দশম জাতীয় সংসদের নবনির্বাচিত ২৮৪ এমপি গতকাল শপথ নিয়েছেন। সংসদ ভবনের শপথকক্ষে সকাল সোয়া ১০টায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলের ২২৬ এমপি শপথ নেন। জাতীয় পার্টি (জেপির) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু একই সঙ্গে শপথ নেন। শপথবাক্য পাঠ করান নবম জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। হালকা ক্রিম কালারের স্লিক শাড়ি পরিহিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ এমপিরা শপথ গ্রহণের পর একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানান।
আওয়ামী লীগের সাবের হোসেন চৌধুরী ও নাজমুল হাসান পাপন বিদেশে থাকায় গতকাল শপথ নিতে পারেননি। আওয়ামী লীগের পর বেলা সোয়া ১১টায় বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির ৩১ জন এমপি শপথ নেন। পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও নারায়ণগঞ্জের এমপি নাসিম ওসমান গতকাল শপথ নেননি। তারা আজ শপথ নিতে পারেন। সভাপতি হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ, সভাপতি রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টির এমপিরা শপথ নেন।
জাসদের মঈনুদ্দিন খান বাদল বিদেশে অবস্থান করায় শপথ নিতে পারেননি। এ ছাড়াও শপথ নেন তরিকত ফেডারেশন ও বিএনফের সদস্যদ্বয় এবং ১৪ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। উল্লেখ্য, গেজেট প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী ২৯০ জন সংসদ সদস্যের গেজেট বুধবার প্রকাশ করা হয়। গেজেট অনুযায়ী আওয়ামী লীগের ২৩০ জন, জাতীয় পার্টির ৩৩ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ৬ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ৫ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্টের (বিএনএফ) ১ জন, তরিকত ফেডারেশনের ১ জন ও ১৪ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের আসন হিসেবে গোপালগঞ্জ-৩ আসনটি রেখে রংপুর-৬ আসন ছেড়ে দেওয়ায় সেখানে পুনর্নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যশোর-১ ও যশোর-২ আসনের নির্বাচিত এমপিদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকায় গেজেটে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। শপথ নেওয়ার পর নবনির্বাচিত এমপিদের সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে ফুলের গুচ্ছ দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। জাতীয় সংসদের সিনিয়র সচিব মো. আশরাফুল মকবুল শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। সকাল থেকেই বিভিন্ন দলের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীকে ফুলের তোড়া হাতে সংসদ ভবন এলাকায় উৎফুল্লভাবে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
এ সময় সংসদ ভবন এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এমপিদের শপথ সংবিধান লঙ্ঘন : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপিদের শপথকে সংবিধান লংঘন বলে অভিযোগ করেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। পাশাপাশি সংসদ নেতাকে রাষ্ট্রপতি যদি সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান তাও সংবিধানের বিচ্যুতি ঘটবে বলে দাবি করেছে দলটি। গতকাল রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী গতকাল যাদের শপথগ্রহণের কোনো সুযোগ ছিল না, তাদেরকে শপথ পড়িয়ে, স্পিকারও সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।
শপথ নেওয়া এসব সদস্যের দ্বারা নির্বাচিত সংসদ নেতাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানালে রাষ্ট্রপতির দ্বারাও সংবিধানের বিচ্যুতি ঘটবে। এ সব কিছুই ঘটেছে সে ফ ক্ষমতার জন্য। ক্ষমতার মোহে সংবিধানকে অবজ্ঞা করার এমন নষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবশ্যই একদিন অভিযুক্ত হতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, 'গণবিচ্ছিন্ন' ক্ষমতাসীন সরকার বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে ১৫৩ জনকে কোনো ভোট ছাড়াই মনোনীত করার প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছে।
ভোটারবিহীন নির্বাচনী তামাশার মাধ্যমে অবশিষ্ট ১৪৭ জন সদস্যের মধ্যে ১৩৯ জনকে নির্বাচিত দেখিয়েছে নতজানু নির্বাচন কমিশন। তথাকথিত এ নির্বাচনী প্রহসনকে বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্য দেখানোর জন্য গায়েবি ভোটারদের একটা কাল্পনিক হিসাবও প্রকাশ করা হয়েছে। সরকারের পছন্দের স্থানীয় পর্যবেক্ষকরাও এ হিসাবকে বানোয়াট বলেছে।
তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে সংবিধানকে যথেচ্ছ কাটাছেঁড়া করে জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল, তাও আজ অমান্য ও অগ্রাহ্য করা হলো। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে যারা জাতীয় সংসদে একদলীয় স্বৈরশাসন বাকশাল ব্যবস্থা অনুমোদন করেছিল, ৩৫ বছর পর আজ আবার তাদেরই যোগ্য উত্তরসূরিরা সংসদ ভবনেই স্বৈরাচারী কায়দায় রাষ্ট্রীয় সংবিধানকে অগ্রাহ্য করেছে।
উদ্দেশ্য উভয় ক্ষেত্রে অভিন্ন, ক্ষমতাকে কুক্ষিগত ও চিরস্থায়ী করা।
বিবৃতিতে বলা হয়, ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচনে নির্বাচিত বলে কথিত কোনো ব্যক্তি সংবিধানের এই বিধান অনুযায়ী আগামী ২৪ জানুয়ারি, অর্থাৎ বর্তমান সংসদের মেয়াদ উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কার্যভার নিতে পারেন না। অথচ আজ (গতকাল) সংসদ সদস্য হিসেবে শপথগ্রহণের মাধ্যমে তারা কার্যভার গ্রহণ করেছেন। এটা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। যারা সংবিধানের এমন বিচ্যুতি ঘটালেন তাদের মনে রাখা সঙ্গত যে, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তারাই সংবিধানের বিচ্যুতি ঘটানোর জন্য বিরাট শাস্তির বিধান করেছেন।
জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে এবং ভোটবিহীন কারচুপির মাধ্যমে যারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন তারা শুধু পবিত্র সংসদ ও গণতন্ত্রকেই কলঙ্কিত করেননি বরং তারা জনগণের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। সময় আসবে এবং জনগণ এ প্রহসনের জবাব দেবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।