I still try to find my place........ @ hyperactve.blogspot.com
হাইস্কুল লাইফটা মনে হয় সবচেয়ে এনজয়েবল। আমি যখন হাইস্কুলে ছিলাম তখন বড় বড় অনেকেই বলত, "মজা করার এখনই সময়। " আবার যখন কোন কিশোর উপন্যাস এর রিভিউ পড়তে যাই তখন পাই, "এই উপন্যাস আপনাকে নিয়ে যাবে আপনার স্কুলজীবনে। সেই সময়টাকে ফেরত পেতে চাইবেন। " উল্লেখ্য, কলেজ জীবনেও আমি ওই বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষের কাছ থেকে একই কথা শুনেছি, এমনকি এখন ভার্সিটি লাইফেও তাই শুনছি।
আর এখনকার বিখ্যাত কিশোর উপন্যাসগুলো হাই স্কুলে হয় না। হয় কোন জ্বলজ্বল করতে থাকা ভ্যাম্পায়ারকে নিয়ে হরর-রোমান্টিক বই, অথবা বারোজন শিশুকিশোরের মর্টাল কমব্যাট। কিন্তু জাপানিজ আনিমের ক্রিয়েটররা এখনো হাইস্কুলকে সেভাবে ভুলতে পারছেন না। বরং নানাভাবে তারা হাইস্কুলকে উপস্থাপন করে চলেছেন। কখনো একটি স্কুলের সব ক্ষমতার অধিকারী হয় স্টুডেন্ট কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট।
আবার কখনো পুরো শহর জুড়ে শুধুই হাইস্কুল, আর তাই ওই শহরের নাম একাডেমী সিটি। যারা আনিমে নিয়মিত ফলো করেন তাদের জানা থাকার কথা জাপানিজরা তাদের হাইস্কুলকে কত ভালোবাসে! তাদের এই হাইস্কুলগুলোতে যেমন স্বাভাবিক মানুষ আছে, তেমনি আছে মেন্টালিস্ট, সিন্থেটিক লাইফফর্ম অথবা টাইম ট্রাভেলার। এমনই এক হাইস্কুল পড়ুয়া টাইম ট্রাভেলারকে নিয়েই ২০০৬ সালে ডিরেক্টর মামুরো হোসোডা তৈরি করেছেন "দ্যা গার্ল হু লেপ্ট থ্রু টাইম"। আনিমে ফিল্মটি আবার ইয়াসুতাকা সুতসুই-র ১৯৬৭ সালের একই নামের কিশোর উপন্যাসের থিম অবলম্বনে করা হয়েছে। ইয়াসুতাকা সুতসুই সম্পর্কে আরেকটি তথ্য বলতে গেলে বলা যায়, সাতোশি কন এর আনিমে ফিল্ম 'পাপরিকা' তাঁরই 'পাপরিকা' উপন্যাস অবলম্বনে বানানো।
ফিল্মের প্রধান চরিত্র মাকোতো কন্নো। সাধারন জাপানি বালিকা। সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠিকমত ব্রেকফাস্ট না করে স্কুলের জন্য দৌড়ানো তার নিত্যদিনের রুটিন (এবং সাম্প্রতিক সময়ে আনিমেগুলোতে অনেক ওভারিউজড)। স্কুলে তার বন্ধু চিয়াকি ও কিয়ুসুকে এর সাথে বেসবল খেলা বা কোন বন্ধুকে প্রপোজ করতে সাহায্য করাও যেন প্রতিদিনের বিষয়। আর বাসায় ছোটবোনের সাথে খুনসুটিতো আছেই।
কিন্তু এর মাঝেই একদিন ল্যাবে একটি একসিডেন্ট এর পর সে করে আবিষ্কার করে সে অতীতে যেতে পারে! এখন কি করা যায়? একজন আমেরিকান টাইম ট্রাভেলার এর জন্য লিঙ্কন বা কেনেডি এর এসানিনেশন বন্ধ করাটা একটা ভালো এবং অনেক বার করা হয়েছে এরকম একটা কাজ। বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কোন কিছু পরিবর্তন করাও একটা ভালো কাজ। অথবা সে সময়ের হিরোশিমা বা নাগাসাকি এর বম্বিং থেকে মানুষকে রক্ষা করাও বেশ ভালো কাজ। কিন্তু না! আমাদের মাকোতো এর জন্য কলেজে সায়েন্স পাওয়াটা খুবই গুরুত্বপুর্ণ। তাই সে সময়ের পেছনে গিয়ে ক্লাসটেস্টগুলো আবার দিতে থাকে।
এবং করতে থাকে আরো মজার মজার সব ঘটনা। কিন্তু এসবের মাঝেই একসময় সে বুঝতে পারে সে খুব বড় পরিবর্তন করে ফেলছে! এমনকি সামান্য স্বার্থপরতা অনেক ভয়ঙ্কর কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে!
