আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হরর ১: অল্পবয়েসীরা প্রবেশ করবেন না।

একটা মেয়ের একটু কথা। অমাবশ্যার রাতের ইনসমনিয়া খুব খারাপ হয়। মনে মনে কথা গুলো বলে মৌ। ইদানিং অনিদ্রা খুব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রতিরাতে স্লিপিং পিল খেয়ে আর কত ঘুমানো যায়।

ঘাড়ের বামপাশটা ব্যাথা করছে তার। অনিদ্রা হলে তার এমন হয়। সে উঠে গিয়ে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দেয়। শীতের রাতে তার খুব গরম লাগছে। সে শাওয়ার ছেড়ে ঠান্ডা পানির নীচে দাড়িয়ে থাকে।

কতক্ষণ সে জানে না। একসময় শীত লাগতে থাকে। সে শাওয়ার বন্ধ করে বেরয়ে আসে। ঘুমের দফারফা হয়ে গেছে। আজ রাতে তার ঘুম আর হবে না।

তার অনিদ্রার কারণ একটা ডাইরি তবে সত্যিকারের ডাইরি না। এটা একটা বই। বইটার নাম ড. রমেশের ডাইরি। লেখকের নাম সে জীবনে শুনেনি। সাগর হাসান।

বইটা তার কাছে একটা সৌজন্য সংখ্যা হিসেবে এসেছে। কিন্তু কে পাঠালো সেটাই সে জানে না। আর সাগর হাসান নামের কাওকে সে চেনেও না। কিন্তু বইটা খুব ইন্টারেস্টিং। একজন মৃত সাইকোলজিস্টের বিভিন্ন কেস নিয়ে লেখা।

অনেকটা ডাইরির মতো করে লিখা। বইটার রাইটার যেই হোক না কেন সে যে অনেক উচু মানের লেখক সেটার ছাপ বইটির প্রতিটি পৃষ্ঠায় ফুটে উঠেছে। মৌ বইটি আবার টেনে নেয়। বইটার সত্তর নম্বর পৃষ্ঠায় তার দৃষ্টি চলে যায়। এখানেই যত গন্ডগোল।

বইটির প্রকাশনির সাথে যোগাযোগ করেছে সে। সাগর হাসানের ফোন নাম্বার পাবার জন্য। কিন্তু তারা দিতে পারলো না। সে এখন এই সাগর হাসানকে খুঁজছে। তার অনিদ্রার অবসান সেই ঘটাতে পারবে।

সত্তর পৃষ্ঠার কেসটা আবার পড়তে থাকে সে। ‘মেয়েটির বয়স অল্প। অস্থিরমতি মেয়ে। চোখের দৃষ্টি বারবার ঘুরছে। মুখে জোর করে একটা শান্ত ভাব বজায় রাখার চেষ্টা করছে।

পা নাচাচ্ছে। মিষ্টি চেহারার এই মেয়েটির একটি ভয়ানক সমস্যা আছে দেখে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। তোমার নাম কি মেয়ে? আমি যতটা সম্ভব কোমল গলায় জিজ্ঞেস করলাম। নাফিজা আক্তার। ডাক নামটা বলো! মেয়ের মা বললেন।

ডাক নাম মৌ। বেশ। তুমি কোন ক্লাসে পড়? আমি কলেজে পড়ি। ইন্টারমিডিয়েট। মেয়েটি খানিকটা সহজ হয়।

ওরে বাবা তুমি তো দেখছি অনেক বড় হয়ে গেছ! মেয়েটি মাথা দোলায়। তাহলে বল এত্ত বড় হয়ে ও তুমি ছোট মেয়েদের মতো ভয় পাও কেন? মেয়েটির মুখে ভয়ের ছায়া পড়ে। বল মেয়ে। আমি কাওকে মা ডাকতে পারি না। ডাকলে তোমাকে মা বলে সম্বোধন করতাম।

আমি রাতে খুব খারাপ স্বপ্ন দেখি চাচা। তারপর ঘুম ভেঙ্গে যায়। কি দেখ স্বপ্নে? আমি দেখি যে আমি একটা মানুষের গলায় কামড়ে ধরে আছি। মানুষটার গলা কেটে গেছে। আমি তখনই বুঝতে পারি যে আমি স্বপ্ন দেখছি।

