চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চার ইউনিয়ন ও সীতাকুণ্ড পৌরসভার এয়াকুব নগরসহ আশপাশের এলাকায় সহিংসতার তাণ্ডব কিছুটা শিথিল হলেও সেখানে এখনো চলছে 'জামায়তি শাসন'। এ অভিযোগ স্থানীয়দের। বাঁশখালী উপজেলায় জামায়াতি তাণ্ডবকে বিভক্ত আওয়ামী লীগ প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। বাঁশখালী থানা সূত্রে জানা যায়, গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সহিংসতা ও নাশকতায় ১৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ মামলাই আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের।
২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায় ঘোষণার পর তাণ্ডবের ঘটনার মামলায় আসামি করা হয় ২১১ জনকে। এটা হয়েছে দলীয় কোন্দলের কারণে। বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুল হাসান বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানের পর থেকে উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবস্থা ভালো। প্রতিদিন অভিযানে অভিযুক্তদের আটক করা হচ্ছে। গত সোমবার ২৩ জন ও গতকাল আটক করা হয় ৫ জনকে।
আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলীয় বিভক্তির কারণে একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা করলে আমাদের করার কী থাকে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিম বাঁশখালীর চাম্বল, পুঁইছড়ি (আংশিক), শেখেরখিল ও গণ্ডামারা ইউনিয়নে অঘোষিতভাবে চলছে জামায়াতি শাসন। এখনো এসব এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে জামায়াত। শেখের খিল ইউপির চেয়ারম্যান হলেন উপজেলা জামায়াতের আমির জহিরুল ইসলাম, গণ্ডামারা ইউপির চেয়ারম্যান উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আরিফ উল্লাহ। গত ২৮ জানুয়ারি বাঁশখালীর চাম্বল বাজারে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ব্যানার নামানোর ঘটনার জের ধরে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের ব্যাপক সংঘর্ষ হলে পুলিশই পিছু হটে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত। একটি পক্ষের নেতৃত্বে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য সুলতানুল কবির চৌধুরী, অপর পক্ষের নেতৃত্বে আছেন আবদুল্লাহ কবির লিটন। তবে স্থানীয়ভাবে লিটন জামায়াতপন্থি আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। দলীয় নেতা কর্মীদের অভিযোগ, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই উপজেলায় জামায়াত-শিবির এত নাশকতা করার সাহস পাচ্ছে। তার সঙ্গে যোগ ছিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জামায়াত-প্রীতি।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাঁশখালীতে জামায়াত অধ্যুষিত তিনটি ইউনিয়নে এখনো চলছে জামায়াতি শাসন। কিন্তু এরই মধ্যে প্রশাসনের সহায়তা ও দলীয় কর্মীদের উপস্থিতিতে প্রথমবারের মতো দুটি জনসভা করেছি। ইতিপূর্বে এখানো কোনো কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ হয়নি। তিনি বলেন, আগের ওসি ও আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ মিলে আমাদের কিছু নিরীহ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল।
প্রতিপক্ষ গ্রুপ তাণ্ডবকে আমাদের ঘায়েলের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। তবে আমরা নিরীহ কর্মীদের ছাড়াতে একটি তালিকা প্রণয়ন করে প্রশাসনের ঊধর্্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছি। অন্যদিকে, জামায়াতের সমকালীন তাণ্ডব শেষে এখন সীতাকুণ্ড উপজেলায় আসন্ন নির্বাচন আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ এখন এ উপজেলায় চলছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর গণসংযোগ। অন্যদিকে আছে যৌথ বাহিনীর টহল।
সীতাকুণ্ড থানা সূত্রে জানা যায়, গত নয় মাসে থানায় মোট ২৯৭টি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় জ্ঞাত-অজ্ঞাত মিলে আসামি করা হয় ২৭৫৭ জনকে। সর্বশেষ গত তিন মাসে মামলা হয় ৩৮টি। এর মধ্যে চিহ্নিত আসামিদের মধ্যে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ জনকে আটক করা হচ্ছে। তাছাড়া যৌথ বাহিনীর অভিযান ছাড়াও প্রতিদিন থানার ৩৫০ থেকে ৪০০ জন পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
সীতাকুণ্ড থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইফতেখার হাসান বলেন, ইতোমধ্যে আমরা যৌথ বাহিনী, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। তাছাড়া এখন নির্বাচনী প্রচারণায় কর্মীদের অংশগ্রহণ থাকায় সাধারণ মানুষরাও সাহস পাচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সবখানেই অভিযান পরিচালনা করছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।