পবিত্র ১১ হিজরী সালে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস উনার তৃতীয় সপ্তাহে অসুস্থতাকে গ্রহণ করেন। অতঃপর আবার সুস্থতাকে গ্রহণ করেন। এরপর আবার পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার তৃতীয় সপ্তাহে অসুস্থতাকে গ্রহণ করেন। অতঃপর পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার শেষ বুধবার সকালে তিনি সুস্থতা গ্রহণ করেন। এ খবর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে।
উনারা মুহব্বত উনার ফল্গুধারায় উৎফুল্ল হয়ে উঠেন এবং মুক্ত হস্তে হাদিয়া করে শুকরিয়া মুবারক আদায় করেন। এ ঘটনাই ইতিহাসে ‘পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ হিসেবে অভিহিত। আজ সেই মহিমান্বিত ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’।
মূলত, পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ নানাদিক থেকে ফযীলতযুক্ত ও তাৎপর্যম-িত। মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজে যেমন একেক সময় একেক মুবারক হাল প্রকাশ করেন।
তদ্রƒপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও একেক সময় একেক মুবারক হাল প্রকাশ করেছেন এবং করছেন।
প্রসঙ্গত অনেকে বলে থাকেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ তায়াল্লুক মুবারক উনার অধিকারী তথা উনার সাথে নিছবত এবং বিশেষত উনার কাছ থেকে প্রাপ্ত ইলমে লাদুন্নী মুবারক উনার ইমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কোন অসুখের ক্ষমতা নেই যে তা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আক্রান্ত করে। (নাঊযুবিল্লাহ) বরং এটি মহান আল্লাহ পাক উনার ওহী মুবারক যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইখতিয়ার যে তিনি অসুখকে গ্রহণ করেছেন, আবার বিদায় দিয়েছেন, আবার গ্রহণ করেছেন। ” সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য, ‘পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ উপলক্ষে বিশেষ যে বিষয়টি প্রতিভাত হয়, তা হলো- উম্মু আবিহা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কত মুহব্বত মুবারক করতেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ও সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে কত মুহব্বত মুবারক করতেন।
‘পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ উনার বর্ণনায় জানা যায়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত মা যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে খবর দিন, তিনি যেন উনার সুমহান আওলাদগণ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সঙ্গে নিয়ে তাড়াতাড়ি আমার নিকট চলে আসেন।
সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত মা যাহরা আলাইহাস সালাম উনার আওলাদগণ উনাদেরকে নিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে হাজির হলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত মা যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে নিজের গলা মুবারক উনার সাথে জড়িয়ে স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিলেন, নাতিগণ উনাদের কপাল মুবারক উনার মধ্যে চুমু মুবারক খেলেন এবং উনাদেরকে সাথে নিয়ে আহারে বসলেন। কয়েক লোকমা খাবার গ্রহণ করার পর অন্যান্য উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ উনারাও খিদমতে এসে হাজির হলেন।
অতঃপর পর্যায়ক্রমে বিশিষ্ট ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারাও বাইরে এসে হাজির হন।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থতাকে গ্রহণ করার পর সুস্থতাকে গ্রহণ করে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে আগমন করেন এবং নামাযের ইমামতি করেন। এই অপার আনন্দে হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুসারে অনেক কিছু হাদিয়া করেন। কোনো কোনো বর্ণনায় জানা যায় যে, খুশিতে খুশি হয়ে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সাত হাজার দীনার, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পাঁচ হাজার দীনার, হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি দশ হাজার দীনার, হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি তিন হাজার দীনার, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একশত উট ও একশত ঘোড়া মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় হাদিয়া করতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত ও সন্তুষ্টি লাভ করেন। সুবহানাল্লাহ!
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত মারিফত-মুহব্বতে দগ্ধিভূত ব্যক্তি তথা মুসলমানগণ উনারা সে দিনটিকে সম্মানিত মারিফত-মুহব্বত লাভের উসীলা সাব্যস্ত করে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের অনুসরণে যুগ যুগ ধরে ‘পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ হিসেবে পালন করে আসছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।