আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিসিএসআইআর-এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও কার্যক্রম- বিসিএসআইআর গবেষণাগার ঢাকা

১৯৫৫ সালে সৃষ্টির পর থেকে পূর্বতন ইস্ট রিজিওনাল ল্যাবরেটরিজ এবং বর্তমান বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগার ঢাকা একটি প্রাচীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসাবে গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে চলছে। এই গবেষণাগার বিসিএসআইআর-এর মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি গবেষণাগারগুলির একটি। অত্র গবেষণাগারে সাতটি বিভাগ রয়েছে। সেগুলো হলো - কেমিক্যাল রিসার্চ ডিভিশন, বায়োলজিক্যাল রিসার্চ ডিভিশন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিজিক্স ডিভিশন, ফিজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্টেশন ডিভিশন,এ্যানালাইটিক্যাল রিসার্চ ডিভিশন, ফাইবার ও পলিমার রিসার্চ ডিভিশন এবং পাল্প এন্ড পেপার রিসার্চ ডিভিশন । ঢাকা গবেষণাগার -এর বিজ্ঞানীগণের বহু সংখ্যক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

বহু সংখ্যক পদ্ধতি ও পেটেন্ট- গৃহীত হয়েছে। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি মেরামত করা হয়। এখানে নানাবিধ দ্রব্যের গুণগতমান যাচাই এবং সেসবের বিশ্লেষণ করা হয়। বিগত পাঁচ বছরে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রেরিত চার সহস্রাধীকেরও অধিক নমুনা ও সাময়িক সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। এ গবেষণাগারে স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের বহু সংখ্যক এম.এস.সি./এম.ফিল./পি.এইচ.ডি. শিক্ষার্থী তাদের থিসিসের গবেষণা কাজ সম্পন্ন করে।

নিম্নে এই গবেষণাগারের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড/অর্জন সম্পর্কে উল্লেখ করা হল: * সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রেরিত নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য, খাদ্য, পানিয়, সার, কীটনাশক, ঔষধ সামগ্রি, শিল্পে ব্যবহার্য পানি ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের জন্য পানির প্রার্থিত রাসায়নিক গুণাগুণ ও পরীক্ষণ সেবা প্রদান। পানির গুণাগুণ বিশ্লেষণের কাজ ISO/IEC ১৭০২৫ মানে accreditation এর জন্য এ্যানালাইটিক্যাল রিসার্চ ডিভিশনে ল্যাবরেটরির বিশ্লেষণ কাজের মান উন্নয়ন। * গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদকে আর্সেনিক দূরীকরণের প্রযুক্তিসমূহের গুণগত মান ও কার্যকারিতা যাচাইয়ের মাধ্যমে সনদপত্র প্রদানের দায়িত্ব অর্পন। * আলট্রামেরিন ব্লু তৈরির পদ্ধতি ইজারা প্রদান এবং এর বাণিজ্যিক উৎপাদন। * বাংলাদেশের বিভিন্ন জুট মিল কর্তৃক উৎপাদিত রপ্তানিযোগ্য ফুড গ্রেড জুট ব্যাগের Unsapolifiable matterনির্ণয়করণ।

এ কাজের জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ ও বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশনের মধ্যে ২০০১ সালে সমঝোতা স্মারক স্বার হয়। * দেশে সহজলভ্য কেমিক্যালস দ্বারা প্রস্তুত ফসফেট-বেইজড মালটিপারপাস এ,বি,সি, এবং ই-টাইপ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র প্রসেসটি ইজারা গ্রহীতা কর্তৃক বাজারজাতকরণ। * চিংড়ি প্রসেসিং শিল্পের বর্জ্য, খোসা থেকে মূল্যবান শর্করা চিটিন ও চিটোসান উৎপাদনের পদ্ধতি উদ্ভাবন। খাদ্য ও ঔষধসহ অন্যান্য শিল্পে চিটিন ও চিটোসান এর ব্যবহার। * স্পিরুলিনা উৎপাদন ; স্পিরুলিনা হলো - অতি ক্ষুদ্র নীলাভ সবুজ শৈবাল জাতীয় উদ্ভিদ।