কিন্তু আমার ঘুম ভাঙতে পারি না! তারপর কি হয়? তারপর...তারপর.....আমি মানুষটির রক্ত খেয়ে ফেলছি। প্রতিদিন একই স্বপ্ন দেখ? হুম। কিন্তু কিন্তু...... আমাকে বলো মেয়ে। আমি তোমার হেল্প করবো। মেয়েটি এই পর্যায়ে মায়ের দিকে তাকায়।

তারপর বলে: কিন্তু প্রতিদিন ভিন্ন মানুষ থাকে চাচা। মানুষগুলোকে তুমি চেন? না চিনি না। আমি মেয়েটার দিকে তাকালাম। কিছু একটা মেয়েটা লুকাচ্ছে। আমার ত্রিশ বছরের অভিজ্ঞতা তাই বলে।

আমি মেয়েটির মাকে বললাম: আপনি কি ওয়েটিং রুমে গিয়ে অপেক্ষা করবেন? আপনার মেয়ে কিছু বলতে চায় আপনার সামনে বলতে সংকোচ বোধ করছে। মেয়েটির মা চলে যায়। হুম এইবার বলো মেয়ে। আসলে আমি কাওকেই চিনি না চাচা। সেটা তো বুঝলাম।

কিন্তু এর আগে কি হয়েছিল? মানে? কেউ কি কখনও তোমার সাথে মন্দ আচরণ করেছে মেয়ে? আমি কি বলতে চাইছি সেটা বুঝেছো? মেয়েটি মাথা নিচু করে বসে থাকে। মেয়েটির নিশ্চুপ আচরণই বলে দিচ্ছে কিছু তো খারাপ ঘটেছে ওর সাথে। চুপচাপ বসে থেকো না মেয়ে আমি বুঝতে পারছি। কিছু বল আমাকে। আমি ক্লাস টেনে পড়তাম।

বাবার একজন বন্ধু এসেছিলেন বাসায় কোন এক কাজে। আমি এক বিকালে তার ঘরে চা নিয়ে ঠুকেছিলাম। বাসায় মা ছিল না। তিনি হঠাৎ দরজা লাগিয়ে দেন। তারপর......তারপর.... মেয়েটি খুব অস্থির হয়ে ওঠে।

সারা মুখ লাল হয়ে উঠছে মেয়েটির। মাথা নিচু করে ফেলে মেয়েটি। তুমি কাওকে বলনি তাই না? না বলিনি। মেয়েটির গলার স্বর যেন বদলাতে শুরু করে। এই ঘটনাটি কাওকে বলনি তুমি।

তোমার অবচেতন মনে প্রতিশোধ নেবার আকাংখা রয়ে যায়। কিন্তু নিশ্ফল আকাংখা। তাই তোমার অবচেতন মন রাতে এই স্বপ্নগুলো তোমাকে দেখায়। মেয়েটি মাথাটা নিচু রেখেই আমার দিকে তাকিয়ে একটি ভয়ানক হাসি দেয়। আমি তৎক্ষনাত বুঝতে পারি মেয়েটি ডুয়েল পার্সোনালিটির সমস্যায় ভুগছে।

এই ২য় স্বত্তা সাধারণত আসল স্বত্তার ঠিক বিপরীত হয়। আমি যতটা সম্ভব শান্ত থাকার মুখে কিছুই হয়নি একটা ভাব ধরে রাখলাম। দেখলাম এতে খানিকটা কাজ হয়েছে। মেয়েটি আর হাসছে না। কিন্তু চোখের দৃষ্টি ভয়ানক! মেয়ে আমার মনে হয় তোমার সমস্যার সমাধান আমি করতে পারবো।

কিছু ওষুধ দিচ্ছি। একটা এখন খেয়ে নিতে পার। মেয়েটি আবার সেই ভয়ানক হাসিটি দেয়। আমি সময় কাটাবার চেষ্টা করছি। রোগীর বিশ মিনিটের মাঝে না বেরুলে আমার সহকারি এই ঘরে ঢুকবে এই নিয়ম করে রেখেছি।

আরো পাঁচ মিনিট আছে। মেয়েটি একটা অশ্রাব্য গালি দেয় আমাকে। কিছু একটা করতে হবে দ্রুত। কিন্তু আমি একা করতে পারবো না। ঘুমের ইঞ্জেকশন দিতে হবে মেয়েটিকে।

আমার একার পক্ষে সম্ভব নয় তা। প্রতিটি মুহুর্ত যেন আমি অনুভব করতে পারছি। মেয়েটি নড়াচড়া না করে আমার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে আছে। আমি ঘড়ি দেখলাম। হঠাৎ মেয়েটি কিশোরীদের মতো লাফ দিয়ে টেবিলে উঠে আমার গলায় কামড়ে ধরলো।

