একনায়কতান্ত্রিক শাসন দর্শন মানে প্রতিযোগীকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। সেটাই চলছে। আমরা ১৬ কোটি মানুষ আজ যেন অপ্রাসঙ্গিক। পুরো দেশ রাজনৈতিক মহলের নিজেদের প্রয়োজনের বিচরণক্ষেত্রে পরিণত করেছে। এ অবস্থা থেকে আজ দেশকে বাঁচাতে সব মহলের সক্রিয়তার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
গত সোমবার চ্যানেল আই'র 'তৃতীয় মাত্রা' অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এ কথা বলেন। জিল্লুর রহমানের উপস্থাপনায় তিনি বলেন, এক-এগারোর সরকার কেন তাদের সময় প্রলম্বিত করল- এ প্রশ্ন করা আজ যুক্তিযুক্ত নয়। ২০০৮ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল সেটা নিয়ে দেশে-বিদেশে তেমন কোনো অভিযোগ ছিল না। এক-এগারো সরকারকে নয়, আজ প্রশ্ন করতে হবে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিশাল ম্যান্ডেট, বিশাল জনআকাঙ্ক্ষা নিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তাদের। তারা কেন পাঁচ বছরের মাথায় মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে ধূলিস্যাৎ করল? ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে তা একটা ভোটারবিহীন নির্বাচন।
১৫৪ জন নির্বাচিত হয়ে গেছেন। এটাকে প্রহসন, তামাশা অনেক শব্দে ডাকা হচ্ছে। '৯০ সালের গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় বড় অর্জন ছিল ভোটাধিকার। সেটা আজ নির্বাসিত হয়ে গেছে। মৌলিক অধিকারের ধারণাটাই অপসারিত হতে যাচ্ছে।
এগুলো ধাপে ধাপে নিশ্চিহ্ন করে ভয়ঙ্কর ধরনের একনায়কতান্ত্রিক একটা চেহারা হয়তো দেখব। ফেরিঘাটে মানুষ ঢুকতে পারছে না। মাঝপথে বৃদ্ধকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রবাসী বিদেশে যাবে। কোনো কারণ ছাড়াই এমনভাবে তল্লাশি বসানো হয়েছে যেটা অকুপেশন আর্মির আন্ডারেই হয়।
জনআকাঙ্ক্ষার বিপরীতে এগুলো হচ্ছে। রাজনীতি কীসের জন্য? জনকল্যাণের জন্যই তো। আমরা দেখছি উল্টোটি। নিজেদের ভাগ্য বদলই মূল লক্ষ্য। হোসেন জিল্লুর বলেন, ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশে এখন যে বাস্তবতা বিরাজ করছে সরকারি দল তা স্বীকারই করছে না।
তাদের কথাবার্তায় মনে হয় অন্য কোনো দেশ নিয়ে তারা আলোচনা করছেন। যেমন- বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে কোনো সমস্যা নেই। একটা নৈতিক জয়ের পথে তারা ইত্যাদি, ইত্যাদি। সংকট তো অনেক সময় হয়।
কিন্তু যেখানে আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ। মৌলিক অধিকারগুলো প্রশ্নবিদ্ধ। ভোটাধিকার নির্বাসিত। অর্থনীতি প্রচণ্ড চাপের মুখে আছে। সেই বাস্তবতাকে যখন মানতেই রাজি নয় শাসক দল তখন বুঝতে হবে সংকটটা অন্য স্তরে চলে গেছে।
তিনি বলেন, সার্বিকভাবে আমরা দেখছি আজকে সমাজকে বাঁচানো দরকার। আজ বাংলাদেশের দুটি স্লোগান যদি মানুষের মনের কথা হয় সেটা হলো- 'দেশ শান্তি চায়', 'দেশ এগোতে চায়'। গ্রাম থেকে শহর, অশিক্ষিত থেকে সর্বোচ্চ শিক্ষিত সব শ্রেণীর কাছে এ দুটি স্লোগান সবচেয়ে বেশি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এটা আমাদের অধিকার। এটা আজ ভূলুণ্ঠিত।
তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হয়তো বন্ধ হবে না, কিন্তু নাগরিক সক্রিয়তার মাধ্যমে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের যে বৈধতা নেই সেটাকে জোরালোভাবে উপস্থাপন করা গেছে। সংকট সমাধান আজ নাগরিক সমাজের কাছেও একটা চ্যালেঞ্জ। আজকে যে ধরনের শাসন দর্শন প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে সেখানে আরও বেশি নাগরিক সক্রিয়তা তৈরি প্রয়োজন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।