স্পিরুলিনাতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন ও একাধিক খনিজ উপাদান রয়েছে। প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন, লৌহ ও নীলাভ সবুজ রং থাকার কারণে স্পিরুলিনায় রয়েছে নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ মতা। নিয়মিত স্পিরুলিনা সেবন আমাদের দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণকরত পুষ্টিহীনতা, রক্তশূণ্যতা, রাতকানা, ডায়াবেটিস্, উচ্চরক্তচাপ, আলসার, বাত, হেপাটাইটিস্, আর্সেনিকোসিস রোগ প্রতিরোধ ও কান্তি দূর করে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৬টি প্রতিষ্ঠান বিসিএসআইআর-এর বায়োলোজিক্যাল রিসার্চ ডিভিশন থেকে প্যাটেন্টকৃত প্রসেস ইজারা নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে স্পিরুলিনা উৎপাদন এবং বাজারজাত করছে। * সবুজ শৈবাল কোরেলাতে রয়েছে আমিষ, চর্বি, শর্করা, আঁশ, কোরোফিল, খনিজ পদার্থ (ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ ইত্যাদি) ও খাদ্যপ্রাণ।

বর্তমানে বিসিএসআইআর-এর বায়োলোজিক্যাল রিসার্চ ডিভিশনে গবাদি পশুর পুষ্টিকর খাদ্য হিসাবে তরল শৈবালের ব্যবহার এর প্যাটেন্টকৃত প্রসেস বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য ইজারা দিতে প্রস্তুত আছে। * আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ অনেক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ হলো - রোগমুক্ত ভাল বীজের অভাব। আমদানিকৃত আলুবীজ আলুর গুণগত মানসম্পন্ন না হওয়ায় উৎপাদন অনেকাংশে কমে যায়, ফলে কৃষকরা তির সম্মুখীন হয় এবং অনেক বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হয়। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে বিসিএসআইআর-এর বায়োলোজিক্যাল রিসার্চ ডিভিশনের টিস্যু কালচার গবেষণাগার রোগমুক্ত উন্নত গুণগত মানসম্পন্ন বীজ আলু উৎপাদনের আধুনিক পদ্ধতি ও গুণগত মান নির্ণয়ের কলা- কৌশল নিয়ে গবেষণা করে সফলতা অর্জন করেছে। উল্লেখ্য যে, এখানে ELISA এর সাহায্যে বীজ আলুর ভাইরাস সনাক্ত করা হয়।

* প্লান্ট গ্রোথ রেগুলেটর (PGR) উৎপাদন করে ইজারা প্রদান করা হয়েছে। পিজিআর বিভিন্ন শস্য এবং শাক-সবজি ফলন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ফুল, ফল, ঝরা বন্ধ করে। এটি Organic PGRএবং পরিবেশবান্ধব। এর LD50 অনেক কম। * এ গবেষণাগারে মাটি, বিভিন্ন প্রকার জৈব ও অজৈব সার এবং বর্জ্য পদার্থের ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক বিশ্লেষণ করা হয়।

এছাড়া বিভিন্ন প্রকার সারের গুনগত মান উন্নয়ন এবং পরিবেশ-বান্ধব নতুন নতুন সার উদ্ভাবনে গবেষণা করা হচ্ছে। * এ গবেষণাগারের পাল্প এন্ড পেপার রিসার্চ ডিভিশন কর্তৃক উদ্ভাবিত ASAM Process-এ পাট ও সম্পূর্ণ পাট (Whole Jute) থেকে উন্নত মানের পাল্প তৈরি হয়। এর ব্লিচাবিলিটি এবং ফিজিক্যাল প্রোপার্টিস অসাধারণ। এ পদ্ধতিতে তৈরি পাটের আঁশের পাল্প আমদানিকৃত সফ্ট-উড পাল্প-এর পরিবর্তে ব্যবহৃত হতে পারে। * নলিতা গাছ বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল গাছ, ইহা একটি প্রাকৃতিক প্রজাতি।

নলিতা গাছ হতে তৈরি পাল্পের ব্লিচাবিলিটি অসাধারণ। বাংলাদেশে এর থেকে মণ্ড উৎপাদন হয় সবচেয়ে বেশি। এ প্রজাতি ব্যবহার করলে বনভূমি কম প্রয়োজন হবে। * পবিবেশ রণের জন্য পলিথিন নিষিদ্ধ হওয়ার পর দেশে এখনও পর্যন্ত এর বিকল্প কোন প্লাস্টিক উৎপাদন সম্ভব হয়নি যা ১০০% ডিগ্রেডেবল। প্লাস্টিকের ডিগ্রেডিবিলিটি (disintigration) পরীণের জন্য ASTM পদ্ধতি অনুসরণে একমাত্র বিসিএসআইআর-এর এ গবেষণাগারে স্থাপিত আছে এবং এটি BSTI কর্তৃক BDS হিসাবে adopted হয়েছে ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।