যেকোন হার্ডকোর আনিমে ফ্যানকে এই ফিল্মের ডেমোগ্রাফি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সে কিছুক্ষন চিন্তা করে উত্তর দিবে, "স্লাইস অফ লাইফ" এবং "শোজো", অর্থাৎ এটি মেয়েদের জন্য বানানো; উল্লেখ্য রুল অব থাম্ব হল, জাপানিজ আনিমেতে একটু বেশি পরিমাণ রোমান্স থাকলে সেটা সোজো জনারের। এই ফিল্মের ক্ষেত্রে কারন হয়ত এর বড় অংশজুড়ে আছে তার কোন বন্ধুর প্রতি মাকোতো এর ফিলিংস কেমন তা নিয়ে দোলচাল। অনেক বড় একটা সময়ধরে মাকোতো দ্বিধাদ্বন্দ্বে থেকে অবশেষে মনে করে, “Sometimes all it takes to fall in love is the guts to try.” আমাদের দেশে প্রচলিত পশ্চিমা ডেমোগ্রাফি অনুযায়ী বলতে গেলে এটা একটা রোমান্টিক-কমেডি ফিল্ম, সাথে আছে স্বল্পমাত্রার সায়েন্স ফিকশান। অনেকটা 'ইটারনাল সানশাইন অফ দ্যা স্পটলেস মাইন্ড' এর মত, এবং অবশ্যই তা স্টোরিওয়াইজ নয়, জনারওয়াইজ।
স্টুডিও জিবলি এর 'হুইসপার অফ দ্যা হার্ট' যারা পছন্দ করেন, এই গল্পের সাথে তাদের মিশে যেতে খুব বেশিক্ষন লাগবে না।
সিনেমার প্রধান চরিত্র মাকোতো, আর তাই ফোকাস তার উপরেই সবচেয়ে বেশি। মাকোতো এর ছোটবোন যদিও অল্প সময়ের জন্য স্ক্রিনে আসে, আপনার মনে হবে স্ক্রিনের উপরে পিচ্চিটাকে আদর করে দেই; তবে ইন জেনারেল, আনিমে এর বাচ্চাগুলো যথেষ্ঠ কিউট হয়। মাকোতো এর খালাও অতি অল্প সময় স্ক্রিনে আসলেও, বেশ লাইভলি আর উপন্যাসটি পড়া থাকলে আপনার বুঝতে দেরি হবে না যে, এই খালাই সুতসুকির বই এর প্রধান চরিত্র ছিলেন। সে দিক দিয়ে চিন্তা করলে এটি বইটির সিক্যুয়েল, কিন্তু বই এর গল্পএর সাথে এটির আর কোন সংযোগ নেই।
মাকোতোর পরে ফোকাস করা হয়েছে মাকোতোর বন্ধু চিয়াকিকে। একটি বিশেষ দৃশ্য আমাকে বেশ আকর্ষন করেছিল। সেই দৃশ্যে চিয়াকি মাকতোকে প্রোপোজ করে, আর মাকোতো বার বার অতীতে গিয়ে এই ঘটনা পাল্টাতে চায়, কিন্তু প্রতিবারই কোননা কোনভাবে চিয়াকি একই কাজ করতে থাকে। আমি রোমান্টিক ফিল্ম খুব একটা দেখিনি। কিন্তু এই দৃশ্যটা আমার মনে অনেকদিন গেঁথে ছিল।
এছাড়া আরো বেশ কিছু দৃশ্য আমার বেশ পছন্দের, বেশিরভাগই কমেডি, এখানে বলে মজা নষ্ট করতে চাচ্ছি না।
আনিমের কথা বললে, এর এনিমেশন কোয়ালিটি নিয়েই কথা বলাতেই হয়। এনিমেশন স্টুডিও 'ম্যাডহাউজ', উল্লেখ্য আমার ফেভারিট ডিরেক্টর সাতোশি কন এই স্টুডিওতেই কাজ করতেন। ম্যাডহাউজ তাদের দীর্ঘদিনের কোয়ালিটি এনিমেশন এর দ্বারা একটি ব্র্যান্ডনেম প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। তাই কোন আনিমে ফিল্মের সাথে ম্যডহাউজ সনযুক্ত থাকলেই এক্সপেক্টেশন অনেক বেড়ে যায়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেটা তারা পূরন করতেও সক্ষম হয়। 'দ্যা গার্ল হু লেপ্ট থ্রু টাইম'-এ তাই পাবেন ফ্লুইড এনিমেশন, লাইভলি ক্যার্যাক্টার, এবং ব্রিথটেকিং সিন। যদিও শেষ প্রশংসা ২০০৬ এ বেশ সত্য হলেও, বর্তমানে মাকতো শিনকাই তার ফিল্মগুলোর মাধ্যমে 'ব্রিথটেকিং সিন' এর সংগা পরিবর্তন করে ফেলেছেন। সে সময় জাপানে টুডির সাথে থ্রিডি এনিমেশন মিশিয়ে কিছু একটা তৈরি করার প্রবণতা বেশ জোরেসোরে চলছিল (এখন এটা একটা কমন প্র্যাকটিস)। তবে আনিমে সিরিজে যেটা দায়সারাভাবে করা হত এখানে সেটাই অনেক মনযোগ দিয়ে করা হয়েছে।
