আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেন রাজনীতির আগুনে পুড়ছে বিদ্যাপীঠ



[ প্রকাশঃ http://goo.gl/s9gLT0 ]

আমি একজন শিক্ষাচিন্তানবীশ। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবি; পড়াশোনাও করেছি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শিক্ষা নিয়ে ভাবাভাবি করি কপালের ফ্যারে নয়; পাঁজরের গহীনের চাওয়া থেকে। ছোটবেলায় শিক্ষকদের মারমুখী আচরণ আর মুখুস্ত বিদ্যার জয়জয়কার বড্ড তেতো লাগতো। তাই এই পথে হাঁটা।


সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতায় অনেক বিদ্যাপীঠের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। আজকের ভোটকালীন সহিংসতায় পুড়েছে অসংখ্য বিদ্যালয়। ভোটকেন্দ্র হওয়ায় শতাধিক বিদ্যালয় পুড়েছে এপর্যন্ত বলে খবরে প্রকাশ করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। এই বিদ্যালয়গুলোর কি অপরাধ ছিল; কি অপরাধ ছিল শিক্ষার্থীদের-শিক্ষকদের। তাদের হয়ত আগামীতে গাছতলায় শিখন-শেখানো কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হবে।

ঝড়-বৃষ্টি-রোদ উপেক্ষা করে চালিয়ে নিতে হবে দেশের ভবিষ্যত নাগরিক গড়ার অদমনীয় প্রচেষ্টা। দেশ তো শিক্ষকদের মন্ত্রী-সাংসদদের মত সুবিধা দেয় না; দেয় না শিক্ষার্থীদের ভি,আই,পি প্রটোকল। তাহলে তাদের কপালের এই ফ্যার হবে কেন। বর্তমান বেতন স্কেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠানের পিয়ন-অফিস সহকারীর চেয়েও কম। অথচ কি অসহায় আমার দেশের শিক্ষকগণ- কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

ছেঁড়া জামা পরে আধপেটা খেয়ে পায়ে হেঁটে কিংবা ভাঙা বাইসাইকেল ঠেলে প্রতিদিন সকালে যে মন্দিরে যেতেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা; এখন আর সেটাও অবশিষ্ট নেই। এ মন্দির ইশ্বরের নয় বলে কি তিনি এর বিচারও করবেন না? ইশ্বর কি তবে শুধু তাঁর নিজের ঘরটাই দেখবেন- এমন স্বার্থপর হয়ে গেছেন নাকি তিনি? নাকি আমরা কারও তোয়াক্কা করি না- হোক সে ইশ্বর, হোক সে দুর্বল মধ্যবিত্ত।
যারা ক্ষমতায় আছেন- তাদের কাছে কি কোন গোয়েন্দা তথ্য ছিল না যে এমনটি হতে পারে! তাহলে কেন আমার এই অসংখ্য গরীব বিদ্যাপীঠকে ভোটকেন্দ্র করা হল? আর করা হলেই তার নিরাপত্তা বিধান করা হলো না কেন? শুধু চরমপন্থী-সন্ত্রাসীদের দোহাই দিয়ে দায় এড়ানো যাবে কি? মানুষ যা বোঝার, সবই বোঝে। আবার বিরোধীদলে যারা আছেন কিংবা যারা এগুলো করছেন- তাদের কি এই বিদ্যালয়গুলো পোড়ানো ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না বাধা দেবার। নিজের প্রাণের মায়া করে কেউ মুক্তিযুদ্ধ করে নি; যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তাঁরা দেশকে ভালোবেসেই করেছেন।

তাঁরা মৃত্যুর পরোয়ানা কে ভয় করেন নি। শ্রদ্ধেয় বিরোধী দল যদি দেশ বাঁচাতেই আন্দোলন করে থাকেন, তাহলে শুধু শুধু প্রাণের ভয় করে এই বোমাবাজি-আগুনে সহিংসতা কেন? আসলে সবাই ক্ষমতা লোভী; আন্দোলনের মাঠে কিংবা ক্ষমতার গদিতে বসে হিসেব করেন কোটি টাকা ক্যামনে নিজের পকেটে নেওয়া যায়। আর তার বলি হয় – দুর্বল সাধারণ মানুষ। ধিক, শত ধিক এই সব নপুংসকদের।
বিগত দিনগুলোতে মারা গেছে অনেক শিশু; হাত-পা-চোখ হারিয়েছে অনেকে স্কুলে যেতে গিয়ে।

আমরা কিছুই বলি নি; শুধু মিষ্টি ভাষায় প্রতিবাদ করেছি। এমন একদিন আসবে যখন এই আম-জনতার ভাষা হবে দৃঢ় কর্কশ, গগণবিদারী, প্রলয়ংকারী সর্বগ্রাসা সাইক্লোনের মত প্রবল। সেদিন আপনাদের (স্বার্থপর রাজনীতিকদের বলছি) অবস্থা হবে ফরাসী রাজপরিবারের (ফরাসী বিপ্লব কালীন) মত; কিংবা জার্মান স্বৈরশাসক-রাশিয়ান জার এর মত। ইতিহাসে এমন ঘটনা আছে ভুরি ভুরি। শীতের এই অপরাহ্নে তাই কম্বলের তলায় পা ঢুকিয়ে ইতিহাসের বইটা একবার খুলতে ভুলবেন না যেন, সম্মানিত রাজনীতিকবৃন্দ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।