রাত হলেই সিরাজগঞ্জে মহাসড়কের ৭০ কিলোমিটার অংশে চলে অবরোধ ও হরতাল সমর্থকদের নাশকতা। পুলিশ র্যাব-বিজিবি-সেনাবাহিনীর টহল থাকা সত্ত্বেও এখানে থামছে না নাশকতা। আবার অবরোধকে ঘিরে মহাড়কের কয়েকটি পয়েন্টে ডাকাতির ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ অংশে প্রবেশ করা মাত্রই যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা আতঙ্কে আল্লাহকে ডাকতে শুরু করেন।
তথ্যনুসন্ধানে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর, হাটিকুমরুল গোলচত্বর-বোয়ালিয়া-উল্লাপাড়া এবং হাটিকুমরুল গোলচত্বর-চান্দাইকোনা, হাটিকুমরুল গোলচত্বর-নাটোরের বনপাড়া মহাসড়কের প্রায় ৭০ কিলোমিটার রাস্তার অনন্ত ৩০টি পয়েন্টে চলে হরতাল-অবরোধ সমর্থনকারীদের নাশকতা।
রাত নামলেও পয়েন্টগুলোতে চলে পণ্যবাহী ট্রাকে ভাঙচুর, ককটেল নিক্ষেপ ও পেট্রোলবোমার মহোৎসব। পিকেটারদের আঘাতে চোরাগোপ্তা পেট্রোল বোমা হামলায় এ পর্যন্ত চালক-হেলপার ও ব্যবসায়ীসহ চারজন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ জন।
বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় সদর উপজেলার সয়দাবাদ, মুলিবাড়ি ও কড্ডা, কামারখন্দ উপজেলার কোনাগাঁতী, বানিয়াগাঁতী, সেনগাঁতী, চৌরগাঁতী, কাশেম মোড়, মধ্য-ভদ্রঘাট, নলকা, উল্লাপাড়ার পাঁচিলা, হোড়গাতী, ফুলজোড় কলেজ, পেট্রোলপাম্প, বোয়ালিয়া, শ্রীকোলামোড়, বালসাবাড়ী, সলঙ্গা থানার নাইমুড়ী, চড়িয়া মধ্যপাড়া, রায়গঞ্জ উপজেলার ষোলমাইল, চান্দাইকোনা ও ঘুরকা এলাকায় সবচেয়ে বেশি চলে এ নাশকতা।
মাঝে মাঝে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সাথে অবরোধকারীদের ঘটছেও সংঘর্ষের ঘটনা। মহাসড়কে হরতাল-অবরোধকারীদের এসব চোরাগোপ্তা হামলা-নাশকতা রোধ করতেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও হিমশিম খাচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসে মহাসড়কের ৭০ কিলোমিটার অংশে শতাধিকের বেশি পণ্যবাহী যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
গত ১১ ডিসেম্বর কামারখন্দ উপজেলার মধ্য ভদ্রঘাট এলাকায় পিকেটারদের ধাওয়ায় ট্রাক উল্টে পাবনার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আকতার হোসেন, ২১ ডিসেম্বর রাতে সবজি বোঝাই ট্রাকে দেয়া আগুনে পুড়ে ট্রাক চালক নওগাঁ জেলার শাহিন ও মাজেদুল মারা যায়।
সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি রাতে মহাসড়কের উল্লাপাড়ার হোড়গাড়ীতে আলু বোঝাই ট্রাকে পেট্রোল বোমায় ব্যবসায়ী মিলন ও ইমরান মারা যায়।
আহত হয় পাাচজন।
এছাড়াও গত ২৪ ডিসেম্বর মহাসড়কের বানিয়াগাতী এলাকায় আল-মাহমুদ ও মনসুর এবং ৩ জানুয়ারি রাতে পুলিশের গুলিতে ঝাঐল এলাকায় করুন চন্দ্র নামে ৩ ডাকাত নিহত হয়।
রাতে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বার বার ককটেল ও পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তেমন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
রংপুরের ট্রাকচালক হামিদুল ইসলামসহ অনেকে জানান, ট্রাক নিয়ে সিরাজগঞ্জ অংশে প্রবেশ করার সাথে সাথেই আল্লাহর নাম জপতে শুরু করি। যেন কোনও দুর্ঘটনার কবলে না পড়ি, জানটা নিয়ে ফিরে যেতে পারি।
রাতে মহাসড়ক অবরোধকারীদের দখলে থাকায় বর্তমানে এমন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন শত শত চালক-যাত্রী।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, আগে চোরাগোপ্তাভাবে দু'একটি ঘটনা ঘটলেও কিছুদিন যাবত পুলিশ-র্যাব ও সেনাবাহিনীর কঠোর তৎপরতায় বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থেকে নলকা পর্যন্ত কোনো অঘটন ঘটেনি। হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী ফরিদ আহমেদ জানান, মহাসড়কগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি রয়েছে। এরপরও চোরাগোপ্তাভাবে হামলা হচ্ছে। এসব হামলা রোধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার এসএম এমরান হোসেন জানান, নাশকতা রোধে আমরা সর্বোচ্চ চষ্টো চালিয়ে যাচ্ছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।