আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যত দরকার তত কঠোর হব

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেছেন, অনেক হয়েছে, এবার ক্ষান্ত দেন। হরতাল-অবরোধ দিয়ে মানুষের জীবন ধ্বংস করা, খুনখারাপি করা বন্ধ করুন। এসব বন্ধ না করলে কীভাবে করতে হয় তা আওয়ামী লীগের জানা আছে। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে, শান্তি নিশ্চিত করতে যত কঠোর হওয়া দরকার তত কঠোর হব। শক্ত হাতে এ ধরনের নাশকতামূলক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করব।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। শেখ হাসিনা বিএনপি নেত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি নির্বাচন বানচাল করতে ব্যর্থ হয়েছেন। নির্বাচনে আসেননি। ভুল করেছেন। ভুলের খেসারত আপনাকেই দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ক্ষতি না করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। যদি কিছু বলার থাকে আলোচনার মাধ্যমে বলুন। আমি সমাধান করব। শেখ হাসিনা আরও বলেন, লাদেনের মতো ভিডিও বার্তা দিয়ে আন্দোলনে নেমে দেশের মানুষকে কষ্ট যেন বিএনপি নেত্রী না দেন সেটাই তার কাছে অনুরোধ। কেউ যদি স্বাভাবিক জীবনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে তাহলে আমরা তা প্রতিহত করব।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে। উন্নতি অবশ্যই হবে। বিএনপির ক্ষমতা নেই রাজাকার আর যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন বন্ধ করবে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের পর আয়োজিত প্রথম এ জনসভাকে ঘিরে রাজধানীতে ব্যাপক শোডাউন করে আওয়ামী লীগ।

সকাল থেকে লোক জড়ো হতে থাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এতে ঢাকা এবং আশপাশের জেলা থেকে নবনির্বাচিত এমপিরা ব্যাপক শোডাউন করেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তৃতা করেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আশরাফুন্নেছা মোশারফ, অধ্যাপিকা অপু উকিল, অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাওছার, পঙ্কজ দেবনাথ, এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, সিদ্দিকী নাজমুল আলম প্রমুখ।

শেখ হাসিনা বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র ছিল। নির্বাচন বর্জনের ডাক দেন সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা।

তাদের শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভোট দিয়েছেন জনগণ। তিনি ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, অনেক ভয়ভীতি দেখানো সত্ত্বেও ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। আগামীকাল নতুন সরকার গঠন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছিলাম, তিনি আমাকে সরকার গঠনের অনুরোধ জানিয়েছেন। ১২ জানুয়ারি সরকার গঠন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, হরতাল-অবরোধ দিয়ে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার দিন আর থাকবে না।

ছেলেমেয়েদের স্কুল চলবে। জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হলে সরকার কঠোরভাবে মোকাবিলা করবে। সরকারের পাশাপাশি দেশের মানুষও যেন ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলার জন্য এগিয়ে আসে সে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সংখ্যালঘুরা কি অপরাধ করেছে? কেন নিরীহ মানুষগুলোর ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছেন? খালেদা জিয়া এ জন্য আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর কেন হামলা চালাচ্ছেন?

আন্দোলনের নামে হরতাল-অবরোধে মানুষ পুড়িয়ে মারা, রেললাইন উপড়িয়ে ফেলা, বাসে আগুন দেওয়া ও নিরীহ মানুষকে হত্যা করা, এমন কি গরুর ট্রাকে আগুন দিয়ে গরু পুড়িয়ে মারার তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা করে তিনি বলেন, আর কত ধ্বংসযজ্ঞ সহ্য করবে দেশের মানুষ? জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ঠিক যেভাবে সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষা করেছেন, সেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সক্রিয় হোন।

বিরোধীদলীয় নেতা যে অভিশাপ দেয় তা আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এর আগে তিনি (বেগম জিয়া) বলেছিলেন, শত বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বলেছিলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও হতে পারব না। উনি অভিশাপ দেন আমাকে আর লেগে যায় তার ওপর।

শেখ হাসিনা বলেন, যারা নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করেছে তাদের উদ্দেশ্য ছিল দেশে অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া শুরু হোক। এ ধরনের নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দেখতে চায়। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ চায় না। তিনি বলেন, গতবার ক্ষমতায় আসার পর আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ শুরু করি।

দেশ থেকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দমন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। দেশের মানুষ শান্তিতে থাকলেও একজনের মনে শান্তি ছিল না। আমাদের সাবেক বিরোধী দলের নেতার শান্তি নেই। বাংলাদেশের মানুষ যখন শান্তিতে থাকে তখন তিনি শান্তি পান না। নিজের অশান্তির আগুনে সবাইকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারতে চান।

ভূমিমন্ত্রী আমির হোসেন আমু স্বাধীনতাবিরোধীদের দেশ থেকে নির্মূলের ঘোষণা দিয়ে বলেন, জঙ্গিবাদী, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নতুন যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। কারণ তারা দেশকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে।

শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি কি অবরোধ দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান?

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আবারও শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করতে হবে। তাই খালেদা জিয়া বেসামাল হয়ে পড়েছেন। এ জন্য সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছেন।

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপি নেত্রী জামায়াতের ফাঁদে পা দিয়ে ভুল করেছেন। তাই তাকে মাশুল দিতে হবে। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, শুধু জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী দল নয়, বেগম খালেদার নেতৃতে আজকে বিএনপি প্রধান স্বাধীনতাবিরোধী দল হিসেবে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চাচ্ছে। শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্র করছে।

এদের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।