সংসদের মোট ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টির প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় বাকি ১৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণ হয় রোববার। এর মধ্যে গোলযোগের কারণে আটটি আসনের ভোটের ফলাফল স্থগিত রয়েছে।
ঘোষিত ১৩৯টির ফলাফলে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ১০৫টি আসন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১২৭ জন আগেই বিজয়ী হয়ে থাকায় সরকার গঠন নিয়ে কোনো সংশয় কার্যত ছিল না।
এখন ভোটে বিজয়ীদের নিয়ে দশম সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২৩২, যা সরকার গঠনের ন্যূনতম আসনের চেয়ে ৮২টি বেশি।
এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় জোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ভোট করে ৪টি এবং জাসদ ২টি আসনে জয়ী হয়েছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ীদের নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির আসন হচ্ছে ৬ এবং জাসদের ৫।
নির্বাচনে নিয়ে দোদুল্যমান থাকা এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ১৪৭টি আসনের মধ্যে ১৩টি আসনে বিজয়ী হয়েছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের নিয়ে তাদের আসন সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৩৩।
মহাজোট ছেড়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া জাতীয় পার্টি সেক্ষেত্রে বিরোধী দলের আসনে বসতে পারে।
আর নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে নাটকীয় অসুস্থতায় হাসপাতালে থাকা এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা বানানো হবে বলে আগে থেকে সন্দেহ করে আসছে বিএনপি।
রাজধানীর মিরপুরে সেনা অবস্থান
সাতকানিয়ায় পুড়িয়ে দেয়া ভোটকেন্দ্র।
নবম সংসদ নির্বাচনে ৮৭ শতাংশ ভোট গ্রহণ হলেও এবার এই হার ৪০ শতাংশ পেরুনোর মধ্যেই সন্তষ্টি খুঁজছে ইসি।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনের চেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থীর সংখ্যা ১০৪ জন বেশি হলেও ওই নির্বাচনের ২৬ শতাংশ ভোটের হার এবার ছাড়াবে বলে আশা নির্বাচন কর্মকর্তাদের, যদিও পূর্ণাঙ্গ হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি।
সব দলকে নির্বাচনে না পাওয়ার আক্ষেপ প্রকাশ করলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ দাবি করেছেন, ১৮ হাজারের ৯৭ শতাংশ কেন্দ্রে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে।
ভোটগ্রহণ নিয়ে সন্তোষ জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। তবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল বলছে, জনগণ ‘একতরফা’ এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে ভোট কেন্দ্রে যায়নি।
এই ভোট বাতিল করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন করে নির্বাচন দেয়ার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সোমবার সকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতালও ডেকেছে ১৮ দল।
রাজনৈতিক মতানৈক্যের মধ্যে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার হতাশার মধ্যে এই নির্বাচন হয়ে গেলেও সমঝোতা হলে দশম সংসদ ভেঙে নতুন করে নির্বাচন দেয়া হবে বলে আগেই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভোট গ্রহণ শেষে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও বিএনপির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলায় রোববারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত দশম সংসদ তার পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এই সংশয়ের মধ্যেই দশম সংসদের সদস্য হতে যাচ্ছেন ১৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী, যাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ নেতা। সেই সঙ্গে বিতর্কিত দল বিএনএফের প্রধান আবুল কালাম আজাদও ঢাকা-১৭ আসনে জয়ী হয়ে সংসদ সদস্য হতে যাচ্ছেন।
তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির আসনে জয়ী হয়েছেন। লক্ষ্মীপুর-১ স্থগিত হওয়া একটি আসনেও এই দলের একজন এগিয়ে রয়েছেন।
জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। কুড়িগ্রাম-৪ আসনে এই দলের প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন, তবে আসনটিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে।
এছাড়া গোলযোগের কারণে দিনাজপুর-৪, বগুড়া-৭, গাইবান্ধা ১, ৩, ৪ ও যশোর-৫ আসনের ফলাফল স্থগিত রয়েছে।
গাইবান্ধা সদরের মুন্সীপাড়া কেন্দ্র দুপুররেও ছিল ভোটশূন্য।
গোপালগঞ্জ শহরের মডেল স্কুল কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন।
অন্যদিকে বিএনপির নির্খোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীর এলাকা সিলেটের বিশ্বনাথে একটি ভোট কেন্দ্রে কোনো ভোটই পড়েনি। ভোট পড়েনি এমন কেন্দ্রের সংখ্যা ২৫টি।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী রংপুরের পীরগঞ্জের আসনেও জয়ী হয়েছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ভোটের লড়াইয়ে জয় পেয়েছেন মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ফারুক খান, সাহারা খাতুন, মাহাবুব-উল আলম হানিফ, শামসুল হক টুকু, মুন্নুজান সুফিয়ান।
তবে হেরেছেন দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মান্নান খান ও মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মান্নান খান ঢাকা-১ আসনে হেরেছেন জাতীয় পার্টির সালমা ইসলামের কাছে। মোস্তফা জালাল ঢাকা-৭ আসনে হেরেছেন দলেরই নেতা হাজি সেলিমের কাছে।
নির্বাচন অংশগ্রহণ নিয়ে রহস্যময় ভূমিকায় থাকা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ লালমনিরহাটের আসনে হারলেও জিতেছেন রংপুর-৩ আসনে।
তবে লালমনিরহাট-৩ আসনে শোচনীয়ভাবে হেরেছেন তার ভাই বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের। জাপা সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য তৃতীয় হয়েছেন, ওই আসনে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আবু সালেহ মো. সাঈদ, দ্বিতীয় হয়েছেন জাসদের খোরশেদ আলম।
জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে ঢাকায় কাজী ফিরোজ রশীদ, আবু হোসেন বাবলা ও সালমা ইসলাম, চট্টগ্রামে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, পটুয়াখালীতে মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও কিশোরগঞ্জে মুজিবুল হক চুন্নু ভোটের লড়াইয়ে জয় পেয়েছেন।
এই দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রওশন এরশাদ, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।