তাই, খুব একটা খুঁতখুঁতে স্বভাব না থাকলে সেটা চোখে না পড়ারই কথা। আর মামুরো হোসডা এটার এনিমেশনে কোন কমতি রাখতে দেননি। এনিমেশন করা হয়েছে প্রধান চরিত্র মাকতো এর মুডের উপর লক্ষ্য রেখে। এবং এটা সুন্দরভাবেই খাপ খেয়ে যায়। কমেডি সিনগুলোতে কমেডিভাব বুঝানোর জন্য যেমন বডি/এক্সপ্রেশন ডিফর্ম ব্যাবহার করেছেন, কিন্তু সেখানে কোন অতিরঞ্জিত বিষয় নেই, তেমনি সিরিয়াস সিনগুলোতেও যথেষ্ঠ মনযোগ দিয়ে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন, কিন্তু সেখানে এমন কোন সিরিয়াসনেস নেই যে আগের স্বাভাবিক সিনের তুলনায় বেখাপ্পা মনে হবে।
মামুরো হোসডা তাঁর এই মুনশিয়ানা পরের মুভিগুলোতেও বজায় রেখেছেন। তবে একটা জিনিস লক্ষ্যনীয়, ডিরেক্টর মামুরো হোসডা আর ক্যার্যাক্টার ডিজাইনার ইয়োশিইউকি সাদামোতো একসাথে হোসোডার সবগুলো 'অরিজিনাল' সিনেমায় কাজ করায়, তাঁর ফিল্মগুলোয় ক্যার্যাক্টারদের ডিজাইন, এক্সপ্রেশন, এবং এক্সিকিউশন কিছুটা একই মনে হতে আপনার কাছে। যদি এর আগে হোসোডা এর কোন কাজ না দেখে থাকেন তাহলে এই সিনেমার ক্ষেত্রে সেটা কোন প্রভাব ফেলবে না।
সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও যথেষ্ঠ মানানসই, কিন্তু মনে রাখার মত তেমন মিউজিক পাবেন না। একটি বিশেষ মুহুর্তে 'কাওয়ারানাই মনো' ইন্সার্ট সংটা মনযোগ দিয়ে শুনলে হয়ত আপনি সামনের কয়েকদিন গুনগুন করে গানটা গেয়ে যেতে থাকবেন।
এছাড়া ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক মুলত অর্কেষ্ট্রা ও পিয়ানো ঘরনার।
লেখা শেষ করার আগে, এটাই প্রথম টাইম ট্রাভেল ফিল্ম যেটা দেখে মজা পেয়েছি। এটা দেখার পর থেকে আমি মানুষের ইনবক্সে গিয়ে গিয়ে বলতাম মুভিটা দেখার জন্য, এখন অবশ্য কাজটা ছেড়ে দিয়েছি কারন ভাঙ্গা রেডিও এর মত হয়ে যাচ্ছিল বিষয়টা। এতা হাতেগোনা কয়েকটা ফিল্মের একটা যা আমি একের অধিকবার দেখেছি। খুব সাধারন একটা প্লট সুন্দর ক্যার্যাক্টার ডেভেলপমেন্ট এর মাধ্যমে কাহিনীটাকে অসাধারণ করে তুলেছে।
এগুলো বলার পর যেটা বলার দরকার তা হল, এই ফিল্মের এন্ডিং নিয়ে একটা বিতর্ক আছে। কারো কাছে সেটা মেনে নেয়ার মত। কারো কাছে নয়। আপনারা যারা দেখবেন বা দেখেছেন এন্ডিংটা বিচার করার ভার আপনাদের উপরই দিয়ে দিলাম।
"You don’t get to choose when or who you meet, however, you do get to choose who you hold on to."
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।