আমি নড়াচড়া করলে গলার আর্টারি কেটে যাবে। মেয়েটার দাঁত খুব ধারালো অবশ্য। মেয়েটি কামড়ে ফালাফালা করে দিতে চাইলো আমাকে। আমাকে সেদিন আমার সহকারি বাঁচিয়েছিল। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো মেয়েটি তারপর একদম সুস্থ হয়ে যায়।

আমার চেম্বারে এসেছিল মাকে নিয়ে। এই ঘটনাটি আমি ডাইরিতে এই কারণে লিপিবদ্ধ করছি যে কিছু বিষয়ে আমার খটকা রয়েছে। আমি মেয়েটির বাবার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম যে মেয়েটির ক্লাস টেনে পড়ার সময় তার কোন বন্ধু বেড়াতে আসেনি। এই বিষয়টি তার মা ও নিশ্চিত করেছে। কিন্তু আমি আরো নিশ্চিত হবার জন্য মেয়েটির বাবার সব বন্ধদের সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছি।

কিন্তু এমন কোন ইনফো পাইনি যে কেউ মেয়েটির বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল। হতে পারে মেয়েটির বাবা মা বিষয়টি জানেন। কিন্তু যদি বদনাম হয় এই কারণে লুকাচ্ছেন। অথবা মেয়েটর মানসিক সমস্যা সেদিন থেকেই শুরু হয়েছিল হয়তো। পত্রিকায় এমন কোন নিউজ পড়ার পর তার হ্যালুসিনেশন হয়েছে।

ওই বয়সের মেয়েগুলো খুব সেন্টিমেন্টাল হয়। অথবা কাজটি তার বাবার বন্ধু নয়। অন্য কেউ করেছে। তিনটারই সমান সম্ভাবনা আছে। কিন্তু আমার মাথোয় এখনও এই জিনিসটা ঘুরছে কারণ পরে যখন আমি মেয়েটিকে এই কথা জিজ্ঞেস করি তখন মেয়েটি রহস্যময় এক হাসি হেসেছিল।

মেয়েটির অসুস্থতা আবার না ফিরে আসে সে ভয়ে আমি আর কিছু বলিনি। এই হলো গল্প। কিন্তু এই গল্পটা পড়ার পর মৌযের খুব খারাপ একটা সমস্যা হচ্ছে। সে একজন ইন্টার্নি ডাক্তার। হাসপাতালের রেসিডেন্টে থাকে সে।

সেও ওই মেয়েটির মতো প্রায়ই এই স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নটির সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো রক্ত খাওয়া। স্বপ্নটি না দেখার জন্য মৌ রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে কাটায়। তার অবস্থা খুব খারাপ। এমনিতে সে এটাকে পাত্তা দিতো না কিন্তু স্বপ্ন দেখার পর প্রতিসকালে সে ঘুম ভেঙ্গে দেখে যে তার মুখে চটচট করছে.............. ফিরোজ ও ইন্টার্নি ডাক্তার।

আজ তার নাইট ডিউটি পড়েছে। কোন ওয়ার্ডে হলে ভাল হতো। কিন্তু তার ডিউটি হয়েছে হাসপাতালের সাম্প্রতিক কেস ফাইল আপডেট করা। আর পুরাতন গুলো স্টোর রুমে রাখা। সে মনে মনে বিরক্ত হয়।

এই কাজের জন্যে এমবিবিএস ডাক্তারের কি দরকার? সে বিরক্ত মুখে ফাইল গুলো স্টোর রুমে নিয়ে যায়। পাশের রুমে কেমন যেন একটা শব্দ হচ্ছে। পাশের রুমে তো ব্লাড এবং বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্টোর করা হয়! আর আজ কোন সার্জারিও নেই! কে হতে পারে? সে পা টিপে পাশেল রুমে যায়। দরজা ভেজানো। সে সামান্য ফাঁক করে দরজা।

তারপর যা দেখে তা দেখে কয়েক মুহুর্তের জন্যে সে স্তম্ভিত হয়ে যায়! ইন্টার্নি ডাক্তার মৌ স্টোরেজ হতে ব্লাড ব্যাগ বের করে বুভুক্ষের মতা ব্লাড খাচ্ছে!  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।