জিল্লুর, ওই সরকারের সময় দুই প্রধান দলের কয়েকজন নেতার সংস্কারের আওয়াজ দুই নেত্রীকে ‘মাইনাস’ করার উদ্যোগ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
নাগরিক সমাজের এই গোলটেবিলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোনো নেতা না থাকলেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী, ইনাম আহমেদ চৌধুরী ছিলেন।
ছিলেন বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থও।
গোলটেবিলে আনিসুল হক
গোলটেবিলে মইনুল হোসেন
শমসের মবিন সরকারকে দায়ী করে বলেন, “সরকারের সদিচ্ছা থাকলে গ্রহণযোগ্য সংলাপ ও নির্বাচনের বিষয়ে উদ্যোগ দেয়া সম্ভব হত। এখন নির্বাচনের পরিবেশ না থাকায় অবশ্যই তা স্থগিত করা উচিত। ”
বিএনপি নেতাদের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
তিনি বলেন, “এখানে এসে মনে হচ্ছে, আমরা বাস্তবতা থেকে বেশ দূরে অবস্থান করছি।
নির্বাচনে বিএনপি আসেনি, তাই তা প্রতিনিধিত্বমূলক হয়নি। কিন্তু বিএনপি কেন এল না, তা নিয়ে কেউ কোনো কথা বলছে না। ”
সরকারের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা চলার মধ্যেও হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সমালোচনা করে মেনন বলেন, “এই অবস্থায় কিভাবে আলোচনা সম্ভব। তাল গাছটি আমার রেখে তো আলোচনা হতে পারে না। ”
নাগরিক সমাজের মত মেনে নির্বাচন স্থগিত করলেই সমাধান আসবে বলে মনে করেন না নির্বাচনকালীন সরকারের এই মন্ত্রী।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় এই গোলটেবিলে আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক কূটনীতিক ফারুক চৌধুরী, মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়েশা খানম, স্থপতি মোবাস্বের হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা তপন চৌধুরী, বিকেএমইএ’র সাবেক সভাপতি ফজলুল হক।
নারী সংগঠক রোকেয়া কবীর, সালমা আলী, সংস্কৃতিকর্মী লুবনা মরিয়ম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পিয়াস করিমও ছিলেন বৈঠকে।
সাংবাদিকদের মধ্যে ছিলেন রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, মাহফুজ আনাম, মতিউর রহমান চৌধুরী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।